জ্যান্ত দুগ্গা

মন্দিরা মিশ্র
মন্দিরা মিশ্র
2 মিনিটে পড়ুন

হরিকা, এক কেজি সরষের তেল আর একশো জিরের গুঁড়ো…
দুগ্গা, ফের তুই ভর সন্ধেবেলা ঐ অন্ধকার বটতলা দিয়ে এসেছিস? শয়তান দুটো যে সূর্য্য ডোবার অপেক্ষাতেই থাকে, ঐ বটগাছের নীচে দিনের আলোও ভাল করে প্রবেশ করে না… এখন রাস্তার টিমটিমে আলোয়…
কি করব হরিকা, মায়ের ক’দিন ধরেই শরীরটা ভাল যাচ্ছে না, ডাক্তার জেঠু বেড-রেষ্টে থাকতে বলেছেন। কিন্তু মা কষ্ট করে রান্নাঘরে ঢুকছিল, গতকাল আমিই বকাবকি করে শুইয়ে রেখেছি, সকালে কোনরকমে দুটো ঝোল-ভাত ফুটিয়ে মায়েরটা ঘরে রেখে অপু আর আমি তাড়াতাড়ি খেয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম।
কলেজ থেকে ফিরে একটা ব্যাচের টিউশন করিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে দেখি একটুও তেল নেই…
হয়েছে, আর বকবক না করে ব্যাগটা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি যা। দেখি হাতটা পাত, খানিকটা লঙ্কাগুঁড়ো সকলের অলক্ষ্যে হাতে ধরিয়ে দিল।
বটতলাটা প্রায় পেরিয়ে এসেছি, পিছন থেকে কেউ কোমরটা জাপটে ধরতেই, ব্যাগটা ফেলে দুহাতে লঙ্কাগুঁড়ো নিয়ে আন্দাজে পিছনদিকে হাত বাড়িয়ে ছুঁড়ে দিতেই…
উরে বাবারে-মারে জলেপুড়ে… রাস্তায় পড়ে আছাড়ি-পিছাড়ি…
এদিকে একেবারে সামনেই আরেক মুর্তিমান, আমিও মুহুর্তের মধ্যে স্নিকার পরা পা দিয়ে ওর পুরুষাঙ্গে সজোরে লাথি…
শুধু একবার ‘আঁক‘ শব্দ করেই প্রপাত ধরনীতলে, ব্যাগটা নিয়ে ঊর্দ্ধশ্বাসে দৌড়, বাড়ির কাছাকাছি আসতেই পাশের বিকাশ কাকুর মুখোমুখি…
সব শুনে পুলিস ষ্টেশনে কথা বলছেন, শুনতে-শুনতে বাড়ি ঢুকেই মায়ের জেরার জবাবে… দোকানে প্রচুর ভিড় ছিল তো…
রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ বিকাশ কাকুর সঙ্গে ওসির ডাকে মায়ের অলক্ষ্যে দরজার বাইরে বেরিয়ে জবানবন্দি দিতে, ওসি পিঠ চাপড়ে বললেন, নামের সার্থকতা রক্ষা করেছ তুমি, ঘরে ঘরে তোমার মত মেয়েই চাই।
ক’দিন বাদেই পুজো, পুলিশ ষ্টেশনের মাধ্যমেই মিডিয়ায় প্রচার…
সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্নোত্তরের সঙ্গে সঙ্গে অগুণতি ক্যামেরা ঝলসে উঠল। এবার মা এবং আশেপাশের অত্যুৎসাহীদের জানতে বাকি রইল না। সপ্তমীতেই কয়েকটা দৈনিকে আমার ছবিসহ দুই শয়তানের পুলিশি প্রহরায় হসপিটালের বেডে শোওয়া ছবিও প্রকাশ পেল। একজনের দুচোখেই ব্যাণ্ডেজ আর অন্যজন প্রায় জীবন্মৃত অবস্থায়… ক্ষণেক্ষণেই সংজ্ঞা হারাচ্ছে।
মহাষ্টমীর সকালে দরজা খুলেই অবাক মা! তোমরা সব পুজোর ডালি নিয়ে মণ্ডপে না গিয়ে এখানে?
কি যে বল তুমি! আমাদের মাথাভাঙা গ্রামের দুই জ্যান্ত অসুর দমনকারিনী আমাদের জ্যান্ত দুগ্গাকে দর্শন না-করে মণ্ডপে গেলে মৃন্ময়ী মা-ও যে আমাদের পুজো নেবেন না গো।
তিনিই তো দেখিয়ে দিলেন, আজও দানবদলনীরা আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে, তবে পরিস্থিতির প্রয়োজনে ঘরে ঘরে এমনই দুর্গা তৈরী হওয়ার বড় প্রয়োজন।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
তিনি একজন গল্পকার ও উপন্যাসিক। এ পর্যন্ত তার তিনটি সম্পূর্ণ উপন্যাস পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!