আহমেদ স্বপন মাহমুদের জন্মতিথিতে তাঁর বারোটি কবিতা

আহমেদ স্বপন মাহমুদ
আহমেদ স্বপন মাহমুদ
4 মিনিটে পড়ুন
সাময়িকী আর্কাইভ

যে আকাশের কথা

যে আকাশের কথা বলো তুমি,
আমি তার উপর দিয়ে উড়ে যেতে গিয়ে
শীতার্ত বরফের দুনিয়া দেখেছি।

তুমি তো বলেই ছিলে যে, শীতকাল ভালো লাগে।
আমি শীতার্ত পাখির দেশে তোমাকে চেয়েছি বলে
বারবার পরাজিত হয়েছি।

অথচ শীতরাত্রির নিদ্রার কথা তুমি যাওনি ভুলে!
তোমাকে ভালোবাসি। স্বপ্ন নাই কোনো তোমাকে ছাড়া।
তুমি প্রেমমাত্র। রাধা ও লীলা।

আমার একেলা জীবন দিয়েছি পাড় করে
নিঃসঙ্গ পাতার ওড়ার সমাহারে।
তুমি প্রেমমাত্র। লীলা ও প্রতিমা!

আমার কিছু নাই

আমার কিছু নাই যা তোমাকে দিব —
বেদনা ছাড়া। জগতের সকলে শুধায় —
লতাগুল্ম, পোকামাকড়, হাওর-সায়র-নদী-বিল
খিলখিল হেসে মিলিয়ে গেল যে —
তনুমধ্যা, সে কে
কাকে ভালোবেসে আসে সকাশে —
মানুষের মন
বেদনায় নেচে নেচে গায়
মায়ার মতন
অতল ঘুমের নিশ্চুপতায়
হারিয়ে যায় —
কোথা তবে যায় কয়লার ট্রেন
কোথা যায় প্রাণ, সমুদ্র সফেন —
হারায় অশেষে
কোন পরানের টানে
জগতের কোন অভিমানে —
খিলখিল হাসে
আমারে নেয় না সে
কাকে ভালোবাসে —
আমার কিছু নাই বেদনা ছাড়া
যা তোমাকে দিব, ভালোবাসাহারা।

আয়নার দিকে

আয়নার দিকে তাকিয়ে
তুমি যে সম্পর্ক রচনা করো
ছায়ার সাথে
সে-ও
একগাল হাসি নিয়ে
তাচ্ছিল্যে
দাঁড়িয়ে থাকে
দূরে!

সম্পর্ক

সম্পর্ক বিষাদের নাম।
বিষাদে তোমার হাসি চকচক করে।
হাসি উড়ায়ে তুমি চলে যাও দূরে।
সম্পর্কের দূরত্বের সমান
লাল ঠোঁট
নীল টিপ
সোনার অহংকার
তোমাকে উপহাস করে।
উপহাস
রিপুর সনাতন ভাইবোন
তোমাকে জড়িয়ে ধরে
উদাসীন গল্পের কথা বলে।
আমাদের গল্পগুলো কবিতার মতো
নীল;
তোমার ঠোঁটের মতো খয়েরি;
রিপুর তাড়নার সমান
লাল।
লালে লালে সম্পর্ক
উজাল।

কোনো দিক নাই

কোনো দিক নাই।
এদিকে আসো।
যেদিকে মন চায়।
এই দিকে আসো।
যে দিক তোমার দিকে
চেয়ে আছে
নিষ্পলক।
অরুণাভ।
ভালোবাসো দিক।
কেননা,দিকের ভালোবাসা
তোমার অন্তরের চেয়েও
অধিক।
তুমি আসো। এদিকে।
যে দিকে বুক পাতা আছে।
মনের দিকে।
ভালোবাসো।
প্রেম জারি রাখ।
উচাটন।
তোমার দিকে চেয়ে আছে।
মন।
আসো।
দিগ্বিদিক ভালোবাসো।

