হনুমান জয়ন্তীর মিছিল ঘিরে সহিংসতা, দিল্লিতে ‘হাই অ্যালার্ট’

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
4 মিনিটে পড়ুন

দুই বছর আগের দাঙ্গার স্মৃতি ফিরলো দিল্লিতে। শনিবার জাহাঙ্গিরপুরায় হনুমান জয়ন্তীর তিনটি মিছিল ছিল। প্রথম দুইটি মিছিলে কোনো গোলমাল হয়নি। কিন্তু সন্ধ্যায় তৃতীয় মিছিলকে কেন্দ্র করে ব্যাপক গোলমাল ও সহিংসতা হয়। সেই মিছিল মূলত বজরং দলের ছিল বলে অভিযোগ। দিল্লি পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর মেধালাল মিনার হাতে গুলি লাগে। এছাড়া পাথরের আঘাতে আরও আটজন আহত হন।

পুলিশ মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, মিনাকে আসলাম বলে একজন গুলি করেছিল। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে পিস্তলও উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার পরই দিল্লির উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় কিছু মানুষের অভিযোগ, মিছিল থেকে উসকানিমূলক স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। তারপরেই পাথর মারা হয়। সংঘর্ষ শুরু হয়। আবার অন্যপক্ষের দাবি, কোনোরকম উসকানি দেওয়া হয়নি।

টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থলে প্রচুর পাথর পড়েছিল। একটি স্কুটার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। রাস্তায় প্রচুর ভাঙা বোতল পড়েছিল। বেশ কয়েকটি গাড়ি ভেঙেছে।

১৬ বছর বয়সী আলামিন জানান, তিনি তার কাকার সঙ্গে মসজিদে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি দেখেন যে দুই দল মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। একটি পাথর তার গায়ে লাগে। তিনি ও তার কাকা প্রাণভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান।

স্থানীয় বাসিন্দা অজয় কুমার জানান, তিনি তার বন্ধুর বাড়িতে ছিলেন। এমন সময় গোলমালের খবর পান। বাড়িতে বাবা-মা ছিলেন বলে তিনি দ্রুত ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি ফেরেন। পাথরের আঘাতে ট্যাক্সি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি কোনোক্রমে বাড়ি ফেরেন।

তার মা মুন্নি দেবী জানিয়েছেন, প্রচুর পাথর মারা হয়েছে। এমনকি তলোয়ার নিয়েও কিছু মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিছিলে সাড়ে ৩০০-৪০০ মানুষ ছিলেন। জাহাঙ্গিরপুরির সি ব্লকে ঝামেলা হয়। তারপর তা প্রবল আকার নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুই তরফই পাথর ছুঁড়েছে। প্রচুর গাড়ি ভেঙেছে। কিছু দোকানে ভাঙচুর হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, মিছিল থেকে কোনোরকম উসকানি দেওয়া হয়নি। আবার কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, মিছিল থেকে উসকানিমূলক স্লোগান দেওয়া হয়। এমনকি একটি জায়গায় গেরুয়া পতাকা তোলারও চেষ্টা হয়। পুলিশ অবশ্য কোনো দাবিই সমর্থন করেনি। তারা জানিয়েছে, তদন্ত চলছে।

পুলিশের দাবি, কাছেই একটি পুরনো জিনিস কেনাবেচার দোকান ছিল। সেখান থেকে দাঙ্গাকারীরা বোতল নিয়ে ছুঁড়তে শুরু করে।

পুলিশ জানিয়েছে, মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ এবং সামাজিক মধ্যমে আপলোড করা ভিডিও থেকে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্রাইম ব্রাঞ্চ ও স্পেশাল সেলের অফিসারদের নিয়ে দশটি দল গঠন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে প্রচুর পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।

দিল্লির পুলিশ কমিশনার রাকেশ আস্তানা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।

দুই বছর আগে দিল্লিতে ভয়াবহ দাঙ্গায় ৫৩ জন মারা গেছিলেন। ৬১৯ জন আহত হয়েছিলেন। সেই দাঙ্গাও জাহাঙ্গিরপুরি থেকে শুরু হয়েছিল। শনিবার সন্ধ্যার ঘটনায় দাঙ্গার সেই স্মৃতি আবার ফিরে এসেছিল।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, শোভাযাত্রায় পাথর মারা খুবই নিন্দাজনক ঘটনা। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবাই যেন একে অন্যের হাত ধরে শান্তিরক্ষা করেন।

কর্ণাটকের পুরনো হুবলিতে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে প্রবল গোলমাল হয়। ওই পোস্টটিতে একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা ছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, পুরনো হুবলিতে প্রচুর মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তারপর সেখান থেকে পাথর মারা হয়। পুলিশ লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। পুলিশের কিছু গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

পুলিশের দাবি, ১২ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। মোট ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আপত্তিকর পোস্ট যে ব্যক্তি দিয়েছিল, তাকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু মধ্যরাত নাগাদ প্রচুর মানুষ পুলিশ থানার সামনে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তারপর শুরু হয় গোলমাল। পুলিশের দাবি, জমায়েতে থাকা মানুষরা সহিংস হয়ে ওঠেন।

পুলিশ জানিয়েছে, কেউ আইন নিজের হাতে নিলে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড়া হবে না। আর যারা উসকানি দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত কয়েকদিন ধরে মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, দিল্লি সহ কয়েকটি রাজ্যে বড় ধরনের গোলমাল হয়েছে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!