গাজায় কবরস্থানে জায়গা নেই, ফুটবল মাঠেই দাফন

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
4 মিনিটে পড়ুন
ইসরায়েলি হামলার পর গাজার আকাশে ধোঁয়া। ছবি সংগৃহীত

গাজায় কবরস্থানে জায়গা নেই, ফুটবল মাঠেই দাফন

গাজার উত্তরাঞ্চলের নিজের বাড়ি ছাড়ার আগে মাহমুদ আল-মাসরিকে খুবই দুঃখজনক একটি কাজ করে আসতে হয়; নিজের তিন ভাই এবং তাদের পাঁচ সন্তানকে বাড়ির পাশের একটি লেবুবাগানে সমাহিত করেন তিনি।

তার বাড়ির আশপাশের এলাকা এখন যুদ্ধক্ষেত্র। ৬০ বছর বয়সী কৃষক মাহমুদ আল-মাসরির অন্য কোনো উপায় ছিল না। ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হওয়া নিজের আত্মীয়দের তাড়াহুড়া করে অস্থায়ী কবরস্থানে কবর দিয়ে আসেন তিনি।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন হতাহত ৪২০ শিশু: ইউনিসেফ
ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহত কিছু মৃতদেহ গনকবর দেয়ার জন্য রাখছেন । ছবি এপি

মাহমুদ বলেছেন, ‘তাদেরকে বাগানে কবর দিতে হয়েছে; কারণ সীমান্তের কাছে যেখানে কবরস্থান অবস্থিত সেখান দিয়ে ট্যাংক আসছিল। আর বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যখন যুদ্ধ শেষ হবে তখন আমি তাদের মরদেহ অন্য জায়গায় সরিয়ে নেব।’

বর্তমানে দক্ষিণ গাজার একটি হাসপাতালে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অবস্থান করছেন তিনি। হামাস ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর আগে সীমান্তবর্তী অঞ্চল বেইত হানোনে একটি দোতালা বাড়িতে পরিবারকে নিয়ে থাকতেন কৃষক মাহমুদ।

- বিজ্ঞাপন -

যখন যুদ্ধ শুরু হয় তখনই গাজার উত্তরাঞ্চলের মানুষদের দক্ষিণ দিকে সরে যেতে নির্দেশ দেয় দখলদার ইসরায়েল। প্রথমে মাহমুদ ইসরায়েলিদের এ নির্দেশনা মানেননি। কিন্তু পরবর্তীতে যখন দেখলেন বোমা হামলার তীব্রতা বাড়ছে এবং বড় ধরনের স্থল হামলার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে— তখন পরিবারের জীবিত সদস্যদের নিয়ে নিজ বাড়ি ছেড়ে হাসপাতালে এসে আশ্রয় নেন তিনি।

বার্তাসংস্থা এএফপিকে মাহমুদ জানিয়েছেন, নিজের আদরের ভাই ও তাদের সন্তানদের বাগানে সমাহিত করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। কারণ ওই সময় স্থানীয় কবরস্থানে তাদের নিয়ে যেতে পারেননি তিনি।

গাজা শহর ঘেরাও করার দাবি ইসরায়েলের
ইসরায়েলি হামলার পর ফিলিস্তিনিরা হতাহতের সন্ধান করছে। ছবি রয়টার্স

যুদ্ধ শেষ হলে মরদেহগুলো অন্যত্র সরানোর চিন্তা-ভাবনা থেকে তিনি তাদের কবরের ওপর ইট দিয়ে চিহ্ন দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন পর মাহমুদ জানতে পারেন, তার বাড়িটি ইসরায়েলিরা বুলডোজার দিয়ে ধসিয়ে দিয়েছে। এখন ওই কবরগুলো তিনি আর পাবেন কিনা— এ নিয়েই সংশয়ে আছেন।

ফুটবল মাঠে দেওয়া হলো কবর

গাজায় ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল বিমান হামলা চালানো শুরুর পর থেকেই শত শত মানুষের মৃত্যু হতে থাকে। হাসপাতাল, মর্গ, কবরস্থান সবকিছু মরদেহে তখন ভরে যায়।

নভেম্বরের শুরুতে জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই হামলায় ৫০ জন নিহত হন। তাদের প্রথমে একটি পিকআপ ট্রাকে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে গাধাচালিত গাড়িতে করে স্থানীয় কবরস্থানে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে স্থান সংকুলনা না হওয়ায় অনেককে একটি ফুটবল মাঠে সমাহিত করা হয়। বার্তাসংস্থা এএফপির এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ওই ফুটবল মাঠে স্থানীয় ফুটবল দল খেলত।

- বিজ্ঞাপন -

মাঠটির তিনপাশে রয়েছে জাতিসংঘের পরিচালিত স্কুল।

গাজায় কবরস্থানে জায়গা নেই, ফুটবল মাঠেই দাফন
ইসরায়েলি হামলায় নিহত স্বজনের মৃতদেহ ধরে কাঁদছেন এক ফিলিস্তিনি তরূনী । ছবি এপি

শাবল দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি আয়তক্ষেত্রকার একটি গর্ত খুঁড়েন ওই মাঠটিতে। এরপর গর্তের এক পাশে নিহত পুরুষ; অপর পাশে নারীদের সমাহিত করা হয়। এরপর স্টিলের শিট দিয়ে গর্তগুলো ঢেকে দিয়ে ওপরে মাটি দিয়ে দেন তারা।

ফুটবল মাঠে ওই গণকবর খুঁড়তে ও নিহতদের কবরস্থ করতে সহায়তা করেন ৪৮ বছর বয়সী শিহতে নাসের। তিনি বলেছেন, ‘আমরা মৃতদের ফুটবল মাঠে ও অন্যান্য খালি জায়গায় সমাহিত করছি কারণ কবরস্থানে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। কিছু সময় গাধাচালিত গাড়িতে করে মরদেহ আনা হয়। কারণ গাড়ি চালানোর মতো জ্বালানিও এখানে নেই।’

- বিজ্ঞাপন -

সূত্র: এএফপি

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

একটি অ্যাকাউন্ট নেই? নিবন্ধন করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!