প্রত্যূষে আসিও

প্রত্যূষে আসিও।
কাছে না বসিও
থাক না দূরে
ক্ষণকাল
আমাদের সকাল
শুরু হলে সূর্য হাসে
বাঁকা
আর আঁকাবাঁকা
জীবন
জীবনের দ্বার
যত না উদার
আমাদের মন
রাখিও যতন করে
আদরে-
অনাদর মনে না দিও ঠাঁই
সকলি সাঁই বরাবর
রাখিও-
জপিও নাম তার
সকল প্রশংসা যার
নামে-
ধারণ করে আছে
তারে করিও বরণ
স্মরণ করো নাম
অনামে যে করে বাস অন্তরে
ধারণ করিয়া তারে
জারণ-বিজারণে
করিও যাপন–
আসিও প্রতূষে
অবশেষে–
একা গাছ জল পেয়ে
হাসিতে–
ছড়িয়ে দিল সকল
বাতাস
আমাদের বেঁচে থাকার
উজ্জ্বল শ্বাসপ্রশ্বাস।

তোমার দিকে

তোমার দিকে তাকালে
বিপন্ন বোধ করে তালগাছ।
যেদিকে হেলে আছ
বাতাস সে দিকে বিপজ্জনক।
ভাবছি, আগুনে ঝাঁপ দিয়ে
বাতাস মাখিয়ে গায়ে
শূন্যতার দিকে ওড়ে যাব।
তোমার মুখের রঙের মতন
বিপন্ন আর কিছু নাই।
দিকশূন্য হেলে আছে তালগাছ।

বেদনা ছাড়া

বেদনা ছাড়া কোনো স্বতন্ত্র মুখ নাই।
আয়না দেখলেই তার ভাঙ্গা টুকরার
বেদনের কথা মনে পড়ে।
মৃত্যূ এমনই, অনস্থিত্বের দিকে
মানুষের দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা।
মানুষ বেঁচে থাকে অতীতে
না-ভাষায়
অশব্দ দুনিয়ার বৈভবে।
কান্নার নাম তাই ঝরাপাতা
মানুষের কলিজার ভেতরে সে হাহাকার করে উড়ে।
জীবনের ওড়ার কালে
কোনো মুখ মনে পড়ে না!
কেবল ভাঙ্গা আয়নার টুকরা
খানিক ঝলসে ওঠে
হারিয়ে যায়।
তবুও আলোর ঝিলিক মানুষের
মৃত্যু সাধন।

থমকে আছে

থমকে আছে মন। অযথাই।
যথামাত্র শীত নামে। তুমিও আড়াল হও।
লুকানো মায়ার বেদনা আছে।

তোমাকে দেখার বাসনা হয়।
অদেখা বাসনা বেদনার।

যে গাছে বহুদিন পাখি আসে না
মন খারাপ হয় তার।
সে চায় পাখি আসুক। কিচিরমিচির করুক।
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে হাসুক।

মানুষ পাখিদের আত্মীয়। গাছেদের আত্মীয়।

শীত পড়েছে বেশ

শীত পড়েছে বেশ।
তুমি শীতকাতর
শীতার্ত শহরে একা থাক।

কুয়াশা থেকে যে প্রকারে
মুখ থেকে ধু্ঁয়া আসে
বাতাসে ভাসে
উত্তাপ ছড়ায়—

আমি তোমার মুখের স্বাতন্ত্রের দিকে
চেয়ে চেয়ে ভাবি জল
জলের উতরোল—

তুমি শীতকালে রংপুর যাও
শীতের রং কুয়াশা
তোমার মুখাবয়বে খেলা করছে

শীতপ্রেমের উত্তাপ।

দুনিয়ার জাগ্রত ফুল

দুনিয়ার জাগ্রত ফুল
কী ভুল কী ভুল
নিদ্রা তোমার
অনাঘ্রাতা—

ঘুমপাড়ানি মাসীপিসি
কোথায় লুকায়
নিদ্রা কিনা ঘুমের ভ্রাতা!

ভ্রাতা কিংবা ভগ্নি না হোক
একই কথা
চোখের ভাষায় দেখছি তাদের
একইরকম গুপ্ত গাঁথা!

হতেই পারে ঘুম না এলে
এলোমেলো ভাবনাসকল
ভবে না হোক ভাবের তলে
বসত করে অনন্যলোক!

তাই বলে কী ঘুম যাবে না
অনিদ সকাল
রাত্রি যখন নিদ্রাহারা ভাবছি বসে
তোমার আকাল।

ভালোবাসা এমনি রে
রাত্রিদিনে হরহামেশা এমনি জ্বালায়
জ্বালার তবে শান্তি আছে
আগুন পোহায় প্রাণের কালায়!

