স্বত্ত্ব
এবার স্বত্ত্ব ওঠাও তবে, একটা একটা করে তুলে নাও যত মূলো… শিকড় বাকড় পাতা…এই মাটি বড় ফোঁপরা হয়েছে জানো… সম্বৎসর অনিচ্ছাকৃত চাষ, বুকেতে বাঁসুই আর কত ডলা দেবে… সইতে পারিনে বলতে পারিনে কারে, এসব কথার নেই কোনো প্রয়োজন… লাঙলের ফালে সারা শরীরের জন্মদাগের ছাপ… আগুনের নদী কল্কাকাটা রূপও ফুটেছে বেশ…
মাটি ও কাঁকর, কাঁকর মাটিকে বেছে বেছে এইবার প্রতিমার বুকে লেপেও নিতে পারো … নবপত্রিকা ডুবুক ভাসুক জলে… যা দেবে দিলেই না হয়,যা নেবার আছে ছিনিয়েই তবে নাও… আমার কাছে যে বেশ্যা ও গৃহবধু সমান হয়েই আছে চিরটাকাল, ফারাক নেই তো কোনো…
ভাষা ও কাহিনী
এ সব কিছুই চাইনি যে ধর্মাবতার… ধাতবছুরির ফলায় খোঁচা মেরে মেরে তৈরি এ ক্ষত প্রতিদিনই যে রক্তহীন মাংসের সন্ধান দিয়েছে জীবাণুদের… ওদের কি দোষ বলুন, ক্ষত নালিঘায়ে নিতম্ব টাটিয়ে উঠেছে আমার… আমি আর স্বাভাবিক হাঁটতেই পারবোনা, যেতেও পারবো না কোথাও… হানাবাড়ির প্রেতাত্মার মত বিগত স্মৃতি আগলাবো যে শুধু… ঘৃণা ও বমি চেপে চেপে প্রত্যেকদিন প্রস্তুত করবো প্রাত:রাশ…
তালাবন্ধ রাখা হলে ভেঙেও যেতে পারে যে কেউ, তাই সবকিছু খোলাই পড়ে থাক… ওরা যে সবাই গোষ্ঠীপত্নী বলে, মক্ষীরাণীর মতন শুকনো মধুর কাহিনী শোনায় কানে… হাতে দেওয়া হয় গরম লোহার ছেঁকা, ব্যথা নিবারনী নাকি হে নৈয়ায়িক… মৃত সাদা ওই শরীরের মতো সম্পর্কেরও সীলমোহর লাগে এইখানে… এইতো এখন ধুলোও নিলাম ছেঁকে, অপেয় জলের অভাব এখানে নেই… ভিজিয়ে ভিজিয়ে রাখি এ কালি ও রঙ, কিছু ভাষা ও কাহিনী লিখতে সুযোগ দিন…
পক্ষ
একটা পক্ষ নাও তবে শুক্ল কিংবা কৃষ্ণ, কালো কিংবা সাদা… আমি মাঝ বরাবর আছি, তুমি সংকট ও সন্দেহের সাথে সরলতার বেণীবন্ধে বেঁধে রেখে দেবার কথাই নাহয় বলো হে এবারে নাথ… আমি তোমার ভাষা বুঝিনা,বুঝেও আর বুঝতে চাইনা ভুল স্টেশনে নেমে পড়ার পর কিভাবে যে যেতে হয় হাজার হাজার মাইল পথ… আমার ট্রেন কি আসবে কখনো, কিছু মানুষ কিংবা সে পাশের কাঠের ভাঙা সিটটাতে বসে ভেঙে ভেঙে দেবে কি কখনো বাদামের খোলা…
খাদ্যের এই চিরকালীন সংকট অভাবের এই একঘেয়েমির গল্প আর কোনোভাবেই বলবো না, কিছুতেই আর বলবো না তোমায়… বহু ঝড় জলের রাতে গলা ও মেঘ গলাগলি করে দুর্বল প্রমাণ ছাড়া আর কিচ্ছু করেনি… এখন গলার চেয়ে হাত এবং হাতের চেয়ে পা বেশি অকেজো মনে করে গড়ানো লাউয়ের বশই হব নাহয় হে প্রিয়তম…
অচল সিকি
কিছু ধার করা সময় খুচরো আধুলি অচল সিকির কাছেতে জমা লুকোনো অপচয়গুলো পড়ে থাক নানাভাবে, আর কখনোই তোমাকে বলবো না… তুমিও হয়তো কখন একদিকে আগুন ও অন্যদিকে হাওয়া ভরে দেবে… ক্রমে ক্রমে দুরন্ত দাবানল গায়ের দিকেই ধেয়ে আসে…
