বাংলাদেশে ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, খাট, এলএসডির পর ম্যাজিক মাশরুম’ নামের আরও একটি নতুন মাদকের সন্ধান পাওয়া গেছে বাংলাদেশে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘ম্যাজিক মাশরুম’ নামের মাদক ও দুই বোতল বিদেশি মদ সহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেফতার দুজন হলেন- নাগিব হাসান অর্নব (২৫) ও তাইফুর রশিদ জাহিদ (২৪)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মাদক ম্যাজিক মাশরুমের ৫টি বার। প্রত্যেক বারে রয়েছে ২৪টা করে স্লাইড। প্রতিটি বারে ম্যাজিক মাশরুমের পরিমাণ ২৫০০ মিলিগ্রাম।
র্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক (সহকারী পুলিশ সুপার) আ ন ম ইমরান হোসেন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানিয়েছে, পাউডার, ক্যাপসুল হিসেবেও পাওয়া যায় এ মাদক। এটি ব্যবহারের পর সেবনকারীর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এটি সেবনের পর ছাদ থেকে লাফিয়েও পড়তে পারেন কেউ। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়া যুবকদের মধ্যে কয়েকজন দেশে এ মাদক নিয়ে আসছেন।
কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১০ এর একটি বিশেষ দল হাতিরঝিল এলাকা থেকে দুই যুবককে গ্রেফতার করে।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন জানিয়েছেন, নাগিব হাসান অর্ণব বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তাইফুর রশিদ জাহিদ তার সহপাঠী ছিলেন। ২০১৪ সালে লেখাপড়া করতে অর্ণব ক্যানাডায় যান। লেখাপড়া শেষ করে সেখানেই থেকে যান তিনি। তাইফুর রশিদ জাহিদ মাদকাসক্ত ছিলেন এবং ২০১৯ সালে এলএসডি, ডিএমটিসহ বিভিন্ন ধরনের সাইকেডেলিক ড্রাগ নিয়মিত সেবন ও বিক্রি করা শুরু করেন তিনি। সাইকেডেলিক ড্রাগ সম্পর্কে তার আগ্রহ সৃষ্টি হলে ইন্টারনেটে এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন। এরপর জাহিদ বাংলাদেশে জন্মানো বিভিন্ন মাশরুমের মধ্যে সাইকেডেলিক বা ম্যাজিক মাশরুম আছে কি না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। ডার্ক সাইটে ম্যাজিক মাশরুমের খোঁজ পেয়েও যান তিনি। এরপর বিদেশে অবস্থানরত তার বন্ধু ও পরিচিতদের ‘ম্যাজিক মাশরুম’ বাংলাদেশে নিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি। জাহিদের এমন একটি প্রস্তাবে রাজি হন ক্যানাডায় অবস্থানরত অর্ণব। বন্ধুর কথা মোতাবেক চলতি বছরের মে মাসে ম্যাজিক মাশরুমের বড় একটি চালান নিয়ে বাংলাদেশে আসেন অর্ণব।
তিনি আরও জানান, এই মাদকের প্রত্যেকটি বারে থাকে ২৪টি করে স্লাইড। একেকটি বার বাংলাদেশে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। বিট কয়েন ,পেপলসহ অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে এ মাদক কেনাবেচা হয়। কখনো কারবারি নিজেই চকলেটের আড়ালে এই ম্যাজিক মাশরুম দেশে আনছেন। আবার কখনও যাত্রীর লাগেজের মাধ্যমেও এই মাদক দেশে আমদানি করা হচ্ছে। নতুন এই মাদকের দাম দেশে বেশি, কিন্তু বিদেশে কম। এর আমদানিতে খরচও কম। আর এটি বিক্রি লাভজনক। এসব কারণে এ মাদকের ব্যবহার বাড়ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কমান্ডার মঈন আরও জানান এটি সেবন করার পর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জাহিদ অত্যন্ত বীভৎসভাবে নিজেই নিজের হাতের বিভিন্ন অংশ ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলেন। এই মাদক সেবনে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়, আট থেকে দশ ঘণ্টা পর্যন্ত তা থাকে।
এ মাদক সেবনের ফলে সেবনকারীর মধ্যে হ্যালোসিনেশন তৈরি হয়। বিভিন্ন খাবারে কেক ও চকলেট সাথে মিশ্রিত করে এটি সেবন করা হয়।