শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘সোশ্যাল ক্লিনিক’ এর প্রয়োজনীয়তা

জয়দেব বেরা
জয়দেব বেরা
3 মিনিটে পড়ুন

স্বাস্থ্য বলতে কেবল শারীরিক নয় মানসিক ও সামাজিক সুস্থতাকে বোঝায়। যদিও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক সুস্থতার ক্লিনিক রয়েছে কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সামাজিক ও মানসিক ভাবে সাপোর্ট ও ডেভেলপমেন্ট করার জন্য সেই ভাবে কোনো ক্লিনিক এর সু-ব্যবস্থা করা হয়নি। যদিও মেন্টাল ক্লিনিক এর বিষয়ে আমরা অনেকেই জানি বা আমাদের কম-বেশি ধারণা রয়েছে। কিন্তু সোশ্যাল ক্লিনিক এর সম্পর্কে সেই অনুযায়ী কোনো ধারণা নেই।

শারীরিক ক্লিনিক বলতে আমরা দৈহিক বিষয় এর চিকিৎসাকে বুঝে থাকি এবং মেন্টাল ক্লিনিক বলতে আমরা মানসিক চিকিৎসাকে বুঝে থাকি কিন্তু সামাজিক চিকিৎসা বা সোশ্যাল ক্লিনিক সম্পর্কে আমরা সেই ভাবে অবগত নই।শারীরিক ক্লিনিক ও মেন্টাল ক্লিনিক এর মতোই সোশ্যাল ক্লিনিকও ব্যক্তির সু-স্বাস্থ্যের সঙ্গে সংযুক্ত।কারণ আমরা সামাজিক ভাবে সুস্থ না থাকলে, মানসিক ও শারীরিক ভাবেও কখনো সুস্থ থাকতে পারবো না।যদিও সোশ্যাল ক্লিনিক এর মধ্যে সামাজিক-মানসিক দুই বিষয় অন্তর্ভুক্ত।

একজন ব্যক্তিকে বিশেষ করে একজন শিক্ষার্থীকে সামাজিক ভাবে সুস্থ থাকতে হবে অর্থাৎ সমাজ সম্পর্কে, সমাজিকীকরণ সম্পর্কে সংস্কৃতি, পরিবেশ, সামাজিক সমস্যা, যৌনশিক্ষা, নেশার কুফল, অপরাধ, কুসংস্কারবিজ্ঞান, সমাজের বিভিন্ন সম্পর্ক, আচার-আচরণ-প্রথা-রীতিনীতি সহ অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে তাকে জানাতে হবে বা জানতে হবে। এই সমস্ত বিষয়ে যদি শিক্ষার্থীর কোনো জ্ঞান না থাকে তাহলে যে সামাজিক অসুস্থতার শিকার হবে তারপর এর ফলশ্রুতি হিসেবে মানসিক সমস্যারও শিকার হতে পারে।তখন তাদের মধ্যে অপরাধ মূলক কাজকর্ম, পড়াশোনায় অনীহা প্রভৃতি সমস্যা বা সামাজিক ব্যাধিগুলো জন্ম নেবে।

তাই এক্ষেত্রে সোশ্যাল ক্লিনিক এর করণীয় হবে, উপরে উল্লিখিত সমস্ত বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞান প্রদান করে এবং তাদেরকে সু-পরামর্শ দিয়ে তাদের সামাজিক এবং মানসিক দিক গুলোকে উন্নত করবে। তাদেরকে বিভিন্ন চাপ থেকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজনে কাউন্সেলিংও করে থাকবে। এক কথায়- সোশ্যাল ক্লিনিক এর কাজ হবে, সামাজিক ব্যাধিগুলোকে ‘সমাজতাত্ত্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক’ উপায়ে ক্লিনিক্যালী ভাবে ট্রিটমেন্ট ও ডায়াগনেসিস করা। তাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই সোশ্যাল ক্লিনিক গড়ে তুলতে হবে।

অন্যভাবে বলা যায় যে, যেখানে উপরিউক্ত বিষয় সমূহকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক সচেতন জ্ঞানের আলোর প্রবেশ করাতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থীরা সামাজিক ও মানসিক ভাবে অনেকটাই সুস্থ থাকবে এবং পড়াশোনাও খুব ভালো করে করতে পারবে। এই ক্লিনিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে সামাজিক ও মানসিক অন্ত-দ্বন্দ্ব (Self conflict) গুলো থাকবে সেই গুলোকে কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। তাহলেই শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই সুনাগরিক হয়ে উঠতে পারবে।

