বাইডেনের পুনঃনির্বাচনের পথে তার বয়সই কি সবচেয়ে বড় বাধা?

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
8 মিনিটে পড়ুন
ফেব্রুয়ারিতে বাৎসরিক মেডিক্যাল চেক-আপ থেকে ফিরে হোয়াইট হাউজের লনে দৌড়ে যাচ্ছেন জো বাইডেন। ফাইল ছবি

বাইডেনের পুনঃনির্বাচনের পথে তার বয়সই কি সবচেয়ে বড় বাধা?

বলা হয় সময় কোন পুরুষের জন্যই অপেক্ষা করে না। তাই ৮০ বছর বয়স্ক জো বাইডেনের জন্য এটি একটি সমস্যা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কি ভোটারদের আশ্বস্ত করতে পারবেন যে তার জন্য বয়স আসলে কোন ইস্যু নয়?

মি. বাইডেন মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন যে তিনি আরও চার বছর হোয়াইট হাউজে দায়িত্ব পালন করতে চান। কিন্তু এনবিসি নিউজ এর সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকানরা এ নিয়ে সংশয়ে আছেন।

এই জরিপে দেখা যাচ্ছে ৭০ শতাংশ আমেরিকান এবং ৫১ শতাংশ ডেমোক্রেট মনে করেন তার আসলে আবার নির্বাচনের দাঁড়ানো ঠিক হবে না। এবং জরিপে অংশগ্রহণকারী যে প্রায় অর্ধেক মানুষ চান যে তিনি সরে দাঁড়ান, তাদের একটি বড় উদ্বেগ তার বয়স নিয়ে।

জো বাইডেন এখনই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচাইতে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। যদি তিনি পুনঃনির্বাচিত হন, যখন তিনি আবার শপথ নেবেন ততদিনে তার বয়স হবে ৮২ বছর। আর চার বছরের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে ৮৬ বছর।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার বীমার জন্য বয়স এবং প্রত্যাশিত আয়ু বিষয়ক যে গাণিতিক হিসেব-নিকেশের চার্ট ব্যবহার করে, তাতে দেখা যায় ৮২ বছর বয়স্ক একজন মানুষ আর ৬ দশমিক ৭৭ বছর বাঁচার আশা করতে পারেন। এবং ১২ মাসের মধ্যে তার মৃত্যুর আশংকা ৮ শতাংশ।

পুনঃনির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে জো বাইডেনের টিম যে ভিডিও প্রকাশ করেছে, তাতে তিনি মার্কিন জনগণের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার রক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন। তার রিপাবলিকান প্রতিপক্ষ কিভাবে এই স্বাধীনতা হুমকির মুখে ফেলতে পারে তা নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি তার বয়সের বিষয়টি নিয়ে এই ভিডিওতে সরাসরি কোন কথা বলেননি। পরিবর্তে এই ভিডিওতে মি. বাইডেনের বেশ প্রাণবন্ত কিছু ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে দেখা যায় তিনি জগিং করছেন, লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন, হাত মেলাচ্ছেন।

বাইডেনের পুনঃনির্বাচনের পথে তার বয়সই কি সবচেয়ে বড় বাধা?
১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটে সবচেয়ে তরুণ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন জো বাইডেন। ফাইল ছবি

এই ভিডিওতে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকেও বারবার দেখানো হয়েছে। জো বাইডেন যদি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়েন, তখন তিনিই প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন। কমালা হ্যারিসের বয়স এখন ৫৮ বছর। জো বাইডেনের টিম আশা করছেন কমালা হ্যারিসের উপস্থিতি মি. বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারণায় কিছুটা গতি এবং প্রাণের সঞ্চার করবে।

এখানে মনে রাখা দরকার ২০১২ সালে বারাক ওবামা পুনঃনির্বাচনের জন্য যে ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন তাতে কিন্তু তার তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছিলেন না।

