আমার রবি

কৃষ্ণা গুহ রায়
কৃষ্ণা গুহ রায়
3 মিনিটে পড়ুন

শিশুবেলায় তোমায় প্রথম চিনেছিলাম সহজ পাঠে, কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি, বোঝাই করা কলসি, হাঁড়ি দিয়ে৷ তখন পাড়ায় পাড়ায় আবার কারুর বাড়িতে একটা কাঠের চৌকি আর কাপড় টাঙিয়ে ঘরোয়াভাবে তোমার জন্মদিন করা হতো৷ এখনকার মতন আড়ম্বর সেসময়ে ছিল না৷ তোমার জন্মদিনে শিশুশিল্পী হিসেবে উৎসাহে আবৃত্তি করতাম “বীরপুরুষ, তালগাছ, লুকোচুরি৷”

তারপর যখন কৈশোরের মুকুল সঞ্চারিত হলো শরীরে, নৃত্যের তালে তালে মেতে উঠলাম তোমায় নিয়ে৷ পাড়ার এক দিদি তোমায় নিয়ে কোনও অনুষ্ঠান হলেই নাচ তুলিয়ে দিতো৷ কত যে নৃত্যশৈলী আর কত যে তার ভঙ্গীমা৷

একের পর এক তোমার গানের মালা গেঁথে নৃত্যের ঝংকারে আমার কৈশোরের প্রেম তোমাকে নিবেদন করেছি কবি, “হৃদয় আমার নাচেরে, এসো নীপবনে, মোর বীণা ওঠে “আরও যে কত তা আজ আর মনে নেই৷

তোমার “পূজারিনীতে” সেজেছিলাম বধূ অমিতা৷ এখনও মনে আছে দৃপ্তস্বরে বলেছিলাম, ‘অবোধ, কী সাহসবলে এনেছিস পূজা!’

কিশোরীবেলার অবাধ্য প্রেমের লাজুক চাউনির প্রথম শিহরণে গেয়ে উঠেছিলাম তোমারই গান, ‘প্রাণ চায় , চক্ষু না চায় ৷’

স্কুলের গন্ডী পেড়িয়ে কলেজে পা দিতেই কলেজের প্রথম বার্ষিক অনুষ্ঠান ‘চিত্রাঙ্গদা।’ না তখন আর নাচে না ভাষ্যপাঠ করেছিলাম ৷ উদ্যম যৌবনে তুমিই শিখিয়েছিলে, ‘আমার চেতনার রঙে পান্না হলো সবুজ।’

পরবর্তীকালে যখন আকাশবাণীতে উপস্থাপনার কাজ পেলাম, জানো রবি খুব গর্ব হয়েছিল, কারণ আকাশবাণীতো তোমারই দেওয়া নাম৷

আকাশবাণী কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ছুটেছিলাম শান্তিনিকেতন বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠান টেক করতে৷ তৎকালীন অনুষ্ঠান আধিকারিক প্রয়াত রুবী বাগচী একটা ছোট্ট চিরকূট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, অমিতাদিকে গিয়ে দেখাস তোকে সাহায্য করবে৷ অমিতাদি মানে অমিতা সেন, ক্ষিতি মোহন সেনের কন্যা এবং অমর্ত্য সেনের মা৷

ছোট্ট চিরকূটে রুবীদি লিখেছিলেন, শ্রদ্ধেয়া অমিতাদি, ভালবাসি বলে বিরক্ত করতে সাহস পাই৷ তোমার কাছে কৃষ্ণাকে পাঠালাম ওকে একটু দেখো৷

আনন্দের আবেগে ভেসে গিয়েছিলাম সেদিন৷ বুঝেছিলাম ভালবাসার মানুষদের সত্যিই বিরক্ত করা যায় এবং তারা সেটা হাসিমুখে মেনেও নেন৷

শান্তিনিকেতনে যেদিন পৌছালাম, পরদিন যখন অমিতাদির কাছে গেলাম ওনার স্নেহ আর আদরের আন্তরিকতায় ভরে উঠল প্রতীচী৷

বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠান টেক করতে গিয়ে মোহরদি তথা কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, গোরাদা প্রমুখের সান্নিধ্য৷ এদের স্নেহের আলিঙ্গনে আমি তখন আপ্লুত৷ মনে হয়েছিল ওই তো ওইখানটিতে তুমি বসে আছো৷ স্মিত হেসে বলেছিলাম “তুমি রবে নীরবে৷”

সংসার জীবনে যেদিন প্রবেশ করলাম সেদিনও রবি তুমি ছিলে আমার সঙ্গে৷ প্রকৃতিপ্রেমিক, সংস্কৃতিমনস্ক যুবক পুরুষটি বুঝিয়ে দিয়েছিল সেই তোমার কথাই, “নারী তুমি অর্ধেক আকাশ৷ “প্রেমের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিলাম সেদিন৷

আকস্মিক ঝড় যেদিন এক লহমায় সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল, সেদিনও তুমি ছিলে পাশে৷ কানে কানে বলেছিলে, “যে রাতে মোর দূয়ারগুলি ভাঙ্গলো ঝড়ে৷”

আঁধাররাতে যখন মন বিষন্ন হয় তখন চুপটি করে এসে বলো, “কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে৷”

যখন দিনযাপনের গ্লানিতে হাঁফিয়ে উঠি, মনে হয় আর পারছি না বাইতে এই জীবনতরী, তখনও তুমিই এসে উজ্জীবীত করো, “প্রাণ ভরিয়ে,তৃষা হরিয়ে মোরে আরও আরও আরও দাও প্রাণ৷”

তুমি যে শুধু আমার রবি….. প্রেমিক রবি, বন্ধু রবি, অভিভাবক রবি আরও আরও কত কি….

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
নিবাস -পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ৷ সন্দেশ, নবকল্লোল, শুকতারা, বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে৷ কবিতা সঙ্কলন তিনটি, তার মধ্যে একটি বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে৷ বর্তমানে আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা , বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন ওয়েবজিনে লেখার সঙ্গে যুক্ত৷ কলকাতা স্বপ্নরাগ পরিবার নামে একটি সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ সেবা মূলক প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক৷
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!