রঙচঙে দাম্পত্য
‘কিরে অমরদা কেমন আছেন?’ মিমিকে ফোনে রীতা জিজ্ঞাসা করল। অমল রায় একজন চাইল্ড স্পেশালিস্ট। মিমির স্বামী। মিমি আর রীতার প্রায় দুই দশকের বন্ধুত্ব। আগে ওরা একই ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকত। সেই সূত্রে দুটি পরিবারের মধ্যেই খুব ভালো যোগাযোগ ছিল। মিমির স্বামী অমরদা আর ছেলে রোহনের সঙ্গেও ওর খুব ভালো সম্পর্ক। পরে মিমিরা অন্য জায়গায় ফ্ল্যাট কিনে চলে যায় কিন্তু ওদের সেই বন্ধুত্ব আজও অটুট আছে এবং খুবই অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। হঠাৎ একজন কমন ফ্রেন্ড এর মাধ্যমে রীতা খবর পেল যে অমরদার করোনা হয়েছে।
মিমি বলে ‘রীতা কি আর বলব, কত সাবধানে ছিল; দেখ তবু হয়ে গেল। সেদিন আমাদের ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ শেষ হলো আর তার চার দিন পরেই এই অবস্থা।
রীতা বলে ‘কি আর বলবো বল এই অসুখটা তো সম্পূর্ণই আমাদের অচেনা। এখন দাদা কেমন আছে? এমনই সময় লকডাউন চলছে, তোর কাছে যে যাবো তারও উপায় নেই। এই অসুখে কেউ কারোর বাড়ি যায় না।’
![রঙচঙে দাম্পত্য 38 রঙচঙে দাম্পত্য](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/03/6600D105-F9BE-4832-AFB8-C2C5A5F2BAC6-1024x1024.jpeg?v=1678042072)
মিমি বলে’ এখন অনেকটা ভালো আছে ।কাল বিকেলে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে কিন্তু আইসিইউ থেকে জেনারেল বেডে এখনো দেয়নি।’
‘কে দেখাশোনা করছে অমরদার? তুই তো নিশ্চয়ই যেতে পারছিস না।’ রীতা জানতে চায় ।
মিমি বলে ‘আমার ভাগ্নে ডাক্তার। ওই মামার সবকিছু দেখাশোনা করছে। আমায় ফোনে ফোনে খবর দিচ্ছে। এই ভাবেই আছি ঠাকুরকে স্মরণ করে।’
রীতা বলে ‘আমিও প্রার্থনা করছি। তবে অমরদা যেহেতু ডাক্তার উনি ত কিছু সুবিধা পাবেন। সাধারণ মানুষরা তো অথৈ জলে এই অবস্থায়।’
মিমি তুই কেমন আছিস? তুই টেস্ট করিয়েছিস?’ রীতা উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করে।
মিমি বলে ‘ আমি ভালোই আছি, ভাগ্নে আমাকে অনেক ওষুধ পাঠিয়ে দিয়েছে সেইসব খাচ্ছি আর তাছাড়া আমরা তো এক সাথে শুতাম না। ও বড় ঘরটাতে শুতো; আর আমি এসি চালিয়ে পাশের ঘরটায় শুতাম।’
কথাটা শুনে রীতা একটু অপ্রতিভ হয়ে যায়। একটু চুপ থেকে গলায় মজার সুরে নিয়ে বলে ‘তোর সেই শুচিবাইগিরি আর গেল না সারা গরমকাল আলাদা শুয়ে শীতকালে কি দুজনে এক লেপের তলায় ঘুমাস?’
![রঙচঙে দাম্পত্য 39 রঙচঙে দাম্পত্য](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/03/622D65F9-5392-42DB-A3AD-42F63182F771-1024x1024.jpeg?v=1678042485)
মিমি এক মিনিটও সময় না নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে ‘না রে না, শীতকালেও আমি আলাদা ঘরে শুই। এতো অনেক দিনই হয়ে গেল। এখন একা একা ফাঁকা ফাঁকা শুতেই ভালো লাগে।’
মিমির কথা শুনে ওর ঝট করে মনে পড়ে যায় মামাতো ননদ অনিতার কথা। কিছুদিন আগে অনিতা ফোনে জানায় ওর অ্যাডভোকেট স্বামী ওদের ফ্ল্যাটেরই চারতলায় একটা নতুন ফ্ল্যাট কিনেছে। স্টাডি আর চেম্বার হিসেবে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। ওখানে নিজের জন্য একটা বেডরুম ও রেখেছে। প্রায় দিনই রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে ওখানেই শুয়ে পড়ে।
![রঙচঙে দাম্পত্য 40 রঙচঙে দাম্পত্য](http://www.samoyiki.com/wp-content/uploads/2023/03/4D1F95F0-496D-4DB9-894E-7B0E7FF02CAE-1024x1024.jpeg?v=1678042122)
অনিতা মেয়েকে নিয়ে তিনতলাতে থাকে।
গলায় একটু জোর এনে রীতা মিমিকে বলে ‘রাত্তিরে একসাথে না শুলেও,সারাদিন তো দুজনে একসঙ্গেই থাকতিস, একটা টেস্ট করিয়ে নেওয়া বোধহয় ভালো।’
‘ঠিক আছে সাবধানে থাকিস,পরে আবার খবর নেব।’ রীতা দ্রুত ফোনটা কেটে দেয়।
প্রায় তিন বছর হল শেখর নেই আর একমাত্র ছেলে পাপাই সেও পড়াশোনার জন্য বাইরে থাকে। তিন রুমের ফ্ল্যাটে রীতা একাই থাকে। প্রথম প্রথম ভীষণ একা লাগতো বিশেষ করে রাতে। এতো বড় বিছানায় ভীষণ অস্বস্তি হতো, মনে হতো এমন একটা মানুষ নেই যার বুকে একটু স্বস্তিতে মাথা রাখা যায়, নিজের আবেগে আনন্দে একটু জড়িয়ে ধরা যায়। ওর মনে হয় জীবনের একটা সময় স্বামী ও স্ত্রী পরস্পরের আশ্রয় হয়ে ওঠে আর সেখানে রাতের নিবিড় সান্নিধ্য একটি বিশেষ ভূমিকা নেয়।
আজ মিমি বা কিছুদিন আগে অনিতার কথা শুনে এখন একটা প্রশ্ন মনে ধাক্কা দেয় যে হয়তো এরকম আরো অনেকেই আছেন তাদের কাছে কি দাম্পত্য শুধু নিরাপত্তার লোভে অর্থহীন রঙচঙে অভিনয়?