‘মহাশূন্যে জুরান’ পর্ব – তিন

সিদ্ধার্থ সিংহ
সিদ্ধার্থ সিংহ
14 মিনিটে পড়ুন

জুরান অবাক হয়ে দেখল, আলোক পিণ্ডটা খুব ধীরে ধীরে গড়াতে গড়াতে ছাদের মাঝখানে এসে থমকে দাঁড়াল। তার পর হঠাৎ কেমন যেন কুয়াশা কুয়াশা হয়ে ধোঁয়ার একটা কুণ্ডলী হয়ে গেল। সেই কুণ্ডলী থেকে ধূপকাঠির ধোঁয়ার মতো একদম সরু একটা রেখা এঁকেবেঁকে উঠতে উঠতে মানুষের একটা অবয়বের রেখাচিত্র তৈরি করতে লাগল।
জুরান একেবারে থ’ হয়ে গেল। এ রকম আবার হয় নাকি! সে ভুল দেখছে না তো! নাকি চোখ তার সঙ্গে মশকরা করছে। মাঝে মাঝে তার এ রকম হয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আচমকা সে দেখতে পায়, রাবণের ছেলে মেঘনাথ ঝলমলে রাজপোশাক পরে পুষ্পরথে করে মেঘের আড়াল থেকে এক ধুন্ধুমার যুদ্ধ করছে। দেখতে পায়, এক-একটা মন্ত্রপূত তির ছিলা থেকে বেরিয়ে ছুটে যেতে যেতে কী ভাবে সাতটা, সতেরোটা, সাতাশটা, সাঁইত্রিশটা হয়ে যাচ্ছে। ঝাঁক বেঁধে বেঁধে ছুটে যাচ্ছে যুদ্ধ করতে থাকা শত্রুপক্ষের শত শত সৈনিকের দিকে।
আবার কখনও সখনও উল্টো দিক থেকে ছুটে আসা মন্ত্র-পড়া বাণের সঙ্গে ওই তিরের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটে যাচ্ছে মহা বিস্ফোরণ। তার বিন্দু বিন্দু স্ফুলিঙ্গ ছিটকে ছিটকে ছড়িয়ে পড়ছে মহাশূন্যে। সেগুলি হয়ে যাচ্ছে এক-একটা গ্রহ, নক্ষত্র, তারা। কেঁপে উঠছে পাহাড়। উথালপাথালি খাচ্ছে সমুদ্র। শুরু হয়ে যাচ্ছে ঝড়ঝঞ্ঝা, মহাপ্রলয়। দেখে মনে হয়, এ বার বুঝি পৃথিবীটা গেল!
এই তো দিন কতক আগে বাবার সঙ্গে তাদের বাড়ি থেকে খানিক দূরে একটা পার্কে গিয়েছিল ও। সেই পার্কে কলকাতা পুরসভা থেকে সাত দিন ধরে এক পুষ্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। পোস্টারে-পোস্টারে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল গোটা এলাকা। অটো করে হ্যান্ডবিল ছড়ানো হয়েছিল পথ-চলতি লোকেদের হাতে-হাতে। মাইকেও বারবার ঘোষণা করা হয়েছিল এই পুষ্প প্রদর্শনীর কথা। কিন্তু সর্বত্র ‘পুষ্প প্রদর্শনী’ বলা হলেও ওই প্রদর্শনীতে আনাজপাতি থেকে শুরু করে ফলমূলও খুব একটা কম ছিল না। তবে সেগুলি ছিল একটু ব্যতিক্রমী। বিভিন্ন অঞ্চলে ফলন প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হওয়া, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অতি যত্নে তৈরি করা চাষিদের এক-একটা চোখ ধাঁধানো সৃষ্টি।
একটা বিশাল চালকুমড়ো বাঁশের ঠেকনা দিয়ে দাঁড় করানো ছিল। এত বড় চালকুমড়ো জীবনে সে দেখেনি। মাপলে তার চেয়েও লম্বা হবে। ওটা দেখতে দেখতে হঠাৎ দেখে, তার পাশেই একটা মাখনসিম গাছ। দেখে তো সে একেবারে হাঁ। শুরুটা দেখা যাচ্ছে, কিন্তু শেষটা কোথায়! ও দেখার চেষ্টা করল। দেখল, লতানো গাছটা এঁকেবেঁকে এই টবের ফাঁক দিয়ে, ওই গাছের পিছন দিয়ে, এ দিক দিয়ে ও দিক দিয়ে কোথায় গিয়ে যে শেষ হয়েছে, দেখা যাচ্ছে না। ক’হাত লম্বা হবে কে জানে!
