‘মহাশূন্যে জুরান’ পর্ব – দুই

সিদ্ধার্থ সিংহ
সিদ্ধার্থ সিংহ
13 মিনিটে পড়ুন

কিছু দিন আগে জুরানের জন্মদিনে তার বাবা তাকে দুটো বই উপহার দিয়েছিলেন। উনি সাধারণত প্রতিবার ওকে বই-ই দেন। আগে রাক্ষস-খোক্কস, রূপকথা, হাসি, মহাপুরুষদের জীবনী এনে দিতেন। জুরান যত বড় হয়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাল্টেছে বইয়ের ধরনও। না, এ বার আর বাংলা নয়, ইংরেজিতে সড়গড় হওয়ার জন্য ওর বাবা ওকে এনে দিয়েছেন ফ্রঙ্কস্কলির লেখা ‘বিহাইন্ড ফ্লাইং সসারস’ এবং রেমন্ড লেসলি আর জন অ্যাডাম স্কি-র যুগ্ম ভাবে লেখা ‘ফ্লাইং সসারস হ্যাভ ল্যান্ডেড’।
বই দুটি মন্ত্রমুগ্ধের মতো ও পড়েছে। আর সেটা থেকেই ও জেনেছে, এক সময় উড়ন্ত চাকি নিয়ে গোটা পৃথিবী জুড়ে খুব হইচই হয়েছিল। লোকেদের ধারণা হয়েছিল, অন্য কোনও গ্রহ থেকে অতি বুদ্ধিমান কোনও প্রাণী উড়ন্ত চাকি করে ঘুরতে ঘুরতে মাঝে মাঝেই পৃথিবীতে চলে আসে। কেউ কেউ অবশ্য বলেছিলেন, না না, ঘুরতে ঘুরতে নয়। এই গ্রহ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে আসে ওরা। কেউ কেউ আবার আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছিলেন, না, শুধু খোঁজখবর নিতে নয়, ওই ভিন্‌গ্রহবাসীরা আসলে এই পৃথিবীর মাটিতে তাদের উপনিবেশ গড়তে চায়।
আজ থেকে অনেক বছর আগে, ১৯৪৬ সালের অক্টোবর মাসে ‘ফ্লাইং সসারস হ্যাভ ল্যান্ডেড’ বইটির অন্যতম লেখক জন অ্যাডাম স্কি-ই নাকি প্রথম উড়ন্ত চাকি দেখেছিলেন। ওটা তখন মাউন্ট প্যালোমারের অবজারভেটরির ওপর চক্কর মারছিল। সঙ্গে সঙ্গে উনি ছুটে যান উড়ন্ত চাকি সম্পর্কে গবেষণা করার জন্য আগে থেকে ওত পেতে রাখা পৃথিবীর সব চেয়ে শক্তিশালী দূরবিনের কাছে। তার মধ্যে চোখ রাখতেই তিনি দেখতে পান সেই ফ্লাইং সসারকে।
১৯৪৭ সালে কেনেথ আরনল্ড নামের এক আমেরিকাবাসীও এই ধরনের একটি উড়ন্ত চাকিকে দেখেছিলেন। ভদ্রলোকের মোটর গাড়ির মস্ত বড় ব্যবসা। নিজস্ব বিমানও আছে। একদিন সেই বিমানে করেই কোম্পানির একটি জরুরি মিটিংয়ে অন্য একটি শহরে যাচ্ছিলেন তিনি।
আকাশ তখন পরিষ্কার। দূরে মাউন্ট বেনিয়ারের চূড়ায় তুষারের স্তূপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ ককপিট থেকে আকাশের দিকে চোখ যেতেই তিনি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। কোনও অলৌকিকতা বা ভূত-প্রেতে তিনি বিশ্বাস করতেন না। ভীষণ বাস্তববাদী মানুষ। ভাবুকতার কোনও স্থান ছিল না তাঁর জগতে। প্রতিটি মুহূর্ত তাঁর কাছে অত্যন্ত দামি। একদম সময় নষ্ট করেন না তিনি। তবু ও রকম একটা জিনিস দেখে চমকে উঠলেন। এত দিন ধরে তিনি আকাশে উড়ছেন, কই, এ রকম কোনও জিনিস তো এর আগে তিনি কখনও দেখেননি। মনে হচ্ছে, চায়ের কাপের প্লেটের মতো বিশাল বিশাল কয়েকখানা ডিশকে উপুড় করে কেউ বুঝি আকাশে ভাসিয়ে রেখেছে। সেগুলি বনবন করে ঘুরছে। ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটে যাচ্ছে। মাত্র অল্প কিছুক্ষণ। তার পরেই সেগুলি হুস করে আরও উঁচুতে উঠে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল।
