গল্প: গন্ধরাজ

মিতা নাগ ভট্টাচার্য
মিতা নাগ ভট্টাচার্য
2 মিনিটে পড়ুন

সারাদুপুর গরমের দাপটের পর পড়ন্ত বিকেলে, আকাশ কোলে মেঘমায়া, বৃষ্টি রানির মনখোলা গল্পগাঁথা,‌ স্নিগ্ধতায় ভরে দিল চারিপাশ।
বৃষ্টি ভেজা বাতাস গন্ধরাজের সুবাস নিয়ে আসে। দীঘির ফ্ল্যাটের আশপাশে কোথাও গন্ধরাজ গাছ নেই। ফুল তো দুরের কথা। তবুও দীঘি গন্ধরাজের সুবাসে সুখময়ী হয়।
ছোট বেলায় ওদের পাশের বাড়ির বাগানে ছিল ঐ গাছ। অজস্র ফুল ফুটত আর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ত তার সুবাস। এখনও কত অশান্তিতেও গন্ধরাজ মনকে স্নিগ্ধ করে। চারদেয়ালের এই ছোট্ট খোপের মত ঘর ভালো লাগে না দীঘির, তবু থাকতে হয়। মেয়েদের ইচ্ছে করে আর কবে ভেবেছে? অধিরথ একটু উঁচুতলায়, মানুষের থেকে একটু দুরত্বে,এমন ফ্ল্যাটই চেয়েছিল, দীঘির ‌আপত্তি সে কানে নেয় নি। দীঘি অভিমানে নিজেকে যন্ত্রের মত চালিত করে দিনযাপন করে চলেছে। মাঝে মাঝে বারান্দায় এসে আকাশ পটে চোখ মেলে। কলিং বেল ডাকছে।অধিরথ।এত তাড়াতাড়ি ফিরল? মনে প্রশ্ন এলেও তাকে শব্দমায়ায় জড়ায় না। লাভ নেই। উত্তর দেবে না।মন অযথা খারাপ হবে।
চা বসায় গ্যাসে।মনটা বিদ্রোহী হয়। অধি তো কোনদিন দীঘি ক্লান্ত হয়ে ফিরলে ব্যস্ত হয়ে চা বসায় না। তবে দীঘি কেন?
ভাবনার মাঝেই পরিপাটি করে চা নিয়ে দেয়।
-তোমার চা টা ও নিয়ে এসো। দীঘির বৃষ্টিদিনে মনখারাপের বাতাস লাগে। কোনো দিন অধিরথের মুখের উপর না বলতে পারে না। অথচ অধি সবসময় দীঘি কোন কথা বললে সরাসরি না বলে দিতে এতটুকু দ্বিধা করে না।
-আমি আর চা খাব না, টায়ার্ড লাগছে, আমি একটু শোবো। সারাদিন খুব খাটুনি গেছে।
-আজ এত ঝরবৃষ্টি হল, ভাবছি বাড়ি এসে চিঁড়ে ভাজা খাব। চটপট ভেজে নিয়ে এসো।
আজ সত্যি কোমরে খুব ব্যথা, বেশ কষ্ট হচ্ছে। আকাশ থেকে বিদ্যুৎ ঝলক এলো।প্রচন্ড শব্দে মেঘ ডাকল। না, কোনো কৈফিয়ত নয়।
ঘরে এসে একটু শুতে চাইল মন।প্রবল ঝর উঠেছে। দীঘির মনের ভিতর একটা কথা বাজছে,আর নয়। অনেক অবহেলা করেছে অধিরথ।এবার নিজেকে বদলাতে হবে। ঈশ্বরের আঙিনায় সকলের স্বস্তিতে বাঁচার অধিকার আছে।
কোনো একদিন তো শুরু করতেই হবে।

অধিরথ কিছুক্ষন অপেক্ষা করে এ ঘরে চলে আসে,
-কি হল তোমাকে যে চিঁড়ে ভেজে দিতে বললাম, দরজায় দাঁড়িয়ে তীব্রতায় ঝলসানো এক দুর্বিনীত পুরুষ।
দীঘির বুকের ভিতর থেকে শব্দরা,
-পারব নাগো।
প্রবল চিৎকার করে উঠল অধিরথ। ঠিক তখনই বৃষ্টি এল, দীঘির চারিপাশ ভরে উঠল গন্ধরাজের সুবাসে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
পেশায় শিক্ষক। বেলঘরিয়া, কোলকাতা। বহু বছর ধরে দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় বাংলা ও ইংরেজিতে তিনি গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী লিখছেন। স্মৃতি থেকে গল্পপথ লেখিকার নিজস্ব নিবেন। বি,সি,এম পাবলিকেশন থেকে সেরা ছোটগল্পের জন্য সাহিত্য রত্ন পুরুস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!