সামাজিক প্রেক্ষাপটে গোণ্ড আদিবাসীদের জীবনচর্চার পর্যালোচনা: একটি সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

জয়দেব বেরা
জয়দেব বেরা
20 মিনিটে পড়ুন

ভারতবর্ষ একটি বৈচিত্রপূর্ণ দেশ। এখানে বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায় এবং জাতি-উপজাতির লোক বসবাস করে। ১৯৮১ সালের জনগণনা অনুসারে ভারতে উপজাতিগুলির জনসংখ্যা ছিল ৫ কোটি ১৬ লক্ষ যা ১৯৯১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ৬.৭৮ কোটি হয়েছে। বর্তমানে এদের সংখ্যা ৮ কোটিরও বেশি।

উপজাতি বা আদিবাসী হল একটি সামাজিক গোষ্ঠী, যারা একটি বিশেষ ভাষায় কথা বলে, একটি বিশেষ সংস্কৃতি বজায় রাখে, যা অন্য উপজাতি বা আদিবাসী গোষ্ঠীগুলি থেকে তাদের পৃথক করে। এরা কিন্তু কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এককথায় ভারতবর্ষের আদি বসতকারী মানবই হল আদিবাসী। সমাজতত্ত্বের আলোচনায় এই আদিবাসী সম্পর্কিত অধ্যয়ন বর্তমান সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজতত্ত্বের আলোচনা মূলত ‛নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চার’ দৃষ্টিভঙ্গিতে (Sub-altern perspective) এই আদিবাসীদেরকে নিয়ে বিশ্লেষণ মূলক ভাবে আলোচনা করা হয়ে থাকে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে আদিবাসীদের বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের জীবনের ইতিহাসকে বলা হয়ে থাকে ‛তলা থেকে বলা ইতিহাস’ (History told from below)। ফরাসি দার্শনিক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ফ্রাঞ্জ ফানোর ভাষায় এরা ‛জগতের লাঞ্ছিত’। আদিবাসীরা হল মূলত একধরনের ‛স্বতন্ত্র গোষ্ঠী’ (Ethnic Group)। সমাজতাত্ত্বিক ড. ঘুরে এদেরকে ‛Backward Hindu’ বলে অভিহিত করেছেন।

এই আদিবাসী বা উপজাতি সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিকগণ ও নৃবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এই প্রসঙ্গে গিলিন ও গিলিন বলেছেন, “স্থানীয় আদিম গোষ্ঠীর যেকোনো অংশ যারা একই ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বসবাস করে, যাদের ভাষা এক, যারা একই সংস্কৃতি অনুসরণ করে তাদের উপজাতি বলা হয়।”

Imperial Gazetteer of India অনুসারে, “একটি উপজাতি পরিবারের একটি সংকলন, যার একটি নাম আছে, যার ভাষা এক, একই ভূভাগের উপর অধিকার রাখে এবং যারা অন্তর্বিবাহ করে না।”

ডঃ রিভার্স (Rivers) বলেছেন, “তারা সমাজের এমন একটি গোষ্ঠী যাদের জীবনে জটিলতা নেই, যারা এখনো একই ভাষা বলে মনের ভাব প্রকাশ করে, যাদের আকৃতি বা সংস্কৃতিগত সাদৃশ্য আছে, নিজেদের নিয়ম-কানুন রক্ষা জন্য যাদের পঞ্চায়েত আছে এবং প্রয়োজন হলে যারা গোষ্ঠী সচেতন মনোবৃত্তি নিয়ে যুদ্ধবিগ্রহ বা সংগ্রাম করে থাকে।”

এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার (D.N.Majumdar) বলেছেন — “আদিবাসী সমাজ হল কয়েকটি পরিবারের সমষ্টি অথবা এক গোষ্ঠীর পরিবার, যাদের নামের সমতা থাকে, সদস্যরা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাস করে, একই ভাষায় কথা বলে এবং একই রূপ বিবাহভিত্তিক ও পেশাভিত্তিক ধর্মীয় বাধা-নিষেধ মেনে চলে এবং নিজেদের মধ্যে বাধ্যবাধকতা, সামঞ্জস্য ও আদান-প্রদান করে থাকে।”

