নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
8 মিনিটে পড়ুন
ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচের পর টি-টোয়েন্টিতেও বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে স্মরণীয় জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ছবি সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়

একই মাঠ, একই পিচে খেলা। বাংলাদেশের বোলিং হলো একইরকম দুর্দান্ত। ব্যাটিংটা অবশ্য ততটা দাপুটে হলো না। তবে ফলাফল ঠিকই মিল গেল প্রাপ্তির একই বিন্দুতে। ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে স্মরণীয় এক জয়ের পর টি-টোয়েন্টিতে সিরিজের শুরুতেও ধরা দিল একই সাফল্য। নিউ জিল্যান্ডে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নেপিয়ারে বুধবার নিউ জিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ।

নিউ জিল্যান্ডে এর আগে ১১টি টি-টোয়েন্টি খেলে বাংলাদেশ হেরেছিল সব কটিতেই। এর মধ্যে ৯টিই ছিল কিউইদের বিপক্ষে।

গত শনিবার এই মাঠেই নিউ জিল্যান্ডকে তাদের মাঠে প্রথমবার ওয়ানডেতে হারায় বাংলাদেশ। সেদিন কিউইদেরকে ৯৮ রানেই গুটিয়ে দিয়েছিল বোলাররা। সেই একই উইকেটে টি-টোয়েন্টিতেও বোলাররা শুরু করে করলেন যেন ঠিক সেখান থেকেই। শেখ মেহেদি হাসান ও শরিফুল ইসলামের দুর্দান্ত বোলিংয়ে নিউ জিল্যান্ড ১ রানেই হারায় ৩ উইকেট!

জিমি নিশামের ২৯ বলে ৪৮ রানের ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ১৩৪ রান তোলে নিউ জিল্যান্ড। বাংলাদেশের রান তাড়া খুব আদর্শ হয়নি। বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউই। তবে কয়েকজনের সম্মিলিত অবদানে ম্যাচ শেষ হয়ে যায় ৮ বল বাকি রেখেই।

এক প্রান্ত আগলে রেখে শেষ সময়ের দাবি মিটিয়ে ৩৬ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন ওপেনার লিটন কুমার দাস।

অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচের সেরা অবশ্য মেহেদি। প্রথম ওভারে উইকেট নেওয়া অফ স্পিনার ৪ ওভারে ১৪ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। শেষ দিকে লিটনের সঙ্গে জুটিতে ম্যাচ শেষ করে অপরাজিত থাকেন ১৬ বলে ১৯ রান করে।

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়
উইকেট নেয়ার পর মেহেদির উদযাপন। ছবি সংগৃহীত

বাংলাদেশের জয়ের আরেক নায়ক শরিফুল। ওয়ানডের জয়ে তিন উইকেট শিকারি পেসার এবার টি-টোয়েন্টিতেও নেন তিন উইকেট। সহজ ক্যাচ না পড়লে চার উইকেটও হতে পারত তার।

ম্যাকলিন পার্কের উইকেট এ দিন একটু মন্থর ছিল। তবে ব্যাটিংয়ের জন্য ভয়ঙ্কর কিছু নয়। দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই অব্য সেখানে সুবিধা করতে পারেননি।

মাঝারি রান তাড়ায় বাংলাদেশ শুরু করে প্রথম ওভারে রনি তালুকদারের ছক্কায়। তার বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় অবশ্য পরের ওভারেই। তবে তিনে নেমে পাওয়ার প্লের দাবি মেটানোর চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অ্যাডাম মিল্নকে তিনটি চার মারেন তিনি। বাউন্ডারি মারেন জিমি নিশামকেও।

নিশামের পরের বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারার চেষ্টায় মিড অফে ধরা পড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক (১৬ বলে ১৯)।

লিটনের ব্যাট তখনও নীরব। রান আসে আরেক প্রান্তে। ইশ সোধির প্রথম বলেই সুইপ করতে গিলে অল্পের জন্য আউট হননি সৌম্য সরকার। পরের বলেই স্লগ সুইপে বল পাঠান গ্যালারিতে। পরেরটিতে চার মারেন রিভার্স সুইপে।

