বরিশালের গৌরনদীতে সরকারী খাল দখলের মহোৎসব

বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশাল প্রতিনিধি
7 মিনিটে পড়ুন

বরিশাল জেল্রা গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা- ভায়া বাকাইহাট (ঘোষেরহাট)- আগৈলঝাড়া খাল দখলের মহোৎসব চলছে।

স্থানীয় কিছু আ’লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীসহ শতাধিক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে বাকাই হাট এলাকায় প্রায় দেড় কিলোমিয়ার সরকারি খাল দখল করে অবৈধ পাকা-আধাপাকা স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খাল দখলের ফলে আগামী ইরি-বোরো মৌসুমে ২০টি গ্রামের ২৫ হাজার কৃষক সেচপানি সংকটে পড়ার আশঙ্কা করেছে স্থানীয়রা। খালটি দখলমুক্ত করতে স্থানীয় এমপিসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, খালটির যে স্থানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ হচ্ছে, সেই জায়গার মালিক বরিশাল জেলা পরিষদ। খালের ভেতর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মৌখিক অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছি। জেলা পরিষদ সহযোগিতা করলে শীঘ্রই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

স্থানীয় লোকজন ও ভূক্তভোগী কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ভুরঘাটা- ভায়া বাকাই হাট- আগৈলঝাড়া খালটি গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার ব্যবসায়ী ও কৃষকদের জন্য আর্শিবাদ হিসেবে পরিচিত।

গৌরনদী উপজেলার বাকাইহাট, মেদাকুল হাট, ভূরঘাটা পানের হাট, মাগুরা বাজার ও আগৈলঝাড়া উপজেলার বাশাইল হাট, রাজিহারসহ ৮টি হাট- বাজারে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী, ক্রেতা. বিক্রেতার মালামাল পরিবহনে ও গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার ২০টি গ্রামের ২৫ হাজার কৃষকের ফসল উৎপাদন ও পরিবহনে খালটি খুবই গুরুত্বপূর্ন।

গত দু’সপ্তাহে গৌরনদী উপজেলার বাকাই হাটের পশ্চিম পাশে নতুন ব্রিজ থেকে দক্ষিণে প্রায় ১ কিলোমিটর ও পূর্ব দিকে আধাকিলোমিটার খাল দখলের মহোৎসব চলছে।

গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক রাজীব মাতুব্বর, খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কুদ্দুস মাতুব্বর, সদস্য আইয়ুব আলী হাওলাদার, আতা বালী, বাবুল বেপারী, আবুল মাতুব্বর, বাবুল শেখ, বিবেক গাইন এবং খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান প্রজন্ম বরিশাল উত্তর জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক মোঃ বাদল মিয়া, ইউনিয়ন বিএনপির সহ সম্পাদক প্রবাসী রিপন সরদার, ইউনিয়ন বিএনপির প্রচার সম্পাদক জিয়া ফকির, নুরুজ্জামান সরদারসহ আ’লীগ ও বিএনপির প্রায় ৫০ নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ শতাধিক ব্যক্তি খালটির বিভিন্ন স্থানে ২ কিলোমিটার জায়গা দখল করে বিভিন্ন অবৈধ পাকা আধাপাকা দোকানপাট নির্মাণ করছে।

সংবাদকর্মীরা সরেজমিনে গিয়ে দেখেছেন, গৌরনদী উপজেলার বাকাই হাট ও কালকিনি উপজেলার ফজলগঞ্জা হাটের সীমান্তবর্তী দিয়ে বয়ে গেছে ভুরঘাটা- ভায়া ঘোষেরহাট- আগৈলঝাড়া খালটি।

খালটির বিভিন্ন স্থানে দখল হলেও ২ কিলোমিটর জায়গা দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করলেও গত দু’সপ্তাহে উপজেলার বাকাই হাটের কাছে নতুন ব্রিজ থেকে দক্ষিণে প্রায় ১ কিলোমিটর দখলের মহোৎসব চলছে।

ব্রিজের গোড়া থেকে প্রায় ২শ ফুট জায়গা দখল করে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়েছে ২০ জন ব্যবসায়ী। পাশে স্তুপ করে নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। তার দক্ষিণে এগিয়ে দেখা গেছে ৫/৬ ব্যক্তি নতুন ঘর নির্মাণ কাজ করছেন। তার দক্ষিণে স্লুইস গেট এলাকায় ১০/১২ জনে নতুন ঘর নির্মাণ কাজ শেষ করছেন।

হাটের মধ্য সেতুর পূর্বদিকে খালের দু’পাড়ে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি প্রায় আধা কিলোমিটর খাল দখল করে অবৈধ পাকা আধাপাকা দোকানপাট নির্মাণ করেছে।