এই উপজাতিদেরকে নানান নামে ডাকা হয়ে থাকে। যেমন- ‛খন্ডজাতি’, ‛জনজাতি’, ‛বন্যজাতি’, ‛আদিবাসী’ প্রভৃতি। যদিও এই উপজাতি নামটি নিয়ে নানান বিতর্ক রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, উপজাতি শব্দটির ‛উপ’ কথাটি হীন বা তুচ্ছ অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ‛উপ’ অর্থে মূল শাখার থেকে নূন‍্য, হীনকে বোঝায়। তাই উপজাতি নামটি এখন খুব বেশি ব্যবহার না করে বর্তমানে ‛আদিবাসী’ কথাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জানা যায়, ঠক্কর বাপা প্রথম এই ‛আদিবাসী’ নামটি তৈরি করেন এবং এই নামটি পরে গান্ধীজি ব্যবহার করতে শুরু করেন। যাইহোক এই আদিবাসী কথাটি অস্পষ্ট হলেও অন্য নামগুলির (উপজাতি, বন্যজাতি, খন্ডজাতি ও জনজাতি) মতো বিতর্কিত বা আপত্তিকর নয় বলে বর্তমানে ‛আদিবাসী’ কথাটাই ব্যবহার করা হচ্ছে।

ভারতে সমাজ বিকাশের সূচনা হয় ৩০-৬০ হাজার বছর পূর্বে আদিবাসী সম্প্রদায়ের হাত ধরেই। ভারতবর্ষে প্রায় ৫৭০ এর অধিক উপজাতি সম্প্রদায় রয়েছে যারা সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান ধারক ও বাহক। ১৯৪৯ সালে এই উপজাতি সম্প্রদায় ‛আদিবাসী’ তকমা পায় সাংবিধানিকভাবে। ভারতবর্ষের এই অসংখ্য আদিবাসীদের মধ্যে অন্যতম এক আদিবাসী হল গোণ্ড আদিবাসী। এই গোণ্ড আদিবাসী হল ভারতবর্ষের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায়। এই আদিবাসী উপজাতি সম্প্রদায়ের ৩৫.৬ শতাংশ স্থান জুড়ে রয়েছে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী ভারতবর্ষে গোণ্ড উপজাতির সংখ্যা হল ১৩,২,৫৬,৯২৮। পশ্চিমবঙ্গে এই গোণ্ড আদিবাসীদের জনসংখ্যা হল ১৩,৫৩৫ (২০১১)। ৬ পশ্চিমবঙ্গে এই গোণ্ড আদিবাসীদের জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। আমরা যদি ১৯৮১ সালের আদমশুমারি লক্ষ করি তাহলে দেখতে পাবো যে, পশ্চিমবঙ্গে গোণ্ড আদিবাসীদের জনসংখ্যা ছিল ৪,৯২৩ ; আবার ১৯৯১ সালে এই জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫,৯৬১। এইভাবে ভারতবর্ষে তথা পশ্চিমবঙ্গে এই আদিবাসীদের জনসংখ্যা খুব দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

গোণ্ড আদিবাসীদের সাধারণ পরিচিতি:
ভারতবর্ষে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে গোণ্ডরাই হল সংখ্যাগরিষ্ঠ। এরা মূলত ছত্তিশগড়, মালভূমি অঞ্চল, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ সহ ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে বসবাস করে থাকে। এরা মূলত দ্রাবিড় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত। তারা তাদের মাতৃভাষা ‘গোণ্ডী’ ভাষার পাশাপাশি হিন্দী, মারাঠী, তেলেগু এবং বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকে। অর্থাৎ এদের মধ্যে দ্বি-ভাষী (Bi-lingual) এমনকি তৃ-ভাষী ও (Tri-lingual) লক্ষ করা যায়। এরা মূলত পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের অন্তর্গত। গোণ্ডরা মূলত ভারতের উচ্চ (৭০০-৯০০ মিটার) ভূমিভাগে বসবাস করে থাকেন। তাই এরা ‛হিল ম্যান’ (Hill Man) নামেও পরিচিত। ভারতের প্রাচীন ভূখন্ড ‛Gondowanaland’ থেকে এই সম্প্রদায়ের নাম ‛Gond’ এর উৎপত্তি। এই গোণ্ড আদিবাসী E.von EicKstedt (১৯২৬-২৯) কৃত ‛Veddid’ নামক প্রধান ভারতীয় প্রজাতির ‛Gondid’ নামক উপপ্রজাতির অন্তর্গত। আমরা যদি এই আদিবাসীর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো, এই আদিবাসী খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দণ্ডকারণ‍্য, ছত্তিশগড়, বিন্ধ্যচল ও বূন্দেলখন্ড প্রভৃতি স্থানে শাসনকার্য চালাত। যার ফলে এই আদিবাসী ‛রাজ গণ্ড’ নামেও পরিচিত। এরা মূলত কালো, মোটা ও ধূসর রঙের হয়ে থাকে। এদের চুল কালো এবং কোঁকড়ানো হয়ে থাকে। এদের নাক চ্যাপ্টা, ঠোঁট মোটা এবং মুখ চওড়া প্রকৃতির হয়ে থাকে। এরা মূলত উদার, সাহসী ও সত্যবাদী প্রকৃতির হয়ে থাকে। এদের প্রধান জীবিকা হল শিকার করা এছাড়াও এরা ঝুম চাষা বা স্থায়ী কৃষিকাজও করে থাকে। এরা ঝুমচাষকে ‛দীপা’ বা ‛প্রয়কা’ নামে এবং স্থায়ী কৃষিকে ‛পেণ্ডা’ নামে অভিহিত করে থাকে। ১০ গোণ্ডরা মূলত পাহাড়ি মারিয়া, দাদমি মারিয়া, সুরিয়া, ধকড়, রাওয়াত প্রভৃতি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে থাকে।

গোণ্ড আদিবাসীদের জীবনচর্চার পর্যালোচনা করলে যে বিষয়গুলি আমরা দেখতে পাবো সেগুলি হল:

বাসস্থান ও ঘরবাড়ি:
গোণ্ডদের বাসস্থান ও ঘরবাড়ি খুবই সাধারণ প্রকৃতির। অন্যান্য আদিবাসীদের মতোই এদের ঘরবাড়ি। এদের ঘরগুলি মূলত মাটির হয়ে থাকে এবং বাড়ির ছাউনি হয়ে থাকে টালির কিংবা খড়ের। এদের ঘরগুলির মূলত দুটি কামরা হয়ে থাকে। এই কামরা গুলি একটি বড় হয়ে থাকে এবং অন্যটি ছোট হয়ে থাকে। বড় কামরাটি শোয়ার ঘর হিসেবে এরা ব্যবহার করে থাকে আর ছোট কামরাটিকে ভাঁড়ার ঘর বা রান্নাঘর হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও হাঁস, মুরগি, ছাগল প্রভৃতি পালন করার জন্য এরা ঘরের সামনের দিকটা সামান্য বাড়িয়ে নিয়ে ঘরের মতো করে তৈরি করে থাকে। বাড়ির উঠানে এরা বিভিন্ন শাক-সবজিরও চাষ করে থাকে।

উপজীবিকা:
গোণ্ডদের প্রধান উপবিভাগ হল মূলত বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা। তারা জঙ্গল থেকে বনজ সম্পদ (কাঠ, ফল-মূল, মধু, জ্বালানি) সংগ্রহ করে সেগুলি হাটে-বাজারে বিক্রি করে সংসারের খরচ চালায়। কিন্তু ‛বন সংরক্ষণ আইন’ প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকে তারা আর সেভাবে বনজ সম্পদ সংগ্রহ করতে পারে না। তাই তারা সংসার চালাতে কৃষিকাজকে বেছে নেয়। ১৯৮১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, যে সারাদেশে গোণ্ডদের শতকরা ৬৪জন কৃষিজীবী এবং ২২ জন কৃষি মজুর। ১১ যাইহোক গোণ্ডদের উপজীবিকার কথা বলতে গেলে এখন আর বনজ সম্পদ সংগ্রহের কথা বলা যায় না ; এখন তাদের উপজীবিকা হয়ে উঠেছে কৃষিকাজ। এছাড়াও তারা পশুপালনের কাজেও যুক্ত রয়েছে।

আসবাবপত্র ও পোশাক-পরিচ্ছদ:
এই আদিবাসীদের আসবাবপত্র খুবই সাধারণ। সংসার চালাতে গেলে যে আসবাবপত্রগুলির খুব প্রয়োজন অর্থাৎ যেগুলো না হলে চলে না তারা সেগুলোই রাখে এবং ব্যবহার করে। তারা মাটির হাঁড়ির পাশাপাশি স্টেনলেস স্টিলের থালা-বাটি, গ্লাস প্রভৃতি ব্যবহার করে থাকে। তারা পলিথিলিন-প্লাস্টিকের বালতি, ঝুড়ি, মগ প্রভৃতিও ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও কাপড়-চোপড়, গয়না-গাঁটি, জমির দাখিলা সহ অন্যান্য মূল্যবান কাগজপত্র ও জিনিস রাখার জন্য তারা টিনের সুটকেসও ব্যবহার করে থাকে।

