কবি মহঃ আফজলের ছ’টি কবিতা

মহঃ আফজল
মহঃ আফজল
5 মিনিটে পড়ুন

পিতার মৃত্যু

ঘামগুলোকে এক্ষুনি শুকোতে দিয়েছি !
এক এক করে খুলে রাখছি ক্লান্তির খাতাগুলো
মেপে নিচ্ছি সারাটা নিঃশ্বাস।
দেখলাম! আজকের ক্ষতগুলো ততটাও গভীর নয়।
তবু জানি না কেন
সারাটা দিনের সংলাপের পরিমাণ ভাবলেই আমি শিউরে উঠছি
সময়ের ধৈর্য্যে বর্তমানকে ভবিষ্যতের সাক্ষাতে নিয়ে যেতে চাইছে
কিন্তু সময় বড়ই মূল্যবান! আমাকে স্থির থাকার ইঙ্গিত করে।

একদিন মৃত্যুর চাবুক আঘাত হেনেছিল
হয়তো কুদরতি নিয়মের শর্তে!
সময়কে নিয়ে ডুব দিয়েছিল অতল গহ্বরে
শুনশান পথ ধরে হেঁটে গেছে একদল শবের যাত্রা নিয়ে
দিগ্বিদিক হতাশাগ্রস্ত ছোট্ট প্রাণগুলো ছুটছিল পাগলের মতো।

আজ বারোটা বছর পেরিয়েছে;
ব্যথারা আঁতকে উঠলেও আর সেভাবে পাগল হতে দেয় না
বুকের ভেতর জমানো কান্নারা যেন বিলীন হয়ে গেছে
তুমি নেই তবু স্বপ্নরা উঁকি দেয় ঘুমের আড়ালে।

রামধনুর রঙগুলো জানান দিচ্ছে
আর গর্জাবে না নিকষ কালো
কেটে গেছে দুর্যোগের রাতগুলো
এখন শুধু প্রশান্তি ।

মুদ্রাহীনদের তিনটি ছবি


নোনাজলের সাথে নিশ্বাস মিশে যাওয়ার বাউন্ডুলে ইতিহাসে লেখা মাছেদের বেঁচে থাকার গল্প শুনেছিলাম।এমনটা নয় যে ওরা অন্ধ কিংবা বোবা। বরং ওরাও পারে অসাধ্য সাধন করতে। আমাদের চেতনার বাইরে আরো কিছু মতবাদ অবশিষ্ট রয়ে গেছে।


যাদের মাথার উপর রোজ ভেঙে পড়ে অন্ধকারের থাবা তাদের মাংশপেশিতে শুধু মাটির টান লেগে থাকার ছবি ভেসে ওঠে। ঢিল ছুঁড়ে প্রাণ নাশের কথা ভাবতে পারা গেলেও পাহাড়কে আঘাত করার কল্পনাও মিথ্যা। আমি প্রায়ই দেখেছি দরিদ্রদের কুটিরে ডাস্টবিন থাকে না।


কাকে গালি দিতে পারলে অস্বস্তি দূর করতে পারব?
একটা বেকার যুবকের লাশের ময়নাতদন্তে সারা বিশ্ব তাকিয়েছিল। অবশেষে তথ্য মেলে যুবকের স্বপ্নগুলো মাঝপথেই আত্মহত্যা করেছে।

শিরোনামহীন প্রশ্ন

শুধু এক সম্ভবনাময় সময়কে অতিক্রম করে হেঁটে চলা পথের ধূলোতে ইতিহাসের মানচিত্র দেখা যাচ্ছে
রক্তাভ সূর্য অম্লানচিত্তে মাথা উঁচু বলে গেছে অন্তিম সন্ধ্যা
আঘাতের আহ্বানে থমকে দাঁড়ায় অন্ধকারের বুক
কালো মাথার ভিড়ে দেখা যায় দধিচীর অক্ষয় হাড়
প্রাচীন থেকে অর্বাচীন,
কেউ কেউ আপনের মতোই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছে স্বজনের পায়ের চিহ্ন
তাদের পথে একদিন রণক্ষেত্রের তরবারি সুর তুলেছিল
অবসর সময়ে বেজে ওঠে আতঙ্কের শব্দেরা
এত এত মৃত্যু! সবই কি জলছবি হয়ে থাকবে?
এক অদ্ভুত রক্তমাখা ধ্বজা উড়িয়ে সময় আসে নিয়ম করে
পাল্টানোর গানে স্তব্ধ হয়ে থাকে আমাদের বর্ণমালা
ঐ যে দূরে পোশাকিরা সেজে যায় গড্ডালিকার প্রবাহে
ধ্বনিত হতে থাক রঙ্গতামাশার শ্লোগান-
শুধু এ বর্তমান হয়ে থাকে বোবাদের শেষ প্রশ্ন।

যে ফুলগুলো নিঃশব্দে ঝরে যায়

সেদিন সিঁথির সিঁদুরে সাহিত্য খুঁজেছিল কেউ
যে মেয়েটিকে দেখে কবিতা আসতো ঝর্ণার বেগে
কবিদের শুকনো খাতার ভেতর ঝরে পড়তো শব্দের শিশির কণা
কলমের ঠোঁট ছুঁয়ে হাসতো অক্ষরগুলো।
কত সুখী হতে চেয়েছিল সে

