ভারতাত্মার মূর্ত প্রতীক বি আর আম্বেদকর

পাভেল আমান
পাভেল আমান
5 মিনিটে পড়ুন

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম মহান সমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবিদ, আইনবিদ, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, স্বাধীন ভারতের সংবিধান প্রণেতা অবিসংবাদী নেতা এবং সর্বকালের সকল নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের প্রতিবাদের প্রতীক, মুক্তিযোদ্ধা তথা মানবতার মূর্ত প্রতীক বি আর আম্বেদকর। আত্মনির্ভর, আত্মোন্নয়ন, আত্মসম্মান অর্জন এবং স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা যার আন্দোলনের মূলমন্ত্র ছিল। তার আজ জন্মদিন। আমরণ কোন অন্যায়ের কাছে যিনি বশ্যতা স্বীকার করেননি তিনি হলেন ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেদকর।

তার জন্ম ১৮৯১ সালের ১৪ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের মোউ শহর। পিতা সুবেদার রামজি। আদি নিবাস ছিল মুম্বাইয়ের রত্নাগিরি জেলায়। মাতা ভীমা ভাই। ছোটবেলায় নাম ছিল ভীম। বাবা মার শেষ সন্তান এবং চতুর্থ সন্তান।জীবে প্রেম ও সহমর্মিতা, মানুষের প্রতি দয়া ও সহানুভূতি এবং প্রগাঢ় ভক্তি ছিল এই পরিবারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পরিবারটি ছিল কবীর পন্থী। কবীর পন্থীরা জাতিভেদ প্রথা মানতেন না। হিন্দু ধর্মের মর্মান্তিক কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার প্রেরণা আম্বেদকর পারিবারিক ধর্মবিশ্বাস থেকে লাভ করেন। তখন থেকেই জাতিভেদ প্রথার চরম শিকার হয়েছিলেন তিনি।

কষ্ট সহিষ্ণুতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে লক্ষ্য করেছিলেন দলিত পিছিয়ে পড়া দরিদ্র অসহায় মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা। তারা যেন সমাজের মানুষ রূপে পরিগণিত ছিলেন না। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা যেন তার মত নিচু জাতের মানুষের কাছে অভিশাপের মতো। তখন থেকেই তার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল সমাজকে বদলে ফেলার এক চরম জেদ অঙ্গীকার আকাঙ্ক্ষা। বলা যেতে পারে বিদ্রোহ ও বিপ্লবের আগুন। তীব্র হতাশা থেকেই জন্ম হয় সমাজ সংস্কারকদের, বিপ্লবীদের। কেননা এ হতাশাই এনে দেয় সমাজ পরিবর্তন ও পুনর্গঠনের দিশা ও প্রাসঙ্গিকতা যা বি আর আম্বেদকরের মনেও তীব্রভাবে জেগেছিল। তিনি তার জীবনের মিশন হিসেবে নিয়েছিলেন বর্ণবৈষম্য দূরীকরণকে।

উত্তরোত্তর দলিতদের মুখপাত্র ও পুরোদস্তুর মসিহা হয়ে উঠেছিলেন গোটা ভারতে। তাদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এক সুন্দর ভবিষ্যতের। আর এসব কারণেই তিনি দলিতদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন ভালোবাসার ‘বাবা সাহেব’। আম্বেদকরের অনুপ্রেরণায় এখনো দলিতরা তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার। তার গোটা জীবনই যেন এক প্রেরণার বাতিঘর। সেই ক্লাসে পাটের বস্তা বিছিয়ে বসা ছেলেটির বিশ্বব্যাপী সমাদৃত জ্ঞানী হয়ে ওঠা, দলিতদের নিয়ে তার আন্দোলন গড়ে তোলা, এরপর তার সংবিধানের স্থপতি ও ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী হওয়া- পুরো জীবন যেন অনন্য এক সংগ্রামী সফর।

স্বাধীনতা লাভের পর কংগ্রেস সরকার তাকে ১৫ ই আগস্ট ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পরে প্রথম আইনমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এবং ১৯৪৭ সালের ২৯ আগস্ট তিনি সংবিধানের সভাপতির পদে নিযুক্ত হন যেখানে তিনি ভারতের নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরি করেছিলেন। যা সংবিধান দ্বারা ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ সালে গৃহীত হয়েছিল।তিনি পেশাদার অর্থনীতিবিদ হওয়ার কারণে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় তিনি বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন।।বিদেশ থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করায় তিনি ভারতীয় অর্থনীতির পরিকল্পনায় তার ভূমিকা পালন করেছিলেন।

