এভাবেও ভাল থাকা যায় (৬ষ্ঠ পর্ব)

মণিজিঞ্জির সান্যাল
মণিজিঞ্জির সান্যাল
7 মিনিটে পড়ুন
ছবি প্রতীকী

জীবনকে সত্যিই কি বদলে ফেলতে চান?

আমরা প্রত্যেকেই চাই ভাল থাকতে, প্রত্যেকেই চাই শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে। অহেতুক জীবনকে কষ্টে ভরে তুলতে কেই বা চায়, তবুও কিছু মানুষের জীবন অনাবশ্যক দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণার মধ্যে কাটে। কারো জীবন কাটে বিশৃঙ্খল ভাবে, কেউ বা জীবনের শেষ দিন অবধি কাটিয়ে দেন একটা অসুস্থ বাতাবরণের মধ্যে। শারীরিক অসুস্থতা নয়, মানসিক অসুস্থতার ঘেরাটপে। তার জন্যে নিজেরাই কিন্তু অনেকাংশে দায়ী। হিংসা, রাগ, ক্রোধ, অহেতুক প্রতিযোগিতার দাবানলে জীবন পুড়ে ছারখার হয়ে যায়।

শান্ত মনে চোখ বন্ধ করে একটু ভাবলেই দেখা যায় জীবন খুব সুন্দর এবং সহজ সরল, আমরাই অহেতুক তাকে জটিল করে তুলি। কিন্তু কেন? কেন আমরা ভাল থাকতে পারছি না। নিশ্চয়ই আমাদের জীবনে কিছু ভুল আছে, তাই না? সেগুলো কি তাই তো? আসলে ভাল থাকার জন্যে আমাদের কিছু অভ্যাস ত্যাগ করতেই হবে। আবার
ভাল থাকার জন্য কিছু অভ্যাসকে সঙ্গী করতে হবে। তবেই তো জীবন সুন্দর হবে।

কিছু অভ্যাস মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে সবসময় ভাল অভ্যাসকে সঙ্গী করতে হবে। ভাল অভ্যাস একজন ব্যক্তিকে ভীষণরকম সফল করে তোলে। ভাল অভ্যাস শিক্ষা এবং সংস্কৃতির মাধ্যমে বিকশিত হয়।
দুটো অভ্যাস একজন মানুষের জীবনকে শেষ করে দিতে পারে।
এক, মিথ্যে বলা। মিথ্যে কথা বলা সবচেয়ে খারাপ অভ্যাস। একজন মানুষের সবসময় মিথ্যে বলা থেকে দূরে থাকা উচিত। মিথ্যে বলার অভ্যাসটি সবচেয়ে খারাপ এবং সবচেয়ে বিপজ্জনক হতে পারে। যে ব্যক্তি মিথ্যে বলতে অভ্যস্ত হয়, সে নিজের পাশাপাশি অন্যকেও ক্ষতি করে। এই ধরনের মানুষের বাস্তবতা যখন সামনে আসে, তখন প্রত্যেকেই দূরত্ব তৈরি করে।
দুই, অলসতা একজন ব্যক্তির সাফল্যের সবচেয়ে বড় বাধা। তাই অলসতা থেকে একদম দূরে থাকা উচিত। অলস ব্যক্তি জীবনে সমস্ত সুযোগ হারিয়ে ফেলে। জীবনে সফল হওয়ার জন্য, সুযোগগুলি বারবার পাওয়া যায় না। যারা সুযোগের ব্যবহার নিতে পারে না, তাদের থেকে সাফল্য দূরে যায়। অলস ব্যক্তি কখনও সুযোগগুলিকে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারে না এবং শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে পড়ে। যে মানুষটি সবসময় সতর্ক অবস্থায় থাকে এবং সুযোগগুলির সদ্ব্যবহারের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকে, জীবনে সে দুর্দান্ত সাফল্য অর্জন করে।