একটা বাতাবি লেবু ছিল ইয়া বড়। শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় জল ঢেলে তারকেশ্বর থেকে ফেরার পথে অত বড় বড় কুমড়ো দেখে, যারা শুধু খাওয়ার জন্য নয়, কেবলমাত্র আশপাশের লোকজনদের তাক লাগিয়ে দেবার জন্য কুড়ি কিলো-পঁচিশ কিলো ওজনের অমন এক-একটা কুমড়ো কাঁধে করে বয়ে আনে, একেবারে সে রকম।
একটা চন্দ্রমুখী আলু ছিল। এত বড় যে তার পক্ষে দু’হাত দিয়েও সেটা তোলা সম্ভব নয়। ষোলো কিলোর ওপর ওজন। একটা ক্যাপসিকাম ছিল একেবারে গাঢ় নীল রঙের। মনে হয়, কেউ বুঝি এক্ষুনি নীল রং লেপে দিয়ে গেছে। আর ফুলগুলি? এক-একটা গাঁদা ফুল যেন বড় মাপের এক-একটা বাঁধাকপি। জিনিয়া ফুলগুলির প্রতিটি পাপড়িই একেবারে কলাপাতার মতো ঢাউস-ঢাউস।
ওর বাবা দেখতে দেখতে এগিয়ে গিয়েছিলেন। ও ঠায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল। দেখল, সামনেই বনসাইয়ের মতো ছোট্ট একটা ঝাঁকড়া গাছ। সেই গাছে ছোট ছোট অসংখ্য ডাল। আর প্রত্যেকটা ডালের মাথাতেই এক থোকা করে জুঁই ফুল ফুটে আছে। ফুলের ভারে নুইয়ে পড়েছে ডালগুলি। প্রতিটি থোকার অগুনতি ফুলের প্রত্যেকটা ফুলই এক-একটা এক এক রঙের। একটা জুঁই আকাশি, তো একটা জুঁই টকটকে লাল। একটা জুঁই ক্রিম রঙের তো একটা জুঁই পুরো সবুজ।
জুরান বিস্মিত হয়ে দেখছিল। এ রকম ফুল এর আগে ও কখনও দেখেনি। হঠাৎ দেখে, ওই ছোট্ট ছোট্ট জুঁই ফুলগুলি আচমকা নড়েচড়ে উঠল। শুধু নড়াচড়াই নয়, তাদের ছোট্ট ছোট্ট পাপড়িগুলিকে ডানার মতো মেলে দিয়ে গাছটার ঝাঁকড়া মাথার চার পাশে ঘুরে ঘুরে উড়তে লাগল ওরা। ঠিক দেখছে তো সে! চোখ-টোখ কচলে ও ভাল করে দেখল, না। ওগুলো প্রজাপতি নয়। ওগুলো ওই গাছটারই রং-বেরঙের ফুল। উড়তে উড়তে সেই ফুলগুলি ফের আগের জায়গায় স্থির হয়ে বসতেই গাছের বাকি ফুলগুলি আগের ফুলগুলির মতোই ডানা মেলে দিল।
জুরানের মনে হল, পড়তে বসলে তার যেমন হয়, একটানা বসে থাকতে থাকতে পা ঝিনঝিন করে। মনে হয়, টুক করে এ দিক ও দিক থেকে একটু ঘুরে আসি। ঠিক তেমনি, একই ভাবে স্থির হয়ে গাছের ডালের মাথায় ঝুলে থাকতে থাকতে ওদেরও বুঝি হাঁফ ধরে গেছে। তাই পালা করে মাঝে মাঝেই উড়ে গিয়ে ওরা বোধহয় ওদের হাত-পায়ের খিলগুলি একটু ছাড়িয়ে নিচ্ছে।
কিন্তু ও যা দেখল, সেটা যদি ও কাউকে বলে, কেউ কি ওর কথা বিশ্বাস করবে! গাছ থেকে ফুলেরা উড়ে গিয়ে খানিকক্ষণ ঘুরে এসে আগের মতোই ফের ফুল হয়ে বসে পড়ে! নিশ্চয়ই কেউ বিশ্বাস করবে না। ভাববে, বানিয়ে বানিয়ে বলছি। আচ্ছা, দু’-একজনকে সাক্ষী রাখলে হয় না! যে-ই না এটা ওর মনে হয়েছে, অমনি অন্তত একজনকে সাক্ষী রাখার জন্য পাশ ফিরতেই ও অবাক হয়ে গেল। এ কী! কাকে ডেকে সে দেখাবে এই দৃশ্য! তার আশপাশে যে কেউই নেই। না, একটা বাচ্চাও না। অথচ অন্য গাছগুলোর কাছে ভিড় যেন উপছে পড়ছে। এটা কী করে হয়!
