ফুটে ওঠা
কুঁড়িও জানে না ফুল কেন ওঠে ফুটে
বালকও জানে না কেন
বালিকার জন্য তার বুক পুড়ে ওঠে
আর বালকের দুঃখ দেখ
বালিকার অবুঝ অভিমান
ফেটে পড়ে শিমূল তুলোর মতো
আচমকাই যেন উড়ে যায় প্রাণ
এইসব গূঢ় ভাব
আর সব আনচান দুঃখ সুখ নিয়ে
আরও বহু ছোট বড় প্রাণ
পৃথিবীতে বাঁচবার তীব্র আশা ছেড়ে
চলে গেছে দূরে বহু দূরে
তবুও জানে না ফুল
কুঁড়ি থেকে ফুটে ওঠে কেন
অনয়াসে অকারণে ঝরে যাবে বলে
মুখ দেখা
কি বলবো তাকে শিশু না বালিকা
মুখ দেখা আলোয় ফুটপাথ ফাঁকা
দু’একজন পথ চলতি মানুষের কাছে
ভিক্ষে চাইছিল সে দে বাবু দুটো টাকা
হঠাৎ তার সামনে এসে
হাত পেতে দাঁড়ালো নববর্ষ
একগাল হেসে
কচি হাতে বাটি উপুর করে সব সুখ
তার শূন্য ঝুলিতে ঢেলে দিল উজবুক
বাতাস তা দেখে
খবর দিতে ছুটলো আকাশকে
আর তার আগেই
আকাশের সমস্ত নীল
বাস্তবতার ঝুঁকি নিয়ে
ঝুঁকে পড়েছে তার মুখে
গরমে বুঁদ
এমন অসহ্য দুর্ভেদ্য গরমে
উপায় একটা খুঁজে পেয়েছি এমন সময়ে
এমন কয়েকটা দুরূহ দুর্বোধ্য কবিতা খুঁজে পড়ুন
যার মানে বুঝতে খুঁজতে খুঁজতে
ঘেমে নেয়ে উঠবেন ভিতরে ভিতরে
কিংবা দুর্বোধ্য কোন চিত্রকলা দেখুন
খুঁজুন গুয়ের্নিকা বা মোনালিজার হাসির অর্থ
গরম যতটা বাইরেটা ঘামাবে
এসব ঘামাবে আপনার মনের ভিতরটা
অদ্ভূত একটা সমঞ্জস্য আসবে বোধে
গরমের আবেশে তখন বুঁদ হয়ে পড়বেন আপনি
অমৃত আস্বাদ
শুধু প্রতিবাদ করলে কি আর
কবিতা হয় সবই
একটু না হয় প্রেমের কথা বল আজকে কবি
চল একটু পার্কে গিয়ে বসি
আকাশে যখন জ্বলছে পূর্ণশশী
এই না বলে যুবতী যেই ধরল কবির হাত
ঝড় উঠল বুকের ভিতর কেমন অকস্মাৎ
অনুভূতির তীক্ষ্ণ ছোঁয়া ভুলিয়ে দিল খিদে
চলে এলাম পার্কে দু’জন সিধে
তারপরে যা ঘটল সে সব না বললেও চলে
কিংবা সে সব কথাশেষ হবে না বলে
ঘরে ফিরে রাত্রি বেলা পান্তা ভাতের স্বাদ
কেমন যেন বদলে গেল অমৃত আস্বাদ
ঘুরে দাঁড়াবার
যৌবনের রঙিন স্বপ্ন যখন ফিকে
দিকে দিকে
দেখে খান্ডব দাহন
পুড়ে গেছে মন
আগুন ছড়াতে ছড়াতে দিনগুলি যাচ্ছে পুড়ে
এখনও কি হয়নি সময় দাঁড়াবার ঘুরে
যদি মোহ দ্রোহ হয়ে বুকে জেগে থাকে
চাঁদের বুকে কলঙ্কের পোড়া দাগ আঁকে
যদি এভাবেই মানুষ বেঁচে থাকে মানবতা মেরে
তবে তো সময় এখন দাঁড়াবার ঘুরে
নববর্ষ
চুপ কোন কথা বলো না
সময় ফুটছে ফুটছে ফুল
নতুন বছর আসছে বলে
দুঃখ বিষাদ ভুলতে হবে
পুরনো দিন যাছে চলে
নতুন পোষাক নতুন ধানে
নতুন গানে নতুন টানে
নতুন আলাপ নতুন মানে
বলছে পাখি গানে গানে
ডাকছে ফড়িং গাছের কানে
নতুন বছর আসছে বলে
দুঃখ বিষাদ ভুলতে হবে
কিন্তু বল কেমন করে
মানবতা
এক
ইঁট পাথরে গড়া ভূতল
নিজের ভিতর পুষেছি খল
কঠিন পাথর সরালে জল
তবুও আমার দুচোখে ছল
যে মানুষটা দুঃখ পায়
শৈশব তার হারিয়ে যায়