আমরা মানুষ, প্রথমত এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অলংকার। পশু পাখিদের মতো আমাদের জীবন নয়। আমাদের অনেক বড় একটা হৃদয় আছে, আমাদের মনুষ্যত্ব আছে, আমাদের বিবেক আছে। আমাদের মধ্যে মায়া মমতা আছে। আমরা তো পশুর মতো হিংস্র ব্যবহার করতে পারি না, তাহলে আমরা আর মানুষ কি? তাই সব মানুষেরই এমন কিছু কাজ করা উচিত, যার মাধ্যমে তাঁদের বহু বছর ধরে স্মরণ করা হবে।
জীবনের বিশেষ কিছু বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করা উচিত যা মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। যে সমস্ত বিষয়গুলি মানুষের জীবনে সমস্যা তৈরি করে, সেই বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
সব মানুষেরই জীবনে এমন কিছু কাজ করা উচিত, যার মাধ্যমে তাঁদের বহু বছর ধরে মানুষ মনে রাখবে।
প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই ভাল কিছু আছে। তাদের মধ্যে কিছু সু-অভ্যাসও আছে। এই অভ্যাসগুলি বজায় রেখেই বহু মানুষ সাফল্য পান এবং ইতিহাসে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হন। কিন্তু যাঁরা খারাপ অভ্যাসের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন, তাঁরা ধীরে ধীরে পতনের দিকে এগিয়ে যান। সেই কারণেই খুব যত্ন সহকারে জীবন থেকে কিছু অভ্যাস সরিয়ে ফেলা উচিত। যেমন, অন্যদের নিন্দা না করা, মিথ্যা কথা না বলা, লোভ না করা, অন্যদের ছোট চোখে না দেখা আর অহংকার না করা।

প্রথমত যেটা মনে হয়, অন্যদের নিয়ে সবসময়ই নেগেটিভ আলোচনা বা নিন্দা চর্চা যে অভ্যাসটা একেবারেই ভাল নয়। ধীরে ধীরে এটি অভ্যাসে পরিণত হবে, আসলে নিন্দা করা কিন্তু একরকম গুরুতর অসুখ। যে ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হন, তাঁর চরিত্রের অবনতি হবেই হবে। তাই এই অভ্যাস যাতে কোনওদিনই না হয়, সেই চেষ্টা করা উচিত।

দ্বিতীয়ত, মিথ্যা বলার অভ্যাস একবার হলে, বারবার সেই অভ্যাস পাঁকের মতো তাকে নিচে নামাতে থাকে। যে মিথ্যা কথা বলে, তাকে কেউই পছন্দ করে না। এটি এমন একটি অভ্যাস, যা সাফল্যের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই মিথ্যা বলার অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। যারা সাফল্য অর্জন এবং জীবনের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য মিথ্যা বলে, তারা সাফল্য পেলেও, সেটি স্থায়ী হয় না। সত্যি সামনে এলে তাঁদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

তৃতীয়ত, লোভ-লালসা বিরাট বড় একটা রোগ। লোভ কিন্তু ত্যাগ করতেই হবে। অন্যদের নিন্দা করার মতোই খারাপ অভ্যাস হল লোভ-লালসা। লোভ যে কোনও ব্যক্তিকে বিপথের চরম খাদে ঢেলে ফেলে দিতে পারে। কেউ লোভের শিকার হলে তাঁর বোধবুদ্ধি লোপ পায়। লোভের বশে একদিন সবকিছু হারাতে হয়। তাই লোভ থেকে একেবারে দূরে সরে যাওয়া উচিত।