জুরান যখন এ সব ভাবছে, হঠাৎ তার নাকে ভেসে এল একটা ভারী সুন্দর গন্ধ। গন্ধটা তার চার পাশে ম ম করতে লাগল। না, এটা তো কোনও ফুলের গন্ধ না! কারও গায়ে দিয়ে আসা সেন্টের গন্ধও না! তা হলে এটা কীসের গন্ধ! কীসের! এ গন্ধ এর আগে তো সে কোনও দিন পায়নি!

চার তলার ঘুরঘুট্টি অন্ধকার ঘরের মধ্যে খোলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল ও। একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল সামনের বাড়ির তিন তলার ছাদের দিকে। সেই ছাদের উপরে খোলা আকাশের নীচে তখন ধোঁয়া হয়ে যাওয়া আলোক-পিণ্ডটা থেকে সরু সুতোর মতো একটা ধোঁয়ার রেখা এঁকেবেঁকে উঠে অবিকল মানুষের মতো একটা রেখাচিত্র তৈরি করছে। সে দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সেই গন্ধটাই ভেসে এল তার নাকে।
বাঃ, দারুণ তো গন্ধটা। কী সুন্দর! বুক ভরে সেটা নেওয়ার জন্য জুরান খুব জোরে শ্বাস নিতেই ও বাড়ির ছাদ থেকে আলোর তৈরি মানুষের রেখাচিত্রটা যেন হুস করে তাদের বিশাল জানালার সিকের ফাঁক গলে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ল।
যে জানালাটা বিক্রি হয়ে যাওয়া পূর্বপুরুষের ভিটে থেকে তার বাবা স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে প্রোমোটারের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে এসেছিলেন। অনেক কষ্ট-কসরত করে এই ফ্ল্যাটে লাগিয়েছিলেন। যে জানালা দিয়ে হু হু করে হাওয়া এসে ঘরের সব জিনিসপত্র প্রায় উড়িয়ে নিয়ে যায়। সেই হাওয়ায় ভেসে তার বাবা মাঝে মাঝেই পৌঁছে যান তাদের পূর্বপুরুষের সেই পাঁচমহলা বাড়িতে। ফিরে যান তাঁর ছেলেবেলায়। খুঁজে পান পুরনো সেই সব দিন। দেখা হয়ে যায় হারিয়ে যাওয়া ছোটবেলাকার সেই সব বন্ধুদের সঙ্গে।
তাদের ঘরের দরজার চেয়েও বড়, খড়খড়ি লাগানো সেই বিশাল জানালার পাল্লা দুটো খোলাই ছিল। সেই জানালায় চার আঙুল দূরে দূরে পর পর লোহার সিক লাগানো। নীচ থেকে একদম উপর পর্যন্ত। লাগানোর পরে সেগুলিকে কোনও দিন রং করা হয়েছিল কি না, বোঝা মুশকিল। মরচে পড়ে, চলটা-টলটা উঠে এখন কেমন যেন খরখরে হয়ে গেছে। মুঠো করে ধরলে উঠে থাকা ছুঁচোলো চলটাগুলো হাতের তালুতে গেঁথে যায়। তবুও সময় পেলেই ওটার সামনে এসে দাঁড়ান জুরানের বাবা। জুরানও। ওটার সামনে দাঁড়ালে দূর থেকে যে কোনও লোকেরই মনে হতে পারে, ওদের বুঝি কেউ কয়েদ করে রেখেছে।