গোণ্ড আদিবাসীদের পোশাক-পরিচ্ছদও অতি সাধারণ। এই আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত ছেলেরা ৭-৮ হাতের মোটা ধুতি আর মেয়েরা মোটা শাড়ি ব্যবহার করে থাকে। মেয়েরা তাঁতের কাপড় পরিধান করতে বেশি পছন্দ করে। যদিও আধুনিক শিক্ষিত ছেলেরা এখন প্যান্ট, শার্ট, জুতো ব্যবহার করছে। আমরা জানি মেয়েরা সবসময় একটু সাজতে বেশি ভালোবাসে ও পছন্দ করে। এই ব্যতিক্রম নয় গোণ্ড আদিবাসী মেয়েরাও। তারাও সাজগোজ করতে খুব পছন্দ করে। মেয়েরা গলার হার, কানের রিং, মাথার কাঁটা সহ আরও অন্যান্য সুন্দর সুন্দর অলংকার তারা পরে থাকে। যারা একটু অবস্থাপন্ন তারা আবার সোনা-রূপার গয়নাও পরে থাকে। গোণ্ড আদিবাসী মেয়েরা একটি বিশেষ অলংকার করে থাকে, যার নাম হল – ‘উলকি’। তারা নিজেকে আরও সুন্দর করে তোলার জন্য গলায়, কপালে, হাতে উলকি পরে থাকে। উলকি হল এক বিশেষ ধরনের অলংকার। যেমন -অর্ধচন্দ্র, কাঁকড়াবিছে, ময়ূর, তারা, ফুল, চিরুনি, হরিণ প্রভৃতির মতো দেখতে অলংকার।

গ্রাম সংগঠন:
গোণ্ড আদিবাসীদের গ্রাম সংগঠনের বিষয়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গোণ্ডদের গ্রামসমাজে নিজস্ব একটি গ্রাম পঞ্চায়েত থাকে। এই পঞ্চায়েতই গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, সমস্ত সামাজিক সমস্যা ও ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসা করে থাকে। এই পঞ্চায়েতের সদস্য কেবলমাত্র ছেলেরাই হতে পারে। কারণ গোণ্ডদের সমাজ মূলত পিতৃতান্ত্রিক প্রকৃতির। এই পঞ্চায়েত পরিচালনার ভার যাঁর উপর থাকে তাঁকে ‛মুখিয়া’ বলা হয়। একবছর অন্তর এই পঞ্চায়েত গঠন করা হয়ে থাকে। ব্যভিচার, অবৈধ প্রেম, বিবাহ-বিচ্ছেদ প্রভৃতি সম্পর্কিত বিষয় গুলোও পঞ্চায়েত মীমাংসা করে থাকে। এছাড়াও পিতার মৃত্যুর পর সম্পত্তির সমান ভাগ করার সময়েও যে বিবাদ দেখা যায় তা পঞ্চায়েতই মীমাংসা করে দেয়। ছেলেরাই এই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে থাকে।

জন্মসংস্কারের রীতি-নীতি:
গোণ্ড আদিবাসী নারীরা যখন অন্তঃসত্ত্বা হয় তখন তারা অন্যান্য আদিবাসী নারীদের মতোই নানারকম বিধিনিষেধ পালন করে থাকে। এইসময় তারা দুপুরবেলা এবং রাতের বেলায় একা একা বের হয় না। কারণ তারা বিশ্বাস করে যে, এইসময় নাকি অশরীরী আত্মার কুদৃষ্টি তার উপর ওপর পড়তে পারে। এছাড়াও অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন গোণ্ড আদিবাসী নারীরা কোন প্রাণী হত্যা করে না। তারা মনে করে জীব হত্যা করলে এই সময় অমঙ্গল হয়ে থাকে। গোণ্ড আদিবাসী নারীদের শিশু জন্ম হওয়ার সময়ে কোন ঘাসি জাতীয় বৃদ্ধা মহিলা ধাই-মার কাজ করে থাকে। শিশু জন্ম নেওয়ার পর ঐ বাড়িতে ২১দিন থেকে ৩০দিন পর্যন্ত জন্মকালীন অশৌচ পালন করা হয়। এইসময় নতুন মা’কে হাঁড়িকুড়ি স্পর্শ করতে দেওয়া হয় না, রান্নাঘরেও যেতে দেওয়া হয় না। শিশুর পিতা এই অশৌচ চলাকালীন চুল, দাড়ি কাটে না। আবার যখন অশৌচ পালনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তখন মা’কে ও শিশুকে স্নান করানো হয়। বাড়ির মাটির হাঁড়িকুড়ি থাকলে সব ফেলে দেওয়া হয়। শিশুটির শোওয়ার জন্য যে মাদুর ব্যবহৃত হয়েছিল, সেটাও পুড়িয়ে দেওয়া হয় থাকে। তারপর বাড়ির ছেলেরা চুল, দাড়ি, নখ কেটে স্নান করে। এই শুদ্ধিকরণ অনুষ্ঠানে আত্মীয়স্বজন ও পাড়ার প্রতিবেশীদেরকে নেমন্তন্ন করা হয় এবং সামান্য খাওয়া-দাওয়ারও আয়োজন থাকে। এরপর থেকে মা আবার বাড়ির সব জিনিস স্পর্শ করতে পারে, রান্নাও করতে পারে প্রভৃতি।

