বিজয় দিবস স্মরণে কবিতা: আমি শেফা নই, মুক্তিযোদ্ধা

কাজী সেলিনা
কাজী সেলিনা
2 মিনিটে পড়ুন
ছবি প্রতীকী।

আমি শেফা বলছি,
হ্যাঁ, বাবা আদর ক’রে শেষ বর্ণ
কেটে দিয়ে এভাবেই ডাকতেন।
নাহ,আমি ষোলজন নারী মুক্তিযোদ্ধার
তালিকাভুক্ত একজন বীরাঙ্গনা নই,
আমি প্রতিমাসে ভাতাপ্রাপ্ত সুযোগ সুবিধা
পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা ও নই
কিন্তু এটা সত্যি
আমার শরীরে, মননে, হৃদয়ে যুদ্ধকালীন
বন্দীদের হননের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।
এক বাংকার থেকে অন্য বাংকারে আমাকে
অর্ধ-উলঙ্গ অবস্থায় যখন টেনে হিঁচড়ে তোলা হচ্ছিল, তখন জিন্না টুপিওয়ালা রাজাকারের
বিকৃত অট্টহাসির উল্লাসধ্বনি
বুকের মধ্যে আজও গেঁথে রেখেছি।
আমারও একটা অতীত ছিলো
ছিলো ডুড়ে শাড়িতে গালে টোলপড়া
পানের চিপটি লাগা টুকটুকে ঠোঁটের মা।
পাকিস্তান সরকারের চাকুরে বাবা,
বছর দু’য়েকের বড় একটা ভাই
বেনি দুলিয়ে নাচের ভঙ্গিতে ছুটে চলা ছোট্ট বোন
আর নিরাভরণ, অহংকারশূণ্য,বিনয়ী জলি ফুপু।
পনেরো বছরের আগুনলাগা শরীরে
ফাগুন এসেছিলো ভাইয়ের প্রতিবেশী বন্ধু
ভার্সিটির মেধাবী ছাত্রটির জন্য।
থাক, আজ আর তার নাম উচ্চারণ করবোনা
ঘৃণায় বুক জ্বলে যায়।
উত্তাল মার্চ,
সতেরো বছরের ভাইটা ছোট্ট একটা চিরকুটে
লিখে গেলো “যুদ্ধে যাচ্ছি”
মায়ের কান্না আর বাবার উৎকন্ঠায়
ছুটে গেলাম ভায়ের বন্ধুর কাছে
কেমন যেনো অমঙ্গল আশংকায় বুকটা কাঁপছিল।
আমাকে সানন্দে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে
ট্যাক্সিতে তুলে নিলো সেনানিবাসের পথ ধ’রে,
“ওদিকে যাচ্ছি কেন?” প্রশ্ন তুলতেই
গলার মাফলার খুলে চোখ -মুখ বেঁধে ফেললো।
অতঃপর ভারি কন্ঠের আওয়াজ
“বাংকার মে লে যাও” যাও- জলদি যাও।
মগ্ন চৈতন্য ভাঙ্গে যখন
চোখে-মুখে রোদের ঝাপট এসে লাগে।
চেয়ে দেখি,
আমার শরীরে শুয়োরের মধুযামিনীর চিহ্ন
পাষন্ড নেকড়ের নখের আঁচড়ে
ক্ষত -বিক্ষত অজস্র যন্ত্রণা।
নগ্ন দেহ,যেনো দোজখ থেকে বেড়িয়ে
এসেছে নীল অপরাজিতা।
লজ্জায় নিজের শরীরের দিকে তাকাতে পারছিনা।
হঠাৎ মনে হলো,
দূর থেকে ভেসে আসছে চিরকাঙ্ক্ষিত ধ্বনি
“জয় বাংলা, জয় বাংলা”
বাংকারের মুখ দিয়ে যথেষ্ট আলো ফুটছে
বারবার মনে হচ্ছে ভাই এসে বলবে-
“শেফা ওখান থেকে বেড়িয়ে আয়”
কিন্তু ওর সামনে কেমন করে দাঁড়াবো?
আমি যে উলঙ্গ!
চারিদিকে চিৎকার- চেঁচামেচি
কেউ একজন বলছেন,
মা,আপনি বেড়িয়ে আসুন
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে,
আমরা আপনাকে নিতে এসেছি।
কেউ গায়ের চাদর,কেউ মাথার পাগড়ী খুলে
যতটুকু সম্ভব আবৃত করলো।
এরপর চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল,
তারপর নারী পূনর্বাসনকেন্দ্র।
বাড়িতে নয়,
কেননা, আমি শেফা নই- ধর্ষিতা
সম্ভ্রম হারানো বীরাঙ্গনা।
পাথরের মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলি
আমি বীরাঙ্গনা নই, আমি শেফা
আমি শেফা, আমি মুক্তিযোদ্ধা।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!