এ সময় নির্মানাধীন দোকান ঘরের মিস্ত্রি সুরঞ্জন রায় (৪০) ও মিলন বাড়ৈ (২৬) কাছে খালের মধ্যে দোকান নির্মাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, মোরা জীবিকার তাগিদে কাজ করছি। মালিকরা আমাদের দিয়ে যেভাবে কাজ করাচ্ছে, আমরা সেই ভাবেই কাজ করছি।

পাশেই নির্মাণ কাজ তদারকি করছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা বিবেক গাইন। খাল দখল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি (বিবেক) বলেন, মোর বাপ-দাদার জায়গা দিয়ে রাস্তা ও খাল গেছে। তাই ওই পৈত্রিক জায়গার মুই বৈধ মালিক বিধায় দোকান ঘর নির্মাণ করছি।

মাগুড়া-মাদারীপুর বোরো সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার বেলাল হোসেন, বয়সা সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার শওকত হোসেন, মাগুড়া সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার ইদ্রস হাওলাদার ও শফিকুর রহমান জানান, এই খালের পানি সেচ দিয়ে গৌরনদী উপজেলার ইছাগুড়ি বাকাই, পূর্ব বাকাই, মাগুড়া-মাদারীপুর, উত্তর মাগুড়া, দক্ষিন মাগুড়া, কুনিয়াকান্দি, সমরসিংহ, মেদাকুল ও আগৈলঝাড়া উপজেলার বাশাইল, পূর্ব বাশাইল, রাজিহার, বাহাদুরপুর, দক্ষিণ বাহাদুরপুর গ্রামে কমপক্ষে ২৫/৩০টি সেট প্রকল্পের মাধ্যমে দেড় সহ¯্রাধিক একর জমিতে ইরি-বোরো চাষ করা হয়।

তারা বলেন এভাবে খাল দখলের ফলে বোরো মৌসুমে খালে পানি প্রবাহ কমে যাবে এবং বোরো চাষ মারাত্মক ভাবে ব্যহত হবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে খালটি দখলমুক্ত করার দাবি জানান তারা।

বাকাই হাটের ব্যবসায়ী সাহেল সরদার, শাহজাহান মিয়া অভিযোগ করে বলেন, এই খাল ব্যবহার করে বাকাই হাট, মেদাকুল হাট, রাজিহার, বাশাইল হাটসহ ৮টি হাট-বাজারের ব্যবসায়ীরা নৌ-পথ তাদের মালামাল পরিবহন করে থাকে। এতে পরিবহন খরচ অনেক কম হয়।

তিনি বলেন আ’লীগ ও বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মীরা প্রভাব খাটিয়ে খাল দখন করে অবৈধ স্থাপনা নির্মান করছে। প্রশাসনসহ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে। জরুরী ভিত্তিতে সরকারি খাল দখলমুক্ত করার জন্য স্থানীয় এমপিসহ প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।

গৌরনদী উপজেলা ভূমি অফিসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, উপজেলার জেএল নং ৮ পূর্ব বাকাই মৌজার খতিয়ান নং-৩ দাগ নং-৪৪ ও ৪৫ খালের রেকর্ডিয় মালিক সরকার। ওই জমিতে কোন ব্যক্তির মালিকানা সত্ত্ব নেই।

খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কুদ্দুস মাতুব্বর খাল দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি বৈধভাবে স্থাপনা নির্মান করছি। উপজেলা ও ইউনিয়ন ভুমি অফিসের লোকজন এসে নির্মাণ কাজে বাঁধা দিলে পরে আমার বৈধ কাগজপত্র দেখে তারা চলে যান। এখানে কোন অবৈধ দখলদার নেই। সবাই বৈধ মালিক হিসেবে খাল পাড়ে বৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক রাজীব মাতুব্বর বলেন, খালটি সরকারি তবে আমি লিজ নিয়ে দোকান ঘর নির্মাণ করছি।

খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান প্রজন্ম বরিশাল উত্তর জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক বাদল মিয়া বলেন, আমি জিয়া ফকিরের কাছ থেকে লিজ নিয়ে অনেক আগেই দোকান ঘর নির্মাণ করেছি। ওটা জিয়া ফকিরের বৈধ জায়গা।

খাঞ্জাপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ নুর-আলম সেরনিয়াবাত বলেন, এই খালটি সম্পূর্ন সরকারি জায়গায়। ব্যক্তি মালিকানা দাবির কোন সুযোগ নাই। গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের জন্য খালটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ন। অবৈধ দখলের ফলে খালটি সংকুচিত হয়ে আসছে। জরুরি ভিত্তিতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। ##

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!