নাও

নাও
যতটুকু পার
তার ভাগটুকু দাও
আগুনের সমস্ত শিখার সমান
কার মন পুড়ে

কে কারে কতটুকু জোরে
আগুনেরে কোলে লয়ে যান!

সকলি আলো
আপনার জমকালো রূপ
যতেক স্বরূপ আজ
পথে পথে কাঙাল
রাত্রি পোহায়ে গেলে
যত ভাব ও ভাণ সব গোলমাল
নাই হয়ে যায়
নাই হয় আমার অন্তরকাল!

তখনো সকাল
তখনও হয়নি ভোর
এত ঘনঘোর আকাশ
চারদিক ঘিরে আছে

চারপাশ
যত হাঁসফাঁস মনে
কার উৎপীড়ণে মন
অকারণ মন খারাপ হয়
কার লাগি কত কথা সয়
যত অবক্ষয়

এই প্রাণ
যতেক মহান তারা থাক
কালাকাল
যত জঞ্জাল মনে আছে
তার সবটুকু হৃদয়ের কাছে রেখে
হারিয়ে যাওয়া ভালো

তোমার কালো কালো রূপ
নিশ্চেতনার আলো
খেয়েছে আমারে
খেয়েছে তোমার ভাগ
আমাদের যত প্রেম ভেসে যায়
কার প্ররোচনায়
এত এত সংরাগ!

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
অনুসরণ করুন:
আজ ৩রা ফেব্রুয়ারি কবি ও প্রাবন্ধিক আহমেদ স্বপন মাহমুদের জন্মদিন। ১৯৬৬ সালের আজকের এই দিনে তিনি নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশা শুরু করেন প্রকাশনা সংস্থায়। অধ্যাপনায় যুক্ত ছিলেন পাঁচ বছরেরও বেশি সময়। কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক সংস্থায় শিক্ষা ও নীতি গবেষণায়। বর্তমানে একটি গবেষণা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী। পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বায়ন ও আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্বাহী বোর্ডের সদস্য। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন ও নীতি প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছেন। তার প্রকাশিত কাব্যগন্থের মধ্যে রয়েছে― কবিতা— অতিক্রমণের রেখা [শ্রাবণ প্রকাশনী, ২০০০] সকল বিকেল আমাদের অধিকারে আছে [জয়ামি ২০০৪] অবিচল ডানার উত্থান [জয়ামি ২০০৬] আদি পৃথিবীর গান [পাঠসূত্র, ২০০৭] আগুন ও সমুদ্রের দিকে [পাঠসূত্র, ২০০৯] আনন্দবাড়ি অথবা রাতের কঙ্কাল [অ্যাডর্ণ পাবলিকেশন, ২০১০] প্রেম, মৃত্যু ও র্সবনাম [প্রকৃতি ২০১৪] অতিক্রমণের রেখা (নির্বাচিত কবিতা) [লোক, ২০১১] ভূখণ্ডে কেঁপে ওঠে মৃত ঘোড়ার কেশর [শুদ্ধস্বর, ২০১৩] রাজার পোশাক [শ্রাবণ প্রকাশনী, ২০১৪] অনেক উঁচুতে পানশালা [চৈতন্য, ২০১৪] দাহকাব্য [শমপ্রকাশ, ২০১৫] শ্রীমতি প্রজাপতি রায় [তিউড়ি প্রকাশন, ২০১৭] এখান থেকে আকাশ দেখা যায় [তিউড়ি প্রকাশন, ২০১৮] এবং প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থগুলো হচ্ছে— সমূহ সংকেতের ভাষা [শ্রাবণ প্রকাশনী, ২০০১] কলমতালাশ: কবিতার ভাব ও বৈভব [শ্রাবণ প্রকাশনী, ২০১৪] কবিতার নতুন জগৎ [ঐতিহ্য, ২০১৭] এছাড়াও উন্নয়ন রাজনীতি ও গবেষণা নিয়ে রয়েছে তার অসংখ্য প্রকাশনা। ভ্রমণ, আড্ডা, বন্ধুত্ব তার প্রিয় প্রসঙ্গ। কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন, যথাক্রমে ― বইপত্তর সম্মননা (কলকাতা) ২০০০, বগুড়া লেখক চক্র সাহিত্য পুরস্কার ২০১৫, শব্দগুচ্ছ পুরস্কার ২০১৫, ও ‘লোক’ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!