মিয়ানমারে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায় ৫০ জান্তা সেনা নিহত

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
4 মিনিটে পড়ুন
মিয়ানমারের প্রতিরোধ যোদ্ধারা দেশজুড়ে শাসক জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ছবি সংগৃহীত

মিয়ানমারে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায় ৫০ জান্তা সেনা নিহত

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায় কমপক্ষে ৫০ জান্তা সেনা নিহত হয়েছে। দেশটির জান্তাবিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোর্স গ্রুপ (পিডিএফ) এবং জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলোর (ইএও) যোদ্ধাদের হামলায় সারা দেশে গত চার দিনে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের প্রতিরোধ যোদ্ধারা দেশজুড়ে শাসক জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং গত চারদিনে জান্তা সেনাদের প্রাণহানির এসব ঘটনা সাগাইং, ম্যাগওয়ে, মান্দালয় ও তানিনথারি অঞ্চলে এবং চিন, শান, সোম ও কারেন প্রদেশে রিপোর্ট করা হয়েছে।

অবশ্য কিছু সামরিক হতাহতের পরিসংখ্যান স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

দ্য ইরাবতী বলছে, বুধবার সাগাইং অঞ্চলের ইয়ানমাবিন টাউনশিপে পাঁচ জান্তা সেনা নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছে। ১৮টি প্রতিরোধ গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত ইউনিয়ন লিবারেশন ফ্রন্ট (ইউএলএফ) কিয়াউক কোন গ্রামের কাছে ১০০ সৈন্যের একটি সামরিক ইউনিটের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে হতাহতের এই ঘটনা ঘটে।

পরে নিকটবর্তী মনিওয়া শহরে অবস্থিত নর্থ ওয়েস্ট মিলিটারি কমান্ডের সদর দপ্তর তাদের স্থল সেনাদের সাহায্য করার জন্য সংঘর্ষের স্থানে হাউইৎজার ব্যবহার করে চারটি দূরপাল্লার গোলা নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে ছয় প্রতিরোধ যোদ্ধা আহত হয়। প্রতিরোধ দলগুলো গোলাবারুদসহ সামরিক অস্ত্রও জব্দ করে।

মিয়ানমারে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায় ৫০ জান্তা সেনা নিহত
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এনএলডি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ছবি টুইটার

দেশটির সামরিক সরকারবিরোধী ছায়া সরকার বলে পরিচিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, রকেট চালিত গ্রেনেড ব্যবহার করে গত মঙ্গলবার মান্দালয় অঞ্চলের সিন্টগু টাউনশিপের শোয়ে পাই গ্রামের পুলিশ স্টেশনে হামলা চালিয়েছে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স গ্রুপ (পিডিএফ)।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, থানায় কয়েক মিনিটের জন্য বন্দুকযুদ্ধ চলে, এতে থানার পুলিশ প্রধানসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। মন্ত্রণালয় আরও দাবি করেছে, গত সোমবার মান্দালয় অঞ্চলের মাদায়া শহরে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অতর্কিত হামলায় ১৫ জন জান্তা সৈন্য নিহত হয়।

মিয়াইং পিডিএফ-এর ড্রোন ইউনিট মিয়াইং ইউএভি ফাইটার বলেছে, ছয়টি প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে তারা বৃহস্পতিবার সকালে ম্যাগওয়ে অঞ্চলের মিয়াইং শহরের একটি গ্রামে বিশ্রামরত সামরিক ইউনিট এবং সামরিক লজিস্টিকবাহী যানবাহনে ড্রোন ব্যবহার করে বোমা হামলা চালায়। এতে শাসক বাহিনীর অনেক সেনা নিহত বা আহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মিয়ানমারে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায় ৫০ জান্তা সেনা নিহত
কয়েকবছর যাবৎ সেনাবাহিনীর সাথে জান্তা বিরোধীদের লড়াই চলছে। ফাইল ছবি

এদিকে ম্যাগওয়ে অঞ্চলের স শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। স পিডিএফ বলেছে, মঙ্গলবার রাতে ম্যাগওয়ে অঞ্চলের স শহরে শাসক বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ হয়। প্রতিরোধ গোষ্ঠীটি বাসিন্দাদের অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ থেকে দূরে থাকার এবং যুদ্ধের শব্দ শুনলে বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

তানিনথারিতে আবারও সামরিক চৌকিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওক অ্যাওয়ে কলাম দাওয়েই বলেছে, অন্যান্য স্থানীয় প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে তারা বৃহস্পতিবার তানিনথারি অঞ্চলের দাওয়েই টাউনশিপের মাউং মে শাউং গ্রামের কাছে সামরিক চেকপয়েন্টে হামলা করে। এতে দুজন সেনা নিহত এবং তিনজন আহত হয়।

চেকপয়েন্টে হামলার সময় সেখানে প্রতিরোধ বাহিনীর কেউ হতাহত হয়নি। অবশ্য এই অঞ্চলের সামরিক চেকপয়েন্টগুলোতে প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো বারবরই হামলা চালিয়ে থাকে।

মিয়ানমারে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হামলায় ৫০ জান্তা সেনা নিহত
জাতিসংঘ বলছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নির্বিচারে বেসমারিক ঘরবাড়ির ওপর হামলা চালাচ্ছে। ফাইল ছবি

২০২১ সালের ফেব্রয়ারি মাসের শুরুতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপর গণতন্ত্রের দাবিতে রক্তাক্ত সংগ্রামে লিপ্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে বিভিন্ন গোষ্ঠী সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু করে।

এর আগে গত আগস্ট মাসে মিয়ানমারের ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) জানিয়েছিল, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে নিজেদের সশস্ত্র শাখা এবং বিদ্রোহী মিত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় মিয়ানমারের ৩ হাজার ১২ জন জান্তা সৈন্য নিহত এবং আরও ৪ হাজার ২১ জন সেনা আহত হয়েছেন।

দ্য ইরাবতী সেসময় জানায়, পিডিএফ এবং ইএও গোষ্ঠীগুলো সরকারি লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ অব্যাহত রাখার কারণে জান্তা সরকার ও বাহিনী এখন প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়া গত জুনের শেষের দিক থেকে শান এবং কাচিন প্রদেশে আরও অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় ক্রমবর্ধমান হামলাও চালিয়ে যাচ্ছে এসব গোষ্ঠী।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!