বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রাশিয়ায় রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
6 মিনিটে পড়ুন

রাশিয়ার ওপর সুইফটকোড নিষেধাজ্ঞার কারণে সে দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি সংকটে পড়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো রাশিয়ান ব্যাংকের সঙ্গে সুইফট কোডের মাধ্যমে আর লেনদেন করছে না বলেই এই সংকট। রাশিয়ানর ব্যাংকগুলো আগেই এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করেছিল।

সংকটটি নিয়ে পোশাক রপ্তানিকারকদের মধ্যে আপাতত মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ মনে করেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে রাশিয়ায় পোশাক রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আবার কেউ কেউ বলছেন বিকল্প পথে পেমেন্ট এবং রপ্তানি অব্যাহত রাখা যাবে। তাদের মতে, এই সংকট সাময়িক।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর বাংলাদেশের ভোজ্যতেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। এখন সুইফট কোডের কারণে রাশিয়ায় তৈরি পোশাক রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে তা অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও আঘাত করবে।

বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় সরাসরি ৬০০ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক যায়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে আরও ৩০০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক যায়। সব মিলিয়ে এখন প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক যায় রাশিয়ায়। ফলে এই এক বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাকই এখন হুমকির মুখে আছে।

কয়েকজন তৈরি পোশাক রপ্তানি কারকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা গত নভেম্বরের পর অর্ডার পেয়েছেন, তাদের অর্ডার সরবরাহ পর্যায়ে রয়েছে। অনেকের চালান শিপমেন্ট পর্যায়ে আটকে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরেও কিছু কার্গো আটকে গেছে, যেগুলো রাশিয়ায় পাঠানোর কথা ছিল। শুধু তা-ই নয়, আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহণ সার্ভিসগুলোও রাশিয়ায় পণ্য পরিবহণ করতে চাচ্ছে না।

পোশাক ব্যবসায়ীরা জানান, পাঠানোর চেয়ে বড় সমস্যা হলো পেমেন্টের। কোনোভাবে পাঠানো গেলেও পেমেন্ট এখন অনিশ্চিত।

শুধু এখনকার রপ্তানি সমস্যাই নয়, এর আগে যারা রপ্তানি করেছেন তাদের অনেকের পেমেন্টও আটকে গেছে। বিজিএমইএ থেকে তাদের সদস্য গার্মেন্টসগুলোকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে দুই ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

প্রথমত, কোনো পোশাক কারখানার পেমেন্ট আটকে গেছে কিনা, গিয়ে থাকলে কত? আর এখন যারা রপ্তানি করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন, তাদের কত অর্ডার আটকে গেছে।

বিজিএমইএ’র একজন কর্মকর্তা জানান, রাশিয়ায় কমপক্ষে ১৫০টি পোশাক কারখানা তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। তারা দুই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন। আগের পেমেন্ট আটকে যাওয়া এবং নতুন অর্ডার যারা সরবরাহ করার পথে ছিলেন, তারা সমস্যায় পড়ছেন।

ওই কর্মকর্তা জানান, রাশিয়ায় তৈরি পোশাকের বাজার বড় হচ্ছিল। এখন সরাসরি শুধু রাশিয়ায় নয়, অন্য দেশ থেকেও বাংলাদেশি তৈরি পোশাক যা রাশিয়ায় যেতো, তা-ও আটকে গেল।

তিনি বলেন, “গত নভেম্বরের পর এখন রাশিয়ায় ফের পোশাক পাঠানোর সময়। কিন্তু তা আর সম্ভব হচ্ছে না। আমরা রাশিয়ায় পোশাক রপ্তানি বন্ধের কথা বলিনি। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তেমন রপ্তানি করা যাচ্ছে না।”

সদস্যদের কাছে তথ্য চেয়ে যে চিঠি দেয়া হয়েছে সেটার জবাব এলে তাৎক্ষণিক ক্ষতি এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি নিরূপণ করা যাবে বলে জানান তিনি।

