কবি রঞ্জনা রায়ের ছ’টি কবিতা

রঞ্জনা রায়
রঞ্জনা রায়
3 মিনিটে পড়ুন

রঙ

ওয়াল পেপার আর পর্দার রঙ মেলাতে ক্যাটালগের পাতা ওলটাই
রঙ আর রঙের গোলকধাঁধার মধ্যে অন্ধকার কানাগলি

রঙ মেলাবোই –
নান্যঃ পন্থা বিদ্যতে অয়নায়

পর্দা আর ওয়াল পেপারের রঙ
মিলেমিশে এক হবে অনুরাগে –
এক দুর্ধর্ষ বাস্তবের কল্পিত-কলা।

রঙে রঙ মেলাবার ইন্দ্রজাল
মনে মন মেলাবার জাদুকাঠি।

এখন আকাশে যুদ্ধের রঙ
মাটিতে রক্তের অসহায় রঙ

দিনের পর দিন এইসব রঙ
অস্বিত্বের ভেতরে হেঁটে চলে
ভয় এক অন্ধ রঙের আস্তরণ।

পর্দার রঙ ওয়াল পেপারের রঙ মেলাতে বসে –
ক্যাটালগের পাতায় হঠাৎ
এক চেতনাহীন রঙ ক্রমশ উজ্জ্বল হয়।

সোনালি মোহর

একটা ধ্বংস স্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে আছি ,
হরপ্পা কিংবা নালন্দা বিহার,
এই সব ধ্বংস স্তূপের নীচে ঘুমানো অভিশাপ

এখনো কি ইথার তরঙ্গে
ভবিষ্যতের স্বপ্ন গালিচা বোনে?
নির্মাণের উৎসবে লেখা হয় ধ্বংসের অনুলিপি
সৃষ্টি সাজে সুখের নিশ্চিত মোড়কে
ঋতুরঙ্গে ছন্দ থেকে ছন্দান্তর।

আমরা সবাই ছোট ছোট নিজস্ব দ্বীপে
গর্ত খুঁড়ি গুপ্তধনের আশায়
জীবনের সোনালি মোহর হারিয়েছে কোন অন্ধকারে?

বিস্ময়

বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে
কমলালেবু মসৃণ ভোরের শান্ত রোদ।
দরজার ওপারে আলো অন্ধকারের
জাফরি কাটা পুরনো সকাল আর বিকেল।
যেমন প্রাচীন বটের অসংখ্য ঝুরির জালে
অজাত স্বপ্নেরা বৃদ্ধ হবার শঙ্কায় কেঁপে ওঠে।
‘বেলা যে পড়ে এল, ওপারে চল্”
ঝড় এসে ডাক দেয়
ভাঙতে চায় দরজার কঠিন অর্গল-বন্ধন।
অমাস্যার মুদ্রিত আলোয় যাত্রা শুরু
লক্ষ্যের অন্তিমে পূর্ণ চান্দ্রেয়ী আসর।
এক কারিগর অবিরাম গড়েন আর ভাঙেন
কেন?
এক উত্তরহীন প্রশ্ন, বিস্ময় বুকের পাঁজরে …

দহন

সেই নিবেদনের ভঙ্গী থেকে একটা স্বপ্ন জন্ম নেয়
প্রকাশের বর্ণালী বাহারে ম্লান রূঢ় বাস্তবতা
সেই নিওন উজ্জ্বল চোখের জাদুতে
হয়তো ঢাকা পড়ে গেছে –

অমাবস্যার সত্য উদ্ভাস।
হেমন্তের শষ্যহীন মাঠে
বিষণ্ণতা মেলে দেয় বিবর্ণ কাঁথা,
বিগত জন্মে জারদৌসি নকশায় সাজানো

তোমার সবুজ উত্তরীয়
আজও স্মৃতির প্রকোষ্ঠে ধুনী জ্বালে
শরীরের মাধবী কুঞ্জে উষ্ণ জোয়ার জাগায়।

শীত আসে –

এক নিঃসঙ্গ সাঙ্কেতিক উন্মাদনায়
সূর্যমুখীর হলুদ শিরায়
শীতলতা ধূসর হয় ।

মগ্নতার অন্তিম প্রহরে –
শুধুমাত্র শ্বাপদীয় নিঃশ্বাসের ধীর ছন্দ।
যান্ত্রিকতার সাজুয্যে টিকে থাকার অসহ যুদ্ধে
রোজই দহন –
আফিম– বশ্যতায় সংগম।

লীনতাপ

মডিউলার কিচেনের কোণেও ধুলো জমে
কিছুটা তেলচিটে ভাব ওয়াল পেপারে –
সবকিছু ফিটফাট করতে চেয়েও
কেন ধ্বংস কনারা উচ্ছ্বল হয়?

