বাজি পোড়ানো বন্ধ করতে হলে নিতে হবে কয়েকটি পদক্ষেপ

সিদ্ধার্থ সিংহ
সিদ্ধার্থ সিংহ
4 মিনিটে পড়ুন

এই করোনা মহামারীতে আক্রান্তদের শ্বাসকষ্টজনিত কষ্ট লাঘব করার জন্য ভারত সরকার যে ভাবে রাজ্যবাসীর কাছে বাজি পোড়ানো বন্ধ করার আবেদন জানিয়ে অসুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে, তা শুধু প্রশংসারই যোগ্য নয়, মানবিকও বটে। কিন্তু শুধুমাত্র আবেদন-নিবেদন, নিষেধাজ্ঞা কিংবা ভয় দেখালেই আমজনতার এই বাজি পোড়ানো বন্ধ করা যাবে বলে আমার মনে হয় না।

বন্ধ করার জন্য সরকারকে এক্ষুনি কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। আর সেই পদক্ষেপ নিলেই, শুধু কালীপুজো বা এই মরসুমে যে ক’টা পুজো বা উৎসবে বাজি পোড়ানো হয় বা হতে পারে বলে অনুমান করা যাচ্ছে, সেই বাজি পোড়ানো অবশ্যই একেবারে বন্ধ করা যাবে এবং বাজি পোড়ানোর সম্ভাব্য দিনগুলোতে তা হলে আর প্রশাসনের তরফ থেকে কোনও নজরদারীও চালাতে হবে না। আর এগুলো করার জন্য প্রথমেই যেটা করতে হবে সেটা হল, যেখানে যত বাজি ইতিমধ্যেই মজুত আছে, আড়তদারদের কাছ থেকে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং যে সব জায়গায় বাজি তৈরি হয়, সেই কারখানাগুলোকে এক্ষুনি বন্ধ করে দিতে হবে। আর যাঁরা কাঁচামাল বিক্রি করেন অন্তত এই ক’টা দিন সেই সব জায়গাতে প্রশাসনের তরফ থেকে নজর রাখতে হবে। নজর রাখতে হবে, ভিন রাজ্য থেকে যাতে আমাদের এই রাজ্যে কোনও বাজি ঢুকতে না পারে। নজর রাখতে হবে, বাজির মূল ঘাঁটি পশ্চিমবঙ্গের বাউরিয়াতে যাতে কোনও বাজির চিহ্ন না থাকে।

আর এ সব করতে হলে প্রথমেই বরাদ্দ করতে হবে একটি আর্থিক প্যাকেজ। কারণ, যে সব শ্রমিক বাজি বানান, তাঁরা ক’টা টাকার জন্যেই বাজি বানান। যদি তাঁদের সেই টাকাটা হাতে তুলে দেওয়া যায়, তা হলে বাজি বানানো থেকে তাঁরা অবশ্যই বিরত থাকবেন বলে মনে হয়। সেই বিরত থাকাটাকে বাধ্যতামূলক করার জন্য তাঁদের যদি সতর্ক করে দেওয়া হয়— এর পরেও যদি তাঁরা বাজি বানান, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধরা পড়লে শুধু জেলই নয়, জরিমানাও লাগু করা হবে।

যাঁরা ছোটখাটো ব্যবসা করেন, যাঁরা ইতিমধ্যেই এই ব্যবসায় বেশ কিছু টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছেন, তাঁদেরও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা নিতে হবে। এর পরেও যদি কেউ বাজি ফাটান, তা হলে যে বহুতল বা পাড়ায় বাজি ফাটার শব্দ বা আলোর রোশনাই চোখে পড়বে, সেই বহুতল বা পাড়ার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করতে হবে।

কার্যকর করতে হবে, কেউ বাজি ফাটাচ্ছেন ধরা পড়লেই দলমত নির্বিশেষে তাঁকে যাতে তখনই গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি যাতে বেল না পান তার বন্দোবস্ত করা। একই সঙ্গে জরিমানাও করা দরকার বিপুল অঙ্কের টাকা।

এই কর্মযজ্ঞে অবশ্যই শামিল করা যেতে পারে স্থানীয় ক্লাব, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং আমজনতাকে। কালীপুজোর অন্তত বেশ কয়েক দিন আগেই তাঁদের নিয়ে আলোচনা করতে পারে লোকাল থানাগুলোও। না হলে সরকারের তরফ থেকে যত বার বাজি ফাটানো বা পোড়ানোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে, যেহেতু নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ চিরকালীন, তাই তাঁরা সেই বাজি দরকার হলে দ্বিগুণ, তিন‌ গুণ, এমনকী দশগুণ দাম দিয়েও কিনবেন এবং নিজেকে কেউকেটা প্রমাণ করার জন্য তাঁরা বাজি পোড়াবেনই।

সুতরাং একমাত্র উপায় হল, আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করে, খুব সুষ্ঠ এবং সঠিক ভাবে এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া। একমাত্র তা হলেই এই মরসুমে বাজি পোড়ানো বন্ধ করা যাবে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
২০২০ সালে 'সাহিত্য সম্রাট' উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। আনন্দবাজার পত্রিকার পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা সহ অসংখ্য পুরস্কার। এছাড়াও আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত তাঁর 'পঞ্চাশটি গল্প' গ্রন্থটির জন্য তাঁর নাম সম্প্রতি 'সৃজনী ভারত সাহিত্য পুরস্কার' প্রাপক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!