বিবাহের রীতি-নীতি:
গোণ্ড সমাজে ছেলেমেয়ে বিবাহের যোগ্য হলে তবেই বিবাহ দেওয়া হয় থাকে। কিন্তু এই সমাজে বাল্যবিবাহও প্রচলিত রয়েছে। একই গৌত্রে গোণ্ড আদিবাসীদের কখনও বিয়ে হয় না। গোণ্ড সমাজে ‛দেবরবরণ’ এর বিষয়টি লক্ষনীয়। অর্থাৎ বড় ভাইয়ের মৃত্যু হলে ছোট ভাই বড় ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে বিবাহ করতে পারে, কিন্তু ছোট ভাইয়ের মৃত্যু হলে বড় ভাই কোন সময়ই ছোট ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে বিবাহ করতে পারে না। এই আদিবাসীদের মধ্যে বিধবা বিবাহেরও প্রচলন আছে। এদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে পর স্বামী কিংবা স্ত্রী পুনরায় আবার বিবাহ করতে পারে, এই বিবাহকে ‛পাত-খাদি’ বলা হয়।

গোণ্ড সমাজে মূলত চার ধরনের বিবাহ লক্ষ করা যায়-

ক) বিয়া:
এই বিবাহ কথাবার্তা চালিয়ে, দেখাশোনা করে হয়ে থাকে। সাধারণত কথাবার্তা চালিয়ে ছেলেমেয়ের যে বিবাহ দেওয়া হয় সেই বিবাহকে গোণ্ডদের সমাজে শুধুই ‛বিয়া’ বলে থাকে। এই বিবাহে পণ হিসেবে নগদ টাকা কন্যার বাবাকে দেওয়া হয়। বর-কনের উভয়েরই বাড়িতে বিবাহ মণ্ডপ তৈরি হয়। এই বিবাহে পাত্র-পাত্রীর বাড়ির লোকজন সহ নিমন্ত্রিত আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা উপস্থিত থেকে ছেলেমেয়ের বিবাহ দেওয়া হয়ে থাকে।

খ) সত্তাবত্তা বিয়া:
এই বিবাহ মূলত কন্যা বিনিময় প্রথাকে (Marriage by exchange) ভিত্তি করে হয়ে থাকে। কোন ছেলে যদি কন্যাপণ দিতে রাজী থাকলেও স্ত্রী না পায় তবে তাকে কন্যা-বিনিময় প্রথার উপর নির্ভর করতে হয় অর্থাৎ তাকে নিজের কোন বা অপর কোন আত্মীয়াকে অন্য কোন ছেলের হাতে সমর্পণ করে স্ত্রী সংগ্রহ করতে হয়। তবে এই আত্মীয়াকে যুবতী হতেই হবে এমন কোন কথা নেই।

গ) ওহারজাওয়াই বিয়া:
এই বিবাহে দেখা যায়, যদি ছেলে কন্যাপণ দিতে অক্ষম হয় তবে সেই ছেলেকে ভাবী শ্বশুরের বাড়িতে গোলামী খেটে বা শ্রমদান করে তা পরিশোধ (Marriage by service) করতে হয়। আর যদি কোন কারনে বিবাহ না হয় তাহলে মেয়ের বাবাকে প্রচলিত পারিশ্রমিক হারে ছেলেকে তার শ্রমের মূল্য মেটাতে হয়। এই বিয়ে ছেলের কাছে মূলত ‛ঘর-জামাই’ থাকার মতো। সাধারণত মেয়ের যদি আপন ভাই না থাকে এবং ছেলেও যদি কন্যাপণ দেওয়ার ক্ষমতা না থাকে, তখনই এই ‛ওহারজাওয়াই বিয়া’ হয়ে থাকে।

ঘ) চারনিংনি বিয়াগ:
গোণ্ডদের এই বিবাহ মূলত জবরদস্তি মেয়ে হরণ করে বিবাহ (Marriage by intrusion)। মধ্যপ্রদেশের বস্তার জেলায় গোণ্ডদের মধ্যে পূর্বে এরূপ বিবাহ প্রচলিত ছিল। এই বিবাহকে দন্ডবিধি আইন অনুসারে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়। তাই গোণ্ড আদিবাসীরা এই বিবাহকে তুলে দিয়েছে। বর্তমানে এই বিবাহ আর সেভাবে দেখা যায় না।

