অপরাধ, তুমি চলে গেলে, খনন এবং অন্যান্য কবিতা

জয়িতা চট্টোপাধ্যায়
জয়িতা চট্টোপাধ্যায়
3 মিনিটে পড়ুন

অপরাধ

আজ খাঁ খাঁ রাস্তায় ছায়া পরে না
বারান্দা জুড়ে শূন্যতা
সারাদিন কারও কোনো সাড়া নেই
সভ্যতার ভূমধ্য অলিন্দে এসে দাঁড়ালো শূন্যতা
যেন সহস্র বছর আমি তাকিয়ে আছি শূন্যতার দিকে
আকাশ থেকে খসে পড়ল ইতিহাসের বিষণ্ণতা
আর কতকাল এই শূন্য ঘরে

ক্রমে মুছে যাচ্ছে সমস্ত দৃশ্য পথ মানুষ
কেন্দ্রবিন্দুতে শুধু রইল নির্বাসন
আজ দুঃখ ছুঁয়ে আছে আমার ঘরবাড়ি
সর্বনাশের কাছে হাঁটু গেরে বসেছে আজ সৃষ্টি
আজ আর কড়া নাড়েনা কেউ
বিষণ্ণতার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে অবিশ্বাস
শুধু শূন্যতা দীর্ঘ পদধ্বনি আর দীর্ঘশ্বাস

আত্মার মুক্তি মূল্য পেয়েছে সমস্ত ধ্বংসের পর
কেউ আজ শোনেনা ডাক
আমি ডাকতে ডাকতে একশেষ
মেঘলা আকাশ হিমঘরের একলা চেয়ারের আগুন
ফুসফুসে ভরা হাঁসি আমি দগ্ধ হচ্ছি বেশ
রাত্রির মাঠে রোদ্দুর পায় কুঁড়ি
তোমার আসার কথা ছিল বলে
আমাকে এ অবেলা উপহার দিলে
তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতে চেয়েছি বলে।

তুমি চলে গেলে

যখনই তুমি চলে যাবে বলো
বুকের ভেতর নীল মিছিলের মতো সারি সারি বিষণ্ণতা
বুকের ভেতর পার ভাঙার শব্দ
তুমি উঠে দাঁড়ালেই চারিদিক শূন্য হয়ে আসে
এক পা বাড়ালেই মাথার কোষ জুড়ে ভুল শব্দ
তামশের চেয়ে প্রগাঢ় অন্ধকার
ভেঙে পড়ে তোমার না শুনে
তুমি যখন সিঁড়ি দিয়ে নামো চলে যাওয়ার জন্য
পৃথিবীর সমস্ত বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যায়
বহু অশ্রু বিন্দু চোখের রেখায় জমা হয়

তুমি বারান্দা পেরোলে বুকের মন্দিরে বাজে দিদৃং ঘণ্টা
শূন্যতা শুধু ধুঁ ধুঁ শূন্যতা ছাড়া আর কিছুই দেখিনা
আমার ঘরে তখন ঠেস দিয়ে আছে শীত
কালো কালিতে ঢেকে যায় আমার কবিতার খাতা
হাত মেলে দিই বিকেলের দিকে
তুমি চলে যাবে বললেই বুকের ভেতর মোচড়
হৃদয় জুড়ে তোলপাড়
যখনই তুমি চলে যাবে বলো বুকের ভেতর ভাঙতে থাকে পার।

খনন

জল এখন দূরত্বে
কালই তো আমার পা ছুঁয়েছিল
দুটো অধৈর্য হাত খুঁজেছিল তোমায়
খুঁড়ে খুঁড়ে শুধু তোমায় নিলো
বড়ো নমনীয় হয়ে গেছে শীতকাতর মেরুদন্ড
স্থির জলে কম্পন তোলে
আগলে রেখেছি তোমাকে

আঙুলের ফাঁক দিয়ে গলিয়ে দিচ্ছি জল
হৃদয়ের চলন নিস্পৃহ হলে কত নির্ভুল পুনরুক্তি
আগলে রেখেছি বুকে
কত গল্প
কত একশো রজনীর নাটক
অভিনীত হয় সুখে
মেরুদন্ড বাঁকিয়ে তোমায় খুঁজছি
অতীত ও ভবিষ্যৎ সমস্ত গুলিয়ে যাচ্ছে
আমি কেবল তোমায় খুঁজে যাচ্ছি।

ভ্রম

অপরাধ, তুমি চলে গেলে, খনন এবং অন্যান্য কবিতা
ভ্রম

ছুটে যাই দিক শূন্য ভ্রমে জলের ভেতর
তবু জল নেই জলের মতোই বিবিধ প্রবাহ
শুধু রক্ত চারিদিকে
শুধু রক্ত চেনা নদীর শুকনো ভ্রম
পাথরের মতো শক্ত হয় সর্বসহা হয়
ছাদের ওপরে পূর্ণিমা রাত
ছাদের ওপর আমার চন্দ্রদয়।

কথোপকথন এক

অপরাধ, তুমি চলে গেলে, খনন এবং অন্যান্য কবিতা
কথোপকথন এক

কাল বাড়ি ফিরে কি করলে?
ভিজছিলাম।
কাল তো বৃষ্টি হয়নি!
জানি, আমার হুহু বুকের কান্নার জলে,
আর তুমি কি করলে?
একটা কবিতা লিখলাম,

না বলতে পারো একটা আর্তনাদ।
আমাকে দেখাও…

না ওসব দেখতে নেই।
কেন?
অনর্গল কথার ভেতর লাল লাল আর্তনাদ,
আর্তনাদের ভেতর নীল নীল সমুদ্রের ঝড়।
সব অক্ষর গুলো জানো সোনালি হয়ে যাচ্ছিল।
শব্দগুলো হলুদ পাতার মতো উড়ছিল।
ভাষাহীন একটা ভালোবাসা লিখলাম।

আমাকে শোনাও…
না এখনও সময় হয়নি…
কে যেন আমার কানের কাছে চিৎকার করে বলে “আরও খাঁক হও,
আরও জ্বলে পুড়ে খাঁক হও।”

বাঁচাও আমায়

অপরাধ, তুমি চলে গেলে, খনন এবং অন্যান্য কবিতা
বাঁচাও আমায়

বনপোড়া হরিণীর মত ছুটে
যাচ্ছি উদ্ভ্রান্ত আমার প্রেমিকের
লাশ বুকে নিয়ে
সবখানে আর্তশব্দ মুখে এসে
লাগে খরতাপ আলিঙ্গন থরথর
কাঁপে তোমায় বুকে নিয়ে
‘আমাকে বাঁচাও’ ‘আমাকে বাঁচাও’

কে আছো আমাকে এই বর্বর আগুন
থেকে বাঁচাও
আমাকে লুকিয়ে ফ্যালো আমার
প্রেমিকের চোখের পাতায়
লুকিয়ে নাও বুকের অতলে,
অথবা আমার প্রেমিকের পাঁজরে,
আমার প্রেমিকের নিথর শরীর
জড়িয়ে ধরে বলি শুষে নাও
আমায় গভীর চুম্বনে,
দাউ দাউ করে পুড়ে যাচ্ছি আমি
‘বাঁচাও আমায়’ একথা আমি
বলতে পারিনি।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
কবি। পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!