শর্তহীন বন্ধনের পরিনয়ে বর্ষাও হেসেছিল মৃদুস্বরে
হেসেছিল-পরেছিল “হার মানা হার”
যে মেয়েটি ফাগুনের দোলায় বসে বসন্ত দেখেছিল পুরো একুশটি
মনে প্রাণে যে ভালোবেসেছিল আপনজনদের
যার হাসিতে উঠোনে ঝরে পড়তো মহুলের গন্ধ
যার হাঁটার ছন্দে মুখরিত হত সঙ্গীতের শিরোনাম।

পুরো একুশটা বর্ষা সে ভিজেছিল অঝোরে
নতুন জীবনকে আঁকড়ে সেও দেখেছিল বাঁচার স্বপ্ন
দেখেছিল আগামীর স্বপ্নে ঘেরা ছোট্ট ফুলের গুটি গুটি পা……

আজ সে ভীষণ ক্লান্ত
নৈরাশ্যের আঁধারে নিমজ্জিত তার ভারী দেহ
সেই মেয়েটি, যে ভালোবেসেছিল আপনজনদের।
আজ সে শিরোনাম হয়েছে নিঃশব্দের স্মৃতিতে
ফাইলের অক্ষরে তদন্ত হবে তার কাঁটাছেড়া দেহটার….

দ্বিতীয় পৃথিবী

কুড়িয়ে পাওয়া দলিলে নকশা করা ভবিতব্যের পথ দেখাচ্ছে
একটা মিথ্যে মানুষ বলে যায়
আগন্তুক তুমি কার খোঁজে বেরিয়েছ?

পথের পাশে তালের শুকনো পাতায় বাতাসের ঝাপটা
লেপটে আছে
শ্যাওড়ার ডালে অসংখ্য মৃত জোনাকির শুকনো কায়া।
অসার ভাবনা নিঃশ্বাস গুনছে শিশুর মৃত চোখ!
বিকৃতি আর প্রতারণা ছবি আঁকে মনুষ্যত্বের।
ধূপের তাঁবুতে ঘুরপাক খাচ্ছে মূর্তির ছায়া।

বিপন্নতার হায়াত কেন এত দীর্ঘ ?

রক্তের শিলায় বসে থাকে আগামীর মানচিত্র
আমাদের অদেখাগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখছে শূন্যতা।
দিগন্তের শেষে আরো একটা ঘুনেধরা পৃথিবী গড়ছি।

বিকৃত

রজঃস্বলার নরম কায়ায় চক্ষু তোদের কাম খুঁজে পায়
ঝিয়ের আঁচল সস্তা অনেক,দাম চুকানো সহজ উপায়।
দেবদেবীদের রাজমহলে বিবেক বিকোয় সস্তা দরে
জন্ম হচ্ছে আরেক বংশ বেজন্মাদের আতুঁড়ঘরে।

নস্যি টানা তপস্বীরা তেজের বলে পার পেয়ে যায়
অবিচারের বিচারঘরে মরা গাঙেও নাও ডুবে হায়!
নতুন শিকার খুঁজতে বেরোয় সদ্য স্বাধীন দলছুটেরা
হিংস্র যত ফোঁপায় কত, পিছু ধরে রোজ লুটেরা।

ছদ্মবেশী বাবুমশাই ভদ্র বেসে দেখায় সোজা
বিদুষীদের নিন্দা করে,বাড়ায় নিজের পাপের বোঝা।
কলেমা পড়া আরেক দল,সন্ধ্যা জমায় ঠেকের নীড়ে
তারাই আবার ধর্নায় বসে-অধার্মিকের নগ্ন ভীড়ে।

বন্দি জীবন কাটছে দেখো-দেবী সতী আর রহিমা
বোরখা সিঁদুর নরের দেওয়া,তন্ত্রের হায় এ কোন মহিমা!
কুলুঙ্গির ওই গ্রন্থ কেতাব, শান্ত আকাশ চূর্ণ করে
মানুষ কবে বুঝবে সত্য? ধর্ম এলো অনেক পরে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মহঃ আফজল
মহঃ আফজল পশ্চিম বঙ্গের পুরুলিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। অতি অল্প বয়সে পিতাকে হারান। মা এক ভাই আর এক বোন কে নিয়ে তার সংসার। উচ্চ মাধ্যমিকের পর তার আর লেখা পড়া শেষ করা হয়ে ওঠেনি। ছোট খাট ব্যাবসা করে সংসার সামলাতে হয় তাকে। সৎ এবং কর্মঠ মানুষ হিসেবে তার পরিচিতি সর্বাধিক। সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজে তার ভূমিকা যথেষ্ট। লেখা লিখি তার স্কুল জীবন থেকে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লিখেও থাকেন। তার নিজস্ব সাহিত্য সংগঠনও রয়েছে। তিনি মেহনতি মানুষের কথা, সমাজকে জাগ্রত চেতনায় উদ্ভুদ্ধ করতে লেখা লিখি কে বেছে নিয়েছেন। পাঠকগণ তার কবিতার মধ্যে বক্তব্যগুলো খুঁজে পাবেন আশা করি।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!