এই ক্লিনিকে একজন করে মনোবিদ (Psychology এর ছাত্র), সমাজকর্মী (Sociology & Social Work এর ছাত্র) এবং কাউন্সেলর (Psychology, Sociology, Social Work, Special educator এবং Diploma in Counselling এর ছাত্র)-কে নিয়োগ করতে হবে। এনারা শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতি সপ্তাহে দু’দিন করে বিভিন্ন বিষয়ে অনুপ্রেরণা মূলক কথা বলবেন, পরামর্শ দেবেন, গাইড করবেন এবং তাদের মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখবেন তথা তাদের সামাজিক ব্যাধি গুলোকে ‘সমাজতাত্ত্বিক- মনস্তাত্ত্বিক’ উপায়ে ট্রিটমেন্ট ও ডায়াগনেসিস করবেন। তখনই তারা অনেকটাই সমাজিকভাবে সুস্থ থাকবে। তাই আমার মনে হয় বর্তমান সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সোশ্যাল ক্লিনিক চালু করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
জয়দেব বেরা ভারতবর্ষের একজন তরুণ কবি,সাহিত্যিক এবং লেখক। তিনি 'মানসী সাহিত্য পত্রিকা'র সম্পাদক। তিনি রামধনু ছদ্মনামে দুই বাংলায় পরিচিত। পিতার নাম রিন্টু বেরা ও মাতার নাম মানসী বেরা। তিনি ১৯৯৭ সালে ১২ই আগস্ট পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বৃন্দাবনপুর নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি 'সেবব্রত নার্সিং কলেজ' এ সমাজতত্ত্বের গেস্ট লেকচারার হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। তিনি ছাত্রাবস্থা থেকেই একজন অক্ষরকর্মী হিসেবে পরিচিতি। তিনি 'পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ' এবং 'ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি' এর সদস্য। তিনি ভবিষ্যতে গবেষণাকে সামনে রেখে জীবনে এগিয়ে যেতে চান। দেশ - বিদেশের অসংখ্য পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা সমাদৃত হয়েছে। তিনি লেখা-লেখির জন্য একাধিক সম্মাননাও অর্জন করেছেন। তাঁর রচিত একক ও যৌথ গ্রন্থ এবং জার্নাল গুলি হল- একক কাব্যগ্রন্থ- 'কবিতার ভেলা', 'কবিতায় মার্ক্সবাদ' , 'বাস্তবতা'। যৌথ কাব্যগ্রন্থ- কবিতার মহল্লা, প্রেমনগরী,দোহার,হেমন্তিকা,কাচের জানলা,দুই মলাটে কবিসভা,কবিতার চিলেকোঠা, সমকালের দুই বাংলার কবিতা-২(বাংলাদেশ),নাম দিয়েছি ভালোবাসা, সৈকতের বালুকনা,কবির কল্পনায়, শব্দভূমি,হৃদয়ের প্রাঙ্গণে, কবিতা সংকলন-১,আলাপন, কবিতারা কথা বলে প্রভৃতি সহ একাধিক যৌথ কাব্যগ্রন্থ। একক প্রবন্ধ এর বই:- 'জাগরণ', 'কোভিড-১৯ ও সমাজতত্ত্ব।' একক নিবন্ধ এর বই :- মনের কথামালা (বাংলাদেশ)। সম্পাদনা মূলক বই- 'দলিত', 'পলাশের ডাকে বসন্ত প্রহরীরা','আদিবাসীদের সমাজ ও জীবনযাত্রা'। সম্পাদনা মূলক জার্নাল- সেতু (ISSN: 2454-1923 14 th year, 37 Issue, December-2020.) একক সমাজতত্ত্বের বই/স্কুল পাঠ্য বই:- 'সমাজতাত্ত্বিকদের ইতিবৃত্ত', ' শিশুদের সমাজতত্ত্ব'(চতুর্থ শ্রেণি), 'উচ্চ মাধ্যমিক সমাজতত্ত্বের সাফল্য'(দ্বাদশ শ্রেনি), 'উচ্চ মাধ্যমিক সমাজতত্ত্বের প্রশ্ন সম্ভার (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি),উচ্চ মাধ্যমিক সমাজতত্ত্বের সমাধান (দ্বাদশ শ্রেণি) প্রভৃতি।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!