ভূমিকম্প: শিশুদের যে ছবি ও ভিডিও চোখে জল আনছে

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
6 মিনিটে পড়ুন

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বড় ধরনের দুটি ভূমিকম্প আর শত শত আফটার শকে বিপর্যস্ত তুরস্ক-সিরিয়ায় এখন চলছে শোকের মাতম। বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনা প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে দেশ দুটিতে প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার ছুঁইছুঁই। ভূমিকম্পে হাজারও বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ, আহত হয়েছেন আরও বিপুলসংখ্যক। ভয়াবহ এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় এখন মানবিক সংকটে রূপ নিতে যাচ্ছে। সময়ের ব্যবধান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসস্তূপে আটকা মানুষকে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে।

প্রকৃতির বৈরী এই আচরণে বাদ যায়নি আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। ধ্বংসস্তূপের নিচে গর্ভবতী মা চাপা পড়ে মারা গেলেও তার সন্তানকে পাওয়া গেছে জীবিত। নাড়ি কেটে উদ্ধার করা সেই সন্তান এখন স্থিতিশীল রয়েছে। দুই দেশে এমন রক্তমাখা শিশুদের উদ্ধারের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তের কোটি কোটি মানুষকে। তুরস্ক-সিরিয়ায় এমন অবর্ণনীয় নানা ঘটনার দৃশ্য দেখে অনেকে চোখের পানিও ফেলেছেন অজান্তেই। বিপর্যস্ত এই দুই দেশে ভূমিকম্পের ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধারের কিছু দৃশ্য মানুষের হৃদয়ে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে গত দুদিনে।

এমনই একটি ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যায়, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে প্রায় সমবয়সী দুই ভাই–বোন। ধসে যাওয়ার ভবনের ধ্বংসাবশেষে পুরো শরীর চাপা পড়লেও কেবল দুজনের মাথাটুকুই আছে অক্ষত। আর ছোট্ট ভাইয়ের মাথায় যেন কোনোভাবে ধ্বংসাবশেষ আঘাত করতে না পারে, সেজন্য নিজের হাত দিয়ে ভাইয়ের মাথা আগলে রেখেছে সাত বছরের বোন।

হৃদয়স্পর্শী এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকের চোখে জল এনেছে। অনেকেই হৃদয়বিদারক এই দৃশ্য শেয়ার করে ভাই-বোনের বেঁচে যাওয়াকে অলৌকিকও বলছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে ভাইকে আগলে রাখা বোনের এই ছবি টুইটারে শেয়ার করেছেন মোহাম্মদ সাফা নামে জাতিসংঘের এক প্রতিনিধি।

টুইটের ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, সাত বছর বয়সী মেয়েটি তার ছোট্ট ভাইকে রক্ষার জন্য তার মাথায় হাত দিয়ে রেখেছে। তারা ১৭ ঘণ্টা ধরে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা রয়েছে। তাদেরকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। আমি দেখলাম কেউই ছবিটা শেয়ার করছেন না। ও মারা গেলে সবাই ছবিটি শেয়ার করতেন। ইতিবাচক জিনিস ছড়িয়ে দিন।

আর ভ্লগিং নর্থওয়েস্টার্ন সিরিয়া নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্টে ভাইকে সুরক্ষিত রাখতে বোনের এমন সাহসিকতার ভিডিওটি টুইট করা হয়েছে। টুইটে বলা হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া ভাইকে রক্ষায় তার মাথায় হাত দিয়ে আগলে রেখেছে সাত বছর বয়সী সিরীয় বোন।

তুরস্কের সরকারি সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর টুইট করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, দেশটির কাহরামানমারাস এলাকার একটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনের স্তূপ থেকে ২ মাস বয়সী শিশুকে উদ্ধার করা হচ্ছে। শিশুটিকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বের করে আনার সময় উদ্ধারকারী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার বলে চিৎকার করেন। পরে তাকে কম্বলে জড়িয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান উদ্ধারকারীরা।

