খাঁচার বাইরে
চারিদিকে ধর্মের খাঁচা বানিয়ে রেখেছে
আমি কোন্ খাঁচায় ঢুকব তবে?
পাখি হয়ে নিজেকে দেখছি
বাঘ হয়ে নিজেকে দেখছি
শিম্পাঞ্জি হয়ে নিজেকে দেখছি
অথবা আরও যা যা ভাবতে পারি আমি
খাঁচা নাকি নিরাপত্তার ঘর
ঝড়-বৃষ্টি-বজ্রবিদ্যুৎ অথবা সামাজিক অরণ্যের ভেতর
দিব্যি ঘুমানো যায়
আহার-নিদ্রা-মৈথুন আর হরপ্পার মতো গভীর স্নানাগার
সব আছে সেখানে
পূর্ণিমাও আসে, রাতজাগা অথবা কোলাহল
বক্তৃতা দিতে চাইলে মঞ্চ আছে
মঞ্চে মঞ্চে কী সুন্দর চেয়ার
হাততালিও আছে
কখনও কখনও নিজেকে নিজেই ঘোষণা করা যায় ধর্মের ষাঁড়
দীর্ঘবাক্যে ক্রিয়াপদ বিশেষণ আলো হয়ে বসে
দাঁড়ি-কমাবিহীন পোশাক-আশাক মদ-মাংস
মেদও বাড়তে পারে, গাড়ি-ঘোড়া ইন্টারনেট অনলাইন শপিং
খাঁচার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে-থাকতে
পাখিদের কলকাকলি শুনি
বাঘেরও গর্জন শুনতে পাই
হ্রেষা—বৃংহণ—বুক্কন—কৃজন—রাসভ—
শুনতে শুনতে আমার রাত হয়ে যায়…
সুদীপ্ত
সুদীপ্তর কাছে কিছুক্ষণ বসি
সুদীপ্ত এখন আলো হয়ে গেছে
আমাদের কত ধুলো পা অন্ধকারে হেঁটেছে
আমাদের চিকিৎসাহীন কত বিষাদ
আত্মদগ্ধ গান নীরবে গেয়েছে;
বিষপান করতে করতে মরে গেছি
তবুও দরজা খোলেনি প্রেম।
অনেক অনেক দিন পর সুদীপ্ত এখন সূর্য
আমরাও নবজন্মের কাছে ফিরে এসে
আবার মাতৃগর্ভের দ্বারে প্রার্থনা করেছি
সুদীপ্ত আজ নতুন সকাল

দুর্গার গল্প
বাড়ির পাশেই দুর্গাদের বাড়ি
উৎসব এলেই দেখা হয়
দুর্গার মাকে আমি কাকিমা বলি
এবার বসন্তে প্রথম ওর বুকে চাঁদ উঠল
চোখে তারা ফুটল
ওর মনের ঝোপঝাড়ে জোনাক উড়ল
আমি ছাদে উঠে অনেক শব্দ খুঁজলাম
অনেক বাক্য খুঁজলাম
একটা নাকছাবি, চন্দ্রহার বানিয়ে দেবো বলে
মেঘলা আকাশে কোনও জ্যোতি ছিল না
ম্লান সপ্তর্ষিরা আড়ালে চলে গেলে
আমি দুর্গার ধ্যানে বসেছিলাম সারারাত
এখন তার সঙ্গেই সংসার, ছাদটিও কৈলাশের চূড়া
আমিও জটাজুট বিজ্ঞ ডমরুধর
উদাসীন সুতো দিয়ে গাঁথি চন্দ্রহার

প্রাচীন পুরাণ
অনেক অনেক মৃত্যু নেমেছে বাজারে
কাছাকাছি এসেও কেউ কেউ ছুঁয়ে যাচ্ছে
অনেকেই প্রেমে পড়ছে
অনেকেই পড়বো পড়বো করছে এবার
আমার বউ নিয়ন্ত্রণ আমাকে সাবধান করেছে
আমি বউকে গোপন রেখেই চলে যাচ্ছি বারে বারে
কত সিংহাসন ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে
মিউজিয়ামে মিউজিয়ামে সিংহদের গর্জন
ইতিহাস সাজিয়ে রাখছে একে একে
মলিন পতাকারা উড়তে উড়তে
অদৃশ্যের দিকে উড়ে যাচ্ছে সবাই
ঈশ্বর বিশ্বাসের কাছে দীক্ষা নিয়ে
মাঝে মাঝে ঢোল বাজাচ্ছি
সবাই বাজাচ্ছে তাই আমিও তাদের মতো
বিভ্রান্ত আরও এক বাজনদার
স্মৃতিরা মৃত কাক হয়ে উঠোন আগলায়
উঠোনে ক্ষুন্নিবৃত্তি রাঙা চোখের ইশারা
রাজ্যজুড়ে শোকাঞ্জলি
তবুও আনন্দ মঞ্চ ঘিরে জড়ো হয়েছে প্রজারা
কুশীলব গান গেয়ে শোনাচ্ছে তাদের….

কিছুটা মানুষ, কিছুটা গাছ
আমাদের পাশ দিয়ে খুশি চলে যাচ্ছে
খুশির খবরও চলে যাচ্ছে
কেউ দাঁড়াচ্ছে না দুদণ্ড
কথাও বলছে না কেউ
সারারাত ঘুম হয়নি
এই শীতে ঈশ্বর একখানা ভেজা কাঁথা পাঠিয়েছে
আগুন নিয়ে শুতে গিয়ে মন পুড়ে গেছে
সহ্যের প্রাচীর তুলে বানিয়েছি ঘর
সহ্য কখনো পোড়ে, কখনো ঠান্ডায় কাতর
পাশের ঘরের জানালায় শান্তশ্রী হাসে
সারা অঙ্গ তার জ্যোৎস্নামাখা
দুধ আর আলতা দিয়ে ঢাকা
খুশিরা একে একে তার কাছে যায়
ফোস্কা ওঠা হাত, আধপোড়া বাঁশি
মৃত অনুভূতিগুলি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি
যদিও কিছুটা মানুষ, কিছুটা গাছ
কিছুটা ঐশ্বরিক, কিছুটা বিশ্বাস…

আমরা যখন নিষিদ্ধ সম্প্রদায়
আমাদের পূর্বপুরুষের পাশেই
একটু একটু করে কবর খুঁড়ছি রোজ
আর রোজ রোজ ঘোষণা করছি:
আমরা পাকিস্তান যাব না, যাব না কোনোদিন!
এত হম্বিতম্বি আর মৃত্যুর আয়োজন
দেখতে দেখতে আমরা এখন মৃত্যুরই ঘরকন্না করি
রাষ্ট্র আমাদের রাষ্ট্রদ্রোহী বানায়
রোজ জীবন খুঁজতে খুঁজতে
রোজ সহজ ও সত্যের প্রমাণ দিতে দিতে
রোজ দেশ ও মানুষকে ভালো বাসতে-বাসতে
সব আয়ু ক্ষয় করে চলে যাই
তবু নতুন নতুন অস্ত্র আসে
ফাঁসির মঞ্চ সাজায়
আর ডিটেনশন ক্যাম্পের নির্মাণ চলতে থাকে
ষড়যন্ত্রে ষড়যন্ত্রে কালো হয়ে যায় দিন