দেশের অর্থনীতি, শিল্পায়ন বৃদ্ধি এবং কৃষিক্ষেত্রের বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য জনগণকে উৎসাহিত করেছিলেন। দেশের উন্নয়ন, মানুষের কল্যাণে নিজেকে সপে দিয়েছিলেন। প্রতিটা মানুষ যাতে স্বাধীনতা সাম্য নিরাপত্তা সর্বোপরি ভারতের নাগরিক হিসেবে সম্মানের সহিত বেঁচে থাকতে পারে -এটাই ছিল তাঁর জীবনভর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।তিনি বলেছেন, “আমরা চাই সেই স্বাধীন ভারত যেখানে সকল মানুষের থাকবে সমান অধিকার, যেখানে সামাজিক নিপীড়ন থাকবে না, অস্পৃশ্যতা যেখানে পাব বলে বিবেচিত হবে এবং জন্মগত কারণে মানুষ মানুষকে ঘৃণা করবে না”। সারাটা জীবন সংগ্রাম লড়াই মানবতার সেবায় মানব জাতির কল্যাণে নিবেদিত করেছিলেন।

ভাবতে অবাক লাগে আজ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পার করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আস্ফালনে বিপন্ন সংবিধান গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত। চারিদিকে মেরুকরণের দামামা। মানুষের মানুষের বিভাজন বৈষম্য। সবকিছুতেই ঢুকে গেছে ভেদাভেদের রাজনীতি, সংবিধানের শপথ নিয়ে নেতা-মন্ত্রীরা গণতন্ত্রকে পদদলিত করছেন। ভেবে শিউরে উঠি বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগে মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সুকৌশলে ধর্মীয় বিভাজনের জালে মানুষে মানুষে শুরু হয়েছে অস্থিরতা অবিশ্বাস অসহিষ্ণুতা বাতাবরণ। বিশেষ করে বিজেপি শাসিত ভারতবর্ষে প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘুদের অধিকার, ভারতবর্ষের বৈচিত্র ঐতিহ্য সনাতন সংস্কৃতি সর্বধর্ম সমন্বয়ের শাশ্বত ভাবনা আদর্শ ভেঙে পড়ছে।

সংবিধানের লঙ্ঘন করে গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করে চলছে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আস্ফালন। বর্তমান সঙ্কটের মুহূর্তে ভারতের বহুত্ব সনাতন ঘরানা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, অখন্ডতা সংহতি সর্বোপরি লালিত গণতন্ত্রকে বিকশিত ও সর্বজনীন করে তুলতে বি আর আম্বেদকরের জীবন দর্শন স্মরণ পালন ও প্রাত্যহিক চর্চা একান্ত জরুরী। ১৩৩ তম জন্মদিনে এই ভারতমাতার শ্রেষ্ঠ সন্তান মহাপুরুষ আম্বেদকরকে জানাই শ্রদ্ধা ভক্তি অন্তঃস্থ ভলোবাসা। তার অমৃত বাণী পথ চলা জীবন সংগ্রাম প্রতিটি ভারতীয়দের সংকটমোচন, উৎসাহ প্রদান ও অনুপ্রেরণায় চির বার্তাবাহক।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ইংরেজিতে স্নাতক। পেশা শিক্ষকতা। ছাত্রাবস্থা থেকেই লেখালেখির প্রতি আকর্ষণ। বিশেষত কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ বিভিন্ন ফিচার লিখতে অভ্যস্ত। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় উদার আকাশ পত্রিকা। এরপর শব্দসাঁকো, জিলিপি, শারদীয়া আগন্তুক, আলেখ্য, আখর কথা, পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত। আনন্দবাজার পত্রিকা, প্রতিদিন, উত্তরের সারাদিন, পুবের কলম, দিনদর্পন, সাত সকাল প্রভৃতি পত্রিকায় প্রবন্ধ চিঠিপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এখনো ভালো লাগে কলমটাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিনিয়ত সৃষ্টিশীলতায় ভেসে গিয়ে ভাব জগতে বিচরণ করে কিছু না কিছু লিখতে। লেখালেখিটা অনেকটা জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। ক্রমশই অনুভূত লেখনিই আমার জীবনের অবশ্যিক অভিব্যক্তি।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!