জাভা স্প্যারো পাখি পালন হচ্ছে নাটোরে

মাহাবুব খন্দকার
মাহাবুব খন্দকার - নাটোর প্রতিনিধি
6 মিনিটে পড়ুন
ছবি: মাহাবুব খন্দকার

দুই-তিন রঙের পাখি সর্বদা চঞ্চলভাবে ঘোরাফেরা করছে খাঁচায়। যে যার মতো আওয়াজ করছে। তবে এই পাখির আওয়াজে রয়েছে কিছুটা ভিন্নতা। অনেকটা ছিপছিপ আওয়াজ বের হয় এদের কিচিরমিচিরে। কথা বলছি জাভাস্প্যারো পাখি সম্পর্কে। এই পাখির মূল আবাসস্থল ইন্দোনেশিয়ার বালিতে। তবে মিউটেশন পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে বিশ্বের নানা দেশে এখন বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পালন করা হচ্ছে।

সেদিক দিয়ে পাখি পালন পেয়েছে বৈশ্বিক অবয়ব। সেই ধারাবাহিকতাই নাটোরেও দৃশ্যমান। বর্তমানে শখের বশে অনেকই জাভা স্প্যারো পাখি পালন করছে । বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মিউটেশন করা জাভা পাখিকে খাঁচায় বসবাসযোগ্য করা হয়েছে। ফলে সহজেই জাভা পালন করা সম্ভব হচ্ছে।নাটোরে শখের বশে এই পাখি পালন করলেও এর থেকে বাড়তি আয় করা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকেই।

জাভা স্প্যারো পাখির পালক নাটোর শহরের আলাইপুরের আমিনুল ইসলাম সুমন জানান, জাভাস্প্যারো প্রকার ভেদে বিভিন্ন রকমের হয়, তবে সাধারণত চারটি রকমের জাভা বেশি প্রচলিত। সিলভার, সাদা, কালো, খয়েরি চারটি কালারের হয়ে থাকে। এদের মধ্যে সিলভার রঙের পাখির দাম সবচেয়ে বেশি। অনেকেই এই পাখিকে জাভা ফিঞ্চ নামে চেনেন।

খাঁচার ভেতর খুব সহজেই প্রতিপালন করা যায় বলে খুব দ্রুত বাণিজ্যিকভাবে বিশ্বজুড়েই এই পাখি পালন চালু রয়েছে এবং তা লাভজনক। খাঁচার ভেতর পালন করা হলেও তাদের নিজ আবাসস্থল ইন্দোনেশিয়ার বালি এলাকায় এরা দলবদ্ধভাবেই বসবাস করে। এরা বেশ চঞ্চল স্বভাবের হয়। সবসময় এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে।

বি জাভা স্প্যারো পাখি পালন হচ্ছে নাটোরে
ছবি: মাহাবুব খন্দকার

তবে শুধুমাত্র পুরুষ জাভা পাখিই গান করে। জন্মের ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যেই এরা গান করা শুরু করে এবং এই গান দ্বারা পুরুষ ও নারী চিহ্নিত করা হয়। স্ত্রী পুরুষ চেনার জন্য যে-পাখিটি গান করে সে-পাখির পায়ে প্লাস্টিকের রিং পরিয়ে দেয়া হয়।

এছাড়া স্ত্রী ও পুরুষ পাখির মধ্যে তেমন একটা ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় না। প্রজনন উপযোগি পুরুষ জাভার চোখের বৃত্ত গাঢ় রংয়ের হয়। জাভা পাখির ডাক অনেকটা ছিপছিপ ছিপছিপ-এর মতো শোন যায়। পুরুষ জাভা নারী জাভাকে আকর্ষণ করার জন্য গান করে এবং নৃত্য পরিবেশন করে বলে জানান তিনি।

শহরে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের বাসিন্দা এ্যাড. মোজাম্মেল হোসেন মন্টু জানান, ’আশির দশক থেকে আমি শখেই পাখি পালন করি। পাখি পালন করে আমি সাচ্ছন্দ বোধ করি। এই পাখি পালনে সহযোগিতা পেয়েছি রাজশাহীঢাকার কাঁটাবনে। সম্প্রতি নাটোরে একটি পাখির দোকান হয়েছে ফলে ঢাকা-রাজশাহী আর যেতে হয় না। পাখি পালনে মূল শর্ত পরিচর্যা। আমার সাথে আমার স্কুল পড়ুয়া ছেলে পরিচর্যার কাজে সহযোগিতা করে আর পাখি উৎপাদন হলে দোকানে বিক্রি করি।

