ঝড়ে বিপর্যস্ত রাশিয়া-ইউক্রেন, ১৯ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন, মৃত্যু ৪
রাশিয়া জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের বাতাস ও মারাত্মক বন্যার কারণে দক্ষিণে প্রায় ১৯ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। মস্কোর সংযুক্ত করা ইউক্রেনীয় অঞ্চলও এর মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় গণমাধ্যমে ঝড়ের কারণে অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
রুশ জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলছে, দাগেস্তান, ক্রাসনোদার ও রোস্তভের পাশাপাশি ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন, জাপোরিঝিয়া ও ক্রিমিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে ইউক্রেন বলেছে, তুষারঝড়ের পর দেশটির দুই হাজার ১৯টি গ্রাম ও শহরে বিদ্যুৎ নেই। ঝড়টি মলদোভা, জর্জিয়া ও বুলগেরিয়াকেও আঘাত করছে।
রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগর বন্দর সোচিতে বড় বড় ঢেউকে শহরের সমুদ্রসীমাতে আঘাত করতে দেখা গেছে। ফুটেজেও কথিতভাবে একটি তিনতলা ভবন ধসে পড়তে দেখা গেছে।
আনাপা শহরের কাছে রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগর উপকূলে ২১ জন ক্রুসহ একটি পণ্যবাহী জাহাজ তলিয়ে গেছে। রাজধানী মস্কোতে ভারি তুষারপাতের পর কর্তৃপক্ষকে রাস্তা পরিষ্কার করতে বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি মোতায়েন করতে হয়েছিল।
![ঝড়ে বিপর্যস্ত রাশিয়া-ইউক্রেন, ১৯ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন, মৃত্যু ৪ 38 ঝড়ে বিপর্যস্ত রাশিয়া-ইউক্রেন, ১৯ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন, মৃত্যু ৪](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/11/Untitled-1-122.jpg)
সেভাস্তোপল বন্দরে সামুদ্রিক বন্যায় একটি ঐতিহাসিক জাদুঘর-অ্যাকোয়ারিয়াম ধ্বংস হয়ে গেলে প্রায় ৮০০ বিদেশি মাছ মারা যায়। স্থানীয় একটি গণমাধ্যম জাদুঘরের পরিচালকের বরাত দিয়ে এ কথা বলেছে।
ঝড় ‘ক্রিমিয়ার পরিখা ধুয়ে দিয়েছে’
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্রিমিয়া উপদ্বীপে মস্কোর নিযুক্ত কর্মকর্তারা উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যার কথা জানিয়েছেন। বিভিন্ন শহরের রাস্তায় পড়ে থাকা গাছ ও অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে অবৈধভাবে রাশিয়া সংযুক্ত করে। ক্রিমিয়ার বেশ কয়েকটি পৌরসভায় এখন জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আন্তন হেরাশচেঙ্কো বলেছেন, ঝড় ‘অধিকৃত ক্রিমিয়ার পরিখা ধুয়ে দিয়েছে, যেগুলো রুশ সেনাবাহিনী সৈকতে খুঁড়েছিল’।
রাশিয়ার সেনাবাহিনী অবশ্য এই দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
![ঝড়ে বিপর্যস্ত রাশিয়া-ইউক্রেন, ১৯ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন, মৃত্যু ৪ 39 ঝড়ে বিপর্যস্ত রাশিয়া-ইউক্রেন, ১৯ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন, মৃত্যু ৪](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/11/Untitled-2-71.jpg)
এদিকে ইউক্রেনের ডিএসএনএস জরুরি পরিষেবা বলেছে, তুষারঝড় ও প্রচণ্ড বাতাস দেশের ১৬টি অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ওডেসা অঞ্চলে আটকে পড়া যানবাহন থেকে শিশুসহ ৪৮ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিছু জায়গায় তুষারপাত ৬.৬ ফুটের বেশি হওয়ার কারণে ৮৪০টির মতো যানবাহনকে সরিয়ে নিতে হয়েছিল। অন্তত এক হাজার ৩৭০টি পণ্যবাহী লরি বর্তমানে আটকে আছে। অন্তত ছয়জন হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে ১৪টি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ইউক্রেনের দক্ষিণ মাইকোলাইভ অঞ্চলও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেড় হাজারেরও বেশি উদ্ধারকারীকে এখন ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক পরিচ্ছন্নতা অভিযানে মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ, সীমান্তরক্ষী ও জাতীয় বাহিনীর সদস্যরা তাদের সাহায্য করছে।
![ঝড়ে বিপর্যস্ত রাশিয়া-ইউক্রেন, ১৯ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন, মৃত্যু ৪ 40 ঝড়ে বিপর্যস্ত রাশিয়া-ইউক্রেন, ১৯ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন, মৃত্যু ৪](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/11/Untitled-3-52.jpg)
রাজধানী কিয়েভে দেশটির বৃহত্তম পতাকা প্রচণ্ড বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পতাকাটির আকার ১৬ বাই ২৪ মিটার। শহরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পতাকাটি প্রতিস্থাপন করে আবারও তোলা হবে।
রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে ব্যাপক রকেট ও ড্রোন হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশের পর অঞ্চলটিতে চরম আবহাওয়া এলো। গত শরৎ ও শীতকালে মস্কো মারাত্মক আক্রমণ চালিয়েছিল। ফলে ইউক্রেনজুড়ে লাখ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ ও তাপ ছাড়া জীবন যাপন করেছে।
রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গত শনিবার কিয়েভে বৃহত্তম ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা জানান, রাজধানীর আশপাশে শাহেদ কামিকাজে ড্রোনের ৭৫টির মধ্যে ৭৪টি গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি