কবি যতীশগোবিন্দ জানা’র ছ’টি কবিতা

যতীশগোবিন্দ জানা
যতীশগোবিন্দ জানা
3 মিনিটে পড়ুন

যদি বৃষ্টি নামে

যদি এই মাঝপথে
সমস্ত আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে,
পাট ভাঙা এ পোশাকে
আপাদমস্তক যদি ভিজে যেতে হয়,
তবুও তাকেই আমি
প্রাণভরে স্বাগত জানাবো।

যদি বৃষ্টি নামে,
প্রবল বর্ষণে যদি হয় কিছু ব্যক্তিগত ক্ষতি;
তবুও তা মেনে নেবো আমি।

কতকাল বর্ষণ দেখিনি।
মে বর্ষণে ধুয়ে যায় পৃথিবীর পুরাতন পাপ,
বিষবৃক্ষ উন্মুলিত হয়ে
জেগে ওঠে ভালোবাসা গাছ
রসালো মাটির বুক চিরে।

যদি বৃষ্টি নামে
সবকিছু ফেলে দিয়ে
আনন্দে উদ্বাহু মেতে যাবো।

স্বপ্ন গাছ

মাটিতে শিকড় পুঁতে ডালপালা ওপরে
মেলেছি। এখনও অনেক রাত একা একা
জেগে থাকতে হবে। নিদ্রামগ্ন চরাচর,
শুধু এক রাতচরা পাখি ডেকে চলে
অবিরাম বিষাদের সুরে।

আজন্ম স্বপ্ন ছিল এ বাগানে বনস্পতি
হবো। আগাছা গুল্মলতা আমার শরীর
ঘিরে বেড়ে উঠবে ক্রমাগত।ডালপালা
হয়ে উঠবে অজস্র পাখির আশ্রয়। দিনান্তে
বিশ্রাম নেবে ক্লান্ত পথিক, রাখাল বালক।

কিন্তু কি জানি কেন এই বনভূমে আমাকেই
ব্রাত্য করে রেখেছে সকলে! একাকি দাঁড়িয়ে
আছি বহুকাল, শুধু এক স্বপ্নগাছ হয়ে।

রণ পা

অক্ষর ঘেঁটে ঘেঁটে কেটেছে জীবন
তবু আমি আজও নিরক্ষর!
শব্দের পাথর কেটে তবু
এখনও আমার হাতে নিরব প্রস্তর।
পলল মৃত্তিকা ছেনে
বানিয়েছি বহু অবয়ব—
তবু তা পায়নি প্রাণ
এই হাতে নিষ্প্রাণ সব।

আর কতো হেঁটে যাবো বলো
ক্লান্ত শ্রান্ত বিক্ষত দু’পায়ে!
আমাকে রণ পা দিতে পারো
একজোড়া, যে কোন উপায়ে?
আজ তবে বহুদূরে পাড়ি দেবো
একান্ত একাকী,
আশ্চর্য রণ পা চড়ে
যেটুকু জীবন আছে বাকি।

গভীর অসুখ

এই যে অরণ্যভূমি, এখানে এসেছি আমি
একা ব্যস্ততম লোকালয় ছেড়ে। প্রাচীন
গাছের গায়ে ঠেস দিয়ে বসে আন্দাজ করে
নেই কতোটা বসয় তার। কতদিন শুষে
যাচ্ছে রোদ বৃষ্টি ঝড়ে পৃথিবীর প্রাণরস!

বিজ্ঞানীরা খুঁজে যাচ্ছে আরও একটা ব্যস্ত
গ্রহ অনেক আলোকবর্ষ দূরে। সেখানে কি
এরকমই অলৌকিক বিকেল বাতাস খেলে
যাচ্ছে গাছের পাতায়! অবিরত ঝর্ণাধারা
বয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের কোলে! ছায়াঘেরা
মনোরম গ্রামে খেলা করছে প্রাণবন্ত শিশু!

অথবা এ ছায়াপথে কোথায় বা কালান্তক
কৃষ্ণগহ্বর! আর কতদিন বেঁচে থাকবো
পৃথিবীর গভীর অসুখে!

শব্দ প্রতিমা

শব্দের প্রতিমা গড়ি নৈঃশব্দ্যের অন্ধকারে বসে।
পুরাতন ফুল ফল পাতা ক্রমাগত খসে খসে পড়ে অবিরাম; কত যে না ফোটা শুকনো কুঁড়ি
অকালেই ঝরে যায়। বিচিত্র বর্ণময় শৌখিন নুড়ি
পাথরের অগাধ অবাধ সব অজস্র সঞ্চয়,
অবাঞ্ছিত জীবনের খাঁজে খাঁজে বৃথা জড়ো হয়।
বিপূল আগ্রহভরে ক্লিষ্ট হাতে তুলে রাখি সব,
তা দিয়ে রচনা করি আলোকিত প্রাণের উৎসব

কখনো কখনো ঘোর অন্ধকার রাত্রি নেমে আসে
জীবনের ক্রান্তিলগ্ন অযথাই দুঃখজলে ভাসে
দুই চোখ; মুছে ফেলি যত্নে রাখা সুখের রুমালে।
বিপন্ন বিধ্বস্ত এই দুঃসময় নিরবে ঘুমালে
মগ্নচৈতণ্য জাগে, জেগে ওঠে অতুল মহিমা,
ত্রস্ত হাতে গড়ে তুলি অগণিত শব্দের প্রতিমা।

তবুও নবান্ন

অঘ্রাণের ধান কাটা রোদের গন্ধ
উলঙ্গ ছেলের দল
প্রাণভরে টেনে নেয়;
তারপর , সারাটা বছর
দু”মুঠো ভাতের জন্যে
একটানা হাহাকার।

পাটপচা ডোবার জলে
যে গন্ধটা ভেসে ওঠে,
পুজোর জামার গন্ধে মিশে যায়।

পারিজাত রেনূ মাখা
কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে
কী এক মমতা মাখানো!
নতুন নলেন গুড়ে
স্বাদগন্ধে কৃপণতা
তবুতো নলেন!

পৌষের নিকানো উঠোনে
ভাদরের রক্ত জল করা
একগাদা সদ্য কাটা ধানে
ভরে ওঠে নবান্ন উৎসব।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
জন্ম ১৯৫৫ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর উত্তর চব্বিশ পরগনার বাবপুর গ্রামে মামাবাড়ি তে। স্বাধীনতা সংগ্রামী বাবার সাংসারিক উদাসীনতায় ছোটবেলা খুব দারিদ্র্যের মধ্যে কাটে। সেই অনিশ্চিত জীবনের ই মাত্র নয় বছর বয়সে মাঠভরা পাকা ধানের সৌন্দর্য দেখে প্রথম কবিতার স্ফুরণ। দারিদ্র্যের মধ্যে ই স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনা। জীবিকার জন্যে অনেক রকম কাজ করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণ।এযাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা নয়টি। আরো কটি প্রকাশের অপেক্ষায়। একসময় আকীর্ণ নামে পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!