কারণ রাখার জায়গা সংকীর্ণ। আয়ের আশায় পাখি পালন করি না। তবে আয় হয় সেই আয় থেকে খাদ্য ও ঔষধ কেনা যায়। যদি কেউ জাভা পাখির খামার গড়ে তবে লাভবান হওয়া সম্ভব বলে আমার মনে হয়। এক জোড়া প্রাপ্ত বয়স্ক কালো জাভার দাম একহাজার থেকে বারোশত টাকা। সাদা জাভা দুইহাজার থেকে পঁচিশশত টাকা এবং সিলভার চারহাজার থেকে পাঁচহাজার টাকা। তবে বাচ্চা পাখি কিনলে কম টাকায় পাওয়া যায়।

ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে অগাস্ট পর্যন্ত এদের প্রজনন সময়। বছরে চারবার করে এরা সর্বোচ্চ আটটি ডিম দেয়। সেই সময় নারী জাভা প্রতিদিন সকালে টানা ডিম দেয়। ডিমের রং সাদা হয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৪ থেকে ১৮ দিন সময় লাগে। বাচ্চাগুলো ৩১দিন বয়স হলেই উড়তে পারে। বাচ্চা পাখির প্রজনন উপযোগি হতে ৬ থেকে ৭ মাস সময় লাগে।

কোনও কোনও ক্ষেত্রে এর কমও হতে পারে। খাঁচার এক কোণে হাঁড়ি ঝুলিয়ে রাখতে হয় এবং তার ভিতর ডিম পাড়ার জন্য নারকেলের খোসা দূর্বাঘাস , ঘাস ,পাতা বা শুকনা খড় দিলে বাচ্চা ফোটাতে সুবিধা হয়। খাঁচার মেঝেতে বিভিন্ন প্রকার চিকন কাঠি বা খড়ের টুকরা ফেলে রাখলেও এগুলো নিয়ে সুন্দর করে বাসা তৈরি করে জাভা’ বলে জানান তিনি।

নাটোর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বলারিপাড়া মহল্লার পাখি পালক আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি জানালেন, ’শখেই জাভা পাখি পালন করি। জাভা পাখি পালনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি ইন্টারনেট থেকে। জাভা স্প্যারো পাখি বাণিজ্যিকভাবে পালন করে লাভবান হওয়া কঠিন, কারণ নাটোর পাখির দোকান কম।

এ জাভা স্প্যারো পাখি পালন হচ্ছে নাটোরে
ছবি: মাহাবুব খন্দকার

জাভা কিনতে গেলে দাম প্রায় দুইহাজার টাকা কিন্তু বিক্রি করতে গেলে একজোড়া বাচ্চার দাম হয় তিন থেকে চারশত টাকা। তাছাড়া নাটোরে অন্য জেলার ক্রেতারা পাখি সংগ্রহ করতে আসে না। ফলে উৎপাদন হলেও মূল্য পাওয়া যায় না। তাই শখ পূরণের জন্য জাভা পালন করি। আয় করার আশায় না’ বলে জানান তিনি।

পাখি পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করায় জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো. গোলাম মোস্তফা জানান, ’নাটোরে কিছু শৌখিন মানুষ জাভা স্প্যারো শখে পালন করছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও পালন করলে এর থেকে লাভবান হওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি। যদি কেউ জাভা পাখির খামার করতে চায় তবে আমরা ঔষধ-পত্রসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে’ বলে জানান তিনি।

নাটোরে বাণিজ্যিকভাবে জাভা স্প্যারো পাখি পালন হলে, একদিকে যেমন নাটোরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে, অপরদিকে সৌখিন পাখি পালকরা তাদের পাখির ন্যায্য মূল্য পাবে, এমনটাই মনে করছেন নাটোরের পাখি প্রেমিকরা।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
লেখক: মাহাবুব খন্দকার নাটোর প্রতিনিধি
সাংবাদিক এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!