পর দিন সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তিনি যখন সেই উড়ন্ত চাকির কথা বললেন, তাঁর কথা কেউ বিশ্বাস করলেন, কেউ করলেন না। কিন্তু বিজ্ঞানীদের মধ্যে শুরু হয়ে গেল তুমুল চাপানউতোর। অনেক স্বনামধন্য বিজ্ঞানী বললেন, এমনটা হতেই পারে। কিন্তু সেই বস্তুটা যে আদতে কী, সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তাই তাঁরা তার নাম দিলেন, আন আইডেনটিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট। সংক্ষেপে ইউ এফ ও কিংবা ফ্লাইং সসার। এ দেশীয়রা যার বাংলা নামকরণ করলেন— উড়ন্ত চাকি বা উড়ন্ত পিরিচ।
কেউ কেউ অবশ্য বললেন, ওটা কেনেথের দৃষ্টি বিভ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়। এ রকম কোনও অজানা বস্তু কখনও আকাশে ভাসতে পারে না। কিন্তু সেই সব তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীদের যাবতীয় ধ্যান-ধারণা, বিচার-বিশ্লেষণ একেবারে নস্যাৎ করে দিয়ে কেনটাকি রাজ্যের র‌্যাডিসন ভিল শহরের আকাশে ১৯৪৮ সালের ৭ জানুয়ারি আবার দেখা গেল ফ্লাইং সসার।
তখন সবেমাত্র দুপুর গড়িয়েছে। এক বন্ধুর সঙ্গে সামান্য ব্যাপার নিয়ে কথা কাটাকাটি হওয়ায় চব্বিশ বছরের তরুণী, এমিলির মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিছুই ভাল লাগছিল না তাঁর। তাই পার্কে এসে একটা বেঞ্চে একা-একা বসে ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন, চাকতির মতো কী একটা জিনিস চক্কর মারতে মারতে তাঁর দিকেই ধেয়ে আসছে। ভয় পেয়ে তিনি চিৎকার করে উঠলেন। রাস্তাঘাট তখন সুনসান। দুটো ছেলে সাইকেল চালিয়ে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। চিত্‌কার শুনে, তাঁরাও ওঁর মতো আকাশের দিতে তাকালেন। দেখলেন, একটা ফ্লাইং সসার ঘুরে বেড়াচ্ছে আকাশে। পড়ি কি মড়ি করে ছেলে দুটো ফুল স্পিডে সাইকেল চালিয়ে থানায় গিয়ে জানালেন ওটার কথা। পুলিশরাও ছুটে এলেন। দেখলেন, ছেলে দুটো মিথ্যে বলেননি। ততক্ষণে উড়ন্ত চাকি দেখার জন্য সেখানে ভিড় জমে গেছে। পুলিশরা চেয়েছিলেন, শক্তিশালী দূরবিন দিয়ে ব্যাপারটা ভাল করে দেখতে। কিন্তু দূরবিন আনার আগেই সেগুলি উধাও। ফলে নিরাপত্তার কারণে পুলিশেরা তড়িঘড়ি জরুরি বার্তা পাঠালেন নিকটবর্তী সামরিক ঘাঁটি— ফোর্ট নক্সে।
এই নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে বিশাল হইচই হল। তার ক’দিন পরেই কেনটাকি থেকে খানিক দূরে গডম্যান এয়ারবেসের একজন পর্যবেক্ষক রোজকার মতো আকাশের উপরে নজরদারি চালাচ্ছিলেন। হঠাৎ আকাশের অনেক গভীর থেকে অস্বাভাবিক একটা লাল আভাকে ছিটকে বেরিয়ে আসতে দেখে তিনি চমকে উঠলেন। সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করলেন বড়কর্তাকে। বড়কর্তা কালবিলম্ব না করে ক্যাপ্টেন ম্যানটেলকে নির্দেশ দিলেন পুরো ব্যাপারটা সরজমিনে দেখে আসতে। ক্যাপ্টেন উড়োজাহাজ নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে পাড়ি জমালেন আকাশে। প্রায় আঠারো হাজার ফুট উঁচুতে উঠে তিনি জানালেন, লাল আভাটা যার থেকে বেরোচ্ছে, ওটা আসলে ধাতু দিয়ে তৈরি অত্যাধুনিক একটা যান। আকারেও বিশাল বড়। আমার মনে হয়, এটা অন্য কোনও গ্রহ থেকে এসেছে। কারণ, আমি যত দূর জানি, এ রকম কোনও যান এখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে তৈরি হয়নি। ওটা এখন পাক খেতে খেতে উপরের দিকে উঠছে। আমিও ওটার পিছু পিছু যাচ্ছি। দেখে আসতে চাই, আসলে ওটা কী…
ব্যস। লাইন কেটে গেল। একটু বাদে ক্যাপ্টেন আবার যোগাযোগ করলেন। জানালেন, আমি এখন মাটি থেকে অন্তত কুড়ি হাজার ফুট উপরে… হয়তো আরও কিছু বলতেন। কিন্তু তার আগেই লাইনটা ফের কেটে গেল। তার পর তিনি আর কোনও যোগাযোগ করেননি। বিমানটিও ফিরে আসেনি।
মাঝে মাঝেই এই ভাবে আকাশের বুকে উড়ন্ত চাকির উদয় হয়, আবার মিলিয়েও যায়। লোকজন সেটাকে দেখতেও পায়। অথচ তাদের সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। অগত্যা সরকারি উদ্যোগে ইউ এস এয়ারফোর্সের টেকনিশিয়ানরা ১৯৪৮ সালের ১২ জানুয়ারি একটি দল গঠন করলেন। ঠিক করলেন, সত্যি সত্যিই ফ্লাইং সসার বা গ্রহান্তরের কোনও যান বলে আদৌ কিছু আছে কি না, তাঁরা তার রহস্য উদ্ঘাটন করবেন। সেই দলে যেমন ছিলেন নামকরা, দক্ষ এবং অভিজ্ঞ বৈমানিকেরা। তেমনি ছিলেন বেশ কয়েক জন জ্যোতির্বিজ্ঞানী আর জ্যোতির্পদার্থ বিজ্ঞানীও।
ওই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন লেফটেন্যান্ট জর্জ এফ নরম্যান। তিনি একদিন বিমান নিয়ে আকাশে উড়ছিলেন। হঠাৎ দেখলেন, আকাশের বুক চিরে একটি আলোর রেখা খুব দ্রুত গতিতে তাঁর দিকে ছুটে আসছে। যেন একটা জ্বলন্ত বর্শা। উনি আতঙ্কিত হলেন, ওটা তাঁর বিমানে আছড়ে পড়লে আর রক্ষে নেই। কিন্তু উনি সতর্ক হওয়ার আগেই ওটা তার গতিপথ ঝট করে পাল্টে নিল।
উনি ভেবেছিলেন, ওটা হয়তো খসে পড়া কোনও তারা কিংবা উল্কার কণা। কিন্তু ওটা যখন পাশ দিয়ে গেল, উনি নিঃসন্দেহ হলেন, ওটা আসলে একটা ফ্লাইং সসার। ফ্লাইং সসার নিয়েই তিনি গবেষণা করছেন। যাঁরা ফ্লাইং সসার দেখেছেন বলে দাবি করছেন, তাঁদের সঙ্গে দেখা করছেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তাঁদের বয়ান লিপিবদ্ধ করছেন। আর তাঁর চোখের সামনে দিয়ে আস্ত একটা ফ্লাইং সসার চলে যাবে, তিনি সেটা ছেড়ে দেবেন! এটা হতেই পারে না।
বিমানের মুখ ঘুরিয়ে ওটা থেকে ঠিকরে বেরোনো আলোর সরু রেখাটিকে তিনি অনুসরণ করতে লাগলেন। অনুসরণ করতে করতে মাটি থেকে প্রায় ১৪ হাজার ফুট উপরে উঠে গেলেন। উনি যত উঠছেন, ওটাও যেন তার চেয়ে কিঞ্চিৎ বেশি স্পিডে আরও উঁচুতে উঠে যাচ্ছে। সব চেয়ে বেশি স্পিড নিয়েও কিছুতেই তার কাছাকাছি ঘেঁষতে পারছেন না তিনি। মাঝপথে হুস করে চোখের নিমেষে কোথায় যেন উবে গেল সেটা। আর দেখা গেল না।
