একটি মৃত্যু শুধু, ভাঙা নৌকার ঘাট, মঞ্চ এবং অন্যান্য কবিতা

তৈমুর খান
তৈমুর খান
2 মিনিটে পড়ুন
ছবি সংগৃহীত।

একটি মৃত্যু শুধু

কাজল পরোনি
ওই চোখে মেঘলা বিশ্বাস

আমি আত্মহত্যাকারী
সব সিঁড়ি ভেঙে ফেলেছি
এখন বিষণ্ণ দেশ
মাটির বিহ্বল গান শুনি

তোমার বৃষ্টির ভেতর
কোনও দুর্জ্ঞেয় সরীসৃপ লীলা যায়
ভেজা আঁচলের গানে যদিও তার রঙিন বিলাস
আমি দড়ি পাকাই সারারাত, নিহত বিবেকের দড়ি

একটি মৃত্যু শুধু বাকি সব রহস্য
বাকি সব না বলা বেদনার কাঙাল উচ্ছ্বাস

ভাঙা নৌকার ঘাট

কাঠের নীল উচ্ছ্বাসগুলি ভাঙা নৌকার ঘাট
কিংবদন্তির কাহিনি
মাস্তুলে মাছরাঙা
চন্দ্রকিরণে আরব্যরজনী

এখনও কণ্ঠের তিলটি
এই উপকণ্ঠে এসে হাত নাড়ে
ওর হাতে পাখিজীবনের ধূসর জ্ঞান রাখি

নদীকে জননী বলে ডাকি
গর্ভে তার সময়ের অভিঘাত
জ্বরের কঠিন পথ পেরিয়ে গেলে
রোদে রোদে ছড়িয়ে পড়ে কিংশুকবাণী

ঠোঁটের সীমানায় সেই আরক্তিম
উদয়-অস্ত
আলো-ছায়ার ঘরমুখো বাঁশি
নতুন কেনা পড়শিনির নির্জন আয়নাখানি

8DD3C762 C000 4F06 B03B 6E99D99CF0DA একটি মৃত্যু শুধু, ভাঙা নৌকার ঘাট, মঞ্চ এবং অন্যান্য কবিতা
একটি মৃত্যু শুধু, ভাঙা নৌকার ঘাট, মঞ্চ এবং অন্যান্য কবিতা 42

মঞ্চ

বিষাদ বিকেলে মঞ্চ বাঁধা হলে
আত্মহত্যারা ঘনীভূত হল
সংযমের বক্তৃতায় কেউ উৎসুক ছিল না
নির্বেদ অভ্যাসে যদিও ঝরছিল সংলাপ
ভাষাগুলি নিরশ্রু নিহিত যন্ত্রণা
এক একটি যন্ত্রণার মুখে বিস্মরণ ওড়ে
তাপদগ্ধ কথিত বিশ্বাস
বাঁচা আর বাঁচার ভ্রমে নীল প্রজাপতি
কত দূর, কত দূর যাবে?

মঞ্চে আত্মহত্যারা নাচে…

5ADB77C1 E257 46EE 8AED 0DFFD4470C1A একটি মৃত্যু শুধু, ভাঙা নৌকার ঘাট, মঞ্চ এবং অন্যান্য কবিতা
একটি মৃত্যু শুধু, ভাঙা নৌকার ঘাট, মঞ্চ এবং অন্যান্য কবিতা 43

মৎস্যগান

সব মাছের ভেতর আমি কোন্ মাছ হয়ে জন্মালাম?
এই হ্রদে সাঁতার দিচ্ছি অস্ত আলোর সংরাগে
লাফাচ্ছি, ঢেউ তুলছি অপার্থিব কৌতূহলে
সমস্ত শরীর জুড়ে চকচকে আঁশ
স্বরলিপি আঁকা
জল কেটে, জল কেটে সাবলীল গতি

নীলাকাশ ছায়া দেয়, চাঁদ ভেসে ওঠে
সমস্ত মধ্যরাত জুড়ে খেলা পাতি

মৎস্যগান গেয়ে যায় নৌকার ঈশ্বরী
উচ্ছল স্রোতের মুখে ফেনার মুকুটে
তীব্র ঘোষণা করে আশ্চর্য সব সুখ!

D3C7BF88 369E 4445 B4EE 9FC08A6A289B একটি মৃত্যু শুধু, ভাঙা নৌকার ঘাট, মঞ্চ এবং অন্যান্য কবিতা
একটি মৃত্যু শুধু, ভাঙা নৌকার ঘাট, মঞ্চ এবং অন্যান্য কবিতা 44

সন্ধিকাল

প্রতিদিনই ঈশ্বর গুপ্ত জ্বর দেখতে আসেন
সময়ের বিড়ালিনী ডেকে উঠলে
কেঁপে ওঠে রাত
আমরা বিষণ্ণ হই

নির্লিপ্ত প্রহরগুলি বেরিয়ে পড়লে
একে একে গানেরা মঞ্চে উঠে আসে

সমস্ত রোশনাই দুর্ভিক্ষের ভূমিকা হতে পারে
হাত নাড়লেই কি অন্য হাত পাওয়া যাবে?

এই রাতে সংবাদের পাশে প্রভাকর
জেগে উঠতে পারে —
আমাদের সন্ধিকাল দৌড়ে আসে
ভালবাসা খুঁজতে থাকে পাড়াপড়শিদের ঘরে ঘরে

E796CD69 6F0E 4ED7 A6F9 C93ACCBCE117 একটি মৃত্যু শুধু, ভাঙা নৌকার ঘাট, মঞ্চ এবং অন্যান্য কবিতা
একটি মৃত্যু শুধু, ভাঙা নৌকার ঘাট, মঞ্চ এবং অন্যান্য কবিতা 45

চেতনার পাখিরা উড়ে যাচ্ছে

জলের পাশে এসে ঘুমিয়ে নিচ্ছি
চেতনার পাখিরা উড়ে যাচ্ছে
এই মাঠ নিশিন্দা গাছের হাওয়া পায়

জলডুঙি নিয়ে পেরিয়ে যায় রাত
কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ দ্যাখে স্বামীহারা মেয়েটিকে
নিমেষে অদৃশ্য হয়ে গেল শ্মশান শিগাল

কিছুটা ঘুরপথ দিয়ে বাউল ফিরে আসে
নক্ষত্রে ঝরে তার সুরের পরাগ
অথবা মেঘযানে মোহ যায়

এই রাতে তবু পর্বতে পারাবত চরে
কাঙাল স্বপ্নভুক সবাই

লালিত মার্জারের আত্মাগুলি এইসব ভেবে নেয়

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

বিষয়:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
তৈমুর খান জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি প্রাপ্তি। পেশায় উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: কোথায় পা রাখি (১৯৯৪), বৃষ্টিতরু (১৯৯৯), খা শূন্য আমাকে খা (২০০৩), আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা (২০০৪), বিষাদের লেখা কবিতা (২০০৪), একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ (২০০৭), জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর (২০০৮), প্রত্নচরিত (২০১১), নির্বাচিত কবিতা (২০১৬), জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা (২০১৭) ইত্যাদি। কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার ও দৌড় সাহিত্য সম্মান, নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার, আলোক সরকার স্মারক পুরস্কার সহ অনেক পুরুস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!