তাসের ওপর তাস সাজানোর ছলে
গড়ে ওঠে ঘর –
আবার ভেঙেও যায় সাজানোরই কৌশলে।

ঝরাপাতার সবটুকু উত্তেজনা বুকে নিয়ে
এক আগন্তুকের সন্ধানে পথ হাঁটা –
হেমন্তের বিষণ্ণ বিকেলে
কিচেনের কোণে, বেডরুমের দেয়ালে
জমাট বাঁধা বরফের লীনতাপ –
কোন বারুদেই বিস্ফোরিত হবে না জেনে
বেডকভারের জংলা নকশার ভাঁজে
বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির ফোঁটা জমতেই থাকে।

হিস্ হিসে অন্ধকার

আলো কিংবা আলোর বিপরীতে –
অন্ধকারের প্রান্তিকতায় দাঁড়িয়ে
প্রত্যাবর্তনের দিক্ নির্ণয় করি।

সময়ের কররেখা নিজেকে গুছিয়ে নেয়
অগণিত দিনান্তের জাফরানি আলোয়।
স্বয়ংবরা রমণীর মত এক দুরাশার মায়ায়
হরধনু ভঙ্গের আস্ফালন,
মেনে নিতে হয় মৃত ইঁদুরের গর্তে।

শাঁখা সিঁদুরের চৌখুপী মাপে –
মাপসই হয় না যখন যাপিত জীবন চিত্র
তখনও কি প্রেম চোয়ানো একবিন্দু জল
শুধুই মেটামরফসিসে্র নামান্তর?

আন্তিগনের হাহাকার, অম্বার অগ্নিদহন
বুকে নিয়ে লড়াইয়ের হাতিয়ার খুঁজি
বারশো বর্গ ফিটের হিস্ হিসে্ অন্ধকারে …

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার দাঁতন থানার অন্তর্গত কোতাইগড়--- তুর্কা এস্টেটের জমিদার বংশের সন্তান রঞ্জনা রায়। জন্ম, পড়াশুনা ও বসবাস উত্তর কলকাতায়। বেথুন কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে সাম্মানিক স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর উপাধি লাভ করেন। ১৯৭০ সালের ৩০শে মে রঞ্জনা রায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম স্বর্গীয় জগত কুমার পাল, মাতা স্বর্গীয় গীতা রানি পাল। স্বামী শ্রী সন্দীপ কুমার রায় কলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়ের আইনজীবী ছিলেন। রঞ্জনা উত্তরাধিকার সূত্রে বহন করছেন সাহিত্যপ্রীতি। তাঁর প্রপিতামহ স্বর্গীয় চৌধুরী রাধাগোবিন্দ পাল অষ্টাদশ দশকের শেষভাগে 'কুরু-কলঙ্ক’ এবং 'সমুদ্র-মন্থন’ নামে দু'টি কাব্যগ্রন্থ রচনা করে বিদ্বজনের প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। ইতিপূর্বে রঞ্জনা রায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'এই স্বচ্ছ পর্যটন’ প্রকাশিত হয়েছে এবং তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'ট্রিগারে ঠেকানো এক নির্দয় আঙুল' সাহিত্যবোদ্ধাদের প্রভূত প্রশংসা পেয়েছে। তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ 'নিরালা মানবী ঘর' (কমলিনী প্রকাশন) ও চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ 'ইচ্ছে ঘুড়ির স্বপ্ন উড়ান' (কমলিনী প্রকাশন) দে’জ পাবলিশিংয়ের পরিবেশনায় প্রকাশিত। বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় কবির কবিতা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়ে চলেছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!