আমি যে সে ধোঁয়া দেখেছি বিকেলে… শুনেছি আমার মতন করে ঝরঝর ঝরে যাওয়া পাতার পতন আর্তনাদ… আমার যে কিচ্ছু করার নেই, কোথাও যে যাবো হিসেবের গরমিল হলে চন্দনের পটি দেওয়া সেলাই বিহীন টিকিধারী ব্রাহ্মণের ভাটির মতন চোখ খুঁজে খুঁজে ফিরবে আবারো…
আরো একখানি ঘামে ভেজা রক্তবসন, তার কাছে আশ্রয় কই, আমার কাছে যে কোনো কাঁচা শালপাতা বেঁচে নেই… গাছে গাছে মহুয়ার মদিরতা মাখা ওই পলাশ শিমুলও বেসামাল… আমার যে কেউ কোথাও আর নেই, পালাবার পায়ের চলন যে শেখালো না কোনোভাবে পাগলকিশোর… তুমিও এবার তবে উক্ত কি অনুক্ত অভিযোগ দেবে, দাও কি বলার আছে…হৃদয়ের রং ক্রমশ ক্রমশ খয়েরিই হয়ে যাবে শুধু…
চেরা পথ
যখনই কি এক টানে ঘাটের কাছেতে গেছি, দারুণ গ্রীষ্মকালে এক পা এক পা করে আর কত ধাপ নেমে গেলে স্নিগ্ধ শীতল হবো, ক্ষয়ে যাওয়া ইটের গাঁথুনি থেকে স্মৃতিগুলো কখন কিভাবে কুড়িয়ে কুড়িয়ে নেবো, ভাবতে গেলেই তোমার কথাই শুধু মনে পড়ে যায়… কি নাম দিয়েছিলাম, তাও আজ সংকোচে নিজেই নিজের ঠোঁটে প্রশ্রয় পায় না যে কেন… এ গালে আবীর নেই, এমনকি সিঁথিও রাঙেনি আর, বড় বেশি সাবধানে মাটি সিঁথি চেরাপথ ঝকঝকে তকতকে তাই…
থমকে গিয়েছে সব, দেওয়ালের খসে পড়া বালি, ঝরে গেলে ধরা পড়ে যেতে পারে কতটা নুনের পুঁজি তোমার জিভের স্বাদে, অন্যরকম কোনো হাওয়া… এ যে কোন হাত ও পায়ের চলা চোখ যেন নজর করে না… আমার গোপন পথে সুড়ঙ্গও বুঝে গেছে, চলাচল বন্ধ হয়েছে যে… দু’ধারের বাঁশবন দখলদারিতে দড়, আমি আর কিভাবে সামলাই, আমি আর কি করে সামলে নেবো চোখের কোনায় যদি অজানিতে কিছু পড়ে জল এসে যায়…
নারীজন্ম
সবকিছু ফিরিয়েই নেবো, যে কথা বলেছি এতদিন, যদি বলো ঘোষণাই দেবো, সবকিছু আমার মনের ভুল মিথ্যে ও বাতুলতা স্পর্শ করে ফেলে দেওয়া বর্জ্য সমান… এসবই কি ফেলে দেওয়া যাবে, সবকিছু মিশবে আবার মাটি জল পৃথিবীতে যেভাবে যেমন মেশে… নাকি ওই বৃহৎ কেশের মতো মাটিতে ছড়িয়ে গিয়ে তোমাদের ভ্রুয়ের উপরে কুঞ্চন…
আসলে সময় মুহূর্তগুলো বড় বেশি ক্ষণস্থায়ী বৈতো কিছুই নয়, গাছের ডালের থেকে বোঁটার স্খলন পতন, পাতার সাথেই কিছু ক্ষণস্থায়ী রয়ে যাওয়া কানেও আসেনা কেমন, কিছু শুধু শব্দ বহন করেও আনে সে সব যে ফিরে গেছে, ফিরেও যে যায়, তবুও কোথাও থাকে সুখের মেদের মতো কিছু দৃশ্যমান উজ্জ্বলতা যেন…
ফিরিয়েই নেবো, বারবার ব্যবহারে চওড়া হয়েছে সিঁথি… বহু ব্যবহৃত কোন কথা ক্লিশে হলে শ্রুতিও দূষণ আনে জানি… তাহলে এখন ফেরাই, আমার এ নারী জন্ম নিয়ে রাখা বহুমাস বছরের শ্লাঘা ও আশ্লেষ যত… যদি পারি হয়ে যাবো সুচের ডগার মত ঘাস… কিংবা কঠোর কঠিন কোনো পাথরের হৃদয়ের গোপন গহীন অন্ধকার…