নাটোরে প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য

মাহাবুব খন্দকার
মাহাবুব খন্দকার - নাটোর প্রতিনিধি
5 মিনিটে পড়ুন

চলতি বছরের ২৫শে মার্চ বিভিন্ন পত্রিকায় ‘নাটোরে জনব্যবহৃত জলাশয় ভরাটের অভিযোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। প্রশাসন ২৯শে মার্চ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে জলাশয় ভরাটকারীকে এই মর্মে নির্দেশনা দেয়া হয়- ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে ভরাটকৃত জলাশয়ের বালু উত্তোলন করে, নিজ খরচে এসিল্যান্ড অফিস পৌঁছে দেওয়ার। নির্দেশনা অমান্য করলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।’এই নির্দেশ দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাটোর সদর, নাটোর।

এর মাঝে পেরিয়ে গেছে ৪ মাস। আজো সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন হয় নাই। প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে জলাশয় ভরাটকারি, ভরাটকৃত জলাশয়ে বিদেশি প্রজাতির ঘাস রোপণ করেছেন। এ বিষয় নিয়ে নাটোরের সুশীল সমাজের নাগরিকদের মাঝে জল্পনা কল্পনা দানা বেঁধেছে। প্রশাসন নিরব কেন।

প্রকাশিত সংবাদ: ‘নাটোরে জনব্যবহৃত জলাশয় ভরাটের অভিযোগ’

নাটোরে ভরাট হচ্ছে জলাশয়। হুমকির মুখে পরিবেশ ও প্রকৃতি।বিভিন্ন অজুহাত ও যুক্তি দেখাচ্ছেন জলাশয় ভরাটকারী। বিজ্ঞ আইনজীবীরা বলছেন জলাশয় ভরাটের কোনো বিধান নেই। আর প্রশাসন বলছেন অবৈধভাবে জলাশয় ভরাটকারীর বিরুদ্ধে খুব দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নাটোর পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাপুড়িয়াপট্টি মহল্লার নববিধান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়‘এর পেছনে জমিদারি আমলের পুকুরটি।যে পুকুরের পানি অত্র এলাকার শিশু মা-বোনসহ সকলেই গোসল, কাপড় ধোয়াসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, ‘জমিদার চন্দ্রনাথ তার ছেলে জমিদার বিশ্বনাথ এবং তার ছেলে মদনবাবু। জমিদার মদনবাবু হঠাৎ একদিন মারা যায়। শেষ জমিদার মদনবাবু নিঃসন্তান ছিলেন এবং জমিদারের কোন আত্মীয় স্বজন ছিল না। জলাশয় ভরাটকারী অত্যন্ত প্রভাবশালী। টাকা দিয়ে সব কিছুই ব্যবস্থা করেছেন।’

জলাশয় ভরাটকারী মফিউর রহমান দুদু জানান, ‘ক্রয়সূত্রে এই পুকুরের মালিক আমি।খারিজ করা আছে, নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করা হয় এছাড়াও প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র আমার আছে।পুকুর রেখেই বালু দিয়ে একটি পাড় সংস্কার করছি যে কাজের উদ্বোধন করেছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর।’ তবে কোনো দলিল তিনি দেখাতে পারেননি।

নাটোর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জাহিদুর রহমান জাহিদ জানান, ‘ছোটবেলা থেকে এই পুকুরে আমরা গোসল করেছি। এলাকার মানুষের পানির চাহিদা পূরণে এই পুকুরটি বিরাট ভূমিকা পালন করছে। যে জায়গাটুকু ভরাট করা হয়েছে তা কাগজে ভিটা আছে। কাগজপত্রে যা আছে তাই হবে এটাই স্বাভাবিক।’

নাটোর ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি হালিম খান ফেসবুকের এক মন্তব্যে এই পুকুরটি সম্পর্কে জানান, ‘পুকুরটি জমিদার চন্দ্রনাথ প্রামানিকের। গৃহস্থালি সহ এলাকাবাসীর পানিয় জলের চাহিদা মেটানোর জন্য এটি খনন করা হয়ছিল। এর তিনদিকে তিনটি সান বাধানো ঘাট ছিলো।যার দুটির চিহ্ন আজো বিদ্যমান। এটি চন্দর পুকুর নামে এলাকায় পরিচিত।

এ বংশের সবশেষ উত্তরাধিকার মদন প্রামানিকের সাথে সখ্য গড়ে তোলেন ভারত থেকে বিনিময় করে আাসা ব্যাক্ত। যার বাড়ি পুকুরটির পাশেই। মদন বাবুর মৃত্যুর পর কিভাবে যেন ওই ব্যক্তি পুরটির মালিক হিসাবে আত্ন প্রকাশ করেন। গত দূ বছর ধরে সংস্কারের নামে পুকুরটি গ্রাস করছেন তিনি। গত বছর আমি ভরাট কাজ বন্ধ করিয়েছিলাম তৎকালীন জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ মহোদয়কে দিয়ে। দস্যুরা রুপ পাল্টায়।’

জেলা জজ কোর্টের জেনারেল প্রসিকিউটর আলহাজ্ব মো. আসাদুল ইসলাম জানান, ‘জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর ৩৬ ধারা অনুযায়ী কোনো পুকুর, জলাশয়, খাল, লেক ভরাট করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেও তা নিষিদ্ধ।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৬ (ঙ) অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।’

যেহেতু জলাধার ও পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এ সর্ম্পেকে আইনে ভরাটকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে সেহেতু নাটোর শহরের ভিতরে জনবহুল এলাকায় প্রশাসনের নাকের ডগায় জনসাধারণের বহুল ব্যবহৃত এই জলাশয় কিভাবে ভরাট হচ্ছে এমন প্রশ্ন নাটোরবাসীর।

কিছুদিন আগেও যে জলাশয়টি ছিল জলে টইটুম্বুর এলাকাবাসী গোসলসহ নিত্যনৈমিত্তিক কাজে জলাশয়ের পানি ব্যবহার করতেন কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করে জলাশয় ধ্বংসকারী প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি সুকৌশলে পুকুরের মধ্যে বেড়া দিয়ে বালু ফেলে ভরাট করেছে। ভবিষ্যতে পুরো জলাশয়টি নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করছেন ভরাটকারী।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ‘এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘যদি কেউ অবৈধভাবে জলাশয় ভরাট করেন, তবে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

প্রিয় পাঠক, জলাশয় ভরাটকরী কি প্রশাসনের নির্দেশনাকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়েছেন? তবে কেনইবা প্রশাসন নীরব রয়েছেন? এ বিষয়ে সুশীল সমাজের নাগরিকরাই বা কি ভাবছেন? জানতে এবং জানাতে, বিস্তারিত আসছে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মাহাবুব খন্দকার নাটোর প্রতিনিধি
সাংবাদিক এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!