উড়ন্ত চাকি নিয়ে নানা লোকে নানা মন্তব্য করতে লাগলেন। ১৯৪৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর একজন দক্ষ জ্যোতির্বিজ্ঞানী আকাশে বেলুন-উড়িয়ে নিজে তো অবাক হলেনই, তার সঙ্গে সঙ্গে একদম নতুন একটি তথ্য দিয়ে সবাইকে চমকে দিলেন। তিনি পরিষ্কার ভাষায় বললেন, শুক্র গ্রহে বসবাসকারী অতি বুদ্ধিমান জীবেরাই উড়ন্ত চাকি করে পৃথিবীতে পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে। এখানকার সমস্ত খোঁজখবর নিচ্ছে। বলা যায় না, অদূর ভবিষ্যতে এরাই হয়তো পৃথিবীর বুকে রাজত্ব করবে। আমাদের দাসানুদাস করে রাখবে।
কিন্তু এ কথা কিছুতেই বিশ্বাস করলেন না, যিনি প্রথম ফ্লাইং সসার দেখেছিলেন, সেই জন অ্যাডাম স্কি। তিনি একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগেই ফ্লাইং সসার নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন। দিনের বেশির ভাগ সময় তো বটেই, মধ্যরাতে ছাদে উঠেও আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। যদি আবার ফ্লাইং সসার দেখা যায়! ১৯৫২ সালের ১৩ ডিসেম্বর দূরবিন দিয়ে আকাশ দেখছিলেন তিনি। আচমকা তাঁর চোখের সামনে ভেসে উঠল একটা তীক্ষ্ণ আলো। দেখতে দেখতে মুহূর্তের মধ্যে আলোটা হয়ে গেল একটা স্পষ্ট উড়ন্ত চাকি। মনে হল, মাত্র কয়েকশো ফুট দূরে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই সসারটা তার ছাদের উপর দিয়ে হুস করে উড়ে গেল। যাবার সময় হাতের মতো কিছু একটা বেরিয়ে কী যেন একটা তাঁর ছাদের উপরে টুক করে ফেলেও গেল।
কী ওটা? হাতে নিয়ে উনি দেখলেন, একটা ফিল্মের রোল। ডার্করুমে সেটা ডেভেলপ করে দেখা গেল, তাতে কোনও ছবি-টবি নেই। শুধুই কয়েকটি আঁকিবুঁকি। উনি বুঝতে পারলেন, ওদের ভাষায় ওরা কিছু লিখে পাঠিয়েছে। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও উনি সেটার পাঠোদ্ধার করতে পারলেন না।
এর আগে ১৯৫০-এর ২৭ এপ্রিল টিউবলিউয়ে এক বিখ্যাত বিমান কোম্পানির এক প্রবীণ চালক আকাশের বুক চিরে যেতে যেতে অদ্ভুত একটা লাল আলোর বিচ্ছুরণ দেখতে পেলেন। তাঁর মনে হল, বিরাট বড় একটা লাল আলোর বল যেন এক দিক থেকে আর এক দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। আবার ফিরে আসছে। তিনি তাঁর কো-পাইলট রবার্ট অ্যালিকেসকে ব্যাপারটা ভাল করে দেখতে বললেন। অ্যালিকেসও বুঝতে পারলেন না, ওটা কী! তাই সঙ্গে সঙ্গে শিকাগো কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চাইলেন, তাঁদের কাছাকাছি কোনও বিমান উড়ছে কি না, বা কোনও বিমান ভুলবশত তাঁদের বিমানের কাছাকাছি চলে এসেছে কি না।
কন্ট্রোল টাওয়ার জানাল, তাঁদের ত্রিসীমানার মধ্যে কোনও বিমান তো দূরের কথা, একটা পাখিও উড়ছে না। তাই ওটা কী, তা দেখার জন্য লাল বলটার পিছু নিলেন তাঁরা। কিন্তু পিছু নেওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই লাল আলোর বলটা মহাশূন্যে বিলীন হয়ে গেল। তার আগে অবশ্য হুমড়ি খেয়ে আতঙ্কগ্রস্ত প্রায় সমস্ত যাত্রীই বিমানের জানালা দিয়ে দেখে নিলেন সেই লাল বলটিকে। বিমান থেকে নেমে তাঁরা সবাই একবাক্যে বললেন, ওটা নিশ্চয়ই কোনও ফ্লাইং সসার ছিল।
