কবি মধুবন চক্রবর্তীর ছ’টি কবিতা

মধুবন চক্রবর্তী
মধুবন চক্রবর্তী
4 মিনিটে পড়ুন

একা

একটা মানুষ একা হতে হতে একটা বৃক্ষ হয়ে গেল,
বৃক্ষের নীচ থেকে শিকড় বাকড় জাপটে ধরল তাকে,
একটা মানুষ একা থাকতে থাকতে রাধাপদাবলী,
বাঁশী যেন শৃঙ্গার রসে ভিজিয়ে দিল শরীর…
একটা মানুষ একা ভাবতে ভাবতে ইমনকল্যান বন্দিশ।
সব সীমানা ভেঙে কাঙ্খিত পূর্বরাগের কাছে পৌঁছতেই যেন পূরবীর আলাপ।
একটা মানুষ একা চাঁদ
ছন্দহীন মেঘের আড়ালে।
একাকীত্ব প্রকম্পিত এসরাজ তখন আলোড়ন সৃষ্টিকারী
চন্দ্রমুখী…
আড়াল থেকে একা নর্তকী …
আমিও একা হতে হতে আজ
উৎসব হয়েছি যেখানে, শিবরঞ্জনিতে সানাই বাজে গ্রামাফোনে …
অঙ্গুরবালা আজও গেয়ে চলে একার উৎসবে …

ভালবাসা

ভালবাসার চেয়ে ঢের সুখ ভাল না বাসায়
প্রেমের দরকষাকষি অহরহ,
ভাল না বাসা ঠিক যেন দুপুরের নিশ্চিন্ত ঘুম
যেন মায়ের ডাকে পড়ন্ত বিকেলে খেলাশেষে ঘরের ছেলের ঘরে ফেরা।
একবার ভালবেসে দেখো
সন্দেহের তেলাপোকা, হিংসা, দ্বিচারিতা ও ছলনার ঘুণপোকাগুলো কামড়ে ধরছে
কণ্ঠা ও বিশ্বাসে।
ভাল না বাসলে চামড়া টানটান থাকে; কোনও টোনার লাগে না
ঘাটতি পড়ে না ভালবাসায়।

জলপাই রোদ

তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে চিরকুটে একটা লেখা দেখলাম—
‘এখানে জলপাই রোদ’
ঢুকে পড়লাম রোদের ভেতর
দেখলাম, তোমার চুমুর মতো একটা দীর্ঘ রোদ পোহানো মহুয়া
সেখান থেকে রস চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে আমার শরীরে।
মাতাল নদীতে সাঁতার কাটতে কাটতে তোমার তীরে নাও ভেরালাম
দেখলাম, তোমার সদ্য স্নান করা খোলা পিঠ
গামছা দিয়ে আলতো করে মুছে দিলাম
পিঠে লেগে থাকা জলপাই রঙের জল।
তুমি সামনে এসে দু’হাত দিয়ে আমার মুখটা ধরলে
ঢুকে গেলাম তোমার ঠোঁটের শরীরে।
এখানে যে এত উৎসব বুঝিনি আগে
নাগরদোলায় চড়তেই কে যেন চুলের মুঠি ধরে বলল,
‘ওঠ ছুঁড়ি আজ তোর বিয়ে…’
আচমকাই হারিয়ে গেল সেই জলপাই রোদ।

