এভাবেও ভাল থাকা যায় (৮ম পর্ব)

মণিজিঞ্জির সান্যাল
মণিজিঞ্জির সান্যাল
6 মিনিটে পড়ুন
ছবি প্রতীকী

সমমনস্ক বন্ধু না পেলে কি করা উচিত

আমরা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে যাদের সাথে কথা বলি বা গল্প করি, তাদেরকে কি বন্ধু বলতে পারি? না পরিচিত? যাদের সাথে কথা বলি তাদের সাথে মতের মিল হয় কি? ভাবনার বা রুচির মিল? কিম্বা আমাদের চিন্তাধারার? অনেক সময় দেখা যায় কিছু বলতে হয় বলে কিছু বলা। সেখানে না আছে মনের মিল, না আছে মনের টান। অনেক সময় একপক্ষ বলে যান, অপর জন নীরব থাকেন। কথা শেষ হবার পর মনের মধ্যে তেমন কোনো দাগ কাটে না, কারো কারো ক্ষেত্রে বিরক্ত বোধও হয়। তবুও বন্ধু বলে মেনে নিতে হয়। পরে মনে হয় দূরের কোনো মানুষের সাথে কথা বললাম এতক্ষণ।
কিন্তু যদি উল্টোটা হয়, মনটা তাহলে কতো ভালোই না হতো। মনের মতো যদি বন্ধু থাকে আমাদের জীবনে যাকে প্রাণ খুলে সব কথা বলা যায়। এমন বন্ধু যার সাথে কথা বললে মনের আরাম মেলে, পারস্পরিক ভাবনা চিন্তা মতের মিল থাকে। কিন্তু বাস্তবে সবার জীবনে এমনটা নাও হতে পারে। সবার জীবনেই যে সবকিছু থাকতে হবে এমনটা তো নয়।
সমমনস্ক বন্ধু যদি জীবনে সত্যিই না থাকে তাহলে মন খারাপ করার কিছু নেই। মনটা নিজের আর তাকে ভাল রাখার দায়িত্ব কিন্তু সেই মনের মালিকেরই।
যে জিনিস খুশি দেয় না তার থেকে দূরে থাকাই ভাল। কিন্তু এমনও তো হয় সারা দিনে, আমরা এমন অনেক কাজ করে থাকি, যা কোনওভাবেই আমাদের খুশি দেয় না। তবু নানা কারণে আমরা তা করে থাকি। তাই চেষ্টা করা উচিত সেই কাজের পিছনে সময় কম নষ্ট করা। সেই সঙ্গে যে কোনও বিষয়ে সময় নষ্ট করার আগে নিজেকে একটাই প্রশ্ন করতে হবে, “এই কাজটি কি আমায় আনন্দ দেবে?”
এরপর যেবিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, মন খারাপ মুহূর্তের সময় আমরা কি করব? একজন সমমনস্ক বন্ধু থাকলে হয়তো তার সাথে কথা বললে মন ভাল লাগত, কিন্তু তাকে তো সমমনস্ক হতে হবে তাই না? নয়তো আপনার মন খারাপ বা যন্ত্রণা তার কাছে আনন্দের বিষয়ও হতে পারে।
সেক্ষেত্রে যখনই মন খারাপ হবে ঠিক তখনই নিজের কাছে নিজেকেই আশ্রয় নিতে হবে। কিভাবে? প্রথমেই সেই মন খারাপের মুহূর্ত থেকে বেরতে খুশির কথা ভাবতে হবে। জীবনে আমাদের অনেক অনেক সুন্দর মুহূর্ত কিন্তু আছে, নেই বললে মিথ্যে বলা হবে। সেই মুহূর্তগুলোকে চোখ বন্ধ করে ভাবলে মনটা একটু হলেও পালটে যাবেই যাবে। একবার একজন সংবাদিককে সৌরভ গাঙ্গুলী বলেছিলেন, “যখন আমার ব্যাটিং ভাল যেত না, তখন আমি সেঞ্চুরি করা ম্যাচগুলির ভিডিও দেখতাম। তাতে ব্যাটিং-এ উন্নতি না ঘটলেও পারফরমেন্স ভাল করার জন্য মনের জোর খুব বেড়ে যেত।”
আসলে মনও একটা বাচ্চারই মতো, তাকে যদি ভুলিয়ে রাখা যায় তাহলেই আনন্দ কিন্তু আমাদের হাতের মুঠোয় ।
আর সম্পর্কের কথা যদি আলোচনা করি, সেক্ষেত্রে আমার মনে হয়, যে সম্পর্ক খুশি দেয় না তা থেকে বেরিয়ে আসাই উচিত। তা বন্ধু হোক বা যেই হোক। আর মন খারাপ নিয়ে বাঁচাটা যে বড়ই কঠিন। আর যদি একান্তই এমন মানুষদের সঙ্গ ছাড়া সম্ভব না হয়, তাহলে যতটা সময় পারা যায় এমন মন খারাপ করা মানুষদের থেকে দূরে থাকলেই ভাল। কারণ খুশি যেমন সংক্রমক, তেমনি দুঃখও কিন্তু!
তেমনি যারা হাসতে জানে না, সব সময় মুখটাকে গম্ভীর করে রাখে তাদের থেকে দূরে থাকাই ভাল। সৎ সঙ্গে থাকলে যেমন স্বর্গবাস সম্ভব হয়, তেমনি হাসিখুশি মানুষের সঙ্গে থাকলে খুশির সন্ধান পেতেও কষ্ট হয় না। আসলে খুশি থাকাটা অনেকটা সংক্রমণের মতো। তাই দেখবেন কাউকে হাসতে দেখলে আপনা থেকেই আমাদের মনও খুশি হয়ে যায়।
আমরা কী পরিবেশে দিনের বেশিটা সময় কাটাচ্ছি, তার উপর আমাদের সুখ-দুঃখ অনেকাংশেই নির্ভর করে।
দলাই লামার একটা কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, “অন্যকে ক্ষমা করতে পারলেই আনন্দের সন্ধান পাবেন।”
কথাটা ঠিক কিন্তু করাটা বাস্তবিকই খুব কঠিন। অনেকেই ভাবতে পারেন, যে মানুষগুলোর জন্য আমি আজ এতটা কষ্টে আছি, তাদের ক্ষমা করা কি সম্ভব? হয়তো নয়। কিন্তু করতে পারলে মনে যে বিষ জমে ছিল তার পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে।
শেষে একটা কথাই বলার, খুশি থাকার অভ্যাস করাটা জরুরি।
আসলে খুশি থাকতে গেলে তারও কিন্তু অনুশীলনের প্রয়োজন আছে। আর এই কাজটা কীভাবে সম্ভব?
খুব সহজ ভাবে বলছি …
অর্থবান লোকেরা যেমন সব সময় টাকার কথা বলেন। স্বাস্থ্যবান লোকেরা বলেন শরীরের কথা।
তেমনি খুশি মনের মানুষেরা সব সময় এমন কথা বলেন যাতে বাকি সবাই খুশি হন।
প্রসঙ্গত, খুশি থাকাটা কিন্তু সত্যিই অনুশীলনের ব্যাপার। ধরুন আপনার গিটার বাজাতে ভাল লাগে। তাহলে যখনই সুযোগ পাবেন গিটার বাজাবেন।
কারও ধরুন বই পড়তে ভাল লাগে, কেউ ছবি আঁকতে ভালবাসেন, কেউ বাগান করতে অথবা কেউ পার্কে হাঁটতে ভাল লাগে, তাহলে সেই কাজটাই করুন।
সুন্দর করে সাজুন, সাজলে মন সুন্দর হয়ে যায়। নিজের জন্যেই সাজুন। ঘরেও ফিটফাট থাকতে হবে, ঘরকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। মাঝে মাঝে পুরনো জিনিস কে একটু রং করলে মনটা ভালো লাগবে। ফার্নিচার একটু এদিক ওদিক করুন বা কয়েক মাস অন্তর নতুন পর্দা লাগাতে পারেন।
আনন্দের জন্যে সবসময়ই যে কাউকে প্রয়োজন তেমন কোনো ব্যাপার নেই কিন্তু। মনটা যার যার নিজস্ব।
সমমনস্ক বন্ধু না পেলে নিজের মনটাকেই একান্ত বন্ধু করে নিয়ে নিজের ছন্দেই তো চলা যায় নিজের মতো করে।
ইচ্ছে মতো গলা ছেড়ে গান করলে মন ভাল হয়, নাচ করলে শরীর-মন দুটোই ভাল থাকে। সুন্দর সুন্দর রান্না করতে পারেন। গান শুনলে মন ভীষণরকম ভাল লাগে, আর তার সঙ্গে সঙ্গে নিজেও গলা মেলালে তো পুরো বাড়িটাই উৎসবের মেজাজ পায়।
এমনটা করতে থাকলে দেখবেন এক সময়ে খুশি থাকাটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে।