আনাদোলুর অপর এক ভিডিওতে ভূমিকম্পের ৫৩ ঘণ্টা পর তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ধসে যাওয়া একটি ভবনের নিচ থেকে এক বছর বয়সী ফুটফুটে এক শিশুকে উদ্ধার করতে দেখা যায়। আদাদোলু বলছে, শিশুটি দুদিন ধরে কোনও ধরনের পানি কিংবা দুধ পায়নি। পাঁচ-তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুটি এখন নিরাপদে আছে। টুইটারে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, অলৌকিক শিশু।

তুর্কি এই সংবাদমাধ্যমের আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল কাহরামানমারাসে ধসে যাওয়া ৪ তলা একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে ২ বছর বয়সী এক শিশুকে উদ্ধার করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের দুদিন পর তাকে ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার করা হয়। দুদিন ধরে চাপা পড়া শিশুটি ছিল অভুক্ত। অনেকে টুইটারে ভিডিওটি টুইট করে শিশুটির জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন।

আনাদোলুর অপর এক ভিডিওতে দেখা যায়, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় ইসকেনদেরাউন জেলায় ধসে যাওয়া ভবনের ধ্বংসাবশেষে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছেন উদ্ধারকর্মীরা। ভূমিকম্পের প্রায় ৪৪ ঘণ্টা পর সেখানকার একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে এক মা ও তার দুই বছর বয়সী ছেলেকে উদ্ধার করা হচ্ছে।

ভূমিকেম্পর কেন্দ্রস্থল কাহরামানমারাসের একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে ১২ বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। এমনই একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবক ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন। তিনি ভিডিওতে সাহায্য চাচ্ছেন। সঙ্গে জিজ্ঞেস করছেন ‘মা তুমি ঠিক আছে?’

“বন্ধুরা, আমরা ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকে আছি। মা! তুমি ঠিক আছো! বল তুমি কি কোথাও আছো। দয়া করা সাহায্য করুন! এরপর নিজের বাড়ির ঠিকানা বলে সে ভিডিওটি শেষ করে দেয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে অপর একজন সিরীয় কিশোরের ভিডিও। সেই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি জানি না। আমি কি বেঁচে থাকব না মরে যাব। এরকম পরিস্থিতিতে থাকা যে কতটা কঠিন এটি কেউ বলে বোঝাতে পারবে না। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এটি ধ্বংসস্তূপের নিচে। এই পাড়ায় কয়েকটি পরিবার বাস করত। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুক।’

তুরস্কের হাতেইয়ে আরেকজন ব্যক্তি ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘যদি আল্লাহকে ভালোবাসেন, দয়া করে আসুন আমাদের রক্ষা করুন।’ ভূমিকম্পে তুরস্কে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তুরস্কের হাতেই অঞ্চলে। এই অঞ্চলের কয়েকশ বাড়ি ধসে পড়েছে।

উদ্ধার অভিযান যত এগিয়ে যাচ্ছে ততই সামনে আসছে করুণ কাহিনী। এমনই একটি ঘটনা শোনা গেছে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে। যেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচেই জন্ম হয়েছে এক শিশুর। তবে জন্মের পরপরই শিশুটির মা মারা গেছে।

তালহা সিএইচ নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এক নবজাতককে উদ্ধারের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, এক উদ্ধারকারী একটি শিশুকে হাতে নিয়ে দৌড় দিচ্ছেন। ওই সময় শিশুটির শরীরে কোনো পোশাক ছিল না। তাকে ঢাকার জন্য অপর এক উদ্ধারকারী একটি চাদর ছুড়ে দেন।

ভিডিওটির শিরোনামে লেখা হয়েছে, ‘একটি শিশু জন্ম নেওয়ার মুহূর্ত। সিরিয়ার আলেপ্পোতে তার মা ধ্বংসস্তূপের নিচে ছিল। শিশুটির জন্মের পরই তার মা মারা গেছেন। আল্লাহ সিরিয়া এবং তুরস্কের মানুষকে ধৈর্য্য ধরার শক্তি দিক এবং ভূমিকম্পে হতাহতদের ওপর দয়া প্রদর্শন করুক।’

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!