ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া ছাত্রলীগ

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
6 মিনিটে পড়ুন

দুই দিনের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ছাত্রদলের ওপর হামলা ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু ক্যাম্পাসে নয় বৃহস্পতিবার (২৬ মে) সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ঢুকেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু ছাত্রলীগ এই অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রদলের ওপরই দায় চাপিয়েছে।

অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতারা অভিযোগ করে বলছেন, “এটা ক্যাম্পাসে আধিপত্য স্থাপনের লড়াই। ছাত্রলীগ ১৩ বছর ধরে ক্যাম্পাস দখল করে আছে। অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুক তারা তা চায় না। আর ছাত্রদল চাইছে ক্যাম্পাসে তাদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে।”

আর ছাত্রলীগের কাউন্সিল পিছিয়ে নতুন কমিটি গঠন বিলম্বিত করার জন্য এই শো-ডাউন বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের নতুন কমিটি চাওয়া কয়েকজন।

যেভাবে শুরু সংঘাতের শুরু
সংঘাতের শুরু করেছে ছাত্রলীগ গত মঙ্গলবার। ওই দিন সকালে ছাত্রদলের নেতারা টিএসসিতে ঢাবি সাংবাদিক সমিতিতে আসেন সংবাদ সম্মেলন করতে। ছাত্রদলের আরও পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী একই সময়ে মিছিল করে টিএসসির দিকে আসছিলেন। তখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

একদিন বিরতি দিয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে মঙ্গলবারের হামলার প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে ঢোকার সময় দোয়েল চত্বর এলাকায় ফের হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা হামলা থেকে বাঁচতে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা করা হয়। তাদের হামলার শিকার হন মামলার কাজে আসা সাধারণ মানুষও। এর বিরুদ্ধে আইনজীবীরা প্রতিবাদ মিছিল করেছেন।

দুই দিনের হামলায় প্রকাশ্যে লাঠিসোটা, রড, দেশীয় অস্ত্র ও রাম দা ব্যবহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গুলির শব্দও শোনা গেছে। আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে এখন উত্তপ্ত অবস্থা চলছে।

এদিকে মঙ্গলবারের হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। পুলিশ ওই মামলার আসামি ধরতে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদেরই খুঁজছে। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পুলিশ গ্রেপ্তারের কোনো চেষ্টা করছে না বলে অভিযোগ।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল অভিযোগ করে জানান, তারা মামলা নির্যাতনের মধ্যেই আছেন। এখন পর্যন্ত ১৭ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ৮০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন দুই দিনে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের ওপর গত দুই দিনে দেশীয় অস্ত্র, রামদা ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালান হয়েছে। বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগ আমাদের ওপর গুলি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আমাদের কোনো নেতা-কর্মী থাকতে পারে না। আমাদের কোনো মিছিল মিটিং করতে দেওয়া হয় না। ডাকসু নির্বাচনের বৈধতা দেওয়ার জন্য আমাদের তখন সামান্য স্পেস দেওয়া হয়। এখন আর সেটুকুও আমাদের দেওয়া হয় না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ছাত্রদল ক্যাম্পাসে সশস্ত্র অবস্থায় প্রবেশ করে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরাই তাদের প্রতিরোধ করেছে। ছাত্রদলের লোকজনই ক্যাম্পাসে রামদা ও লাঠিসোটা নিয়ে আসে।”

তাহলে ক্যাম্পাসে কী ছাত্রদল মিছিল মিটিং করতে পারবে না? জানতে চাইল তিনি বলেন, “তাদের সময় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা হয়, পরীক্ষা হয়। সাধারণ ছাত্ররা চায় না আগের সেই অবস্থা ফিরে আসুক।”

নেপথ্যে কী?
দুই দিনের সংঘাতের নেপথ্যে মূল কারণ ক্যাম্পাসে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতারা বলছেন, “যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাস দখলে রাখে। গত ১৩ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় ছাত্রলীগের দখলে আছে ক্যাম্পাস। এখানে বিরুদ্ধ মত সহ্য করা হয় না। আর ছাত্রদল এখন চাইছে ক্যাম্পাসে অবস্থান তৈরি করতে।”

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, “ক্যাম্পাসে আধিপত্যের লড়াইয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখন পরীক্ষা চলছে। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ছাত্রলীগ গত ১৩-১৪ বছর ধরে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল করে আছে। এতদিন সংঘাত হয়েছে তাদের নিজেদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সহযোগী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এর আগে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন ছাত্রদলও ক্যাম্পাস দখলে রাখে। দুই সময়েই গণতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।”

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ অভিযোগ করেন, “এর আগে ছাত্রলীগ ছাত্রীদের মিছিলেও হামলা করেছে। তারা অন্য ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হলে থাকতে দেয় না। তারা ক্যাম্পাসে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। আর এখন আধিপত্য ধরে রাখতে ছাত্রলীগ লড়াই শুরু করেছে ছাত্রদলের সঙ্গে। এখানে আদর্শিক কোনো বিষয় নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। তাদের দায় আছে।”

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, “গত দুই দিনে যা ঘটেছে এবং আমার কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে এই সংঘাতের দায় ছাত্রলীগকেই নিতে হবে। শুনেছি কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু নেতা পদ ধরে রাখার জন্য ছাত্রলীগের সম্মেলন যাতে পিছিয়ে যায় সেজন্য পরিকল্পিতভাবে তারা ক্যাম্পাসে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন। এটা খুবই উদ্বেগজনক।”

কার কী স্বার্থ
ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। তার আগেই ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকেরা।

ছাত্রলীগের নতুন পদ প্রত্যাশী কয়েকজন জানান, যারা শীর্ষ পদে আছেন তারা চান না সম্মেলন হোক, নতুন কমিটি হোক। এখন যারা আছেন তারা আরও বেশিদিন পদে থাকতে চান। আর এই কারণেই তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্যাম্পাসে উত্তাপ তৈরি করছেন। তারা তাদের ক্ষমতা দেখাচ্ছেন।

এ নিয়ে চেষ্টা করেও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে ২০১০ সালের পর এই প্রথম ছাত্রদল ক্যাম্পাসে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ল। ছাত্রদলের এই কমিটি নতুন। নানা পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, অতীতের কমিটিগুলো ছিলো নির্জীব। বর্তমান কমিটি তাই তাদের সক্ষমতা দেখাতে মাঠে নেমেছে। তারই অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা অবস্থান তৈরি করতে চাইছে। সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে।

এর জবাবে ছাত্রদল নেতা সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, “আমাদের ক্ষমতা দেখানোর কী আছে। আমরা তো সুষ্ঠু একটি পরিবেশ চেয়েছি মাত্র। গণতান্ত্রিক স্পেস চেয়েছি।”

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!