(চলবে)

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ পূর্ববর্তী পর্বগুলোর লিঙ্ক নিচে আছে। এভাবেও ভাল থাকা যায় (১ম পর্ব), এভাবেও ভাল থাকা যায় (২য় পর্ব), এভাবেও ভাল থাকা যায় (৩য় পর্ব), এভাবেও ভাল থাকা যায় (৪র্থ পর্ব), এভাবেও ভাল থাকা যায় (৫ম পর্ব), এভাবেও ভাল থাকা যায় (৬ষ্ঠ পর্ব), এভাবেও ভাল থাকা যায় (৭ম পর্ব)

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
মণিজিঞ্জির সান্যাল, বাংলা সাহিত্যে এম.এ., ক্ল্যাসিক্যাল নৃত্য প্রভাকর; জন্মদিন: ২৯শে বৈশাখ, ইং ১৩ই মে; জন্মস্থান: ভারতবর্ষ, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি। যে সব পত্র পত্রিকায় লিখেছেন: আনন্দবাজার, দেশ, সানন্দা, শুকতারা, কিশোর ভারতী, শিলাদিত্য, যুগ শঙ্খ, নন্দন, তথ্যকেন্দ্র, উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকা, উত্তরের সারাদিন, স্টেটসম্যান, অন্যদিন পত্রিকা (বাংলাদেশ), এছাড়া অসংখ্য লিটিল ম্যাগাজিনে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে। দেশের বাইরে কুয়েত, বাংলাদেশ, কানাডা, লন্ডন এমন অনেক বিদেশের পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত বই: (১) একটুকু ছোঁয়া লাগে (কলকাতা থেকে প্রকাশিত) (২) স্বপ্নের পৃথিবী (কলকাতা থেকে প্রকাশিত) (৩) অতৃপ্ত আত্মার সঙ্গে (৪) সমুদ্র তোমার সঙ্গে (বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত) (৫) সম্পর্কের পরিচর্যা (বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত) (৬) কমলালেবুর রস নোনতা (কলকাতা থেকে প্রকাশিত) (৭) ভালোবাসার গোপন দরজা (৮) মাটির কাছাকাছি
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!