সেই জানালা দিয়েই ও-বাড়ির ছাদ থেকে আলোর রেখাচিত্র দিয়ে আঁকা মানুষটা দুম করে ঢুকে পড়ল তার ঘরে। সে আসতেই ঘরের সমস্ত অন্ধকার ঘুচে গেল। আলোয় ঝলমল করে উঠল সব। তার গা থেকে এত আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে যে, তার দিকে ঠিক মতো তাকানোই যাচ্ছে না। দেখাই যাচ্ছে না তাকে। শুধু আলো আলো আর আলো। যে ভাবে ওখান থেকে সে ঝপ করে চলে এল, তাতে জুরানের মনে হল, ও নিশ্চয়ই কোনও ভেলকি জানে। ভেলকি না হলেও কোনও না-কোনও মন্ত্র জানে। যেমন গুপি গাইন বাঘা বাইনে ভূতের দেওয়া তিন বরের মধ্যে একটা ছিল জুতো। সেই জুতো পায়ে গলিয়ে যেখানে খুশি যেতে পারত গুপি আর বাঘা। সেই রকম কোনও জুতো বা ওই জাতীয় কোনও কিছু নিশ্চয়ই তার আছে, আর সে সব যদি না-ই থাকে, তা হলে অন্তত এক জোড়া ডানা তার অবশ্যই আছে। পাখি-টাখি ছাড়া, একমাত্র পক্ষিরাজ ঘোড়া আর পরিদেরই তো ডানা থাকে। এ যখন কোনও ঘোড়া-টোড়া নয়,তা হলে এ কি কোনও ছদ্মবেশী পরি!
হতেই পারে! সারা পৃথিবী যখন ঘুমে বিভোর হয়ে থাকে, তখন নাকি দল বেঁধে পরিরা ডানা মেলে দেয় আকাশে। ভেসে যেতে যেতে মনোরম কোনও পাহাড়ের কোল বা পাহাড়ি ঝর্না অথবা ঝকঝকে কোনও জলাশয় কিংবা ফুলে-ফুলে ঢাকা কোনও বাগান তাদের চোখে পড়লেই, তারা পৃথিবীতে নেমে আসে। নেমে আসে ফুলের মতো ফুটফুটে বাচ্চা দেখলেও। তাকে আদর করে আবার ভেসে যায় আকাশে। তা হলে কি এ তাকে কোনও ছোট্ট বাচ্চা ভেবেছে!
ভাবতেই পারে! কিছু কিছু শব্দ আছে, লোকভেদে বা অবস্থা অনুযায়ী সেগুলি পাল্টে যায়। যেমন ‘কিছু’। এটা ভারী অদ্ভুত একটা শব্দ। একজনের কাছে ‘কিছু’ মানে এক মুঠো। আবার আর একজনের কাছে সেই ‘কিছু’ মানেই— এক ধামা। এই একই ভাবে ‘সামান্য’ পথ মানে কারও কাছে খুব বেশি হলে দশ পা দূরে, তো কারও কাছে আবার বারো ক্রোশ পথও— এই তো এখানে। ঠিক তেমনি, কারও কাছে বাচ্চা মানে খুব বেশি হলে ছ’মাসের শিশু। আবার কারও কাছে দশ বছরের বালকও একরত্তি ছেলে। আর মায়ের কাছে তো রিটায়ার হয়ে যাওয়া বুড়ো খোকাও একেবারে দুধের বাচ্চা। লোক অনুযায়ী সব শব্দেরই তারতম্য ঘটে। তা হলে কি এখানেও সে রকম কিছু ঘটেছে! এই পরিটা তাকে বাচ্চা ঠাওরেছে!