মি. বাইডেনের বয়স নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, এই ভিডিও সেসব প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য যথেষ্ট হবে না, বলছেন বব শ্রাম। তিনি সেন্টার ফর পলিটিকাল ফিউচারের একজন পরিচালক। এর আগে তিনি ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী অ্যাল গোর এবং জন কেরির নির্বাচনী প্রচারণায় একজন সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছিলেন।

“আপনার বয়স নিয়ে যে প্রশ্ন সেগুলোর জবাব আপনাকে দিতে হবে খুবই প্রাণবন্ত এবং উদ্দীপ্ত এক নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে, কথা বলে এগুলোর জবাব দিলে চলবে না, বলছেন তিনি।”

তিনি বলেন, বয়সের বিষয়টি বড় ইস্যু হবে যদি মি. বাইডেন নির্বাচনী প্রচারণায় বড় কোন ভুল করেন বা তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় কোন হোঁচট খান। এবং যদি এরকমটাই ঘটে, রিপাবলিকানরা কিন্তু এই সুযোগ হাতছাড়া করবে না। তারা এরই মধ্যেই মি. বাইডেনের প্রত্যেকটি বেফাঁস মন্তব্যকে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। এক্ষেত্রেও তারা বলার চেষ্টা করবে যে মি. বাইডেনের আসলে আর প্রেসিডেন্ট পদে থাকার সক্ষমতা নেই।

বাইডেনের পুনঃনির্বাচনের পথে তার বয়সই কি সবচেয়ে বড় বাধা?
ডেমোক্রেটরা আশা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থী হলে বার্ধক্যের বিষয়টি জো বাইডেনের জন্য আর বড় ইস্যু হবে না। ফাইল ছবি

গত বছর হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ৫৪ জন রিপাবলিকান সদস্য হোয়াইট হাউজের কাছে একটি চিঠি লিখে মি. বাইডেনের জ্ঞান-বুদ্ধি কতটা সজাগ তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং তার ডিমেনশিয়া হয়েছে কিনা পরীক্ষার দাবি জানান।

প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে মি. বাইডেন কত রকমের ভুল পদক্ষেপ বা ভুল বিবৃতি দিয়েছেন – চিঠিতে সেগুলোর একটা তালিকা আছে।

এতে তারা আরো বলেছিলেন “এসব সাম্প্রতিক বেফাঁস কথাবার্তা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, কারণ আপনি সম্প্রতি এধরণের আরও যত কাজ করেছেন, এসব তার অংশ মাত্র, যেগুলো প্রমাণ করে যে আপনি আর আগের মতো সজ্ঞান-সজাগ নেই।”

একই ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পও। ২০২৪ সালের নির্বাচনে এখনো পর্যন্ত রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে এগিয়ে আছেন।

গত বছর যখন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চলছিল, তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে মি. ট্রাম্প বারে বারে একটি ভিডিও প্রদর্শন করেছেন, যেখানে নানা সময়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বেফাঁস কথাবার্তা বলতে বা হোঁচট খেতে দেখা গেছে।

“জো বাইডেন তো স্পষ্টভাবে কথাই বলতে পারেন না, স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে পারেন না”, গত অক্টোবর মাসে অ্যারিজোনাতে এক রাজনৈতিক সমাবেশে এই ভিডিও দেখিয়ে বলেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

২০১২ সালে বারাক ওবামার নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালনা করেছিলেন জিম মেসিনা। তিনি বলছেন ডেমোক্রেটরা হয়তো ভরসা করছেন মিস্টার ট্রাম্পই রিপাবলিকান প্রার্থী হবেন।

কারণ তিনি বয়সে জো বাইডেনের চেয়ে মাত্র চার বছরের ছোট, ফলে বার্ধক্যের ইস্যুটি তখন অনেক স্তিমিত হয়ে যাবে।

“ভোটাররা হয়তো বলতে পারে, দেখ এরা দুজনেই কিন্তু বৃদ্ধ। এখন আমাকে দেখতে হবে দুজনের মধ্যে কে আমার জন্য ভালো কিছু করবে”, বলছেন মি. মেসিনা।

