পুতিনের ৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিকে চক্রান্ত আখ্যা জেলেনস্কির

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন

টানা প্রায় সাড়ে ১০ মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘ এই সময়ে ইউক্রেন কোনও যুদ্ধবিরতি দেখেনি, এমনকি বড়দিনের উৎসবের সময়েও না। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেশ আকস্মিক ভাবেই ইউক্রেনে ৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে এই যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেন। এমনকি ভ্লাদিমির পুতিনের এই সিদ্ধান্তকে কৌশলগত চক্রান্ত বলেও আখ্যায়িত করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে ৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তিনি সেনাদের নির্দেশ দেন, তারা যেন ৬ ও ৭ জানুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালানো থেকে বিরত থাকেন।

মূলত রাশিয়া ও ইউক্রেনে বসবাসরত অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা যেন নির্বিঘ্নে বড়দিন পালন করতে পারেন সেটি নিশ্চিত করতেই এ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অর্থোডক্স ক্রিসমাস সময়কালে যুদ্ধবিরতির এই রাশিয়ান ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রস্তাবিত এই যুদ্ধবিরতি হলো পূর্ব ডনবাস অঞ্চলে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর অগ্রগতি রোধ করার এবং মস্কোকে আরও সৈন্য আনার সুযোগ দেওয়ার একটি কৌশল।

মূলত রোমান ক্যাথলিকদের শীর্ষ ধর্মগুরুর পদবি ‘পোপ’, আর রাশিয়াসহ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অর্থোডক্সপন্থিদের শীর্ষ ধর্মগুরুর পদবি ‘প্যাট্রিয়ার্ক’। রোমান ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্টপন্থিরা ২৫ ডিসেম্বর তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন পালন করলেও অর্থোডক্সপন্থিরা তাদের বড়দিন পালন করেন ৬ ও ৭ জানুয়ারি।

বর্তমানে অর্থডক্সপন্থিদের প্রধান ধর্মগুরু হলেন প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল অব মস্কো; একই সঙ্গে রাশিয়ার সব অর্থোডক্স গির্জার শীর্ষ নির্বাহীও তিনি। বৃহস্পতিবার এক লিখিত বার্তায় তিনি অর্থোডক্স বড়দিন উপলক্ষে রাশিয়া ও ইউক্রেনকে ৬ ও ৭ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।

প্যাট্রিয়ার্ক এই আহ্বান জানানোর পর অল্প সময়ের মধ্যে তাতে সাড়া দিয়ে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ক্রেমলিন থেকে বলা হয়, রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের প্রধানের ক্রিসমাস যুদ্ধবিরতির আহ্বানের পরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দিয়েছেন।

পুতিনকে উদ্ধৃত করে ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘হিজ হোলিনেস প্যাট্রিয়ার্ক কিরিলের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে, আমি রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে… ইউক্রেনের সম্পূর্ণ লাইন বরাবর যুদ্ধবিরতি কার্যকরের নির্দেশ দিচ্ছি।’

যুদ্ধবিরতি রাশিয়ার আক্রমণাত্মক এবং প্রতিরক্ষামূলক অপারেশন উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে কিনা তা উল্লেখ করা হয়নি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে গেলে রাশিয়া পাল্টা আঘাত করবে কিনা সেটিও স্পষ্ট নয়।

এরপরই বৃহস্পতিবার রাতে রাশিয়ান ভাষায় সুস্পষ্টভাবে কথা বলেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এসময় তিনি ক্রেমলিন এবং পুরো রাশিয়ানদের সম্বোধন করে বলেন, মস্কো বারবার কিয়েভের শান্তি পরিকল্পনাকে উপেক্ষা করেছে।

তার দাবি, ‘তারা (রাশিয়া) এখন ক্রিসমাসকে একটি আবরণ হিসাবে ব্যবহার করতে চায়। ডনবাসে আমাদের সেনাদের অগ্রগতি বন্ধ করতে এবং সরঞ্জাম, গোলাবারুদ ও সৈন্যদের আমাদের অবস্থানের কাছাকাছি আনতে এটিকে ব্যবহার করতে চায়। এটা তাদের কী দেবে? তাদের সার্বিক লোকসান আরও বাড়বে।’

জেলেনস্কি বলেন, ‘পুরো বিশ্ব জানে কিভাবে ক্রেমলিন নতুন উদ্যমে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যুদ্ধে বাধা সৃষ্টি করে।’

তিনি বলেন, যখন রাশিয়ান সৈন্যরা ইউক্রেন ত্যাগ করবে বা তাড়িয়ে দেওয়া হবে, তখনই কেবল যুদ্ধ শেষ হবে।

রুশ জনগণের উদ্দেশ্যে জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধের সমাপ্তি মানে ‘আপনার দেশের আগ্রাসন শেষ করা … এটি প্রতিদিন চলবে কারণ আপনার সৈন্যরা আমাদের মাটিতে রয়েছে … এবং যুদ্ধ শেষ হবে তখনই যখন আপনার সৈন্যরা চলে যাবে বা আমরা তাদের বের করে দেব’।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পশ্চিমের বিরুদ্ধে মস্কোর স্বার্থ রক্ষার জন্য পুতিন এবং তার যুদ্ধের কারণকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য রাশিয়ানদের প্রতি আহ্বানও জানান।

এছাড়া প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মাইখাইলো পোদোলিয়াক যুদ্ধবিরতিকে ‘ভণ্ডামি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এক টুইটে তিনি বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেন থেকে তাদের সব সেনাকে সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি হবে না। এছাড়া পুতিনের ঘোষণাকে ‘প্রোপাগান্ডা’ এবং ‘নিম্ন কর্ম’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি।

তার দাবি, পুতিন ইচ্ছে করে এ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন যেন পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে এটি মানতে বাধ্য করে। কারণ রাশিয়া দাবি করছে এটি একটি ‘মানবিক’ যুদ্ধবিরতি।

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধবিরতির প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘পুতিন কি বলে এ নিয়ে মন্তব্য করতে আমি অনিচ্ছুক। আমার কাছে এটি বিস্ময়কর লাগছে। ২৫ ডিসেম্বর নতুন বছরের আগেও হাসপাতাল এবং চার্চে বোমা হামলা চালাতে পুতিন প্রস্তুত ছিলেন। এখন যুদ্ধবিরতির নামে পুতিন কিছু অক্সিজেন পাওয়ার চেষ্টা করছেন।’

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!