কবি উস্রি দে’র ছ’টি কবিতা

উস্রি দে
উস্রি দে
3 মিনিটে পড়ুন
সাময়িকী আর্কাইভ

সাক্ষী থাকুক

ঝুল বারান্দার কোনে, সাজানো ফুলের টব
দেশি বিদেশি রঙ বেরং ফুলেদের উৎসব
পাতাবাহারও আছে কিছু কিছু এরই ফাঁকে ফাঁকে আলগোছে
ক্লান্ত সময় সকাল বিকেল শাড়ির আঁচলে হাত মোছে
রাত ফুরোলেই শত ব্যস্ততা প্রাত্যহিকের খুঁটিনাটি
এক হাতে সব সামাল দিয়েও সংসারটি পরিপাটি
সবার খুশি সবার সুখ যান্ত্রিকতার অমোঘ টানে
পান থেকে চুন খসে গেলেই অতর্কিতে আঘাত হানে
বুকের ভেতর অনেক ক্ষত কান্নাচাপা দীর্ঘশ্বাস
কোন কোনদিন গভীর রাতে ঝুল বারান্দা পায় আভাস
হ্যাঁচকা টানে জান্তব কাম নরম শরীরে ক্ষিদে মেটায়
রাতচরা সেই পাখিটা তখন ভাঙা ডালে বসে ডানা ঝাপটায়
ভোর না হতেই ঘুরল চাকা অবশ দেহ মন পরাঙ্মুখ
যাপনের সেই নিয়মটা বাঁধা জীবন যেমনই হয়ে উঠুক
একলা দুপুর প্রহর গোণে ঝুল বারান্দা ফুলের টব
ওদের কাছেই গচ্ছিত যে পুঞ্জিত ব্যথা অভিমান সব!

কোলাজ

স্পর্শগুলো ভেঙে ভেঙে যায়
রাত বাড়ে, নেভে আলো
জানালার পর্দায় মুখ দেখে চাঁদ
নারী, তুমি কেমন আছো, ভালো?

কখন যেন মনের আকাশে
ছায়া ফেলে দু’চারটি মুখ
ছুট ছুট ছুট, কোন বেলায়?
নারী তুমি পেয়েছ কি সুখ?
মেয়েবেলার পুতুল বিয়ে, রান্নাবান্না
সাগরপারে কুড়োও ঝিনুক
বাৎসল্যে ভেসে যাওয়া উজাড় শরীর
হাওয়া শনশন, পোড়া বুক!

শুধু মন মন করো, কুসুম
তোমার কি কোন শরীর নাই
ঘরে বাইরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে
অজস্রবার একটি কথাই!
উপড়ে ফেলো জঞ্জাল যত
মনের ভিতর মনের বাস
একদিন নয়, দু’দিন নয়
সারাবছর বারোমাস!

অজুহাত

নদীটা বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে একবার ঘাড় ঘোরালো
পিহনে ফেলে আসা বিস্তীর্ণ চরাচরের দিকে,
দুটো গাঙশালিক একে অপরের গা খুঁটে দিচ্ছিল
আর সূর্যটা টুক করে ডুব মারার তাল খুঁজছিল
তালসারির পিছনে, একটা অপার্থিব আলোয়
মুখ দেখছিল পৃথিবী। আর ঠিক সেই সময়েই
তোমার মুখে ছায়া পড়েছিল, গাঢ় ছায়া
তাল তমাল শিরীষ কৃষ্ণ চুড়ার একসাথে,
জীবন আঁকিবুঁকি কাটছিল জীবনের অজুহাতে।

ডুব দাও হে মন

জলের কাছে যাওয়া হয়নি অনেকদিন
নদীর কাছে –
শ্যাওলায় জড়িয়ে যাওয়া দাম
ছোঁয়া হয়নি
শুষ্ক জমিজিরেতেই বসবাস যে ইদানিং
ধারে কাছে শোনা যায়না কলধ্বনি।
শুধুই ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক চাকার ঘর্ষণ
সকাল সন্ধ্যে ঠিক একইরকম!
শব্দ ভাঙে গড়ে বুকের ভেতর
হাতুড়ির ঘায়ে চুরমার হয়
কখনও সখনও, সাজানো জীবন।
তবু প্রত্যাশার সবুজ আস্তরণ
ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলে পানকৌড়ি মন
বুড়বুড়ি কাটে জলের ভেতর
যখন তখন।

বোধ

সহজ পাঠে মোড়া শৈশব কে খুলে দেখি
রংচটা রাংতা টাই রয়ে গেছে শুধু
লেবেঞ্চুস কই? এখন তো আকাশ আর
মাটি একাকার। কারো রাজত্বে অন্য
কারোর সত্ব নেই যে আর ! জীবনের
ধারাপাতে অঙ্ক মেলে না আজও, পিছুটান-
অতীত আগলে রাখে সময়ের দুয়ার
বিষণ্ণ বিপন্ন মানুষ ঘূর্ণিপাকে ঘোরে
চক্রাকারে, তবু আলো জ্বেলে দিতে হবে
নগরে বন্দরে, কোন ডাক উপেক্ষার নয়
কলরবে কোলাহলে প্রতিদিনে প্রতিপলে
জীবন হেঁটে চলে জীবনের বদলে।

কোজাগর

পাতায় পাতায় সবুজের সাথে মাখামাখি
কত চৈত্র, শ্রাবণ কিংবা বৈশাখী
আসে যায়, যায় আসে, নিষ্প্রভ বা রঙিন
শুভবিবাহের সিঁদুর মাখা না
শ্রাদ্ধের অকলঙ্ক খাম,
যেমন সুরে বাজে বীণ –
ঠিক বা বেঠিক, কালোয় সাদায়
প্রাত্যহিকের পাঁচালি পাঠ
কোন প্রান্ত পরিপূর্ণ, কোথাও বা ফাঁকা মাঠ।
ফসল তোলার সময়, আজ কিংবা কাল
গভীর সাগরে বিপন্ন রাত্রি,
চাঁদের আলোয় হাসিমুখ
ফাঁদ পাতা জাল –
মাংস নাকি রক্ত, গন্ধ বিলোয় ঘরে ঘরে
চাহিদার নিক্তিতে নিশিভোর,
স্বপ্নেরা বিকোয় চড়া দামে
উঠোনে হাঁপায় একলা কোজাগর!

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: উস্রি দে
নিবাস পশ্চিমবঙ্গ। দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত আছেন।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!