বেশি ক্ষণ টিকতে পারেননি সৌম্যও। বেন সিয়ার্সের বলে ফ্লিক করে বাউন্ডারি মারার পরের বলেই ক্রস ব্যাটে খেলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। তার ১৫ বলে ২২ রানের ইনিংসটি অবশ্য রান রেটের চাপে পড়তে দেয়নি বাংলাদেশকে।

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়
নিয়মিত বিরতিতে নিউজিল্যান্ডের উইকেট নিয়েছে বাংলাদেশ। ছবি এএফপি

পরের জুটিতে দলকে বলপ্রতি রান করে দলকে আরেকটু এগিয়ে দেন লিটন ও তাওহিদ হৃদয়। নিজের ‘ট্রেডমার্ক’ হয়ে ওঠা শটে একটি ছক্কা মারেন হৃদয়। কিন্তু সতীর্থদের অনুসরণ করে তিনিও ফেরেন ১৮ বলে ১৯ রান করে।

পরের ওভারে যখন বাজে শটে উইকেট বিলিয়ে ফেরেন আফিফ হোসেন, বাংলাদেশ কিছুটা শঙ্কায় পড়ে যায়। আউট না হলেও লিটনকে তখনও সাবলিল মনে হচ্ছিল না। প্রয়োজনীয় রান রেট একটু একটু করে বাড়ছিল। শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ২৪ রানের।

তখনই চাপ দূর করে দেওয়া দুটি শট। সিয়ার্সকে একটি বাউন্ডারি মারার পরের বলে উড়িয়ে মারেন লিটন। সীমানায় ক্যাচ নেন ইশ সোধি। কিন্তু ভারসাম্য রাখতে না পেরে তা পা স্পর্শ করে সীমানা। বাংলাদেশের জয় তাতে নিশ্চিত হয়ে যায় অনেকটাই।

পরের ওভারে মিলন্নকে ইনসাইড আউটে দুর্দান্ত ছক্কার পর আরেকটি চার মেরে ম্যাচ শেষ করেন মেহেদি। লিটনের সঙ্গে তার জুটিতে আসে ২৫ বলে ৪০ রান।

টস জয়ী বাংলাদেশের দাপটের শুরু ম্যাচের প্রথম ওভার থেকেই। অফ স্পিনে টিম সাইফার্টের বরাবরের দুর্বলতার কারণেই হোক বা নতুন বলে মেহেদির অভ্যস্ততা, এই অফ স্পিনারকে দিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ। তা কাজেও লেগে যায়। মেহেদির ঝুলিয়ে দেওয়া বলের লাইন মিস করে শূন্যতে বোল্ড হয়ে যান বিপজ্জনক টিম সাইফার্ট।

আরেক আগ্রাসী ওপেনার ফ্যাবিয়ান অ্যালেন রান করতে পারেন বটে। তবে কেবল ১। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে শরিফুলের বলে স্লিপে ধরা পড়েন তিনি।

পরের ডেলিভারিতেই শরিফুলের ভেতরে ঢোকা বল বুঝতেই পারেননি গ্লেন ফিলিপস। না খেলে ছেড়ে দিয়ে এলবিডব্লিউ হন তিনি শূন্য রানে। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল হয় বাংলাদেশ।

১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে নিউ জিল্যান্ড।

প্রথম বাউন্ডারির দেখা পায় তারা চতুর্থ ওভারে। শরিফুলকে টানা দুটি চারে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন ড্যারিল মিচেল। কিন্তু মেহেদির দারুণ ডেলিভারিতে তিনি বোল্ড হয়ে যান ১৪ করে।

২০ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে কিছুা এগিয়ে নেন মার্ক চ্যাপম্যান ও জিমি নিশাম। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তানজিম হাসানকে দুটি ছক্কা ও একটি চার মারেন চ্যাপম্যান।