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক আমিরুল ইসলাম বলেন, ” এই যুদ্ধ যদি দীর্ঘ সময় ধরে হয়, তাহলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সংকট আরও বাড়বে। প্রথমত, যুদ্ধের কারণে রাশিয়াসহ ওই অঞ্চলে পোশাকের চাহিদা কমে গেছে। ফলে ক্রেতারা তাদের অর্ডার স্থগিত করেছে বা পিছিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এরইমধ্যে পোশাক কারখানার মালিকরা তাদের পণ্য উৎপাদন ও শিপমেন্টের প্রস্তুতি নিয়েছে। ফলে তাদের টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন এই যুদ্ধ যদি চলতেই থাকে, তাহলে অর্ডার বাতিল হয়ে যাবে। সেটা হলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা।”

অন্যদিকে সুইফট কোডে নিষেধাজ্ঞার কারণে এরইমধ্যে অনেক পেমেন্ট আটকে গেছে। ফলে রপ্তানি করতে পারলেও পেমেন্ট নিয়ে সমস্যা থেকেই গেল। তিনি বলেন, “বিকল্প পথে তৃতীয় দেশের মাধ্যমে পেমেন্ট হতে পারে। কিন্তু সেই পদ্ধতি এখনো নিশ্চিত হয়নি বা সেটা নিয়ে এখনো কাজ শুরু হয়নি।”

বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশে কিছু পোশাক কারখানা আছে যারা শুধু রাশিয়ায়ই রপ্তানি করে, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে। যুদ্ধ অনেক দিন ধরে চললে তারা পথে বসে যেতে পারেন।”

তিনি জানান, যুদ্ধ ও সুইফট কোড নিষেধাজ্ঞার কারণে কয়েক ধরনের সমস্যা হচ্ছে। কিছু পণ্য শিপমেন্ট হয়ে গেছে, কিছু পণ্য পথে আছে আর কিছু পৌঁছে গেছে। বায়াররা পণ্য নিচ্ছেন না। ফলে পেমেন্ট অনিশ্চিত হয়ে গেছে। আর যে অর্ডার এখন আছে, তার ভবিষ্যৎ কী তা-ও নিশ্চিত নয়।

অন্যদিকে যুদ্ধের কারণে শিপমেন্টও সংকটে পড়েছে। কারণ, যারা শিপমেন্টের সঙ্গে জড়িত, অর্থাৎ বন্দর থেকে বিভিন্ন সংস্থা, তারা এখন যুদ্ধের কারণে কাজ করতে চাচ্ছেন না।

বিকল্প পেমেন্ট ব্যবস্থার ব্যাপারে তিনি বলেন, “পাঁচ-সাত বছর আগে রাশিয়ায় পোশাক যারা পাঠাতেন, তারা তৃতীয় দেশ থেকেই পেমেন্ট পেতেন। কিন্তু যখন পোশাক রপ্তানি সেখানে বেড়ে যায়, তখন রাশিয়া থেকে ক্রেতারা সরাসরি পেমেন্ট শুরু করে। এখনো আবার বিকল্প পথে পেমেন্ট সম্ভব। সেটা নিয়ে কতদূর কাজ হচ্ছে সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। তবে ক্রেতারা এখনো আমাদের পোশাক চাইছে।”

তবে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, তিনি রাশিয়ায় পোশাক পাঠাচ্ছেন এবং পেমেন্টও পেয়েছেন। তার কথা, “কোনো দেশ নিজে সরাসরি পোশাক নেয় না। নেয় বায়াররা। তাই বায়াররা সরাসরি রাশিয়া থেকে পেমেন্ট না করে বিভিন্ন দেশ থেকে করতে পারে। আমার ক্রেতা হংকংভিত্তিক। তারা রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশি পোশাক পাঠায়। তারা আমাকে পেমেন্ট দিয়েছে। তারা বলেছেন, আমি তোমাকে পেমেন্ট দিলে তুমি কেন পোশাক দেবে না। তাই ব্যক্তিগতভাবে আমি আতঙ্কিত নই। কারণ, বায়াররা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের। তাদের পেমেন্টে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”

তবে তিনি বলেন, “যুদ্ধের কারণে নানা সমস্যা হয়। হতে পারে। রাশিয়ায় অনেক বায়ারের বড় বড় দোকান আছে। সেগুলো বন্ধ হয়ে গেলে পোশাকের চাহিদা কমে যাবে। বন্ধ হওয়া শুরু করেছে।”

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!