ভিক্ষা করতে গিয়ে সৌদিতে আটক মতিয়ার গড়েছেন অনেক সম্পদ

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
4 মিনিটে পড়ুন

হজ করতে গিয়ে মালামাল হারানোর অভিনয় করে ভিক্ষা করতে গিয়ে সৌদি পুলিশের হাতে আটক মতিয়ার রহমান মন্টু মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সিন্দুরকৌটা গ্রামের বাসিন্দা। এক সময়ে এলাকার ত্রাস মতিয়ার দেশ-বিদেশে বিভিন্ন কৌশলে ভিক্ষা করে হয়েছেন অনেক সম্পদের মালিক।

জানা গেছে, মতিয়ার রহমান সৌদি আরবে যান ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। সেখানে ব্যাগেজ হারিয়ে যাওয়ার নাটক সাজিয়ে নামেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। এ ঘটনায় ২২ জুন তিনি সৌদি পুলিশের হাতে আটক হন। আটকের পর জানা যায়, তাকে গাইড করার মতো কেউ ছিলেন না এবং তার বসবাসের বাড়ি বা হোটেলও ছিল না। এ ঘটনার পরে পুলিশ তাকে মুচলেকায় ছেড়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে এ ঘটনা ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মেহেরপুরসহ সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

এ ঘটনায় গত ২৫ জুন ধানসিঁড়ি ট্র্যাভেল এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন। সেখানে বলা হয়, আপনার এজেন্সির একজন হজযাত্রী মো. মতিয়ার রহমান মদিনা শরীফে ভিক্ষা করতে গিয়ে সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। এ ঘটনা জানার পর বাংলাদেশ হজ মিশনের একজন কর্মী থানায় মুচলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। তবে কী জবাব দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে এখনও কিছু জানা যায়নি।

এদিকে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মতিয়ার রহমান ছাত্রাবস্থায় ডানপিটে ছিলেন। কুষ্টিয়াতে পড়ালেখা করার সময় গাংনীর একটি সন্ত্রাসী বাহিনীতে যোগ দেন। বোমা প্রস্তুতের সময় তা বিস্ফোরিত হয়ে দুই হাতের কব্জি উড়ে যায়। তখন থেকে পঙ্গুত্বকে পুঁজি করে নানা অপকর্ম করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এমনকি তার বিরুদ্ধে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার অভিযোগে ২০১০ও ২০১২ সালে গাংনী থানায় দুটি মামলা হয়। কুষ্টিয়া থানায়ও তার নামে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো থেকে ইতোমধ্যে খালাস পেয়েছেন মতিয়ার রহমান মন্টু।

মতিয়ার রহমানের বড় ভাই আতিয়ার রহমান বলেন, আমার ভাইয়ের গত বছর হজে যাওয়ার কথা ছিল। অফিসিয়াল জটিলতায় তখন হজে যেতে পারেনি। এ বছর আগে থেকেই চেষ্টা করেছে। নিয়ম অনুযায়ী হজব্রত পালন করতে গিয়েছেন। আমরা বাবার জমি ভাগাভাগি করে নিয়েছি। সে ১০-১২ বিঘা জমি পেয়েছে। তবে সৌদিতে আটকের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

মতিয়ার রহমানের স্ত্রী মমতাজ খাতুন বলেন, আমার স্বামী হজ পালন করতে গিয়েছেন। সেখানে কী হয়েছে তা জানি না। তবে কয়েকজনের মুখে শুনেছি, আমার স্বামী সেখানে আটক হয়েছেন। তিনি বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত কিছুই বলতে পারছি না। আমাদের সংসারে এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সবাই চিন্তিত।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ফারুক হোসেন জানায়, আমি যখন অনেক ছোট তখন তার দুটি হাত কেটে ফেলা হয়েছিল। লোকমুখে গল্প শুনেছি, বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে তার দুই হাতের কব্জি উড়ে যায়। তার বিষয়ে এলাকার মানুষ এখনও সমালোচনা করেন। তবে তিনি মাঝে-মধ্যে এলাকা ছেড়ে চলে যান।

একটি সূত্রে জানা গেছে, মতিয়ার রহমান চিকিৎসার অজুহাতে ভারতে গিয়ে নানা কারণ দেখিয়ে সেখানে ভিক্ষা করেন। ভারত হয়ে আফগানিস্তানে গিয়েও ভিক্ষাবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহাম্মেদ জানান, মতিয়ার রহমান এলাকায় কখনো ভিক্ষা কিংবা সাহায্য নেয়নি। দুটি হাত না থাকায় বিভিন্ন দেশে গিয়ে ভিক্ষা বা সাহায্য চেয়ে এলাকায় জমি করেছেন। তবে তিনি সৌদি আরবে যা করেছেন তা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। আমাদের জেলার সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন। বিষয়টি ন্যক্কারজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গাংনী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মতিয়ারের ব্যাপারে শুনেছি। যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। মতিয়ারের বিরুদ্ধে গাংনী থানায় দুটি মামলা ছিল যা থেকে আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরেছি। বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!