বরিশালে একদিনে আবারো সর্বোচ্চ ৩৪৩ জনের শনাক্ত

বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশাল প্রতিনিধি
5 মিনিটে পড়ুন

বরিশাল বিভাগে বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় এক দিনে সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এই সময়ে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সম্প্রতি করোনায় আক্রান ও মৃত্যুর সংখ্যা এবং চিকিৎসকের ও চিকিৎসা কর্মীর শূণ্য পদের বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগেরও সৃষ্টি হয়েছে। কারণ হাসপাতালগুলোতে করোনার উপসর্গ ও আক্রাšত হয়ে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে জনবল ও চিকিৎসকসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিভাগের একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড চিকিৎসা কেন্দ্র বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শোবচিম) হাসপাতালের টেকনোলজিষ্ট পদ ও জনবল প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকায়
করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে একদল স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে।
তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার হাজার শয্যার এ হাসপাতালটি চলছে ৫ শত শয্যার অনুকুলের জনবল দিয়ে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে নতুন করে ৩৪৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর আগের দিন ২৪ ঘণ্টায় মোট আক্রাšেতর সংখ্যা ছিল ১৬০। আর সর্বশেষ আক্রাšেতর সংখ্যা নিয়ে বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৮হাজার ৬৩৭ জন। তবে মোট আক্রান্ত ১৮ হাজার ৬৩৭ জনের মধ্যে এখন পর্যšত সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ১৮১ জন।

এছাড়া একই সময়ে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসাপাতালের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ২ জনের এবং ঝালকাঠি জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

এ নিয়ে বরিশাল বিভাগে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩১৫ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।

আক্রান্ত সংখ্যায় বরিশাল জেলায় নতুন সর্বোচ্চ শনাক্ত ১২১ জন নিয়ে মোট ৮ হাজার ১৯৫ জন, পটুয়াখালী জেলায় নতুন ২৭ জন নিয়ে মোট ২৫৪০ জন, ভোলা জেলায় নতুন ১৫ জন সহ মোট ২০৮৭ জন, পিরোজপুর জেলায় নতুন ৮২ জন নিয়ে মোট ২৪১৬ জন, বরগুনা জেলায় নতুন ২২ জন নিয়ে মোট ১৪৯২ জন এবং ঝালকাঠি জেলায় নতুন ৭৬ জন শনাক্ত নিয়ে মোট আক্রান্ত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯০৭ জন।

এদিকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসাপাতালের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে দুইজনের এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ নিয়ে শুধুমাত্র শেবাচিম হাসপাতালেই করোনায় আক্রাšত হয়ে ২১৫ জন এবং আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ৫৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা ৫৪৩ জনের মধ্যে ১১ জনের কোভিড টেস্টের রিপোর্ট এখনো হাতে পাওয়া যায়নি।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিচালকের তথ্য সংরক্ষক জাকারিয়া খান স্বপন জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার) সকাল পর্যšত শেবাচিমের করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৩৮ জন ও করোনা ওয়ার্ডে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন। করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে এখন ২১০ জন রোগী চিকিৎসাধীন।

এদের মধ্যে ৪৫ জনের করোনা পজেটিভ এবং ১৬৫ জন আইসোলেশনে রয়েছেন। আরটি পিসিআর ল্যাবে মোট ১৮৮ জন করোনা পরীক্ষা করান। যারমধ্যে ৫৯.০৪ শতাংশ পজেটিভ শনাক্তের হার।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে বরিশালে বিভাগের সরকারী হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার ৯৮ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও, সেখানে পঞ্চাশ শতাংশ অর্থাৎ সাড়ে ৫ শতের কিছুবেশি চিকিৎসকের পদ শূণ্য রয়েছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গোটা বরিশালে করোনার রোগীদের জন্য ৫ শতাধিক বেড থাকলেও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ২২টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে।

এছাড়া শেবাচিমের সাধারণ আইসিইউ ওয়ার্ডে রয়েছে আরো ১০ টির মতো বেড।

এছাড়া ভোলা সদর হাসপাতালে তিনটি এবং পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে করোনাকালীন সময়ে পাঁচটি আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হয়েছে।
রোগীর চাপ বাড়লে সময় ও ক্ষেত্র বিশেষে এগুলোও অপ্রতুল হয়ে দাড়ায়।

এছাড়া বরিশাল ও ভোলায় দুটি আরটি-পিসিআর ল্যাব থাকলেও তার ধারণ ক্ষমতার বেশি নমুনা সংগ্রহ হওয়ায় প্রতিদিন পরীক্ষার জন্য দেড় থেকে ৩ শত নমুনা ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ফলাফল এবং চিকিৎসা পেতেও বিলম্ব হচ্ছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে,৬টি জেলা সদর হাসপাতাল ও ৪২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মিলিয়ে বরিশাল বিভাগের সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৪৭। কিন্তু এসব
হাসপাতালের ৩৯টিতেই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা নেই। আর যাদের রয়েছে তাদের মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে বড় আকারে অক্সিজেন সংরক্ষনের ব্যবস্থা রয়েছে।
বাকি জেলা হাসপাতালগুলোর যাদের অক্সিজেন সংরক্ষনের ক্ষমতা আছে, তাদের মেনিফোল্ড পদ্ধতির অক্সিজেন ট্যাংকারগুলোর ধারণক্ষমতা মাত্র ৩ হাজার ৪২০ লিটার করে।

এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে গৌরনদী, দুমকি এবং মির্জাগঞ্জে রয়েছে আরো ছোট আকারের মেনিফোল্ড অক্সিজেন রিজার্ভার।তবে এসব যাদের রিজার্ভার নেই তাদের রোগীদের জন্য দেড়হাজারের অধিক সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভর্তি করে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সেই সাথে বিভাগে ৭৫ টি হাই ফ্লো নেজাল ক্যানুলা রয়েছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক র্কাযালয়ের সহকারী পরিচালক ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল জানান,পর্যায়ক্রমে বিভাগের সবকটি হাসপাতালেই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে কয়েকটি উপজেলায় তা করা হয়েছে।

তারমতে গত দেড় বছরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বরিশালে স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তিনি এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানান।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!