তবুও সে সুস্থতায়
আরও কিছুদিন বাঁচতে চায়
মাটি পাথরে গড়া ভূতল
গভীরে তার স্বচ্ছ জল
রয়েছে লুকিয়ে তাতেও
আর্সেনিক নামক হলাহল
দুই
পোষা যে ময়না কথা কয় না
তাকে বাইরে ছেড়ে আসি
যাকে প্রতিদিন শিখিয়ে ছিলাম
তোকে বড়ই ভালবাসি
আমরা মুখে বলি সর্বদাই
মানবতার বড় বড় কথা
অথচ কাজের বেলায়
জানি না কোথায় হারায় মানবতা
লজ্জা
যারা আজ কবিদের কবিতায় ঠাঁই পেল না
অথচ প্রতিদিন তাদের মুখে অন্ন যুগিয়েছে
এবং কারখানায় নিজেদের জীবন নিষ্পেষ করে
প্রয়োজনীয় সামগ্রী জুগিযেছে
কিংবা যারা তাদের এবং তাদের কুকুরের যত্ন নিয়েছে
তারা যদি জানতে চায় কী করছিলে তোমরা
যখন তারা যন্ত্রণা ভোগ করছিল
তাদের জীবন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল
আমার প্রিয় কবিরা কি উত্তর দেবে তাদের
তোমাদের বিবেক গিলে ফেলবে শকুনের স্তব্ধতা
দুর্দশা কুরে কুরে খাবে তোমাদের হৃদয়কে
আর তোমরা চুপ করে লজ্জায় মুখ লুকাবে
প্রতিভা
আমি তো জানি না প্রতিভা কাহার
কতখানি বিচ্ছুরিত হতে পারে দেওয়ালে কার্নিশে
তাই বার্নিশে ঢেকে রাখি মুখ
তবুও দুর্মুখ পিছনে লেগে থাকে
আমি তাকে দেখে অবাক বিস্ময়ে ভাবি
ধৈর্য তাহারও নয় কম
একমাত্র বিচার করতে পারে যম
প্রতিভা কাহার বেশী কম
সভা ও সমিতি আর নামী দামী কবিদের পিছে
ঘোরে যারা মিছে
ইচ্ছে করে বলি তাদের ডেকে
কিছু পড় নিজে এসব করার থেকে
কে আর শোনে কার কথা
হয় তো মনে পায় বোকা ব্যথা
আমি তাই চুপটি করে থাকি
মুখটি বুজে রাখি
অবুঝের মতো
তোমাকে দেখার পর কতবার ভেবেছি যে মনে
আকশে দেখব না আর চাঁদ
অথচ বারবার আকাশের দিকে তাকিয়ে
অবাক বিস্ময়ে দেখেছি
চাঁদের অভাবে কী ম্রিয়মান হয়েছে আকাশ
আমি তো তেমন ভাবে ম্রিয়মান হইনি কখনও
তোমার অভাবে
তোমাকে ছোঁবার আগে কতবার
ভেবেছি যে মনে ছোঁব না তোমাকে
অথচ দিয়েছি ছুঁয়ে না বুঝেই কিছু অবুঝের মতো
এর কোন মানে হয় বল
কবিতা আমার
পুরনো দিনগুলো কিছুতেই ছাড়ে না আমায়
নতুন দিনগুলোর সাথে সমানে পাল্লা দিতে চায়
স্কুল পালানো দিন
আম পোড়া শরবৎ
বন্ধুর বোন
বৃষ্টি ভেজা দিন
বিনিদ্র রাত
আরও কতকিছু আমাকে সন্মোহিত করে রাখে
নতুন দিনগুলো মনোরম বটে
তার চেয়ে কম মোহময় নয়
সেইসব পুরনো দিনের স্মৃতি
বন্ধুরা যখন তাদের কবিতা নিয়ে মশগুল
আমি তখন আমার স্মৃতিতে বিভোর
আনন্দে থাক
খাঁচা কেটে উড়ে গেলে শুক
কবির হয় ভীষণ অসুখ
খুব ভালবাসে তাকে সারি
শুক তাই দিশেহারা ভারি
যাক শুক উড়ে চলে যাক
সে সারির বুক জুড়ে থাক
কবি আজ অসুখে ভুগুক
খুব বেশি আসে না সুযোগ
শুক সারি আনন্দে থাক
কবি যত কষ্টই পাক
✍️এই নিবন্ধটি সাময়িকীর সুন্দর এবং সহজ জমা ফর্ম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। আপনার লেখা জমাদিন!