টাঙ্গাইলের বাসাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ‘ডাকপ্লেগ রোগের’ মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন প্রয়োগে রিপন সিকদার নামে এক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার প্রায় ১৪০০ হাঁসের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
গত ৮ জুন থেকে ওই হাঁসগুলোর মৃত্যু শুরু হয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই ১৫০০ হাঁস মারা যায়। এর আগে গত ৫ জুন বাসাইল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে ভ্যাকসিনের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) জাহিরুল ইসলামের কাছে ডাকপ্লেগ রোগের ভ্যাকসিনের জন্য যান ওই উদ্যোক্তা। ওই সময় জাহিরুল ইসলাম তাকে ১৯টি ভ্যাকসিনের বোতল দেন।
এরপর ৭ জুন রিপন হাঁসগুলোকে ওই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেন। একদিন পর থেকে হাঁসগুলো মারা যেতে থাকে। ক্রমেই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। কয়েকদিনের ভেতরে প্রায় ১৪০০ হাঁসের মৃত্যু হয়। এ সময় ভ্যাকসিনের বোতল চেক করলে দেখা যায়, চলতি বছরের ২০ মে ভ্যাকসিনের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত রিপন উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের ময়থা উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।
ওই উদ্যোক্তা জানান, প্রায় এক বছর আগে বেকার থাকা অবস্থায় রিপন সিকদার ৪২ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে ঘর তৈরি করে হাঁসের খামার করেন। প্রথম অবস্থায় তিনি ১ হাজার হাঁস নিয়ে খামার শুরু করেন। প্রথমে তার বেশ কিছু টাকা লাভ হয়। দ্বিতীয়বারে তিনি নাগেশ্বরী জাতের ডিমের জন্য ১৭৩০টি হাঁসের বাচ্চা ও মাংসের জন্য বেলজিয়াম জাতের ৭০টিসহ মোট ১৮শ’টি হাঁসের বাচ্চা খামারে তোলেন। মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা প্রয়োগে এরমধ্যে ১৫০০ হাঁস এরইমধ্যে মারা গেছে।
রিপনের স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে ভ্যাসকিন আনার পর প্রায় ১৭শ’ হাঁসকে প্রয়োগ করা হয়। আর বাকি হাঁসগুলোকে একটি কোম্পানির ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরেরদিন থেকে হাঁস মারা যাওয়া শুরু হয়। একদিনেই প্রায় ৫০০ হাঁসের মৃত্যু হয়। এভাবেই বাড়িতেই প্রায় ১৪শ’ হাঁস মারা যায়। এরপর বাকি প্রায় ৪শ’ হাঁসকে বিলে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকেও হাঁস মারা যাচ্ছে। ঋণ নিয়ে এই খামারটি করেছিলাম। আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
রিপন সিকদার বলেন, গত ৫ জুন আমি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তা জাহিরুল ইসলামের কাছে হাঁসের ডাকপ্লেগ রোগের ভ্যাকসিন আনতে যাই। তিনি আমাকে ১৯টি ভ্যাকসিনের বোতল দেন। এরপর ৭ জুন প্রায় ১৭শ’ হাঁসকে ওই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করি। ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর দিন থেকে হাঁসগুলো মারা যেতে থাকে। একদিনে ৫শ’ হাঁসের ওপরেও মারা গেছে। এভাবে কয়েকদিনের মধ্যে প্রায় ১৪শ’ হাঁস মারা গেছে। মৃত হাঁসগুলো মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। আর বাকি জীবিত হাঁস বিলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোও মারা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, হাঁসগুলো মারা যেতে থাকলে ভ্যাকসিনের বোতল চেক করে দেখি প্রায় এক মাস আগে ভ্যাকসিন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। জাহিরুল ইসলামের ভুলের কারণে আমার প্রায় সাত লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনার পর আমি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গেলে জাহিরুল ইসলাম জানায়, তার ভুল হয়েছে। ঋণ নিয়ে আমি এই হাঁসের খামারটি করেছি। এই ক্ষতি আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে। এই ক্ষতি পোষানোর মতো ক্ষমতা নেই। তাই আমি ক্ষতিপূরণ চাচ্ছি। এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সুমন সরকার জামাল বলেন, একজন কর্মকর্তার ভুলে রিপনের ১৪শ’ থেকে ১৫শ’ হাঁসের মৃত্যু হয়েছে। রিপনের অনেক টাকা ক্ষতি হয়ে গেলো। এলাকাবাসী হিসেবে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।’
অভিযুক্ত জাহিরুল ইসলাম বলেন, রিপন আমার কাছে গত ৬ জুন এসেছিল। পরে তাকে ২০টি ডাকপ্লেগ রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। কয়েকটি হাঁস মারা যাওয়ার পর রিপন আমার কাছে এসে ১০টি ভ্যাকসিন ফেরত দিয়ে গেছে। পরে চেক করে দেখি ২০ মে ভ্যাকসিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ওই ভ্যাকসিনমূলে আমাদের অফিসে থাকা বাকিগুলো ফেলে দিয়েছি। হঠাৎ করে আবার এসে বলতেছে, তার ১৪০০ হাঁস মারা গেছে। ভ্যাকসিনের মেয়াদ না থাকলেও উপকার না হতে পারে, তবে কোনও ক্ষতি হবে না। আসলে এতগুলো ভ্যাকসিনের মধ্যে থেকে তাকে দেওয়ার সময় আমি মেয়াদটি খেয়াল করিনি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফারুক আহাম্মদ বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন বিতরণ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও ভুক্তভোগীকে প্রণোদনার মাধ্যমে সহায়তা করা হবে।’
টাঙ্গাইলের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রানা মিয়া বলেন, এ ঘটনায় ওই কর্মকর্তার কোনও গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।