রঙচঙে দাম্পত্য

রঞ্জনা রায়
রঞ্জনা রায়
4 মিনিটে পড়ুন

রঙচঙে দাম্পত্য

‘কিরে অমরদা কেমন আছেন?’ মিমিকে ফোনে রীতা জিজ্ঞাসা করল। অমল রায় একজন চাইল্ড স্পেশালিস্ট। মিমির স্বামী। মিমি আর রীতার প্রায় দুই দশকের বন্ধুত্ব। আগে ওরা একই ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকত। সেই সূত্রে দুটি পরিবারের মধ্যেই খুব ভালো যোগাযোগ ছিল। মিমির স্বামী অমরদা আর ছেলে রোহনের সঙ্গেও ওর খুব ভালো সম্পর্ক। পরে মিমিরা অন্য জায়গায় ফ্ল্যাট কিনে চলে যায় কিন্তু ওদের সেই বন্ধুত্ব আজও অটুট আছে এবং খুবই অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। হঠাৎ একজন কমন ফ্রেন্ড এর মাধ্যমে রীতা খবর পেল যে অমরদার করোনা হয়েছে।

মিমি বলে ‘রীতা কি আর বলব, কত সাবধানে ছিল; দেখ তবু হয়ে গেল। সেদিন আমাদের ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ শেষ হলো আর তার চার দিন পরেই এই অবস্থা।
রীতা বলে ‘কি আর বলবো বল এই অসুখটা তো সম্পূর্ণই আমাদের অচেনা। এখন দাদা কেমন আছে? এমনই সময় লকডাউন চলছে, তোর কাছে যে যাবো তারও উপায় নেই। এই অসুখে কেউ কারোর বাড়ি যায় না।’

রঙচঙে দাম্পত্য
রঙচঙে দাম্পত্য

মিমি বলে’ এখন অনেকটা ভালো আছে ।কাল বিকেলে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে কিন্তু আইসিইউ থেকে জেনারেল বেডে এখনো দেয়নি।’
‘কে দেখাশোনা করছে অমরদার? তুই তো নিশ্চয়ই যেতে পারছিস না।’ রীতা জানতে চায় ।
মিমি বলে ‘আমার ভাগ্নে ডাক্তার। ওই মামার সবকিছু দেখাশোনা করছে। আমায় ফোনে ফোনে খবর দিচ্ছে। এই ভাবেই আছি ঠাকুরকে স্মরণ করে।’
রীতা বলে ‘আমিও প্রার্থনা করছি। তবে অমরদা যেহেতু ডাক্তার উনি ত কিছু সুবিধা পাবেন। সাধারণ মানুষরা তো অথৈ জলে এই অবস্থায়।’

মিমি তুই কেমন আছিস? তুই টেস্ট করিয়েছিস?’ রীতা উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করে।
মিমি বলে ‘ আমি ভালোই আছি, ভাগ্নে আমাকে অনেক ওষুধ পাঠিয়ে দিয়েছে সেইসব খাচ্ছি আর তাছাড়া আমরা তো এক সাথে শুতাম না। ও বড় ঘরটাতে শুতো; আর আমি এসি চালিয়ে পাশের ঘরটায় শুতাম।’

কথাটা শুনে রীতা একটু অপ্রতিভ হয়ে যায়। একটু চুপ থেকে গলায় মজার সুরে নিয়ে বলে ‘তোর সেই শুচিবাইগিরি আর গেল না সারা গরমকাল আলাদা শুয়ে শীতকালে কি দুজনে এক লেপের তলায় ঘুমাস?’

