ঘূর্ণিঝড় মোখায় বাংলাদেশে প্রাণহানি নেই, তবে অর্থনৈতিক ক্ষতি ভয়াবহ

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
6 মিনিটে পড়ুন
ঘূর্ণিঝড়ে একটি গাছ উপড়ে পরে। ছবি সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় মোখায় বাংলাদেশে প্রাণহানি নেই, তবে অর্থনৈতিক ক্ষতি ভয়াবহ

ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছে। মহাবিপদ সংকেতও আর নেই। কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। শুধু সেন্ট মার্টিন দ্বীপে একজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ আর শাহ পরীর দ্বীপের মানুষেরা।

বিশেষ করে গরীব ও নিম্নবিত্তদের কাঁচা ঘরবাড়ি একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়ে। সবমিলিয়ে ঝড়ের প্রভাবের শিকার হয়েছেন তিন লাখ ৩৪ হাজার মানুষ।

অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা যেখানে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে, সেই রাখাইন রাজ্যের অনেক এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিতওয়ে শহরে বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বিরোধী এনইউজে সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঝড়ে ইরাবতী এবং মান্দালায়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নানা প্রস্তুতি নেয়া হয়। প্রায় আড়াই লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয় বলে জানান কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইমরান।

সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হয় সেন্ট মার্টিন ও টেকনাফ ঘিরে। সেন্ট মার্টিনে ঝড়ের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘন্টায় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার।

তবে সন্ধ্যার পর বৃষ্টি ও বাতাস দুটোই কমে আসতে করলে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করে। এরপর আবহাওয়া অফিস তাদের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে দেয়।

2 4 ঘূর্ণিঝড় মোখায় বাংলাদেশে প্রাণহানি নেই, তবে অর্থনৈতিক ক্ষতি ভয়াবহ
ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড একটি বাড়ি। ছবি সংগৃহীত

“মানুষ এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে”

আবহাওয়া অফিস জানায় তাদের অনুমান অনুযায়ী সন্ধ্যার পর ঘূর্ণিঝড় মোখা দুর্বল হতে থাকে এবং রাত আটটার পর বাংলাদেশ সীমানায় এটির আর কোন অস্তিত্ব ছিল না।

যে ভারী বর্ষনের শঙ্কা ছিল সেটাও আর নেই বলছে আবহাওয়া অফিস।

“এটা আরেকটু টেকনাফের দিকে আসলে বর্ষণ বেশি হতো। সেক্ষেত্রে ভূমিধ্বসের শঙ্কাও ছিল। কিন্তু আপাতত আর সেই শঙ্কা নেই। মানুষ তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।”—বলেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান।

তবে আগামী ২৪ ঘন্টা সাগরে বিচরণ না করার নির্দেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের। এছাড়া স্বাভাবিক বৃষ্টির একটা পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অফিস। মানুষ এরই মধ্যে সাইক্লোন শেল্টার ছেড়ে যার যার বাড়িতে চলে গিয়েছে।

জীবননাশ হয়নি কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে বড় ক্ষতি

সেন্ট মার্টিনে এখন কাঁচা ঘর একটিরও অস্তিত্ব নেই। একই অবস্থা শাহ পরীর দ্বীপেও।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক জানান প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন প্রায় ২ হাজার ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে আর ১০ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

এছাড়া কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে পাঁচশোর উপর ঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

সেন্ট মার্টিনে গাছ থেকে নারকেল পড়ে এক নারী মাথায় আঘাত পান। মাথায় সেলাই ও প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ আছেন বলে জানান সেখানকার হাসপাতালের কর্মচারী আব্দুল কাদের।

“মানুষজন ভালো আছে। কিন্তু ঘরবাড়ির অস্তিত্ব নেই, সব তছনছ। আমরা সবাই গরীব মানুষ আমাদের কিচ্ছু নাই।”—বলেন মি. কাদের।

সেন্ট মার্টিনের স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল আজিজ জানান কাঁচা ঘর ছাড়াও কাঠের তৈরী যে সমস্ত রিসোর্ট ছিল সেগুলো লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। অনেক বাড়ি গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

ফলে এখন যেসব বাড়ি ভালো আছে সেখানে আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলে থাকছে বলে জানান তিনি। এছাড়া আশ্রয়েকেন্দ্রেও রয়ে গিয়েছে অনেকে। আবার কেউ কেউ মসজিদে গিয়েও আশ্রয় নিয়েছে।

