এক স্যুটকেস পাণ্ডুলিপি

সিদ্ধার্থ সিংহ
সিদ্ধার্থ সিংহ
3 মিনিটে পড়ুন
ছবি: সংগৃহীত

জার্মানির লুবেক শহরের বিখ্যাত মান পরিবারের টমাস যখন রোম থেকে মিউনিখে ফিরে এলেন, তখন মাঝারি সাইজের একটি সুটকেস নিয়ে প্রায় সব সময়ই তাঁকে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল। এতে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন, আরও অবাক হলেন যখন সবাই জানতে পারলেন যে, ওই স্যুটকেসে কোনও জামা কাপড় নয়, রয়েছে কাগজের বিশাল একটা বান্ডিল। সেটা‌ এতটাই মোটা যে, স্যুটকেসটা আটকাতে গেলে বেশ‌ বেগ পেতে হয়। পরে জানা গেল ওটা আসলে একটি পাণ্ডুলিপি।

এত মোটা পাণ্ডুলিপি? আয়তন নিয়ে যখনই কেউ কিছু বলতে শুরু করতেন, তখনই আত্মরক্ষার জন্য টমাস বেশ একটু তৈরি হয়েই বলতেন, ‘খুব বেশি মনে হচ্ছে কি? কাগজের এক পিঠে লেখা তো! তাও বড় বড় অক্ষরে। মাত্র আঠেরোশো‌ সত্তরখানা স্লিপ।’ তারও পরে টমাস একটু ইনিয়ে-বিনিয়ে বোঝাতে চাইতেন যে, তাঁর লেখা প্রথম বই ‘লিটলহার ফ্রিডেমান’ বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় বার্লিনের যে প্রকাশক তাঁকে লেখার জন্য বারবার করে তাগাদা দিচ্ছিলেন, তাঁদের জন্যই তিনি এটা লিখেছেন।

কিন্তু লেখা তৈরি হলেও, ক্ষুদে ক্ষুদে হস্তাক্ষরে লেখা ওই বিশাল‌ পাণ্ডুলিপিটা ছাপা হলে যে বিপুল পৃষ্ঠা সংখ্যা দাঁড়াবে, তার কথা ভেবেই প্রকাশক নড়েচড়ে বসলেন। লেখককে বললেন, পাণ্ডুলিপিটার অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ কমিয়ে দিতে হবে।‌ না হলে আমার পক্ষে এই বই করা সম্ভব নয়।

b 1 এক স্যুটকেস পাণ্ডুলিপি
ছবি: সংগৃহীত

লেখক বেঁকে বসলেন। প্রকাশকও। অবশেষে এই নিয়ে লেখক আর প্রকাশকের মধ্যে অনেক বাগবিতণ্ডার পর শেষ পর্যন্ত একটা ছাত্রও বাদ না দিয়ে, পুরো অ্যান্টিক কাগজে মোটা মোটা দুটো খণ্ডে প্রকাশক বের করলেন লেখকের দ্বিতীয় উপন্যাস— ‘বাডেন ব্রুকস’।

এটা বেরোবার সঙ্গে সঙ্গে সমালোচকেরা বইয়ের আয়তন দেখেই ভীষণ চটে গেলেন। এত বড় বইয়ের পুরোটা পড়ে তার পর সমালোচনা করতে হবে! ক্রেতারাও চটে গেলেন‌ দাম শুনে। কারণ, নেহাত অনিচ্ছায় ছাপা এই বইয়ের একটাও কপি বিক্রি হবে কি না আশঙ্কা প্রকাশ করে, প্রকাশক এমন দাম করেছিলেন, যাতে কোনও রকমে একটা বই বিক্রি হলেই অন্তত তিনটে বইয়ের খরচ উঠে আসে। লাভের আশা তো দূরের কথা, পনেরো কি বিশ বছরেও এই খরচটা আদৌ উঠবে কি না তা নিয়ে প্রকাশকের যথেষ্ট সংশয় ছিল।

কিন্তু দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ দুঁদে প্রকাশকের সমস্ত হিসেব-নিকেশ ভুল প্রমাণিত করে, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই‌ তিন হাজার কপির প্রথম মুদ্রণ নিঃশেষিত হয়ে গেল।

তার পরে সেই বইটির কতগুলো সংস্করণ যে বেরিয়েছে এবং কতগুলো ভাষায় যে অনূদিত হয়েছে, তার আর কোনও হিসেব নেই।

এই হচ্ছেন ১৮৭৫ সালের ৬ জুন জন্মগ্রহণ করা দুনিয়া কাঁপানো লেখক— টমাস মান। যিনি ১৮৫৫ সালের ১২ই আগস্ট সুইজারল্যান্ডের জুরিখ‌ থেকে এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চিরদিনের জন্য চলে যান। যিনি শুধু লেখালিখির জন্যই ১৯২৯ সালে পেয়েছিলেন সাহিত্যের সেরা পুরস্কার নোবেল প্রাইজ।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
২০২০ সালে 'সাহিত্য সম্রাট' উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। আনন্দবাজার পত্রিকার পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা সহ অসংখ্য পুরস্কার। এছাড়াও আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত তাঁর 'পঞ্চাশটি গল্প' গ্রন্থটির জন্য তাঁর নাম সম্প্রতি 'সৃজনী ভারত সাহিত্য পুরস্কার' প্রাপক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!