পশ্চিমবঙ্গে আগমনী উৎসব ও গুণীজন সংবর্ধনা

অর্ঘ্য রায়
অর্ঘ্য রায়
5 মিনিটে পড়ুন

দুই বাংলার গুণীজন সমাবেশে আগমনী উৎসব পালন করলো পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণার ফলতা ফতেপুরের বাংলার মুখ। বাংলাদেশের স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী, সম্পাদক ও সাহিত্যিক হাসান মাহমুদের হাতে অর্পণ করা হয় ‘পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার ২০২২’ – দুই বাংলার আত্মিক সেতুবন্ধনে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে এই সম্মান দেওয়া হয়। একই মঞ্চে পশ্চিমবঙ্গের প্রথিতযশা কবি রফিক উল ইসলামের হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘বাংলার মুখ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২’। আধুনিক বাংলা কবিতায় সামগ্রিক অবদানের জন্য তাঁকে এই সম্মান প্রদান করা হয়। বাংলা শিশু সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ‘বাংলার মুখ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২’ প্রদান করা হয়, বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক শ্যামাচরণ কর্মকারকে। তিনি প্রায় চল্লিশ বছর ধরে নিরলস শিশু সাহিত্য চর্চা করে যাচ্ছেন, লিখেছেন অজস্র বইপত্র।

এই সম্মান গ্রহণ করবার পর তিনি প্রতিক্রিয়াতে জানান, “আমি জীবনে অনেক কঠিন সময় দেখেছি, ছেলেবেলায় ঠিকমতো খেতে পেতাম না, অনেক ভাই বোনের সঙ্গে বড় হয়েছি, বিভিন্ন ক্লাব সংগঠন থেকে একটা বই পাওয়ার জন্য আমি ক্লাসে ফার্স্ট কিংবা সেকেন্ড হতাম। ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করলে তবেই তো বই পাওয়া যাবে আর সেজন্যই আমি ফার্স্ট হতাম। ছেলেবেলায় বাবাকে হারিয়েছিলাম, কিন্তু আজ আমরা সবাই প্রতিষ্ঠিত, সবাই ভালো ভালো জায়গায় চাকরি করি। জীবনে হাল ছাড়লে হবে না লড়াই জারি রাখতে হবে। ছোটরা আমার প্রাণ, ছোটদের জন্য সারা জীবন লেখালেখি করছি। তার জন্যে পুরস্কার পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে।”

বিশিষ্ট কবি বনানী চক্রবর্তীর হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘কুসুমকুমারী দেবী স্মৃতি পুরস্কার ২০২২’। পরপর অনন্য সাধারণ চারটি কাব্যগ্রন্থ রচনার জন্য তাঁকে এই সম্মান জানানো হয়।

পুরস্কার সভায় তিনি বলেন, “আমি নিজের মতো করে লিখতে ভালবাসি, কবিতা লেখার জন্য আমি যে পুরস্কার পাবো তা কখনো ভাবি নি। সভা- সমিতি আমাকে বিশেষ টানে না। তাহলে ও বাংলার মুখের এই আহ্বান আমি উপেক্ষা করতে পারলাম না। এই আলোকিত সভায় উপস্থিত থাকতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত। কবিতা চর্চার প্রতি মনোযোগ ও দায়িত্ব যেন আরো বেড়ে গেল।”

অত্যন্ত ধ্রূপদী ঘরানার এই সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত দর্শকদের মনোরোগ ও আগ্রহ ছিল দেখার মতো। এই সংবর্ধনা সভাতে মূলত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মার্জিত উপস্থিতি অনুষ্ঠানে আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছিল। ‘বাংলার মুখ ‘ এর প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট সাহিত্যিক অবশেষ দাস বলেন “আমরা ঐতিহ্য পরম্পরা ও উত্তরাধিকারে বিশ্বাসী। আমরা বিশ্ব নাগরিক হওয়ার স্বপ্ন দেখি। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে আমরা এই সংবর্ধনা সভার আয়োজন করে আসছি। ইতিপূর্বে সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ, কবি জয় গোস্বামী, সাহিত্যিক কার্তিক ঘোষ, কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার, কবি জহরসেন মজুমদার, কবি শামীম রেজা সহ দুই বাংলার বহু স্বনামধন্য কবিদের বাংলার মুখের আন্তরিক আয়োজনে পেয়েছি। আগামী দিনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে বাংলার মুখ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।”

সংবর্ধিত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা কবিতা পাঠের আসরে এক প্রকার মাতিয়ে দিয়েছেন বলা যায়। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল কণ্ঠশিল্পী হাসান মাহমুদের সংগীত। তাঁর গান এই দিন দর্শকদের মন ভরিয়ে দেয়। হাসান মাহমুদ বলেন ,” পশ্চিমবঙ্গে তিনি আগেও এসেছেন অজস্র বন্ধুবান্ধব এখানে ছড়িয়ে আছে সময় পেলেই তিনি চলে আসেন। সাংবিধানিকভাবে দুটো দেশের আলাদা অস্তিত্ব থাকলেও তিনি বাঙালি জাতিকে অখণ্ড সত্তা অনুভব করেন। জীবনে চাওয়া পাওয়া তে তিনি বিশ্বাসী নন খুব সাধারণভাবেই সততা ও মূল্যবোধের সঙ্গে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে পৃথিবী দেখতে চান।” তার এই অঙ্গীকারে দর্শকরা করতালীতে এদিনের সভাঘর মুখর করে তোলে।

কবি রফিকুল ইসলাম বলেন, “বর্তমান প্রজন্ম বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে সাহিত্য চর্চার মতো সময় তারা বিশেষ পায় না। তারপরেও বাংলার মুখ যেভাবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চা চালিয়ে যাচ্ছে তা দেখে বিস্ময় জাগে। মনে আশার আলো জ্বলতে থাকে। সারা জীবন ধরে লিখে যাচ্ছি কোনও পুরস্কার কিংবা বাহবা পাওয়ার জন্য নয়। লিখতে পারলে বুকের ভেতর পারিজাত আনন্দ জাগে, সেই আনন্দেই লিখে চলেছি।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যের বেলাভূমি পত্রিকার সম্পাদক কবি অরুণ পাঠক। এছাড়া শিক্ষক উৎপল দাস, শ্রুতিনন্দা পাল, সোনালিসা বেড়া, ঈশানী মোদক, স্নেহা মন্ডল, কথিকা দেব, ঋষিকেশ মন্ডল, অঙ্কিতা হালদার, সুদীপা মন্ডল, মৌবনী মন্ডল, অয়ন্তিকা সরদার প্রমুখের অংশগ্রহণ ছিল নজর কাড়া।

সমগ্র অনুষ্ঠানের পুরোহিত করেন ডায়মন্ড হারবার শহরে স্বনামধন্য চিকিৎসক হিমাদ্রি পাল। আয়োজকদের পক্ষ থেকে তরুণ শিক্ষক রাজেশ কয়াল বলেন, “বাংলার মুখ আমাদের প্রথম প্রদর্শক, আমাদের স্পন্দন। আগামী দিনে বাংলার মুখ দুই বাংলা জুড়েই কাজ করবে। সম্পূর্ণভাবে ধ্রুপদী ঘরানার এই অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ সঞ্চালনের দায়িত্ব পালন করেন ‘বাংলার মুখ’ এর প্রতিষ্ঠাতা সাহিত্যিক অবশেষ দাস।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
সাংবাদিক ও কলামিস্ট। পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!