দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি সংকট, মুদ্রাস্ফীতি- সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কা এখন এমন অবস্থায় যে প্রধানমন্ত্রীও আপাতত কোনো আশার আলো দেখছেন না। দেশের নাগরিকদের মাঝেও মহামারির মতো ছড়াচ্ছে দেশ ছাড়ার প্রবল ইচ্ছা।
শ্রীলঙ্কায় জ্বালানি-সংকট এখন এমন চরমে যে সম্প্রতি (২৮ জুন) স্বল্প মজুদ সাবধানে খরচ করতে দুই সপ্তাহের জন্য শুধু জরুরি পরিষেবা খাতে সীমিত পরিমাণে জ্বালানি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এই সিদ্ধান্তের কথা জানাতে গিয়ে সেদিন সরকারের মুখপাত্র বান্দুলা গুণাবর্দনা বলেছিলেন, “আজ মাঝরাত থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের মতো জরুরি খাত ছাড়া অন্য কোনো খাতে জ্বালানি বিক্রি করা হবে না।”
তিনি জানান, ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক সংকটে পড়া দেশটিতে সামান্য যেটুকু জ্বালানি রয়েছে তা সংরক্ষণ করার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এর আগে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে জ্বালানি খাতে মোট ৬৫ বিলিয়ন রুপি (১৮৫ মিলিয়ন ডলার/১৭১ মিলিয়ন ইউরো)-র ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বড় রকমের ভর্তুকি দিয়ে আসা জ্বালানির দাম শতকরা ৮৩৫% বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় সিলোন ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ড (সিইবি)।
এসব পদক্ষেপের সুফল এখনো দৃশ্যমান নয়। বরং পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপের দিকে যাওয়ায় মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, “মোট ঋণ ৫০ বিলিয়নও ছাড়িয়ে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কা এখন ‘দেউলিয়া দেশ’।”
অবশ্য দ্বীপদেশটির অনেক মানুষ প্রধানমন্ত্রীর এমন স্বীকারোক্তির আগেই সামনে যে আরও ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে তা বুঝতে পেরেছেন। তাই অনেকই এখন দেশ ছাড়ার জন্য মরিয়া।
সবচেয়ে সহজ ভারতে চলে যাওয়া। তাই নৌকায় চড়ে ভারতে যাচ্ছেন অনেকে।
২৭ জুন ভারতের এক সমুদ্র সৈকত থেকে প্রবীণ এক দম্পতিকে উদ্ধার করা হয়। দীর্ঘক্ষণ নৌকা চালানোয় পানি-শূন্যতা দেখা দিয়েছিল। তার সঙ্গে ভীষণ ক্লান্তি যোগ হওয়ায় দুজনই চলে যান মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। অচেতন অবস্থায় দুজনকেই হাসপাতালে নেওয়া হলেও বেশি কাহিল হয়ে পড়া নারীকে আর বাঁচানো যায়নি। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ২ জুলাই অনন্তের পথে যাত্রা করেন তিনি।
এভাবে নৌকায় চড়ে ইতোমধ্যে ৯০ জনেরও বেশি মানুষ শ্রীলংকা থেকে ভারতে প্রবেশ করেছেন। আপাতত এক শরণার্থী শিবিরে রাখা হয়েছে তাদের।