ধর্মীয় বিশ্বাস ও উৎসব-অনুষ্ঠান:
গোণ্ড সমাজে বাড়ির পূজো-অর্চনার ব্যাপারটি খুবই জটিল ও বৈচিত্র্যমূলক। গোণ্ডদের গোত্র এক হলেও অনেক সময় পূজোর রীতিনীতি কিন্তু একরকম হয় না। গোত্রের দেবদেবী (পারসাপেন) একাধিক, কেউ দুই দেবতার উপাসক, কেউ তিন দেবতার, আবার কেউ বা চার দেবতার উপাসক। এরকম সাত রকমের দেবতার উপাসক পর্যন্ত দেখা যায়, তারা বলে — দো-দেও, তিন দেও, চার দেও, পাঁচ দেও, ছে দেও, সাত দেও। এদের গ্রাম পুরোহিতকে বলে হয় ‛দেবারি’, বংশ বা গোত্র পুরোহিতকে বলা হয় কাতোরা, এবং শাস্ত্রোপদেষ্টাকে বলা হয় ‛ভক্তাল’। গোণ্ডদের প্রধান দেবতা হলেন ‛বড়দেও’। গোণ্ডরা নিজেদেরকে এঁরেই সন্তান বলে মনে করেন। সাধারণত মাঘ মাসে এই ‛বড়দেও’র পূজা করা হয়। গোণ্ডরা ভূত-প্রেত, তুক-তাক, ডাইনী, নজর দোষ ইত্যাদিতে ভীষণ বিশ্বাস করে থাকে।

গোণ্ডরা সর্বদা উৎসব-অনুষ্ঠানে মেতে থাকে। তারা উৎসব-অনুষ্ঠানে দল বেঁধে নাচ-গানের আসরে নেমে পড়ে। নাচ-গানের মধ্যেই তারা যেন এক উন্মুক্ত প্রাণ খুঁজে পায়। দেহে-মনে প্রচুর প্রাণশক্তি, তাই তারা উজাড় করে দেয়, নাচ-গানের আসরে। দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করার দরুন তারা এখানকার উৎসব-অনুষ্ঠানগুলিকে (শিবরাত্রি, দেওয়ালী, হোলি প্রভৃতি) যেন আপন করে নিয়েছে। এইরকমই একটি চিত্র লক্ষ করা যায়, নয়াদিল্লিতে ১৯৮২ সালের ‛এশিয়ান গেমস’ উদ্বোধনের দিনে গোণ্ড নারীদের উদ্দাম নাচ-গানের অনুষ্ঠান। একই ছন্দে, একই তালে, একই মেজাজে শত শত গোণ্ড নারীরা অপূর্ব নাচে মেতে উঠেছিল।

মৃতদেহ সৎকারের রীতিনীতি:

গোণ্ডদের সমাজে মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়, আবার অনেকে দাহ করে থাকে। তবে বেশিরভাগ সময়েই মৃতদেহ দাহ করা হয়। এই আদিবাসীদের কেউ যদি মারা যায় তাহলে তার মৃত্যু সংবাদ ঢাক বাজিয়ে আত্মীয়স্বজন, পাড়াপড়শীকে জানিয়ে দেওয়া হয়। তারপর সবাই এলে তার মৃতদেহকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে মৃতদেহকে ভালোভাবে তেল-হলুদ মাখানো হয়ে থাকে। মৃতদেহ দাহ করার পর সবাই স্নান করে বাড়ি ফিরে এবং বাড়িঘরও এসময় ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হয়।

গোণ্ডদের তিনদিন অশৌচ পালন করা হয়। এইসময় বাড়িতে আমিষ খাওয়া নিষেধ থাকে। ছেলেদের চুল, দাড়ি, নখ কাটা প্রভৃতিও নিষেধ। এই তিনদিন তারা বাড়ির বাইরে কাজকর্মও বন্ধ রাখে। তিনদিন পর শ্রাদ্ধ হয়ে থাকে। ছেলেরা চুল, দাড়ি, নখ কেটে বাইরে থেকে স্নান করে আসে। শ্রাদ্ধের দিন বাড়িতে নিমন্ত্রিত আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা আসেন। এইদিন ঘরে-দুয়ারে গোবর জল ছিটিয়ে দেওয়া হয় থাকে। পরে তারা মৃতের স্মৃতি অক্ষয় রাখার জন্য সাত-আট ফুটের একটি পাথর মাটিতে পুঁতে দেয়।

ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অত্যন্ত প্রাচীন ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রবাহমান। এই ইতিহাস সুদীর্ঘ এবং বিরতিবিহীনভাবে অব্যাহত। এই প্রসঙ্গে ভারতীয় সমাজতাত্ত্বিক ইরাবতী কার্ভে (Irawati Karve) ভারতকে বলেছেন ‛বিশ্বের সংক্ষিপ্তসার’ (India — the epitome of the world)। অর্থাৎ ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ব্যাপকতা ও বৈচিত্র্য পশ্চিমী দুনিয়ার কোন দেশেই পাওয়া যাবে না। এই ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে বিশিষ্ট সমাজতাত্ত্বিক পিতিরিম সরোকিন (Pitirim Sorokin) এই বিশ্ববন্দিত ভারতীয় দার্শনিক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন (S. Radhakrishnan) বলেছেন, ভারত শক, হুন, পাঠান, মোগল, গ্রিক, পারসিক প্রভৃতি বিভিন্ন বিদেশি শক্তিদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু বারে বারে এবং বিভিন্ন বৈদেশিকের আক্রমণ সত্ত্বেও ভারত তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারাকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রেখেছে। ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সারা বিশ্বে নিরবিচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রাখতে যাদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তারা হলেন ‛আদিবাসী সম্প্রদায়’। আদিবাসীরা তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আজও বিশ্বের দরবারে বিরতিবিহীনভাবে অব্যাহত রেখেছে। এই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ‛গোণ্ড সম্প্রদায়’। উপরিউক্ত আলোচনার মধ্যে দিয়ে আমরা দেখতে পাই যে, গোণ্ড আদিবাসীদের জীবনচর্চা ছিল খুবই বৈচিত্র্যময়। সামাজিক প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে বলা যায়, তারা আজ অনেকটাই হিন্দু সনাতনীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ঠিক যেন সমাজতাত্ত্বিক এম.এন.শ্রীনিবাসের ‛সংস্কৃতায়ন’ প্রক্রিয়ার মতোই। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগ। তাই তারা এই বিশ্বায়নের যুগে অনেকটাই শিক্ষিত ও আধুনিক হয়েছে। তবুও কিন্তু গোণ্ডরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে কখনোই পুরোপুরিভাবে ত্যাগ করেনি। বরং তারা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সর্বদাই আপন করে বিশ্বের দরবারে ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ করে তুলেছে। তাই সর্বশেষে সমাজতাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটে বলা যায়, ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আজও বিরতিবিহীনভাবে অব্যাহত রাখতে আদিবাসী সমাজ তথা গোণ্ড সম্প্রদায়ের ভূমিকা যথেষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র:

১)গাঙ্গুলী, রামানুজ ও মঈনুদ্দিন ,সৈয়দ আব্দুল হাফিজ(২০১৬);সমকালীন ভারতীয় সমাজ, PHI Learning private Limited, দিল্লী, পৃষ্ঠা- ১৮৮ ।
২)তদেব,পৃষ্ঠা-১৮৮।
৩)তদেব,পৃষ্ঠা-১৮৮।
৪)বাস্কে,ধীরেন্দ্রনাথ(২০১১);পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সমাজ (প্রথম খন্ড, পঞ্চম প্রকাশ), সুবর্ণরেখা,কলিকাতা, পৃষ্ঠা- ১
৫) তদেব,পৃষ্ঠা: ১-২ ।
৬)মন্ডল,গোপাল(২০১৮,৯ মে);ভারতের ‘রাজ’ উপজাতি সম্প্রদায় – গোণ্ড , মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া।
৭)বাস্কে,ধীরেন্দ্রনাথ(২০০৭);পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সমাজ (দ্বিতীয়),সুবর্ণরেখা, কলিকাতা,পৃষ্ঠা- ১১১
৮)মন্ডল,গোপাল(২০১৮,৯ মে);ভারতের ‘রাজ’ উপজাতি সম্প্রদায় – গোণ্ড , মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া।
৯)পূর্বোক্ত লিঙ্ক/আর্টিকেল।
১০)পূর্বোক্ত লিঙ্ক/আর্টিকেল।
১১)বাস্কে,ধীরেন্দ্রনাথ(২০০৭);পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সমাজ (দ্বিতীয়),সুবর্ণরেখা, কলিকাতা,পৃষ্ঠা- ১১৩
১২)তদেব,পৃষ্ঠা- ১১৮
১৩)তদেব,পৃষ্ঠা- ১১৯
১৪)তদেব,পৃষ্ঠা- ১১৯
১৫)তদেব,পৃষ্ঠা- ১১৮

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি ও তথ্যসূত্র:

ইংরেজি:

1. koreti,shamrao (vol.6,no.4,April 2016); Socio-Cultural History of the Gond Tribes of Middle India, International Journal of social science and Humanity.
2. Sanyal, Srabani and Ramyash (vol.66,no-2,june-2020); Livelihood Sources of Gond Tribes:A Study of Village Mangalnaar , Bhairamgarh block,Chhatisgarh , NGJI;An International peer-Reviewed Journal NGSI – BHU , ISSN :0027-9374/2020/1739.
3. Panda, P and Sahoo,T(2012);Gond (A Schedule Tribe of odisha), Scheduled castes & scheduled Tribes Research and Traning Institute, Bhubaneswar- 751003.
4. Vahia, M.N.& Halkare , Ganesh( 2013); Aspects of Gond Astronomy,Journal of Astronomical History and Heritage, 16(1),29-44 (2013).
5. Census of India-1961( Vollume- 11, Ethnographic Notes);A Monograph on Gonds , office of the Director of census operation , Andhra Pradesh , Hyderabad.
6. V. Sraavya Rajasri Kumar (Volume 24, Issue 2,ser.7(Feb-2019); Gondi Language- Identity, Politics and struggle in India, IOSR Journal of Humanities and Social Science e-ISSN -2279-0837, P-ISSN-2279-0845.