এছাড়াও আরো একটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ, অন্যদের দুর্বল ভাবা। এই ভুলটা করলে নিজেরই ক্ষতি হবে সবচেয়ে বেশি। অনেকেই আছেন নিজেকে সবসময়ই শক্তিশালী মনে করেন আর অন্যদের দুর্বল ভাবেন। সত্যিকারের শিক্ষিত মানুষ প্রকৃত অর্থেই বিনয়ী হয়ে থাকেন আর সবাইকে সম্মান করেন। কাউকেই ছোট চোখে দেখেন না। আর নিজেকে শক্তিশালী কখনোই ভাবেন না, বরং উল্টোটাই হয়, তারা আরো কিছু জানার জন্যে ব্যাকুল হয়ে থাকেন।
আর এক শ্রেণীর মানুষ যারা ঠিক উল্টো। নিজেদের বিশাল কিছু মনে করেন। নিজেকে ছাড়া অন্যদের সবাইকে দুর্বল চোখে দেখেন। এর ফলে একদিন তাদের সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
কোনও ব্যক্তিই দুর্বল নয়। সময়ই সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। আজ যাঁকে দুর্বল বলে মনে হচ্ছে, তিনিই ভবিষ্যতে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন। তাই প্রত্যেককেই সম্মান করা উচিত। কারণ, সময় কাকে কোন পরিস্থিতিতে দাঁড় করিয়ে দেবে, সেটা কেউই বলতে পারেন না।

সবশেষে যে কথাটি বলতে হয়, কিছু মানুষ আছেন খুবই অহংকারী। সবসময়ই আমি আমি ভাব। অহঙ্কারী মুখ দেখলেই বোঝা যায়, তারা সবসময়ই নিজেদের সবার চেয়ে আলাদা মনে করে এবং অন্যদের ছোট নজরে দেখে। কিন্তু অহঙ্কার করা একেবারেই উচিত নয়। এর ফলে বন্ধু কমে যায়।
অহঙ্কারী ব্যক্তি অন্যদের সঙ্গে থাকলেও, সবসময়ই নিজেকে একা মনে করেন। অহঙ্কারী ব্যক্তিদের কোনও বন্ধু থাকে না। অহঙ্কারই পতনের কারণ হয়ে উঠতে পারে। আজ পর্যন্ত কেউই অহঙ্কার করে জীবনে কিছু করতে পারেননি। তাই প্রত্যেকেরই অহঙ্কারমুক্ত থাকা উচিত।
এভাবেই আমরা খুব সুন্দর একটা জীবন নিজেকেই নিজে উপহার দিতে পারি।

(চলবে, পূর্ববর্তী পর্বগুলোর লিঙ্ক নিচে পাবেন।)

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
মণিজিঞ্জির সান্যাল, বাংলা সাহিত্যে এম.এ., ক্ল্যাসিক্যাল নৃত্য প্রভাকর; জন্মদিন: ২৯শে বৈশাখ, ইং ১৩ই মে; জন্মস্থান: ভারতবর্ষ, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি। যে সব পত্র পত্রিকায় লিখেছেন: আনন্দবাজার, দেশ, সানন্দা, শুকতারা, কিশোর ভারতী, শিলাদিত্য, যুগ শঙ্খ, নন্দন, তথ্যকেন্দ্র, উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকা, উত্তরের সারাদিন, স্টেটসম্যান, অন্যদিন পত্রিকা (বাংলাদেশ), এছাড়া অসংখ্য লিটিল ম্যাগাজিনে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে। দেশের বাইরে কুয়েত, বাংলাদেশ, কানাডা, লন্ডন এমন অনেক বিদেশের পত্র পত্রিকায় নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত বই: (১) একটুকু ছোঁয়া লাগে (কলকাতা থেকে প্রকাশিত) (২) স্বপ্নের পৃথিবী (কলকাতা থেকে প্রকাশিত) (৩) অতৃপ্ত আত্মার সঙ্গে (৪) সমুদ্র তোমার সঙ্গে (বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত) (৫) সম্পর্কের পরিচর্যা (বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত) (৬) কমলালেবুর রস নোনতা (কলকাতা থেকে প্রকাশিত) (৭) ভালোবাসার গোপন দরজা (৮) মাটির কাছাকাছি
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!