পিরান কালিয়ার শরিফ

ড. সৌমিত্র কুমার চৌধুরী
ড. সৌমিত্র কুমার চৌধুরী
3 মিনিটে পড়ুন

পিরান কালিয়ার শরিফ। ভারত বিখ্যাত এক মুসলিম তীর্থস্থান। অতি প্রাচীন এক দরগাহ। অবস্থান হরিদ্বার জেলায়, ‘পিরান কালিয়ার’ বিধান সভার কেন্দ্রের অধীন। এর কাছেই রুরকি নগরী। হিন্দু এবং মুসলমান, উভয় সম্প্রদায়ের কাছে পিরান কালিয়ার দরগাটি এক পবিত্র তীর্থস্থান হিসাবে বিবেচিত।

উত্তর ভারতের হিমালয় পাহাড়ের পাদদেশে হরিদ্বার। উত্তরাখণ্ড রাজ্যে গঙ্গানদীর কিনারে গড়ে ওঠা প্রাচীন হিন্দু তীর্থ ক্ষেত্র। এখান থেকেই শুরু হয় হিমালয় রাজ্যে হিন্দুদের বিশেষ তীর্থ পরিক্রমা। কেদারনাথ, বদরিনাথ, গঙ্গোত্রী, জমুনেত্রি দর্শন। অন্য বহু তীর্থস্থানও আছে। পাহাড়ের মনোরম স্থানে সেগুলির অবস্থান। দর্শন শুরু হয় গঙ্গা তীরের পুন্যতীর্থ হরিদ্বার অতিক্রম করেই। সেই হরিদ্বার জেলারই দক্ষিণ প্রান্তে আবার অবস্থান করে প্রাচীন এক মুসলিম দরগাহ!

তেমন আশ্চর্যের নয়। দেশ ব্যাপী পারস্পরিক শুভেচ্ছা বার্তার নিত্য আদান প্রদান চলে। পিরান কালিয়ার শরিফ তার এক নিদর্শন।

piran kaliar1 3 পিরান কালিয়ার শরিফ
পিরান কালিয়ার শরিফ 40

সাধকের সমাধির উপর গড়ে ওঠে দরগাহ। পিরান কালিয়ার দরগাটি তৈরি বিখ্যাত এক সূফী সাধকের সমাধির উপর। সাধকের নাম, হজরত মখদুম আলাউদ্দিন আলি আহমেদ সবির। তাঁর জন্ম মুলতান প্রদেশ, বর্তমান পাকিস্থানে। কালিয়ার শরিফে তাঁর আগমন প্রায় হাজার বছর আগে (১২৫৩)। জীবনের চল্লিশ বছর এখানেই অতিবাহিত করেন তিনি। মৃত্যু হয় ১২৯১ সালে।

দরগার ইতিহাস অতি প্রাচীন। হজরত মখদুম আলাউদ্দিন আলি আহমেদ সবির-এর মাজারের উপর তৈরি হয় দরগাহ। তৈরি করেন তৎকালীন ভারত-সুলতান, ইব্রাহিম লোদি (১৪২১-১৪৮০)। ঐতিহাসিক দরগাটির মাহাত্ম্য আজও অম্লান। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা আসেন পিরান কালিয়ার শরিফে। ধুমধামের সঙ্গে রবিউল মাসে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) পালিত হয় উরুস উৎসব। সূফী সাধকদের মৃত্যুবার্ষিকী পালনের উৎসব, উরুস।

জায়গাটির অন্য বিশেষত্বও আছে। এখান দিয়েই প্রবাহিত সোলান নদী। এক আশ্চর্য জলপ্রবাহ। নদীটি জলের অভাবে বদ্ধ খালে পরিণত হয়েছিল। গঙ্গার আপার ক্যানেলের সঙ্গে যুক্ত করে এই নদীতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কতিপয় ইঞ্জিনিয়ার। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্রিটিশ আর্মির কোলনেল, পি টি কাটলে (P.T. Cautley)। ১৮৫৪ সালের এই কর্মকাণ্ড এখনও প্রশংসিত। আর ভারতের প্রথম অ্যাকুইডাক্ট (Aqueduct) এটিই। সর্বোপরি, ইটের তৈরি ব্রিজের উপর দিয়ে রেলগাড়ি চলত, রুরকি থেকে পিরান কালিয়ার অবধি। তবে যাত্রীবাহী ট্রেন নয়।

pirankaliyar 2 1 পিরান কালিয়ার শরিফ
পিরান কালিয়ার শরিফ 41

মূলত সেতু তৈরির উপাদান নিয়ে রুরকি থেকে ট্রেন আসত পিরান কালিয়ারে। ভারতে প্রথম যাত্রীবাহী রেলপথ নির্মিত হয়েছিল মুম্বাই থেকে থানে অবধি। তার দু’বছর আগে রেল গাড়ি চলত সিয়ান নদীর উপর দিয়ে। অবশ্য সেটি যাত্রীবাহী নয়, মালগাড়ি।

বিস্ময়কর ইটের তৈরি ব্রিজ। এর নীচ দিয়ে জল বয়ে যায়, উপর দিয়েও। ১৭০ বছর ধরে বয়ে চলেছে জলধারা। রুরকি এবং সংলগ্ন অঞ্চলে জল সরবরাহ করে কৃষি কাজে সহায়তা করে চলেছে। ধান, গম, আখ, ডাল শস্য উৎপন্ন হয় প্রচুর। সমৃদ্ধ জনপদ।

কেন লিখলাম? হরিদ্বারে গাড়োয়াল বিকাশ নিগমের (GMVN) বাংলোয় থাকবার জায়গা পেলাম, তাই ছুটে গেলাম ৬ই অক্টোবর, ২০২২। অজান্তেই পৌঁছে গেলাম উরুস উৎসবের প্রাক্কালে। জানলাম নতুন এক নদীর কথা। দেখলাম প্রাচীন এক দরগাহ। উরুস উৎসবে সেখানে জমায়েত হয়েছেন দেশ বিদেশের বহু ভক্ত।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ড.সৌমিত্র কুমার চৌধুরী, ভূতপূর্ব বিভাগীয় প্রধান ও এমেরিটাস মেডিক্যাল স্যায়েন্টিস্ট, চিত্তরঞ্জন জাতীয় কর্কট রোগ গবেষণা সংস্থাণ, কলকাতা-700 026. প্রকাশিত গ্রন্থ- বিজ্ঞানের জানা অজানা (কিশোর উপযোগী বিজ্ঞান), আমার বাগান (গল্পগ্রন্থ), এবং বিদেশী সংস্থায় গবেষণা গ্রন্থ: Anticancer Drugs-Nature synthesis and cell (Intech)। পুরষ্কার সমূহ: ‘যোগমায়া স্মৃতি পুরস্কার’ (২০১৫), জ্ঞান ও বিজ্ঞান পত্রিকায় বছরের শ্রেষ্ঠ রচনার জন্য। ‘চৌরঙ্গী নাথ’ পুরস্কার (২০১৮), শৈব ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত উপন্যাসের জন্য। গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য স্মৃতি পুরষ্কার (2019), পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও জৈবপ্রযুক্তি দফতর থেকে), পঁচিশ বছরের অধিক কাল বাংলা ভাষায় জনপ্রিয় বিজ্ঞান রচনার জন্য)।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!