বাংলা:

১)বেরা,জয়দেব সম্পাদিত (২০২০);দলিত,NYRA BOOKS, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া।
২)ভদ্র,গৌতম সম্পাদিত (১৯৯৮); নিম্নবর্গের ইতিহাস , প্রতিভাস,কলকাতা।
৩)মহাপাত্র,অনাদিকুমার (২০১৫); সমকালীন সমাজতত্ত্ব,সুহৃদ পাবলিকেশন, কলকাতা।
৪)মহাপাত্র,অনাদিকুমার (২০১৫); বিষয় সমাজতত্ত্ব প্রত্যয় ও প্রতিষ্ঠান,সুহৃদ পাবলিকেশন, কলকাতা।
৫)মহাপাত্র,অনাদিকুমার (২০১৬); ভারতীয় সমাজব্যবস্থা,সুহৃদ পাবলিকেশন, কলকাতা।
৬)দে, পার্থসারথি (২০১১); সমাজতত্ত্বের ইতিবৃত্ত, পিয়ারসন, দিল্লী।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
জয়দেব বেরা ভারতবর্ষের একজন তরুণ কবি,সাহিত্যিক এবং লেখক। তিনি 'মানসী সাহিত্য পত্রিকা'র সম্পাদক। তিনি রামধনু ছদ্মনামে দুই বাংলায় পরিচিত। পিতার নাম রিন্টু বেরা ও মাতার নাম মানসী বেরা। তিনি ১৯৯৭ সালে ১২ই আগস্ট পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বৃন্দাবনপুর নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি 'সেবব্রত নার্সিং কলেজ' এ সমাজতত্ত্বের গেস্ট লেকচারার হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। তিনি ছাত্রাবস্থা থেকেই একজন অক্ষরকর্মী হিসেবে পরিচিতি। তিনি 'পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ' এবং 'ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি' এর সদস্য। তিনি ভবিষ্যতে গবেষণাকে সামনে রেখে জীবনে এগিয়ে যেতে চান। দেশ - বিদেশের অসংখ্য পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা সমাদৃত হয়েছে। তিনি লেখা-লেখির জন্য একাধিক সম্মাননাও অর্জন করেছেন। তাঁর রচিত একক ও যৌথ গ্রন্থ এবং জার্নাল গুলি হল- একক কাব্যগ্রন্থ- 'কবিতার ভেলা', 'কবিতায় মার্ক্সবাদ' , 'বাস্তবতা'। যৌথ কাব্যগ্রন্থ- কবিতার মহল্লা, প্রেমনগরী,দোহার,হেমন্তিকা,কাচের জানলা,দুই মলাটে কবিসভা,কবিতার চিলেকোঠা, সমকালের দুই বাংলার কবিতা-২(বাংলাদেশ),নাম দিয়েছি ভালোবাসা, সৈকতের বালুকনা,কবির কল্পনায়, শব্দভূমি,হৃদয়ের প্রাঙ্গণে, কবিতা সংকলন-১,আলাপন, কবিতারা কথা বলে প্রভৃতি সহ একাধিক যৌথ কাব্যগ্রন্থ। একক প্রবন্ধ এর বই:- 'জাগরণ', 'কোভিড-১৯ ও সমাজতত্ত্ব।' একক নিবন্ধ এর বই :- মনের কথামালা (বাংলাদেশ)। সম্পাদনা মূলক বই- 'দলিত', 'পলাশের ডাকে বসন্ত প্রহরীরা','আদিবাসীদের সমাজ ও জীবনযাত্রা'। সম্পাদনা মূলক জার্নাল- সেতু (ISSN: 2454-1923 14 th year, 37 Issue, December-2020.) একক সমাজতত্ত্বের বই/স্কুল পাঠ্য বই:- 'সমাজতাত্ত্বিকদের ইতিবৃত্ত', ' শিশুদের সমাজতত্ত্ব'(চতুর্থ শ্রেণি), 'উচ্চ মাধ্যমিক সমাজতত্ত্বের সাফল্য'(দ্বাদশ শ্রেনি), 'উচ্চ মাধ্যমিক সমাজতত্ত্বের প্রশ্ন সম্ভার (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি),উচ্চ মাধ্যমিক সমাজতত্ত্বের সমাধান (দ্বাদশ শ্রেণি) প্রভৃতি।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!