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জুরানের মাথার মধ্যে ঝিলিক মেরে উঠল এই রকম হাজারখানেক ভাবনা। কিন্তু সত্যিটা যে কি, সেটা বুঝে ওঠার আগেই মানুষের আদল-মার্কা আলোর রেখাচিত্রটা শতরঞ্চির মতো টানটান হয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে র‌্যাপারের মতো মুড়ে ফেলল তাকে। তার পরেই সাঁ সাঁ শব্দ। জেট গতিতে ছুটতে লাগল একেবারে আকাশের দিকে। তাকে মুড়লেও তার মাথার দিকে আর পায়ের দিকের বাড়তি অংশটা বুঝি মোড়া হয়নি। তাই মাথার দিকের ওই জায়গা দিয়ে হু হু করে ঢুকতে লাগল শীতল বাতাস। মুহূর্তের মধ্যে তার মাথা আর কানের লতি-টলিগুলো অবশ হয়ে গেল। এতটাই অবশ, যেন পিন ফোটালেও তার আর লাগবে না। তা না লাগুক, খুব ভাল কথা। কিন্তু যে ভাবে মোড়কটা আকাশ ভেদ করে ছুটছে, উপর থেকে বাতাসের এই প্রবল চাপে মোড়কের নীচের খোলা জায়গাটা দিয়ে সে আবার পড়ে যাবে না তো! তা হলে তো একেবারে সাড়ে সর্বনাশ। কোথায় গিয়ে যে পড়বে, কে জানে!
এত জোরে যখন মোড়কের মধ্যে হাওয়া ঢুকছে, তার মানে তাকে নিয়ে এই মোড়কটা কোনও খোলা জায়গা দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু কোথায় যাচ্ছে, সে জানে না। তবে এটা বুঝতে পারছে, তাকে নিয়ে যখন যাচ্ছে, তখন কোথাও না-কোথাও নিয়ে গিয়ে তো তাকে ফেলবে। কিন্তু কোথায়!
তা ছাড়া, তাকে এ ভাবে নিয়ে যাওয়ার মানেই বা কী! তা হলে কি কেউ তাকে অপহরণ করল! কোন সিনেমা! এখন আর তার নাম মনে পড়ছে না। তবে তার বেশ মনে আছে, সেই সিনেমাটায় সে দেখেছিল, ভিন্‌গ্রহ থেকে এক দল অদ্ভুত-দর্শন প্রাণী পৃথিবীতে এসে পৃথিবীর নানান প্রান্ত থেকে ঠিক এ ভাবেই এক-একজনকে আগাপাছতলা মুড়ে কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়েছিল ওদের গ্রহে।
সেখানকার অত্যাধুনিক পরীক্ষাগারে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছিল, তাদের আই কিউ, বুদ্ধি, মানসিকতা, সহনশীলতা এবং বার বার যেটা যাচাই করেছিল, সেটা হল, পৃথিবীর মানুষ তাদের পক্ষে কতটা বিপজ্জনক।
এই ভাবে গিনিপিগের মতো ব্যবহার করে, যেখান থেকে যাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, ঠিক সেখানেই রেখে দিয়ে গিয়েছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরে। তার আগে অবশ্য নিয়ে যাওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগে থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার কয়েক মুহূর্ত পরে পর্যন্ত সমস্ত ঘটনাটাই ডিলিট করে দিয়েছিল তাদের মস্তিস্ক থেকে।
তবে কি সে রকমই কোনও ভিন্‌গ্রহবাসী তাকে কিডন্যাপ করল! কিন্তু এত জ্ঞানী-গুণী, বিজ্ঞানী, বুদ্ধিমান মানুষ থাকতে ওরা হঠাৎ করে তাকেই বা অপহরণের জন্য বেছে নিল কেন! নাকি বাছাবাছির কোনও বালাই নেই। জানালার সামনে একা-একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, যেতে যেতে হাতের কাছে পেয়েছে বলে, তাকে তুলে নিয়েছে! কে জানে!
এই রকম একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েও মায়ের জন্য মনটা বড় হাহাকার করে উঠল জুরানের। সকালে উঠে তাকে বিছানায় না দেখলে তার মা যে পাগল হয়ে যাবে। তা হলে! কী করবে সে! কী করবে!

চলবে…

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
২০২০ সালে 'সাহিত্য সম্রাট' উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। আনন্দবাজার পত্রিকার পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা সহ অসংখ্য পুরস্কার। এছাড়াও আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত তাঁর 'পঞ্চাশটি গল্প' গ্রন্থটির জন্য তাঁর নাম সম্প্রতি 'সৃজনী ভারত সাহিত্য পুরস্কার' প্রাপক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

একটি অ্যাকাউন্ট নেই? নিবন্ধন করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!