রঙচঙে দাম্পত্য
রঙচঙে দাম্পত্য

মিমি এক মিনিটও সময় না নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে ‘না রে না, শীতকালেও আমি আলাদা ঘরে শুই। এতো অনেক দিনই হয়ে গেল। এখন একা একা ফাঁকা ফাঁকা শুতেই ভালো লাগে।’
মিমির কথা শুনে ওর ঝট করে মনে পড়ে যায় মামাতো ননদ অনিতার কথা। কিছুদিন আগে অনিতা ফোনে জানায় ওর অ্যাডভোকেট স্বামী ওদের ফ্ল্যাটেরই চারতলায় একটা নতুন ফ্ল্যাট কিনেছে। স্টাডি আর চেম্বার হিসেবে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। ওখানে নিজের জন্য একটা বেডরুম ও রেখেছে। প্রায় দিনই রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে ওখানেই শুয়ে পড়ে।

রঙচঙে দাম্পত্য
রঙচঙে দাম্পত্য

অনিতা মেয়েকে নিয়ে তিনতলাতে থাকে।
গলায় একটু জোর এনে রীতা মিমিকে বলে ‘রাত্তিরে একসাথে না শুলেও,সারাদিন তো দুজনে একসঙ্গেই থাকতিস, একটা টেস্ট করিয়ে নেওয়া বোধহয় ভালো।’
‘ঠিক আছে সাবধানে থাকিস,পরে আবার খবর নেব।’ রীতা দ্রুত ফোনটা কেটে দেয়।

প্রায় তিন বছর হল শেখর নেই আর একমাত্র ছেলে পাপাই সেও পড়াশোনার জন্য বাইরে থাকে। তিন রুমের ফ্ল্যাটে রীতা একাই থাকে। প্রথম প্রথম ভীষণ একা লাগতো বিশেষ করে রাতে। এতো বড় বিছানায় ভীষণ অস্বস্তি হতো, মনে হতো এমন একটা মানুষ নেই যার বুকে একটু স্বস্তিতে মাথা রাখা যায়, নিজের আবেগে আনন্দে একটু জড়িয়ে ধরা যায়। ওর মনে হয় জীবনের একটা সময় স্বামী ও স্ত্রী পরস্পরের আশ্রয় হয়ে ওঠে আর সেখানে রাতের নিবিড় সান্নিধ্য একটি বিশেষ ভূমিকা নেয়।
আজ মিমি বা কিছুদিন আগে অনিতার কথা শুনে এখন একটা প্রশ্ন মনে ধাক্কা দেয় যে হয়তো এরকম আরো অনেকেই আছেন তাদের কাছে কি দাম্পত্য শুধু নিরাপত্তার লোভে অর্থহীন রঙচঙে অভিনয়?

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার দাঁতন থানার অন্তর্গত কোতাইগড়--- তুর্কা এস্টেটের জমিদার বংশের সন্তান রঞ্জনা রায়। জন্ম, পড়াশুনা ও বসবাস উত্তর কলকাতায়। বেথুন কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে সাম্মানিক স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর উপাধি লাভ করেন। ১৯৭০ সালের ৩০শে মে রঞ্জনা রায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম স্বর্গীয় জগত কুমার পাল, মাতা স্বর্গীয় গীতা রানি পাল। স্বামী শ্রী সন্দীপ কুমার রায় কলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়ের আইনজীবী ছিলেন। রঞ্জনা উত্তরাধিকার সূত্রে বহন করছেন সাহিত্যপ্রীতি। তাঁর প্রপিতামহ স্বর্গীয় চৌধুরী রাধাগোবিন্দ পাল অষ্টাদশ দশকের শেষভাগে 'কুরু-কলঙ্ক’ এবং 'সমুদ্র-মন্থন’ নামে দু'টি কাব্যগ্রন্থ রচনা করে বিদ্বজনের প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। ইতিপূর্বে রঞ্জনা রায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'এই স্বচ্ছ পর্যটন’ প্রকাশিত হয়েছে এবং তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'ট্রিগারে ঠেকানো এক নির্দয় আঙুল' সাহিত্যবোদ্ধাদের প্রভূত প্রশংসা পেয়েছে। তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ 'নিরালা মানবী ঘর' (কমলিনী প্রকাশন) ও চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ 'ইচ্ছে ঘুড়ির স্বপ্ন উড়ান' (কমলিনী প্রকাশন) দে’জ পাবলিশিংয়ের পরিবেশনায় প্রকাশিত। বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় কবির কবিতা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়ে চলেছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!