চ্যাপম্যানের ইনিংস্ অবশ্য বেশি বড় হয়নি। রান বাড়ানোর তাড়ায় লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের প্রথম ওভারেই উড়িয়ে মেরে সীমানায় ধরা পড়েন তিনি ১৯ বলে ১৯ করে।

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়
এক প্রান্ত আগলে দলকে জয়ের ঠিকানায় নিয়েযান লিটন কুমার দাস। ছবি সংগৃহীত

এরপরই নিউ জিল্যান্ড পায় ইনিংসের সেরা জুটি। ৩১ বলে ৪১ রান যোগ করেন জিমি নিশাম ও মিচেল স্যান্টনার। অন্য বোলারদের তৈরি করা চাপ কিছুটা সরে যায় তানজিমের আলগা বোলিংয়ে। তার এক ওভারে দুটি চার মারেন স্যান্টনার, ছক্কায় ওড়ান নিশাম।

২২ বলে ২৩ করা স্যান্টনারকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন সেই শরিফুল। সামনে ডাইভ দিয়ে ভালো ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার।

ইনিংসের তখনও ৫ ওভারের বেশি বাকি। দল তাকিয়ে ছিল নিশামের ব্যাটে। রিশাদকে টানা দুই বলে ছক্কা ও চার মারেন তিনি। মুস্তাফিজুর রহমানের বল আছড়ে ফেলেন স্টেডিয়ামের বাইরে।

পরের বলেই একটি ফুল টস পেয়ে নিশাম আলতো করে বল তুলে দেন আফিফ হোসেনের হাতে। এমন ডেলিভারিতে আউট হয়ে হতাশা লুকাননি তিনি।

২৯ বলে ৪৮ রান করে তিনি স্পর্শ করেন এই সংস্করণে আগের সর্বোচ্চ স্কোরকে।

রিশাদ ও রনির ভুল বোঝাবুঝিতে চতুর্থ উইকেট থেকে বঞ্চিত হন শরিফুল। সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েও অবশ্য তেমন কিছু করতে পারেননি টিম সাউদি। তবে শরিফুলের শেষ বলকে ছক্কায় ওড়ান অ্যাডাম মিল্ন, ইনিংসের শেষ বলে তানজিমকে উড়িয়ে মারেন গ্যালারিতে।

নিউ জিল্যান্ডের রান তাতে পেরিয়ে যায় ১৩০। সেই পুঁজি নিয়ে কিছুটা লড়াই তারা করতে পারে বটে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় বাংলাদেশেরই।

গত বছর জানুয়ারিতে প্রথম টেস্ট জয়ের পর এবারের সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে জয়– অবশেষে নিউ জিল্যান্ডে তিন সংস্করণেই জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল‍্যান্ড: ২০ ওভারে ১৩৪/৯ (অ্যালেন ১, সাইফার্ট ০, মিচেল ১৪, ফিলিপস ০, চ্যাপম্যান ১৯, নিশাম ৪৮, স্যান্টনার ২৩, মিল্ন ১৬, সাউদি ৮, সোধি ২, সিয়ার্স ১; মেহেদি ৪-০-১৪-২, শরিফুল ৪-০-২৬-৩, তানজিম ৪-০-৪৫-১, মুস্তাফিজ ৪-০-১৫-২, রিশাদ ৩-০-২৪-১, আফিফ ১-০-৯-০)

বাংলাদেশ: ১৮.৪ ওভারে ১৩৭/৫ (লিটন ৪২, রনি ১০, শান্ত ১৯, সৌম্য ২২, হৃদয় ১৯, আফিফ ১, মেহেদি ১৯; সাউদি ৪-০-১৬-১, মিল্ন ৩.৪-০-৩৯-১, নিশাম ১-০-৭-১, সিয়ার্স ৪-০-৩৬-১, সোধি ২-০-২০-০, স্যান্টনার ৪-০-১৬-১)

ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।

ম্যান অব দা ম্যাচ: শেখ মেহেদি হাসান

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!