নাটোরের প্রকৌশলীর ওপর হামলার মামলায় সদর আসনের এমপির ভাগ্নে অন্তর গ্রেফতার

নাটোর প্রতিনিধি
নাটোর প্রতিনিধি
4 মিনিটে পড়ুন
অভিযুক্ত নাফিউ ইসলাম অন্তর। ছবি: মাহাবুব খন্দকার

নাটোরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হানের ওপর হামলা ও লাঞ্চিত করার মামলায় স্বেচ্ছসেবক লীগ নেতা অন্তরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত নাফিউ ইসলাম অন্তর নাটোর পৌর স্বেচ্ছসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের ভাগিনা। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে শহরের বড়গাছা এলাকায় তার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গতকাল নাটোর পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাধারন সম্পাদক মীর নাফিউল ইসলাম অন্তরের বিরুদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হানকে লাঞ্ছিত করাসহ হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠে। প্রকৌশলী আবু রায়হান সদর থানায় সোমবার রাতে এসংক্রান্ত একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন। অভিযুক্ত নাফিউল ইসলাম অন্তর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলের ভাগিনা এবং শহরের উত্তর বড়গাছা এলাকার বাসিন্দা প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার ও জেলা আওয়ামীলীগের অর্থ সম্পাদক মীর আমিরুল ইসলাম জাহানের ছেলে।

পুলিশ ও থানায় দায়েরকৃত এজাহার সুত্রে জানাযায়, গত ২৪ মে সকালে নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান সিংড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস ভবন ও পরিদর্শন বাংলোর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ পরিদর্শনে যান। এসময় তিনি বাংলোতে ব্যবহারের জন্য টাইলস নির্বাচন করে কোড নম্বর ঠিকাদার মীর আমিরুল ইসলাম জাহানের ছেলে ও ম্যানেজার রাজীবের নিকট সরবরাহ করেন। ওই দিন দুপুরে ঠিকাদার জাহান ফোন করে নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে দেখা করতে চান।

বিকেল ৫টার দিকে ঠিকাদার জাহান, ছেলে অন্তর ও ম্যানেজার রাজীব পানি উন্নয়ন বোর্ড নাটোর অফিসে আসেন। এসময় অন্তর নির্বাহী প্রকৌশলীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। প্রতিবাদ করলে এক হাতে গলা চেপে ধরে অন্য হাতে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এসময় অফিসের ফাইপত্র তছনছ করে আসবাবপত্র ভাংচুর করা হয়। ঘটনা দেখে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ছুটে এসে প্রকৌশলী আবু রায়হানকে রক্ষা করেন।

পরে তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। এঘটনায় নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বাদী হয়ে ওই রাতেই (সোমবার) মীর নাফিউল ইসলাম অন্তরকে আসামি করে সরকারি কাজে বাধা এবং কমকর্তাকে মারধরের অভিযোগে নাটোর সদর থানায় মামলা দায়ের করেন ।

নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভবনের টাইলস লাগানোর কাজ করছেন ঠিকাদার আমিরুল ইসলাম জাহান। সেখানে শিডিউল মোতাবেক মানের টাইলস লাগাতে বললে ঠিকাদার তাতে অস্বীকৃতি জানায়। গতকাল সোমবার এসব বিষয়ে অফিসে এসে কথা বলতে চায় ঠিকাদার। এ সময় অকথ্য ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করতে থাকেন ঠিকাদার আমিরুল ইসলাম জাহান।

এসময় ‘গালিগালাজ না করে ভদ্রভাবে কথা বলতে বললে ঠিকাদারের ছেলে নাফিউল ইসলাম অন্তর উত্তেজিত হয়ে আমাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এতে আমার ঠোঁট কেটে যায় এবং হাত, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত লাগে। প্রকৌশলী আবু রায়হান অভিযোগ করে বলেন, নাটোরে চাকুরি করলে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে গেছে অন্তর। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ঘটনাসমুহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

অন্তরের বাবা মীর আমিরুল ইসলাম জাহান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা টেন্ডার নিয়ে অনিয়ম সহ অনেক সমস্যা করত। অনেকেই তাদের ওপর ক্ষুদ্ধ। এসব সমস্যা থেকে রক্ষার জন্য তারাই আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায়। আমার ছেলেকে তারা বিভিন্ন সময় কাজ দেওয়ার কথা বলেও নির্বাহী প্রকৌশলীর যোগসাজসে অন্যদের কাজ দিয়ে দিয়েছে।

গতকালও কাজের কথা নিয়েই এক পর্যায়ে বাকবিতান্ড হয়। কোন মারপিটের ঘটনা ঘটেনি। তবে নির্বাহী প্রকৌশলী ও আমার ছেলে দুজনই উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে গিয়ে চেয়ার থেকে পরে যান। থানায় যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা বানোয়াট। প্রকৌশলী তার অপকর্ম ঢাকতে আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন বরে জানান তিনি।

পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, সরকারী কাজে বাধা প্রদান, মারধর এবং হত্যার হুমকির কথা উল্লেখ করে প্রকৌশলী আবু রায়হান স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা অন্তরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। কর্তব্যরত অবস্থায় সরকারি কর্মকর্তার ওপর হামলার অভিযোগে, স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল’এর সহযোগিতায় অন্তরের বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে অন্তর নাটোর সদর থানায় রয়েছে। আগামীকাল অভিযুক্ত অন্তরকে আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে জানান তিনি।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!