রবীন্দ্রনাথ
আমার বন্ধুদের নাম রবীন্দ্রনাথ
আমার শত্রুদের নামও রবীন্দ্রনাথ।
আমাদের আকাশের নাম রবীন্দ্রনাথ
আমাদের বাতাসের নামও রবীন্দ্রনাথ।
তোমাদের সব বাঁশির নাম হোক রবীন্দ্রনাথ
আমরা আহত হব, দিনে নামবে রাতের আঁধার
ভেঙে যাবে অনেকটা নির্মল আকাশ, যদি
কেউ রবীন্দ্রনাথকে ভুল করে হিটলার বলে ডাকে।
আমাদের সব নদীর নাম রবীন্দ্রনাথ
যে সব নদী সাগরে মিশে যায়
তারাও রবীন্দ্রনাথ।
ফেরার দিন
একটা মানুষ বলছে আর একটা মানুষকে
অনেকদিন আমরা অনেকরকম সার্কাস দেখলাম
নানান রঙের তাঁবুতে বসে
এবার চলুন সংসারে ফেরা যাক।
চলুন পাখিদের ঘর সংসার দেখতে যাই
নদীর সাগরে যাওয়ার গল্প শুনে আসি। চলুন
কিছুদিন পাহাড় থেকে নেমে আসা নিঃসঙ্গ
ঝরণার কাছে বসি। সঙ্গ দিই।
সার্কাসের সব খেলা একই রকম
সেই একই পশুদের নিয়ে। আর ভাল্লাগে না
চলুন আর দেরি না করে
আমরা আমাদের মতো কিছু রাস্তা তৈরি করি
শিশুরা হাসতে হাসতে খেলবে আর মাঝে মাঝে
চিৎকার করে বলবে, এই আমাকে ধর তো।
বোবা ব্যালট বক্স সব জানে
আমার বাম দিকে বামপন্থী রাস্তা
আমার ডান দিকে ডানপন্থী রাস্তা
দু’টো রাস্তাই কমবেশি ভাঙাচোরা
দু’টো রাস্তাতেই আমাকে রোজ হাঁটতে হয়।
সবুজ আলো বলে, আমি সুবিধাবাদী
লাল আলো বলে, আমি ধান্দাবাজ
বামপন্থী রাস্তা ধরলে রেল স্টেশনটা কাছে হয়
ট্রেন ধরে অফিস, রুজি-রোজগার।
ইনকিলাব জিন্দাবাদ, লড়াই লড়াই লড়াই চাই
ডানপন্থী রাস্তা ধরলে কালী মন্দির কাছে হয়
মা কালীর দর্শন পাই। মনটা শান্ত হয়।
মায়ের মন্দিরে গিয়ে মা মা করি। কত কিছু চাই
তার পর বামপন্থী রাস্তা ধরে অফিস। রুজি-রোজগার
আমাকে দু’টো রাস্তাতেই হাঁটতে হয়। কিছু করার নেই
আমজনতা এমনই হয়। দু’টো রাস্তাই তাদের লাগে
আমাদের বোবা ব্যালট বক্স এ কথা সব জানে।
মাস্টারমশাই সব জানেন
বাংলায় রাজনীতি করলে কী কী পাওয়া যায়?
উত্তরে ছাত্র জানায়, কেন্দ্রের বঞ্চনা পাওয়া যায়।
ভাল কথা, একবার রয়েল বেঙ্গল টাইগার
আমরা পেয়েছিলাম। সে অনেক আগের কথা।
মাস্টারমশাই গাট্টা মারতে গিয়েও মারলেন না
এ বার বল বাংলা ভাষা শিখলে কী কী পাওয়া যায়?
খুব সোজা উত্তর – শ্রদ্ধেয় রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রামকৃষ্ণ, স্বামীজী, রবীন্দ্রনাথ, সুভাষচন্দ্র বসু, ক্ষুদিরাম
বিনয়-বাদল-দীনেশ ইত্যাদি পাওয়া যায়
এ ছাড়া, আমাদের কপাল খুব ভাল বলেই
মাঝে মধ্যে পেয়েছি- রাণার, কোন এক গাঁয়ের বঁধু, এই পথ যদি না শেষ হয়, ও গো তুমি যে আমার, দিনের শেষে ঘুমের দেশে, তবু মনে রেখ….
প্রসঙ্গ পালটে মস্টারমশাই জানতে চাইলেন, আচ্ছা
হিন্দি জানলে, কী কী পাওয়া যায়? সংক্ষেপে বল
স্যার, হিন্দি জানা থাকলে
ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে খুব সহজেই পাওয়া যায়
এবার মাস্টারমশাইয়ের খুব ইচ্ছা হল গাট্টা মারতে।
পাখি
‘নভিমি’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক টভারডোস্কি
একবার শ্রদ্ধেয় ক্রুশ্চেভ মহাশয়কে
একান্তে ডেকে কথায় কথায় বলেছিলেন,
সাহিত্যে যেমন গায়ক পাখি থাকে, তেমনি
শিকারী পাখিও থাকে। সংখ্যায় তারা কম নয়।
সাহিত্যে আজকাল শিকারী পাখিদের রমরমা
নানা রঙের নানা ঢঙের এরা হয়।
আরও মজার কথা হল এই যে –
এরা সবরকম কর্তৃপক্ষকে খুশি করে হাজার হাজার
লাখ লাখ পাতা অনায়াসে লিখতে পারে।
লিখতে লিখতে হাত বেঁকে গেলে
চোখ অন্ধ হয়ে গেলে
ছেলে নতুবা ছেলের বউকে দিয়ে লেখায়
কোনও লেখাতেই এদের বিরাম নেই।
চোখ-কান খোলা রাখলেই দেখতে পাবেন
সংস্কৃতির সবকটা খাঁচায় শিকারী পাখি আছে।
বেশ দাপট নিয়েই এরা থাকে চিরকাল।
মুশকিল হচ্ছে , গায়ক পাখিদের নিয়ে
এরা দলহীন গণতন্ত্র, কোনও দলে থাকে না
দল বাঁধতেও জানে না। আপন মেজাজে থাকে
এঁদের মূল্যবান সম্পদ, স্বাধীনতা আর স্বাধীনতা।
বুঝলে বাপু,
গায়ক পাখিদের ভালবাসতে পারলে
শিকারী পাখিদের মনে হবে তালপাতার সেপাই।
নকল সোনার গহনা। নিধিরাম সর্দার।
মুখ খুলব না
চারদিকে যা হচ্ছে হোক বাবা, আমার কী
অসহ্য লাগলে বোবা হয়ে থাকা ভাল
কেন মুখ খুলতে যাব বোকার মতন?
মুখ খুললেই তো দেখছি কী হাল হয়
তেড়ে আসে বাঘ-সিংহ নয়তো পাগলা কুত্তা
আগুন রাঙ্গা চোখ আর হাড়হিম করা ধমক।
মাধ্যমিকে তিনবার ফেল, সেও ছড়ি ঘোরায়
স্কুলমাস্টারদের চমকায়, বিডিও-কে ধমকায়
চারদিক দেখছি আর ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি
একটা পিঁপড়েকেও আমার চেয়ে সাহসী মনে হয়।
‘ক’ বাবু যখন জানতে চান, আপনি আমাদের তো?
দু’ হাত তুলে বলি, আছি। আছি। চাপ নেবেন না
আর কোথায় যাব বলতে পারেন?
ভুল করেও মুখ খুলবে না
মুখ খুললেই মনের কথা বেরিয়ে আসতে পারে।
তাই বন্ধুদের চুপিচুপি বলি,
সামলে রাখ যে যার আগুন গোপনে
দুঃখগুলো যখন-তখন যাকে-তাকে দেখাতে নেই।