4 3 ঘূর্ণিঝড় মোখায় বাংলাদেশে প্রাণহানি নেই, তবে অর্থনৈতিক ক্ষতি ভয়াবহ
একটি আশ্রয়কেন্দ্র। ছবি সংগৃহীত

সরকারি সাহায্যের অপেক্ষা

সেন্ট মার্টিনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা আব্দুল কাদের বলছিলেন অনেক মানুষ ঘরে ফিরলেও চুলা জ্বালিয়ে রান্না করে কিছু খাওয়ার মতো অবস্থা নেই তাদের।

“কারো কারো শুকনা খাবারও শেষ পর্যায়ে। সবাই এখন সরকারি ত্রাণের আশায় আছে।” – বলছিলেন মি. কাদের।

ঘূর্ণিঝড় মোখা কাভার করতে কক্সবাজারে আছেন বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক মোহসীন উল হাকিম। তিনি বলছিলেন মানুষ সচেতন হয়েছে তাই জীবননাশ হয়নি, কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষতিটা বেশ বড়।

“সরকারি হিসেবে যদি ২ হাজার ঘর হয়, মানে ২ হাজার পরিবার। আর ঘর যেগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেগুলো ৫০ হাজার বা ২ লাখেও মেরামত করা যাবে না, এটা তাদের অনেক বড় ক্ষতি।”—বলেন মি. মহসীন।

এছাড়া আব্দুল কাদের বলেন মানুষ ভীষণ ভয় পেয়েছে। তাই এই মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে তাদের জন্য।

অনেক শিশুর পাতলা পায়খানা দেখা যাচ্ছে। আবার ঝড়ো বাতাসে ঠান্ডাও লেগে গিয়েছে অনেকের। তিনি মনে করছেন জরুরী সহায়তা এখন প্রয়োজন সেন্ট মার্টিনে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান বলেন, “আমাদের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি সেন্ট মার্টিনে। সেখানে এখনো যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। আবহাওয়া যাওয়ার উপযোগী হলে আমরা সেখানে ত্রাণ নিয়ে যাব, যা বরাদ্দ আছে সেগুলো দেবো।”

3 4 ঘূর্ণিঝড় মোখায় বাংলাদেশে প্রাণহানি নেই, তবে অর্থনৈতিক ক্ষতি ভয়াবহ
ঘূর্ণিঝড়ের পর গাছ কাটছেন কিছু মানুষ। ছবি সংগৃহীত

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি মিয়ানমারেও

বাংলাদেশ থেকে ঝড় সরে যেতে থাকে মিয়ানমারের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে। এসময় ভারী বৃষ্টি ও ব্যাপক ঝড়ো বাতাস হতে থাকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে সেখানে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২১০ কিলোমিটার।

দেশটির সেনাবহিনীর প্রকাশ করা ছবিতে দেখা গেছে রাখাইন রাজ্যের থানদউয়ে বিমানবন্দরে একটি ভবন ধসে পড়েছে। সেখানকার বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার ভেঙ্গে পড়েছে।

সিতওয়ে শহরের বাসিন্দারা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বহু বাড়িঘরে পানি ঢুকে যায়। ভিডিওতে দেখা যায় ব্যাপক উচ্চতায় স্রোত আসতে থাকে এবং রাস্তায় বন্যার পানি ঢুকে যায়। একটা টেলিকম টাওয়ার উপড়ে পড়তে দেখা যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায় বাড়ি-ঘরের ছাদ উড়ে যাচ্ছে ও বিলবোর্ডগুলোও সব খসে পড়ছে। এছাড়া মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘর ও ভবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে, মোখায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে মিয়ানমারে কর্তব্যরত জাতিসংঘ। তারা বলছে এই এলাকার অন্তত ৬০ লাখ মানুষ আগে থেকেই দারিদ্র্য ও সংঘাত-সহিংসতার কারণে মানবিক সহায়তার ওপর টিকে আছে।

ফলে এই মানুষগুলোর ওপর ঘূর্ণিঝড় মোখা মরার ওপর খাড়ার ঘা এর মতো দেখা দিতে পারে আশংকা করা হচ্ছে।

সংস্থাটির আশঙ্কা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত, ভূমিধস এবং বন্যা দেখা দিতে পারে। তবে জরুরি ত্রাণের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জরুরি তহবিলের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!