ভ্যালেন্টাইন ডে

কাল ভ্যালেন্টাইন্স ডে মনে আছে তোমার?
কিভাবে অভিবাদন জানাবে প্রিয়তমাকে?
প্রিয়তমার চেয়েও কেউ প্রিয় আছে তোমার?
বলেছিলে প্রিয়তমা ছাড়া তোমার পৃথিবী নাকি খা খা করে
অথচ আগেই চলে গেছে কিস ডে
তার আগে প্রপোজ ডে
তারও আগে হাগ ডে, রোজ ডে।
কত কি কিংবা আরও কিছু
এতগুলো স্পেশাল ডে’তে
আমার জন্য একটিও আসেনি লাল গোলাপ
আসেনি কোনও প্রেম নিবেদনের আকার ইঙ্গিত
পাইনি একটিও রডোডেনড্রন মাখা ভোর
না এখনও আসেনি নীল খামে ভরা কোনও দীর্ঘ চুম্বন
পাইনি হোয়াটসঅ্যাপে কোনও ঘনিষ্ঠ সেলফি
বা প্রেমের কবিতার উত্তপ্ত কোনও দুপুর।
রাত বারোটা বেজে গেল
কই কই, এখনও তো ঢুকল না
প্রেম দিবসের রঙিন মাছগুলো স্ক্রিনের দেওয়াল ছুঁয়ে।
সত্যি তুমি ভালবাসো তো? নাকি প্রেমিকের ভান?
আমি তো ভেবেছিলাম প্রেমিকের মতো
এখন দেখছি, তুমি সত্যি প্রেমিক!

সত্যি বলো

সত্যি করে বলো তো কোনও দিন বাদুড় ঝোলা হয়ে এসেছ আমার কাছে?
নাকি বাদুড়ের ভাইরাস নিয়ে ঢুকে পড়েছ আমার ভেতরে?
কোনও দিন কাউকে কি বলোনি খুব বদমেজাজ
পান থেকে চুন খসলেই রণমূর্তি
অথবা অল্পেতে সন্তুষ্ট নয়?
আমি তো কোনও দিন সীতার মতো ছিলাম না
লক্ষ্মীর পাঁচালীও মনে করে পড়িনি সেভাবে
দ্রৌপদীর ছায়া ছিল না আমার মধ্যে।
বাঘ্রসম খিদে আমার
কথা না রাখলে আচড়ে দিতে পারি তাকে
অপেক্ষায় কাটিয়েছি শতকের পর শতক
ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে আমি সুনামির মতো
আছড়ে পড়তে পারি উপেক্ষার বুকে বরং সেই ভালো
কোনও দম দেওয়া পুতুল বা ছলনাময়ী কিংবা
‘সাত চড়ে রা করে না’ এমন একজন খোঁজ পেলে অবশ্যই জানাবো।
শুধু একবার, একবার সামনে এসে মিথ্যে করে সত্যিটা বলো
পাগলের মতো ভালোবেসেছি তোমাকে

ভুলেও না

আমাদের প্রেমের কথা কি কাউকে জানিয়েছ?
সরল মনে বলে ফেলেছ, ‘পাগলের মতো ভালবাসি ওকে’
বেশি জানাজানি হলে প্রেম তখন কাদা হয়ে যাবে
গলে পাক হয়ে যাবে সব গোপনীয়তা
দোলে রং খেলার বদলে কাদা ছোড়াছুড়ি করবে অলিতে-গলিতে, চায়ের ঠেকে।
আমাদের প্রেম রাজনীতির থেকেও বড় বিষয় হবে।
ব্যাকুল হয়েছ ভাল কথা,
বকুল গুঁজে দিচ্ছ আমার খোঁপায়
সেই ছবি আর কাউকে শেয়ার কোরো না
আমাদের চুম্বনরত সেই মুহূর্ত তখন সারা পৃথিবী দেখবে
আমাদের প্রেম নিয়ে হোলি খেলবে।
তোমার আমার ছাদে তখন চাঁদ আসবে না
থাকবে শুধু অমাবস্যার রাত।
দেখছ না কেউ অন্তর থেকে দোয়া করলে ভাবে থুথু ছেটাচ্ছে

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
কলকাতায় জন্ম। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। তিনি একজন কণ্ঠশিল্পী, কবি ও অণুগল্পকার। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশ হচ্ছে। এছাড়াও তিনি কলকাতা দূরদর্শন কেন্দ্রে সঞ্চালিকা এবং নিউজ খাস খবরের প্রেজেন্টার হিসেবে কাজ করছেন।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!