তিনি আরো বলেন, “ডেমোক্রেটরা আসলে প্রত্যেক রাতে একটা জিনিসই করেন। আমরা হাঁটু গেড়ে বসে প্রার্থনা করে বলি, হে ঈশ্বর, ডোনাল্ড ট্রাম্পই যেন রিপাবলিকানদের প্রার্থী হয়।”

মি. বাইডেন তার বয়স নিয়ে চার বছর আগেও প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। কিন্তু সেবার নির্বাচনী প্রচারণা চলেছিল কোভিড মহামারীর মধ্যে, সেই প্রচারণার বৈশিষ্ট্য ছিল ভিন্ন।

তখন নানা ধরনের বিধি-নিষেধের মধ্যে তাদের প্রচারণা চালাতে হয়েছিল। ফলে প্রাইমারি এবং জাতীয় প্রচারণায় প্রার্থীদের যেরকম ভাবে অংশগ্রহণ করতে হয়, যেভাবে নানা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, সেটা তাদের হতে হয়নি। এবং শেষ পর্যন্ত মি. ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মি. বাইডেনের বিজয়ের ক্ষেত্রে বয়স কোন ইস্যুই ছিল না।

কিন্তু এবার যখন জো বাইডেন নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন, তখন একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনেক সুবিধা পাবেন।

বাইডেনের পুনঃনির্বাচনের পথে তার বয়সই কি সবচেয়ে বড় বাধা?
নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় জো বাইডেন নিজেকে কতটা শক্ত-সমর্থ প্রমাণ করতে পারেন তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। ফাইল ছবি

তিনি এয়ারফোর্স ওয়ানে ভ্রমণ করতে পারবেন, তার নির্বাচনী অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজনে পেশাদার নির্বাচনী প্রচার টিম ছাড়াও প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার বিষয় যারা দেখা-শোনা করে, তাদের সাহায্য পাওয়া যাবে।

যারা ক্ষমতার বাইরে থেকে নির্বাচন করছেন, তাদের তুলনায় এটা একেবারেই ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা। তার প্রতিদ্বন্দ্বী যারা, তাদের প্রাইমারিতে লম্বা লড়াই চালাতে হবে।

নিউ হ্যাম্পশায়ারে বা আইওয়ায় তাদের হয়তো তুষারপাতের মধ্যে প্রচারাভিযানে অংশ নিতে হবে, তাদের বাজেট থাকবে খুব কম, আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে বহুজনের সঙ্গে। আর এই প্রাইমারির লড়াইটা শেষ হতেই লাগবে এক বছরের বেশি।

এটি মি. বাইডেনকে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে প্রচারাভিযানের একটা ভালো সূচনার সুযোগ করে দেবে। ২০২৪ সালের দ্বিতীয় ভাগে যে ধরণের তীব্র এবং সক্রিয় প্রচারণায় তাকে লিপ্ত থাকতে হবে, সেটি হয়তো বড় জোর কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের জন্য।

তবে এনবিসি নিউজের যে জরিপে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পুনঃনির্বাচনের ব্যাপারে নিরুৎসাহ দেখা গেছে ভোটারদের মধ্যে, সেই জরিপে একটাই ভালো দিক।

সেটি হলো, মি. বাইডেন যদি শেষ পর্যন্ত পুনঃনির্বাচিত হওয়ার জন্য দাঁড়ান, ৮৮ শতাংশ ডেমোক্রেট বলেছে তারা অবশ্যই এবং সম্ভবত তাকে সমর্থন দেবে।

মি. শ্রাম বলেন, “বাইডেনকে সব সময় খাটো করে দেখা হয়েছে। ২০২০ সালেও তাকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। প্রথম কয়েকটা প্রাইমারির পর তো লোকজন তাকে খরচের খাতায় লিখে দিয়েছিল। তারপর কিন্তু তিনি ভূমিধ্বস বিজয় পেলেন।”

সূত্র: বিবিসি

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!