একবার ডার্বিশায়ারের একটি পল্লিতে টহল দেওয়ার সময় দুজন পুলিশ অফিসার দেখেছিলেন, আকাশের বুকে একটা বিশাল বড় সিগার ঝুলছে। মুখের কাছে ধিকধিক করে জ্বলছে আগুন। সেই আগুন থেকে মাঝে মধ্যেই বিচিত্র বাহারের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছিটকে ছিটকে বেরোচ্ছে।
সিগার নয়, রয়্যাল এয়ারফোর্সের অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার এরিক কক্স গাড়ি ড্রাইভ করে হ্যাম্পশায়ারের ক্যামনাম থেকে পেলিং বিচে যাওয়ার সময় একটা-দুটো নয়, একসঙ্গে সাত-সাতটা আলোক পিণ্ডকে দেখেছিলেন আকাশে। সপ্তর্ষি মণ্ডলের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আলোক পিণ্ডগুলি নিজেদের অবস্থান এ দিক ও দিক করে কখনও ইংরাজির ‘ভি’ আবার কখনও ‘ক্রশ চিহ্ন’র আকার নিয়ে উড়তে উড়তে নিজেদের রং বদলাচ্ছিল। রাতের অন্ধকারে যখনই কোনও উড়ন্ত চাকি এই পৃথিবীতে আসে, তখনই নাকি দেখা যায় এই ধরনের আলোর কারিকুরি।
১৯৬৭ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি একটি দিনে ভোরের আলো ফোটার অনেক আগেই এক উড ফার্মের কর্মী ক্রিস্টোফার গারনা-সহ দুজন কনস্টেবল একসঙ্গে দেখেছিলেন লাল মতো একটা আলোক পিণ্ড। সেটা আকাশের এক দিক থেকে অন্য দিকে নাচতে নাচতে যাচ্ছিল। যেতে যেতে সেটার রং হলুদ হয়ে যাচ্ছিল। আর হলুদ হওয়ামাত্র তা থেকে ফুলঝুরির মতো ছোট ছোট আলোর ফুলকি ছিটকে ছিটকে বেরোচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আকাশের বুকে বুঝি আতসবাজির ভেল্কি লেগেছে। দেখতে দেখতে হঠাৎ সেটা সবুজ হয়ে গেল।
তখন লাল হত। হলুদ হত। সবুজ হত। আরও কী কী রং হত ওঁদের হয়তো সেটা দেখা হয়নি। কিন্তু এই চার তলার প্রকাণ্ড সাবেকি জানালা থেকে সামনের তিন তলার বাড়ির ছাদে, ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে জুরান যে আলোটাকে চায়ের কেটলির মতো দেখতে জলের ট্যাঙ্কের আড়াল থেকে উঁকি মারতে দেখছে, সেটার রং ভারী অদ্ভুত। কেমন যেন মায়াবী মায়াবী।
জুরানের হঠাৎ মনে হল, তা হলে কি আমেরিকা, ইংল্যান্ড, রাশিয়া, গ্রেট ব্রিটেন, প্যারিস ছেড়ে ভিন্‌গ্রহবাসীরা এখন ভারতে আসতে শুরু করেছে!

চলবে…

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
২০২০ সালে 'সাহিত্য সম্রাট' উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। আনন্দবাজার পত্রিকার পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা সহ অসংখ্য পুরস্কার। এছাড়াও আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত তাঁর 'পঞ্চাশটি গল্প' গ্রন্থটির জন্য তাঁর নাম সম্প্রতি 'সৃজনী ভারত সাহিত্য পুরস্কার' প্রাপক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!