সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহার ১১ বছরের কারাদণ্ড

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
7 মিনিটে পড়ুন

দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের দায়ে চার বছর এবং মানিলন্ডারিং ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে দুটি সাজা একসঙ্গে চলার কারণে সাবেক এই প্রধান বিচারপতিকে সাত বছর জেল খাটতে হবে বলে জানিয়েছেন আদালত।

রায়ে এস কে সিনহার ৭৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অপর ১০ আসামির মধ্যে দুজনকে খালাস এবং একজনকে চার বছর এবং অপর সাতজনের তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার দুপুর সোয়া একটার দিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এই রায় ঘোষণা করেন। বেলা সোয়া ১১টায় ১৮২ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। রায় ঘোষণার সময় মামলার সাতজন আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীনভাবে সাবেক প্রধান বিচারপতি দণ্ডিত হলেন। ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি এসকে সিনহা। ওই বছরের ১৭ জানুয়ারি তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে ক্রমেই সরকারের সঙ্গে বিচারপতি সিনহার দূরত্ব বাড়তে থাকে। নানা নাটকীয়তার পর ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধান বিচারপতি। পরে আর দেশে ফিরেননি, সেখান থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠান।

ঋণ জালিয়াতির মামলার আসামিদের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) কারাগারে রয়েছেন। ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান এবং একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা জামিনে আছেন। এছাড়া সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক রয়েছেন।

এর আগে দুই দফা রায় ঘোষণা পেছানো হয় আলোচিত মামলাটির। ৫ অক্টোবর বিচারক অসুস্থ থাকায় এবং ২১ অক্টোবর বিচারক রায় প্রস্তুত করতে না পারায় তা পেছানো হয়।

গত বছর ১৩ আগস্ট ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম। অভিযোগপত্রে নাম থাকা ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ২৪ আগস্ট। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।

ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ব্যবসায়ী পরিচয়ে দুই ব্যক্তির নেওয়া ঋণের চার কোটি টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছিলেন আলোচিত বিচারপতি এস কে সিনহা। বিষয়টি টের পেয়ে তদন্তে নামে দুদক। দীর্ঘ তদন্তের পর ২০১৯ সালের ১০ জুলাই সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পরদিন তারা ওই ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।

ঋণের জামানত হিসেবে আসামি রনজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয় ঋণের আবেদনে। ওই দম্পতি এসকে সিনহার পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ৭ নভেম্বর ঋণের আবেদন হওয়ার পর অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে তা অনুমোদন করা হয়। পরদিন মোট চার কোটি টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয় এস কে সিনহার নামে। ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে এসকে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দুটি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, উত্তোলন ও পাচার করেছেন, যা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দুদকের এই মামলায় চার্জশিটের ২১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। যার মধ্যে আসামি সাবেক বিচারপতি এসকে সিনহার বড় ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা, ভাতিজা সংখজিত কুমার সিনহা, আপিল বিভাগের বেঞ্চ রিডার মো. মাহবুব হোসেন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে এসকে সিনহার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, তার ভাই একে সিনহা সরকারি পদে আছেন বলে তার (এসকে সিনহা) নামে ব্যাংকে হিসাব খোলা সমস্যা রয়েছে তাই তাকে (নরেন্দ্র কুমার সিনহা) একটি হিসাব খুলতে বলেন। সে অনুযায়ী শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক উত্তরা শাখায় নরেন্দ্র কুমার সিনহা ও ভাতিজা সংখজিত কুমার সিনহার যৌথ নামে ২০১৬ সালে হিসাব খোলেন। তিনি ওই হিসাবে কোন টাকা জমা দেননি। কখনো ওই হিসাব থেকে কোনো টাকাও উত্তোলন করেননি। পরে জানতে পেরেছেন যে, ওই হিসাবে দুইটি চেকের মাধ্যমে এক কোটি ৪৯ লাখ ছয় হাজার এবং ৪৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা জমা হয়েছিল। জানতে পারে তার ভাই এসকে সিনহার সুপ্রিম কোর্টের সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে তাদের হিসাবে ওই টাকা জামা হয়েছিল।

আর ভাতিজা বলেছেন, হিসাব খোলার পর চেকের প্রতিটি পাতায় তার স্বাক্ষর নিয়ে নেন চাচা এসকে সিনহা। পরে কীভাবে ওই হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তা তিনি জানেন না। তবে ওই যৌথ হিসাব থেকে ৭৮ লাখ টাকা তার (সংখজিত কুমার সিনহা) ব্যক্তি হিসাব সাভারস্থ ঢাকা ব্যাংক ইপিজেড শাখায় হস্তান্তরিত হয়েছিল মর্মে তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে জানতে পেরেছেন। এরপর এসকে সিনহার নির্দেশে সেখান থেকে ৫০ লাখ টাকা ঢাকা ব্যাংক উত্তরা শাখায় একটি হিসাবে এবং ১০ লাখ টাকা আরেকটি এফডিআর করা হয়। অবশিষ্ট ১৮ লাখ টাকা ইডিজেড শাখার হিসাবে জমা রাখা হয়। সব কিছুই তিনি চাচা এসকে সিনহার নির্দেশে করেছেন।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!